পশ্চিমারা কি কারনে হঠা্ৎ করে জামাতের ব্যপারে এমন নেতিবাচক হয়ে উঠলো?যেখানে পশ্চিমা দুনিয়া জামাতকে চিরকাল মোডারেট ইসলামিক দল হিসেবে বিবেচনা এবং বলে আসছিলো,
ক্যানোইবা ডক্টর কামাল বি চৌধুরি গং জামানত হারানো প্রার্থী হবার পরও বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাম্প্রতিক সময়ে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে উঠলেন? আসুন এর উত্তর খুজি--
প্রথমে একটু অতীতে ফিরে তাকাই-আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ভারতের টাটা কোম্পানি বাংলাদেশে প্রথমে ২ বিলিয়ন পরবর্তীতে আরো ১ বিলিয়ন বাড়িয়ে ৩বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল কিন্তু তৎকালীন সরকারের সাথে যৌক্তিক চুক্তিতে না পৌছতে পারার কারনে তারা বিনিয়োগ ফিরিয়ে নিয়েছিল।
তখন বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন মাহমুদুর রহমান এবং শিল্প মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ছিলেন জামাতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী,
টাটা অন্যায্য মুল্যে গ্যাস চেয়েছিলো মাহমুদুর রহমান এই প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দিয়েছিলেন এটা আপনার সবাই জানেন,
কিন্তু শিল্প স্থাপনের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয় শিল্প মন্ত্রনালয় থেকে,এদিকে বিনিয়গের বিপরীতে সুবিধা নিয়ে আলোচনা করলেও টাটা তাদের শিল্প স্থাপনের জন্যে জায়গা নির্দিষ্ট করে রেখেছে, এই সংক্রান্ত বিষয়ে শিল্প মন্ত্রনালয়ের সাথে আলোচনা করতে গিয়ে টাটা তাদের পছন্দের জায়গা হিসেবে চট্রগ্রামের মিরেশ্বরাই এর পর থেকে দক্ষিন দিকে একটা অঞ্চ্লের কথা উল্লেখ করে, শিল্প মন্ত্রনালয় জায়গার ব্যপারে আপত্তি তোলে,এবং বলে বাংলাদেশের কয়েকটা প্রধান শস্য ভান্ডারের মাঝে এই জায়গা অন্যতম,এই জায়গায় শিল্প স্থাপন হলে কয়েক হাজার মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন কমে যাবে, টাটা যুক্তি হিসেবে বলে পরিবহনের জন্যে বন্দরের কাছাকাছি জায়গা হিসেবে আবার একই জায়গা দাবী করে,শিল্প মন্ত্রনালয় পাল্টা প্রস্তাব হিসেবে চট্রগ্রামে সাতকানিয়ার একটা জায়গার কথা বলে সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেয়,টাটা সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং দূতাবাসের মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ব্যপারটা জানায়,ম্যডাম জিয়া মাওলানা নিজামী কে ডেকে জিজ্ঞেস করেন সবিস্তারে, মাওলানা নিজামি সব বুঝিয়ে বলার পর ম্যডাম জিয়া পরিষ্কার বলে দিয়েছিলেন " দেশের এতোবড় উৎপাদন বন্ধ করে কোন চুক্তি হবেনা,দেশের সার্বিক ক্ষতি করে কোন প্রকার বিদেশী বিনিয়োগ প্রয়োজন নেই" এই ঘটনা ছিল বাংলাদেশের পরবর্তী ক্ষমতার পালা বদলের অন্যতম প্রধান কারন।
এ ঘটনার সাথে বর্তমান রাজনীতির সম্পর্ক কি সেটা বলছি, ভুত্বাত্তিক রাজনীতির পরিবর্তনের সাথে অনেক কিছু যুক্ত,
তুরস্কের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সম্পর্ক কি অবস্থায় আছে সেটা সবাই অবগত আছেন,ইরান আর উত্তর কোরিয়ার সাথে সাথে যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে নতুন মাথা ব্যথার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে তুরস্ক,
তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরদোগান প্রথম ইসলামিক দলের প্রার্থী হিসেবে তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ শহর ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন ১৯৯৪ সালে,১০০ ভাগ দুর্নীতি মুক্ত থেকে মেয়র পদ চালনা করার কারনে ইস্তাম্বুল শহরের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করেন এবং এই উন্নয়ন দেখে তুরস্কের মানুষ গনহারে ইসলামপন্থীদের প্রতি ঝুকে পড়ে,পরের ইতিহাস আপনাদের সবার জানা আছে,আর এই ধরনের ব্যপারকে পশ্চিমারা বলে " আইডোলজিকাল ম্যাজিক " ইসলামপন্থীদের এই ম্যাজিক কে পশ্চিমারা নিদারুন ভয় পায়। কোন কারনে যদি এই ম্যাজিক ক্লিক করার সুযোগ পায় তাহলে বাংলাদেশেও তুরস্কের মতো ইসলামপন্থীদের উত্থান ঘটতে পারে।
পাঠক আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন জামাতের পরিচালিত ৩টি মন্ত্রনালয়ে কোন প্রকার দুর্নীতি কেউ প্রমান করতে পারেনি,জামাত আবার দুর্নীতি মুক্ত একটা মন্ত্রনালয় পরিচালনা করুক এই রিস্ক তারা কোনভাবে নিতে চায়না,তারা চাচ্ছে জামাতের নিবন্ধন বাতিল হবার সুযোগে জামাতকে ইলেকশন থেকে সিন আউট করে রাখবে, যাতে জাতীয় পর্যায়ে জামাতের কোন অবদান না থাকে,এছাড়া জামাতের যে সব নেতা বিতর্কিত ছিল তাদেরকে ফাঁসি দেয়ার মাধ্যমে স্বাধীনতা বিরোধী অস্র আর তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ভুমিকা রাখতে পারবেনা,এই ক্লিন ইমেজ নিয়ে জামাত যদি জাতীয় পর্যায়ে কোন ভুমিকা রাখতে পারে তাহলে " আইডোলজিক্যাল ম্যাজিক " ক্লিক করে যাবার সমুহ সম্ভাবনা থাকে।আর জামাত যদি কোন মন্ত্রনালয়ে থাকে মার্কিন অনেক অন্যায্য চাওয়া ভন্ডুল হয়ে যেতে পারে ভারতের টাটার মতো, তাই জামাত সম্পূর্ণ বাদ।
এ ছাড়া জামাত নেতাদের ফাঁসি কেন্দ্রিক তুর্কি প্রেসিডন্টের ভুমিকা জামাতের সাথে এরোদোগানের মূল দল সাদাত পার্টির আদর্শের সাথে মিল থাকার ইঙ্গিত বহন করে।
ডক্টর কামাল হোসেন এতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো ক্যানো-
ডক্টর কামাল হোসেন পশ্চিমাদের পরীক্ষিত বন্ধু এটা নতুন করে বলার কিছু নেই,যুক্তরাষ্ট্র তাদের তুরুপের তাস এই ডক্টর কামাল কে দিয়েই খেলতে চাচ্ছে,কিভাবে সেটা বলছি তার আগে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কিছু কথা না বললে লেখাটা সাবলীল হবেনা।
আওয়ামীলীগ গত ১০ বছরে যত অপকর্ম করেছে সেসবের হিসাব বাদ দিলাম,কিন্ত তাদের অপকর্মের কারনে তাদের রিজার্ভ ভোটের একটা অংশ হারিয়েছে অলরেডি সেটা আওয়ামীলীগ নিজেও জানে,সাথে কোটা বিরোধী আন্দোলন কে নৃশংসভাবে দমনের কারনে ছাত্রদের ভোটও হারিয়েছে, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের বিপক্ষে গিয়ে উল্লেখযোগ্য সখ্যক অভিভাবকের ভোট হারিয়েছে,বেসরকারি এবং প্রাইমারি নন এমপিও শিক্ষদের লাঠি পেটা করে সেখানেও ভোট হারিয়েছে, ছাত্রলীগের অপকর্ম বলাই বাহুল্য।
এখন এই পরিস্থিতে যদি একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তাহলে ৩০০ আসনে আওয়ামীলীগের বিপক্ষে একজন করে মুচিকে দাড় করিয়ে দিলেও তারা জাতীয় সংসদে এবসুলট মেজরিটি পাবে জামাতের ভোট ছাড়াই , মানে সংবিধান সংশোধনের জন্যে পর্যাপ্ত আসন পেয়ে যাবে শুধু মানুষের এন্টি আওয়ামী সেন্টিমেন্টের কারনে।আর বিএনপির প্রার্থী হলে কি হবে সেটা নাই বললাম।
পশ্চিমারা হাসিনার ভোটের অবস্থা নিশ্চিত হয়ে তাদের গেমটা খেলছে,
খেয়াল করে দেখবেন মাহি বি চৌ ১৫০ আসন দাবী করছে, ডক্টর কামাল জামাতের সাথে জোট ভাঙ্গার শর্ত দিচ্ছে, মাহমুদুর রহমান মান্না ২বছর রাষ্ট্র পরিচালনার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা চেয়েছে,
আপাত দৃষ্টিতে এদের কথা ঠাট্রা মশকরার মতো মনে হলেও এটা কিন্তু ফ্যাক্ট,
তারা ফ্লোটিং ভোটের আজগুবি তত্ব দিয়ে প্লাস মাইনাস হিসেব করে বয়ান ছেড়ে যাচ্ছে কিসের ভিত্তিতে ??!!
