যে কয়েকটি কারণে বাংলাদেশের নাম সারা বিশ্বে পরিচিত তার মধ্যে পোষাক শিল্প অন্যতম। পোষাক রপ্তানীর মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদিশিক মুদ্রা আয় করে। বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ পরিবারের জীবন নির্ভর করে এই গার্মেন্টস শিল্পের উপর। কিন্তু বাংলাদেশের এই পোশাক শিল্পের শুরুর ইতিহাস আমরা অনেকেই জানিনা। জেনে কি হবে? এই মনে করেন জানতে ভাল্লাগে, খুশির ঠেলায়, ঘোরতে।
মজার ব্যাপার হলো তথ্য গুলো বহু বছর আগেকার একটি বিজ্ঞাপনধর্মী পেইজ থেকে নেয়া!
বাংলাদেশের প্রথম গার্মেন্টস সম্পর্কে দুই রকম তথ্য পাওয়া যায়। কোথাও পাওয়া যায় রিয়াজ গার্মেন্টস, আবার কোথাও দেশ গার্মেন্টস। বাংলাদেশ থেকে প্রথম দেশের বাইরে পোশাক রপ্তানী করে রিয়াজ গার্মেন্টস। তাও সেটা ১৯৭৮ সালের কথা। ১৯৭৮ সালে বিদেশে পোশাক রপ্তানী করে দেশে এক হুলস্থুল ব্যাপার ঘটিয়ে ফেলেছিলো। রিয়াজ গার্মেন্টস তখন দেশের চাহিদাও মেটাতো, সেই সাথে বিদেশেও রপ্তানী করতো।
১৯৬৩ সালে পুরোনো ঢাকার উর্দূ রোডে রিয়াজ ষ্টোর নামে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের প্রথম গার্মেন্টস। ১৯৬৫ সালে রিয়াজ ষ্টোর এর মালিক জনাব রিয়াজ উদ্দিন করাচি ভ্রমণকালে একটি গার্মেন্টসকে মাসে ১লক্ষ পিস পোশাক রপ্তানী করতে দেখেন। ভখন থেকেই প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার বিদেশে পোষাক রপ্তানীর স্বপ্ন দেখতে থাকেন।
এরপর ১৯৭৩ সালে রিয়াজ ষ্টোর এর নাম পরিবর্তন করে রিয়াজ গার্মেন্টস রাখেন এবং বিদেশে পোষাক রপ্তানীর জন্য কাজ শুরু করেন। অবশেষে আসে সেই স্বপ্ন পূরণের দিন। ১৯৭৮ সালের ২৫শে জুলাই টিসিবির সহায়তায় বাংলাদেশ থেকে সর্বপ্রথম ৪ লক্ষ টাকা মূল্যের পুরুষদের শার্ট রপ্তানী করা হয় ফ্রান্সে। এই পোষাক রপ্তানী নিয়ে বিখ্যাত কার্টুনিষ্ট রণবী কার্টুন পর্যন্ত একে ছিলেন। “৪ লক্ষ টাকার পোষাক রপ্তানী করা হয়েছে ফ্রান্সে” এই শিরোনামে যে কার্টুনটি এঁকে ছিলেন, সেখানে একজন টোকাই আরেকজনকে বলছে, “আরে চিন্তা করিস না, ওই পোশাকগুলো পুরোনো হয়ে আবার আমার দেশেই ফেরৎ আসবে”।
সেই সময় কিন্তু নারী শ্রমিকের কথা ভাবাই যেতোনা। তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠানে নারী শ্রমিক নিয়োগের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হোন। এরপর রিয়াজ গার্মেন্টস এর মালিক জনাব রিয়াজ উদ্দিন সর্বপ্রথম নিজের মেয়েকেই রিয়াজ গার্মেন্টেসে পোশাক তৈরির কাজে লাগিয়ে দেন। তাঁর মেয়েকে দেখে আরও কিছু নারী এই পেশায় আসতে আগ্রহী হন এবং আস্তে আস্তে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর বর্তমানে পোশাকে শিল্পে নারী শ্রমিকের সংখ্যাতো একটি ইতিহাস!
তাদের তৈরি পোষাক কিন্তু খুবই বিখ্যাত ছিলো। বিশ্বের কিছু প্রখ্যাত মানুষ তাদের তৈরি পোষাক পরে ধন্যবাদ জ্ঞাপন পর্যন্ত করেছেন। ১৯৬৯ সালে যখন ৩ জন নভোচারী নীল আমর্ষ্ট্রং, এডউইন অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্স তাদের পোষাক পেয়ে লিখেছিলো, “We wish to thank you for your thoughtful gift of three shirts which was presented to us during our visit to Dacca. We will long cherish the memory of the enthusiasm, hospitality end goodwill accorded us by the citizens of Pakistan."
এছাড়াও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন, তৎকালীন মোহনবাগানের খেলোয়াড় চুনী গোস্বামী। নায়ক রাজ রাজ্জাক এক সময় তাদের ব্রান্ড এ্যাম্বাসিডর ছিলেন। আশির দশকে তাদের বিজ্ঞাপন বিটিভিতে প্রচারিত হতো।
পরবর্তীতে দেশের অনেক মানুষের প্রচেষ্টায় গার্মেন্টস শিল্প মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়েছে। গার্মেন্টস শিল্পের কারণে সারা বিশ্বের মানুষ আজ বাংলাদেশকে চেনে। কিন্তু একজন পাইওনিয়ার হিসেবে রিয়াজ গার্মেন্টসের কর্ণধার রিয়াজ উদ্দিনের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে ইতিহাসের পাতায়। নামটি আমাদের জানা উচিৎ।