ফারাক্কার পর সম্প্রতি টিপাইমুখ বাঁধের মাধ্যমে বাংলাদেশে পরিবেশ বিপর্যয়ের একটা মারাত্মক আশংকা দেখা দিয়েছে। টিপাইমুখ নিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ একটা উভয় সংকটে রয়েছে। এর মধ্যেই দেশে-বিদেশে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু কিছু পর্যায়ে ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় শুরু হয়েছে। এই ব্লগেও এ'সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি লেখা নজরে এলো। কেউ বলছেন যুদ্ধ করার কথা, কেউ বা বলছেন ভারতীয় পন্য বর্জন করে একটা কার্যকর চাপ সৃষ্টির কথা। প্রথমত যুদ্ধের সম্ভাবনা ভেবে দেখা যাক। কিন্তু আমি মনে করি ভারতের সাথে যুদ্ধ করার মত অনুকুল অবস্থা বাংলাদেশের নেই। অন্যদিকে যুদ্ধ সবক্ষেত্রে সমাধানও নয়। ইরাক সমস্যার সমাধানে যুদ্ধকে বেছে নেয়ার ফলশ্রুতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্টের অর্থনৈতিক মন্দাই তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
পণ্য বর্জনের পরামর্শটি ভেবে দেখা যাক। সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় পন্য বর্জন করে ভারতের উপরে একটা চাপ সৃষ্টি করা কি আদৌ সম্ভব? সম্ভব হতো যদি বাংলাদেশের বাজার বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের জন্য ভারতের উপরে নির্ভরশীল না হতো। আংশিক বর্জন সম্ভব হলেও কিন্তু তা কতখানিক কার্যকরী হবে তা ভেবে দেখা প্রয়োজন। এখন যদি ভারত নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য বাংলাদেশে রপ্তানী বন্ধ করে দেয়, তাহলে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির ফলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হওয়ার একটা মারাত্মক সম্ভাবনা রয়েছে। কাজেই এ ধরনের পদক্ষেপ হবে মৌচাকে ঢিল মারার মত।
তারচেয়ে কার্যকর হতে পারে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়ার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে বিভিন্নভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠা। যেমন এক: প্রামান্যচিত্র তৈরী ও প্রর্দশনের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও জনসাধারণের দুর্ভোগ মর্মস্পর্শীভাবে তুলে ধরা। যেমন দুই : প্রফেসর ইউনুস যেহেতু শান্তি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন এবং বিশ্বব্যাপী তাঁর একটি পরিচিতি ও গ্রহনযোগ্যতা আছে, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এক্ষেত্রে প্রফেসর ইউনুস একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেন। বিভিন্নভাবে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তোলার মাধ্যমে অন্তত ভারত এর উপরে একটি নৈতিক চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব।
একই সাথে বাংলাদেশ সরকারকে টিপাইমুখ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আরো কৌশলী এবং আরো সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে।সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে সম্বন্বিত উদ্যেগই পারে বাংলাদেশকে এই সমস্যা থেকে রক্ষা করতে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ১:১৭