স্রেফ যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন সিগন্যালের ভিত্তিতে,আসন নিয়ে দর কষাকষির প্রাথমিক ধারনা হিসেবে তারা এই কথাগুলো বলছেন ,যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে বিশ্বস্ত মনে করলেও তাদের স্বার্থের ব্যপারে ডক্টর কামাল হোসেনরা অনেক বেশি প্রভুভক্ত থাকবে এটা সবাই জানে,ম্যাডাম জিয়া ক্ষমতার জন্যে দেশ বিক্রি করবেনা সেটাও যুক্তরাষ্ট্র জানে, এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, জামাত ভোটের রাজনীতিতে ক্ষমতা পালাবদলে বেশ কয়েকবছর ধরে প্রভাবকের ভুমিকায় আছে,জামাতের সুদৃঢ় এই অবস্থানকে ভেঙ্গে দেয়ার এটাই উপযুক্ত সময়,জামাতকে সরিয়ে তাদের শুন্যস্থান স্থান ডক্টর কামালদের দিয়ে পূর্ণ করার নাটক সাজাতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।এবং পরবর্তী নির্বাচনে জামাত যদি সিন আউট থাকে এবং বিএনপি যদি ডক্টর কামালদের নিয়ে জয়লাভ করে জামাতের ভোটের অথবা রাজনৈতিক গুরুত্ব আক্ষরিক অর্থেই সাময়িক হোচট খাবে,যদিও জামাতের সাংগঠনিক অব কাঠামো এই হোঁচট খাওয়া নিয়ে চিন্তিত নয়, তখন বিএনপি নতুন মিত্র পেয়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের মিত্র নাম থেকে মুক্তি পেয়ে ফুরফুরে মেজাজে রাষ্ট্র চালাবে।
অন্যদিকে জামাত মন্দের ভালো হিসেবে জোট না থাকলেও যেখানে তাদের প্রার্থী থাকবেনা আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে যে প্রার্থীই থাকুক তাকে ভোট দিবে অন্তত দেশের এবং দলীয় পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হবে এই আশায়।
ডক্টর কামালদের শর্ত না মেনে যদি জামাতের সাথে জোট চালিয়ে যায় তাতে কি হতে পারে-
আসলে যুক্তরাষ্ট্র চিরকাল মুসলিম বিরোধী একটা বেনিয়ার জাত, তাদের চোখ এ দেশের গভীর সমুদ্রের তেল গ্যাসের উপর, যেখানে চীন মায়ান্মার এলাকায় দখল নিয়ে নিয়েছে,চীনের সাথে ফাইট দিতে হলে বাংলাদেশ ছাড়া তাদের আর কোন পথ নেই,হাসিনা সরকারকে ভারত আগেই দখল করে রেখেছে, এ ক্ষেত্রে হাসিনা তাদের পছন্দের তালিকায় নেই,আবার হাসিনা যেভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে আছে তাকে সরানোর মতো আন্দোলন এতো অল্প সময়ে হয়তো নাও দাড়তে পারে, তাই শেষ সময়ে এসে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে একটা লেভেল প্লেইং ফিল্ড কিংবা হাসিনা সরকার কে সরতে বাধ্য করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে যদি জামাতের সঙ্গ ছাড়ে, এবং যুক্তরাষ্ট্রের সে সক্ষমতা আছে এটা আশা করি সবাই বুঝেন।
আর বিএনপি যদি দাবী না মানে তাহলে যুক্তরাষ্ট্র হাসিনার বিপক্ষে গিয়ে এক্ট্রিম কোন সিদ্ধান্ত নিবেনা বলে বিএনপিকে জানিয়ে দিয়েছে।
এই কারনে ডক্টর কামালদের এমন লম্ফ ঝম্প,আর বিএনপি কৌশলী আচরন করে যাচ্ছে।
এটা বিএনপির জন্যে এসিড টেস্ট,নীতিগত সিদ্ধান্তে বিএনপি যদি একটা বড় আন্দোলনের জন্যে প্রস্তুত থাকে এবং সে আন্দোলন সফল হয় তাহলে বিএনপিকে আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত না মানলেও চলবে, কিন্তু জামাতকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শর্তের বিপরীতে অবস্থান করার সিদ্ধান্ত কি বিএনপি নিতে পারবে?
অন্যদিকে জামাতের সাথে জোট ভেঙ্গে আদৌ কোন লাভ হবে নাকি দীর্ঘমেয়াদী কোন ভুল হবে সে সমীকরণ মিলাচ্ছে বিএনপি , কারন ২০১৪ সালেও যুক্তরাষ্ট্রের উপদেশ শুনেছিল বিএনপি , ফলাফল সবার জানা।
বিএনপির সামনে দুটি অপশন , ১) জামাতকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করা ২) লেভেল প্লেইং ফিল্ডের জন্যে মার্কিন দুতাবাসে প্রস্তাবনা মেনে নেয়া।
সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্যে বিএনপির হাতে সময় আসলেই খুব অল্প।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২৫