somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অযোগ্য সমাজ এবং অযোগ্য সমাজের মানুষ!!!!!!!!!!!

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-রফিকের মা বাসায় আছ নি?
-কেডা ?? করিমের মা?? ভিতরে আসেন।
-হুনলাম আজ নাকি মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষার রেজাল্ট দিসে??তা তোমাগো রফিকের কি খবর??
-রফিক মেডিকেলে চান্স পায়ছে।
-তা কোন মেডিকেল??
-অতো তো কইবার পারি না , তই ঢাকার একটা মেডিকেলে।
-ও!!! হুনলাম যে হারে প্রশ্ন আউট অইচে !! ঢাকার কোন মেডেকেলে নাকি প্রশ্ন না পেয়ে চান্স পাওয়া অসম্ভব!!! আর এইবার তো ১৫ টাহা দিয়া নাকি প্রশ্ন পাওয়া গেছে??
রফিকের মা নিশ্চুপ হয়ে রই !!
সে কিভাবে বুঝাবে মানুষকে যে তার ছেলে প্রশ্ন পেয়ে নই নিজ যোগ্যতাই চান্স পেয়েছে। আর প্রশ্ন কেনার স্বামর্থ্য ও তাদের নাই কিন্তু এইবার প্রশ্ন যে হারে ফাঁস হয়েছে তা পাওয়াও কোন ব্যাপার নয়।
ঐ দিন বিকেলে রফিক তার বন্ধুদের আড্ডায় !!
-কি মাম্মা!! ফাটাইয়া তো দিলা??
-হইয়া গেলো আর কি!!
-হইয়া গেলো না হওয়াইলা??
-মানে??
-মানে বুঝো না ?? তা প্রশ্ন কত দিয়া কিনছিলা??
-তোরা বিশ্বাস কর আমি সত্যি প্রশ্ন কিনি নাই।
-থামো ! থামো! আর গুল মাইরো না । প্রশ্ন পাইয়া চান্স পাওয়ার পর সবাই ইরাম বলে। তুমি এইবার প্রশ্ন না পাইয়া স্যার সলিমুল্লা মেডিকেলে ক্যামনে চান্স পাইলা??
-আমি সত্যি প্রশ্ন পাই নাই ।
কিন্তু তার বন্ধুরা তার কথা মানতেই চায় না। শেষে সে মনে কষ্ট নিয়ে বাসায় ফিরে আসে। কিন্ত আসার পথে ঐ রকম বিরম্বনার শিকার কয়েকবার হতে হয়।
বাসায় এসে তার মায়ে ভারাক্রান্ত মন তাকে আরো বিষিয়ে তোলে।
রাতে রুমের মধ্যে একা একা বসে কি যেন ভাবতে থাকে এবং কি যেন লিখতে থাকে রফিক !!
হইত ছেলে তার মেডিকেল কলেজের স্বপ্ন দেখতেছে এবং হিসাব করছে, এই ভেবে তার মা আর কিছু বলে নি।
রফিক গ্রামের এক গরিব ঘরের ছেলে । রফিক এবং তার মা এই দুজনের সংসার ।
রফিকের মা কাপড় সেলাই এর কাজ করে । ঐ দিয়ে তাদের সংসার চলে।
রফিক অত্যন্ত মেধাবী এবং আত্ত্বসম্মানবোধ সম্পন্ন ছেলে। নিজে অনেক কষ্ট করতে রাজি আছে কিন্তু নিজের সততা, আত্ত্বসম্মান ও যোগ্যতা বিকাতে নই।
তার মায়ের স্বল্প অর্জিত টাকা দিয়ে অনেক কষ্টে রফিক কে এইস এস সি পাশ করায় এবং মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষায় বসায় ।
রাতে রফিক খেতে আসে নি।
তার মা তাকে ডেকেছে অনেকবার কিন্তু আসে নি । পরে তার মা রফিকের জন্য তার খাবার তার রুমে সজিয়ে রেখে ঘুমাতে যায়।
পরদিন অনেক বেলা হয়ে যায় কিন্তু রফিক ওঠে না । তাই মা অনেক কষ্টে রুমে প্রবেশ করে । প্রবেশ করতেই তার মা অজ্ঞান হয়ে পরে। কেননা তখন রফিক বিছানায় ঘুমোচ্ছিল না সে তার সেলিন ফ্যানের সাথে ঝুলছিল।
তার পর থেকে তার মা আর একটি কথাও বলে নি।
কিন্তু রফিক আত্বহত্যা করার আগে একটা সুইসাইড নোট লিখে গিয়েছিল ।
সেই নোটটা ঠিক এই রকম।
প্রিয় স্বাথ্যমন্ত্রণালয়,
হয়তো এই চিঠি আপনাদের কাছে নাও পৌছাতে পারে। কারণ আমি বাংলার কোন অজোপাড়া গাঁয়ের বড় স্বপ্নদেখা এক দু;সাহসী যুবক। এই চিঠি যখন আপনাদের হাতে পৌছাবে তখন আমি না ফেরার দেশে নতুন স্বপ্ন বুনব এবং তা বাস্তবায়ন করব । কিন্তু তাতে কোন গ্লানি থাকবে না।
আমি অনেক আত্ত্বসম্মনবোধ এবং নিজ যোগত্যা সম্পর্কে অনড় একটা ছেলে কিন্তু আমি আমার অসম্মান সহজে মেনে নিতে পারি না । তাই অতি অভিমানে আপনাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছি।
আচ্ছা আপনাদের এ কেমন সমাজ ?? কেমন আপনাদের সমাজের মানুষ যারা যোগ্য ব্যক্তির যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে ??
