সকালেই ঠিক হলো আজ টপকাপি প্যালেস দেখতে যাবো। ইস্তাম্বুলে দেখার মতো যতো প্যালেস আছে, টপকাপি তার মধ্যে সেরা। কারণ এর ঐতিহাসিক মূল্য।
টপকাপি প্যালেস তৈরি হয়েছিলো আজ থেকে সাড়ে পাচঁশ' বছর আগে সম্রাট সুলতান আহমেদের নিের্দেশে। চারটি বিশাল কোর্ট ইয়ার্ডের এই বিশাল প্যালেসে থাকতো ৪,০০০ মানুষ। ১৯২৪ সালে এই প্যালেসকে জাদুঘরে পরিণত করা হয়।
টপকাপি প্যালেস-এর ঢোকার আগে আপনাকে প্যালেস কম্পাউন্ডে হাটতে হবে কমপক্ষে ১৫ মিনিট। দারুন এই জায়গা। দুই পাশে পাইন গাছের সারি। সবুজ ঘাস। এতো সুন্দর যে আমরা এই ঘাসের উপরেই বসে থাকলাম কিছুক্ষণ। ২০ তার্কিস লিরা দিয়ে টিকেট কাটা হলো একেক জনের।
চমৎকার মার্বেল পাথরের গেট দিয়ে ঢুকলাম প্যালেসে। প্রবেশ হলো পাঁচশো বছর পুরোনো রাজত্বে! কোনদিক দিয়ে শুরু করবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। দেখা যাচ্ছে অনেক ভিড় একটা বিল্ডিং-এর সামনে। গোল্ডেন ছাদের এই একতলা দালানটার নাম অডিএন্স চেম্বার। এইখানে সুলতান আহমেদ অডিএন্স দিতেন।
অডিএন্স চেম্বার থেকে বেরিয়ে একে একে ঘুরলাম সুলতান আহমেদ লাইব্রেরি, ট্রেজারি বিল্ডিং, টাওয়ার অব জাস্টিস। ইম্পেরিয়াল ট্রেজারি বিল্ডিং-এ আছে মিউজিয়াম। দেখার মতো এক একটা জিনিস। বি-শা-ল দৈঘ্য-প্রস্থের এক-একটা রাজপোশাক। মণিমানিক যুক্ত এই পোশাক দেখলেই চিন্তা করা যায় তখনকার সময়ের মানুষের উচ্চতা! সোনার তৈরি অনেক জিনিস দেখা গেল। ছুরি, তরবারি, সিন্দুকের বাক্স ইত্যাদি। দেখলাম সোনার প্রলেপ দেয়া ৬৪ কেজি ওজনের মোমদানি।
টপকাপি প্যালেসে অনেকগুলো জাদুঘর আছে। একটি আছে- ইসলামিক জাদুঘর, যেখানে আছে মহানবীর চুল এবং উহুদের যুদ্ধে হারানো ওনার একটি দাঁত।
এবং হারেমখানা...
এই টপকাপি প্যালেসেই তৈরি হয় হারেম। সুলতান আহমেদের এই হারেম থেকে উৎপত্তি হারেমখানার।
কি থাকতো এই হারেমে?
হারেমে ছিলো ৪০০ কক্ষ। এইসব কক্ষে থাকতেন সুলতান আহমেদের মা, স্ত্রীরা, ছোট ছেলেমেয়েরা এবং দাসীরা। হারেমে প্রবেশাধিকারে ছিলো ভিষণ কড়াকড়ি। সুলতান, প্রিন্স এবং নিকট আত্মীয় মহিলারা ছাড়া কেউ হারেমে প্রবেশ করতে পারতো না। সেই অর্থে হারেম ছিলো সেই যুগের মহিলাদের রক্ষার্থে এক ব্যয়বহুল প্রচেষ্টা।
অরিয়ান্টালিস্টরা এই হারেমকেই বিভিন্ন নোংরা ভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে। হারেমকে তারা বলেছে পতিতালয় অথবা লেসবিয়ানদের জায়গা।
টপকাপি প্যালেসের বাগান
অনেকগুলো বাগান আছে এই প্যালেসে। আছে গোলাপ বাগান। বাগান থেকে দেখা যায় গাঢ় নীল পানির বসফরাস সি। এই দৃশ্যটা অসাধারণ!
চার ঘন্টা প্যালেসের ভিতর ঘুরে আমরা যথেষ্ঠই ক্লান্ত। সিদ্ধান্ত হলো বের হয়ে আসার। প্যালেসের বাইরে এসে দেখি ট্র্যাডিশনাল তার্কিস গান হচ্ছে। কি জাকজমক পোশাকের গায়ক সব। আমরা গান শুনছি...

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




