somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুকূল পরিবেশ ও কিছু করতে পারার সুযোগ মানুষের জীবনে অনেক পরিবর্তন এনে দেয়। আরা যারা এসব থেকে বঞ্চিত হয় তারা হারিয়ে যায় সমাজের অতল গহ্বরে।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

০১.০৮.২০১৫
সকাল ৯ টায় এপোলো হসপিটালে ডা.সন্দিপ কুমার দাস এর কাছে আকাশের বড় ভাইয়ের এপোইন্টমেন্ট ছিল ।
ডা.সন্দিপ কুমার দাস একজন ইন্ডিয়ান নিউরো সার্জন ।
তার ভাই যেহেতু বাড্ডায় ওনার বন্ধুর বাসায় ছিল তাই তিনি ঐ দিন বাড্ডা থেকে সরাসরি এপোলো হসপিটালে গিয়েছিল আর আকাশ তার ক্যাম্পাস থেকে।

যথারিতি সে ঐ দিন আগারগাঁও বাস স্ট্যান্ড থেকে সকাল ৭ টায় বাসে উঠল এবং ৭.৩০ এর দিকে কুড়িল বিশ্বরোডে নামে।
তারপর রাস্তা পারহয়ে রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। সকাল হওয়ায় রিক্সা কম ছিল।
একসময় একটা রিক্সা পায়। আর তার পরিধানে বসুন্ধরার প্রবেশ অনুমতির জন্য এপ্রন দেখতে পায় এবং তাকে সরাসরি এপোলো হসপিটালের জন্য ঠিক করে।

-মামা যাবা??
-যামু।
- এপোলো হসপিটাল কতো?
-৪০ টাকা।

যেহেতু আশে পাশে অন্য কোন রিক্সা ছিল না তাই উপায় না দেখে ৪০ টাকাতেই রাজি হতে হয়।
-চলো।
তারপর রিক্সায় উঠে পরল এবং রিকশা চলতে শুরু করলো।

রিক্সাওয়ালাটা টা তার বয়সী ছিল কিন্তু অতিরিক্ত পরিশ্রম তার শরিরটাকে মাঝ বয়সী করে দিয়েছিল।

আকাশের কেমন যেন রিক্সাওয়ালাটাকে পরিচিত মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল কোথাও যেন তাকে দেখেছে।

তাই নিজের কৌতুহল মিটাতে রিক্সাওয়ালাকে সে জিজ্ঞেস করল ।

-তুমি কি শুধু এই রাস্তায় রিক্সা চালাও?
-হ্যাঁ।
-আর কোথাও চালাও না??
-না।
-এখানে থাকো কোথায়?
-নর্দা।
-ঢাকায় কত দিন হল আসা হয়েছে?
-৩ বছর।

আকাশ তার কথায় আকাশের এলাকার আঞ্চলিক ভাষার টান বুঝতে পারল এবং তাকে সরাসরি তার এলাকা জিজ্ঞেস করল।

-তোমার বাসা কি বগুড়ার ধুনটে??
-হ্যাঁ। আপনে চেনেন ধুনট??
-হ্যাঁ চিনি । আমার বাসা ধুনট।
-তোমার বাসা ধুনটের কোথায়?
-কাশিয়াহাটা।

তখন মনের মাঝে সেই প্রশ্নের উত্তর মিলল আকাশের কারণ এই গ্রাম আর আকাশের গ্রাম পাশাপাশি।
পরক্ষনে য়াকাশ তাকে সরাসরি তার নাম জিজ্ঞেস করে।

-আমার বাসা মথুরাপুর। আচ্ছা তোমার নাম কি??
-রাসেল।
-রাসেল?? আচ্ছা তুমি কি কাশিয়াহাটা প্রাইমারী স্কুলে পড়তা??
-হ্যাঁ।

তখন সে পুরোপুরো নিশ্চিত হল যে এই সেই রাসেল যার সাথে আকাশ ক্লাশ ফাইভ পর্যন্ত পড়েছিল।

হঠাৎ কেন যেন আকাশ আনমনা হয়ে গেল। হয়তো নিজের সহপাঠির এমন অবস্থান মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল!!

আকাশ ও রাসেল দুজন শুধু ভালো সহপঠিই ছিল না ভালো বন্ধু ও ছিল বটে। কিন্তু ১৯৯৯ সালে প্রাইমারী স্কুল ছেড়ে যাওয়ার পর তাদের আর কখনো দেখা হয় নি। কারণ তাদের হাই স্কুল ভিন্ন হয়ে যায়।
দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর পর তাদের দেখা । কিন্তু এই দেখা হওয়ার আনন্দটুকু রাসেলের বর্তমান অবস্থান গ্রাস করে নেয়।
আকাশ তার সহপাঠির এমন অবস্থার কারণ জানতে আবার কথা বলা শুরু করল।

-তার মানে তুই সেই রাসেল ??
-কোন রাসেল?
-আরে আমারে চিনতে পারলি না? আমি আকাশ । আমি তোর সাথে ক্লাশ ফাইভ পর্যন্ত পড়েছি। আমি সেকন্ড হইতাম আর তুই থার্ড।