কেন তাদের এই অবিশ্বাস বলতে পারেন??
নিশ্চয় উত্তর জানেন কিন্তু তা বলার সাহসটূকু নাই!!
আচ্ছা আপনারা কি জানেন একটা ছাত্রের মেধার যোগ্যতায় মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পিছনে কতটা শ্রম , কতটা ত্যাগ, আর কতটা সময় জড়িত ???
আমি রাত কে দিন আর দিন কে রাত এক করে ঈগল পাখি শিকারের মত বইয়ের সকল পাতা অন্তস্থ করেছি??
গাজী আজমল ,নাসিম বাণুর বইএর প্রতিটা তথ্যা জেনেছি। আচ্ছা আপনারা কখন উদ্ভিদ দেহের জৈবনিক ক্রিয়া খেয়াল করছেলন ?? সেগুলো বুঝতে কতটা মাথার নিউরন খোয়াতে হয় ??
আপনারা কখনো পদার্থ বিজ্ঞানের চৌম্বক ক্ষেত্র , আলোর ছেদ রেখা , আপেক্ষিকতা পড়েছেন নিশ্চয় !! তা পড়তে কতটা ধৈর্য দরকার জানেন নিশ্চয়??
রসায়ন বিজ্ঞান , সাধারণ জ্ঞান , ইংরেজি প্রভৃতিতে সমান জ্ঞান রাখতে একজন ছাত্রের নিজের শরিরের কতটুকু রক্ত কে পানি করতে হয় জানেন নিশ্চয়??
সেবার শুনলাম একটা মেয়ে মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষায় বসবে দেখে নিজের কিডনির অপরেশন করাই নি কারণ তার প্রস্তুতির ব্যাঘাত ঘটবে বলে যদিও তার ওজন ২৫ কেজি তে নেমে এসেছিল।
একছেলে নাকি গতবার মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষার জন্য তা মায়ের মুখের শেষ দর্শন টুকু করতে পারে নাই এবং জানাযাই উপস্থিত ও হতে পারে নাই।
আরও খোজ নিয়ে দেখবেন কত ত্যাগ কত শ্রম আছে এই ভর্তি পরিক্ষাকে কেন্দ্র করে।
তবে কেন এতকিছুর পরও মেডিকেলে চান্স হলে যোগ্যতা নিয়ে সন্দিহান হতে হয়।লোকে কেন আমাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে??
আপনাদের কিছু অর্থ পিপাসু নরপিচাশ দের জন্য আমাদের মত অনেক মেধাবীদের আজ এই অবস্থা।
আমি আজ বেঁচে থাকলে হয়ত মায়ের কষ্টের প্রতিদান দিতে পারতাম । নিজের অবস্থান আরো ভালো করতে পারতাম ।
কিন্তু সেই অর্থ পিপাসু নপুংসকের দলের জন্য আমি আজ কলল্কিত।
আর আমি এই কলল্কিত জীবন নিয়ে এই সমাজে বেচেঁ থাকতে চাই না।
তাই চলে যাচ্ছি এমন দেশে যে দেশে আপনাদের মত নপুংসকের দল নেই , নেই কোন কলুসিত সমাজ ব্যবস্থা !!!
বিদায় হে ঘৃর্ণ্য সমাজ এবং সমাজের মানুষ। তোমরা শুধু আমার মাকে দেখে রেখো ।
এবং শেষবারের মত বলে যাচ্ছি আমি অযোগ্য ছিলাম না।
তোমরা আমার মাকে তার অযোগ্যতার গ্লানি অর্পন করিও না।
ভালো থেকো সবাই
ইতি,
অভাগা রফিক।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৫০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×