চলুন ডেমু ট্রেনে চড়ে ঘোড়ারোগে আক্রান্তদের উন্নয়নের নমুনা দেখে আসি।
রেলওয়ের যাত্রীসেবার মান এবং আধুনিকায়নের অজুহাতে ২০১৩ সালে চালু হয়েছিলো ৬৫৪ টাকা খরচ করে চীন থেকে কেনা হয়েছিল ডেমু ট্রেন। রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে অধিকসংখ্যক যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি যানজট কমাতে ডেমু ট্রেন চালু হয়। ডেমু ট্রেনের দুই দিকে দুটি ইঞ্জিন এবং মাঝখানে একটি বগি ছিলো। দুই ইঞ্জিন এবং এক বগি নিয়েই এক সেট ডেমু। সব মিলিয়ে এক সেট ডেমুতে বসে ১৪৯ জন এবং দাঁড়িয়ে ১৫১ জন যাত্রী যাতায়াত করতে পারে।
প্রথমত, এত বিপুল অর্থ দিয়ে জনবহুল এই দেশে এত কম ধারণক্ষমতার বাহন কেনার যুক্তি কি?
এরপর ঢাকঢোল পিটিয়ে হাসিনা ডেমু ট্রেনের উদ্বোধন করেছিলো, কিন্তু সূচনাতেই গোমর ফাঁস হয়ে গিয়েছিল ডেমু ট্রেনের। উদ্বোধনের দিনেই নষ্ট হয়ে জানিয়ে দিয়েছিল বাহন ও তার যাত্রীদের ভবিষ্যৎ ভোগান্তির কথা।
কেন শতশত কোটি টাকা ব্যয়ে এই খেলনার ট্রেনটি আমদানি করা হলো? ট্রেনটির সুবিধা কি ছিলো?
এতোদিনেও কিছুই জানা যায়নি; বরং চলাচলে যত রকম অসুবিধা হওয়া সম্ভব, সবই এর ছিলো।
এবার চলুন আয়-ব্যয়ের হিসাব কষি-
ডেমু ট্রেনে যাত্রী পরিবহন করে পাঁচ বছরে রেলের আয় ১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর ডেমু ট্রেন নামক হাতি পুষতে খরচ ২৫ কোটি টাকা। লাভ-ক্ষতির এই অঙ্ক শুনে এখনো যারা ঘোড়ারোগ উপলব্ধি করতে পারেননি। তাঁদের জন্য সম্পূরক তথ্য হচ্ছে, ৬৫৪ কোটি টাকা দিয়ে মাত্র পাঁচ বছর আগে চীন থেকে কিনে আনা ২০ সেট ডেমু ট্রেনের ১১ সেটই বর্তমানে নষ্ট। নষ্ট হওয়া খেলনা ট্রেনটি দেশে ঠিক করাও সম্ভব না। সাধারণত রেলের ইঞ্জিনের যেখানে গড় আয়ু থাকে ২৫ বছর, বগির ২০ বছর। সেখানে পাঁচ বছরে অকেজো হওয়া ডেমু ট্রেন নামক সোনার অশ্বডিম্ব কেন কেনা হলো?
অন্যদিকে ডেমু ট্রেনের সমপরিমাণ টাকা দিয়ে নূন্যতম ১৩০টি এসি বগি কেনা যেত। অত্যাধিক যাত্রী পরিবহনের সাথে, দীর্ঘস্থায়ী এবং টেকসই প্রতিটি এসি বগি থেকে বছরে সর্বনিন্ম আড়াই কোটি টাকা আয় হতো।
তবু কেন ডেমুতে বিনিয়োগ?
সম্ভাবতা যাচাইয়ের অজুহাতে সরকারি টাকায় চীনে ৩০ জনের চারমাসের প্রমোদভ্রমণকারীদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিলো? আজকে পাঁচ বছরেও এত বড় দূর্নীতির জন্য কেন দায়িত্বশীলদের জবাবদিহি করা হলোনা? কেন কাউকে শাস্তির সম্মূখীন হতে হলোনা?
সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন এখন-
হাসিনা কর্তৃক দেশপ্রেমিক অ্যাওয়ার্ড পাওয়া আবুল হোসেনের কথা স্মরণ আছে? যতদূর জানা যায়, তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের আগ্রহে চীন থেকে ডেমু ট্রেন কেনা হয়। যার দূর্নীতির জন্য পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংক সরে যায়।
বর্তমানে উন্নয়ন-দূর্নীতি যেন মাসতুতো ভাই! আর ঘোড়ারোগে আক্রান্ত আওয়ামী লীগ সরকার যেন "দুর্নীতির ঘোড়সওয়ার"!


অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