তখন রাসেল ঘাড় ঘুড়িয়ে আকাশের দিকে তকালো। আর মনে মনে কি যেন ভাবলো। তার পর নিশ্চুপ হয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে রিক্সা চালাতে শুরু করলো।

কিন্তু তার এই নিরবতার আকাশ পাহাড় সমান কষ্ট দেখতে পেল ।
হয়তো তার আর আকাশের অবস্থান তাকে নিরব করে দিয়েছে।

তার নিরবতা কে ভাঙ্গাতে আকাশ বলে উঠল।
-আচ্ছা রাসেল তোর কি সেই স্কুলে কাটানোর সময় গুলো মনে আছে?? যখন আমরা একসাথে স্কুলে মাঠে খেলা করতাম । নবীর চাচার বড়ই গাছ থেকে বড়ই চুরি করতাম। তুই গছে উঠে পাখির বাচ্চা পেরে আনতি??

-মনে আছে।
-আচ্ছা রাসেল একটা বলব??
-বলেন??
-আরে তুই আমারে আপনি আপনি করতেছিস কেন??
-তো কি বলব?
-আরে ব্যাটা আমরা বন্ধু ছিলাম আর এখন ও আছি। তাই তুই করে বলবি।
-ঠিক আছে।

একবার ভেবে দেখুন মানুষের অবস্থান টা কত বড় একটা বিষয় যা কিনা নিজের বন্ধু কেউ দূরে সরে দেয়।

-আচ্ছা তুই পড়ালেখা ছেড়ে দিলি কেন?
-আমার কি ভাই তোদের মত এত বড় কপাল??
-আরে ভনিতা করিস না তো। তুই রিক্সাটা সামনের চায়ের দোকানে দাঁড় করা ওখানে চা চা খেতে খেতে কথা বলব।

তারপর রাসেল বসুন্ধরার গেট সংলগ্ন এক চায়ের দোকানে রিক্সা থামালো এবং আকাশ দুইটা চা অডার করলো।
-আর কিছু খাবি?
-না । রাসেল বলল।

তারপর চায়ে চুমুক দিতে দিতে তার কথা শুরু করল।
-হ্যাঁ । তারপর বল।

রাসেল তার সকল কথা বলল। কথা গুলো শুলে আকাশের চোখ পানিতে ছলছল করতে থাকে ।

কিন্তু হঠাৎ আকাশের মোবাইল বেজে উঠল। মোবাইল বের করে দেখলো তার ভাই এর নাম্বার । কল রিছিভ করার পরে আকাশ জানতে পারে তার ভাই হসপিটালে পৌছে গেছে।
তাই আকাশ কে তারাতারি করে উঠতে হল।

তার কিছুক্ষন পর আকাশ রাসেলের রিক্সাকরে এপোলো হসপিটালে পৌছে গেল। আকাশ তখন রাসেল কে টাকা দিবে কিনা এই নিয়ে বিরম্বনায় পরে গেল।

-কি রাসেল টাকা নিবি না?
-আকাশ ফাজলামো বন্ধ কর।
-তোর ফোন নাম্বার টা দে।

পরক্ষনে রাসেল তার নাম্বার দিয়ে চলে গেল।
-এইবার ঈদে বাসায় গেলে ফোন দিব।

রাসেল যখন ৭ম শ্রেনীতে ছিল তখন তার মা মারা যায় এবং তার বাবা আবার নতুন বিয়ে করে ।
তখন থেকে তার জীবনে দুঃখের অমানিসা শুরু হয় ।
তার সৎ মায়ের অত্যচার তার জীবনের উল্টা দিকে মোড় নিতে বাধ্য করে।
রাসেল ছিল তার পরিবারের বড় ছেলে এর পর তার নিজের দুইটা বোন এবং তার নতুন মায়ের দুইটা ছেলে ।
তার মা তার বাবা কে ভুলিয়ে নিজের নামের সব সম্পত্তি করে নেয়।
এবং সে যখন ৯ম শ্রেনীতে ছিল তখন তার বাবা মারা যায়।

ফলে তাকে তার ছোট বোনদের নিয়ে পথে নামতে হয় । এর মাঝে অবশ্য তার আত্ত্বীয়রা সাহায্য করতে চেয়েছিল কিন্তু রাসেল নিতে চায় নি।

সে নিজের চেষ্টায় প্রথমে গ্রামের কৃষি কাজ করত এবং অন্যের যায়গায় একটা বাড়ি তৈরি করে ।

২০১১ ও ২০১২ সালে তার দুই বোনের বিয়ে দিয়ে সে ঢাকায় চলে আসে এবং রিক্সা চালনা কে তার জীবিকা হিসেবে বেছে নেয়।

ভেব দেখুন আকাশ আর রাসেল একই স্কুলে ছিল এবং রাসেলের অবস্থান ছিল আকাশের পাশেই। কিন্তু আকাশের ছিল অনুকুল পরিবেশ আর রাসেলের ছিল প্রতিকুল ।

তাই আকাশ আজ শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং রাসেল রিক্সাচালক!!!!!!!!!!!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×