somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্ল্যাক হোল-৫(মহাশুন্যের বক্রতা ও মহাকর্ষ কূপ এবং জেনারেল থিওরী অফ রিলেটিভিটি) (collected from তমাল গুরু)

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিজ্ঞানী মিচেল এবং ল্যাপলাস যে ডার্ক স্টারের বর্ণনা সেন তাছিল সম্পুর্ণ তাত্ত্বিক।এই ধরনের মহাজাগতিক বস্তুর অস্তিত্ত্ব সম্পর্কে তাদের কোন ধারনাই ছিল না...এবং সেই সময়ের অধিকাংশ বিজ্ঞানীদের ধারনা ছিল যে মহাবিশ্বে এই ধরনের কোন নক্ষত্রের অস্তিত্ত্ব নেই।হাবল স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্যে প্রায় কয়েক হাজার ব্ল্যাক হোল আবিষ্কার করা হলেও এখনো অনেকেরই ধারনা ব্ল্যাক হোল বলে কিছু নেই।আমার দুই একজন বন্ধুকেও এটা বিশ্বাস করতে দেখেছি।স্বভাবতই এই ধারনা তখন শুধুমাত্র গানিতিক আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।অর্থাত এ ধরনের নক্ষত্রের ভর কত হতে হবে কিংবা এদের মধ্যে পদার্থের ঘনত্ব কত হবে এই ধরনের কাল্পনিক গননাতেই ব্ল্যাক হোলের ধারনা থেমে ছিল...যার ফলে পরবর্তি এক শতাব্দিরও বেশী সময় ধরে বিজ্ঞানীরা এই ধারনাটা নিয়ে তেমন একটা কাজ করেননি...
বিংশ শতাব্দির শুরুর দিকে আলবার্ট আইন্সটাইন যখন তার মহাকর্ষের একটি নতুন তত্ত্ব প্রস্তাব করেন তখন ব্ল্যাক হোলের ধারনাটি আবার পূণর্জাগরণ পায়।১৯১৫-১৯১৬ সালে প্রকাশিত থিওরী অফ রিলেটিভিটির একটি অংশে তিনি এই প্রস্তাবটি করেন।এটার মাধ্যমে তিনি নিউটনের সার্বজনীন মহাকর্ষীয় সুত্রকে ভুল প্রমান করেন নি বরং এর মাধ্যমে তিনি স্পেসের(স্থান) প্রকৃতি এবং মহাকর্ষ কিভাবে স্পেসে ক্রিয়া করে তা নিউটন থেকে আলাদাভাবে দেখান।
উদাহরনস্বরুপ নিউটনের মতে মহাকর্ষ বল শুধুমাত্র বস্তুর মধ্যে ক্রিয়া করে এবং কোনভাবে এর কেন্দ্র থেকে ক্রিয়া করে।অন্যদিকে আইনস্টাইনের মতে মহাকর্ষ কোন দিকধর্মী বল নয় বরং তা স্পেসের একটি বৈশিষ্ট্য।একটি যুগান্তকারী ধারনা যা প্রস্তাব করে যে স্পেসের একটি নিজস্ব কাঠামো আছে।আইনস্টাইনের পূর্বে পদার্থবিদদের ধারনা ছিল যে স্পেস বা মহাশুন্য একেবারেই ফাঁকা বা শুন্য এবং স্পেসে গতিশীল কোন বস্তুর উপর এর কোনই প্রভাব নেই।অন্যদিকে আইনস্টাইন বলেন যে স্পেস এক ধরনের অদৃশ্য ফেব্রিক দিয়ে তৈরী যা স্থিতিস্থাপক(ইলাস্টিক) এবং বক্রতার উপযোগী(বেন্ডেবল)।
আইনস্টাইন আরো বলেন যে, ভর আছে এমন যে কোন বস্তু স্পেসে সঞ্চরমান(মুভ করলে) হলে তা এই অদৃশ্য ফেব্রিকের মাঝে ডুবে গিয়ে বা ভিতরে প্রবেশ করে স্পেসে এক অদৃশ্য গর্ত তৈরী করে স্পেসের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে।বিজ্ঞানীরা এই কুয়াসদৃশ গর্তকে বলেন ‘গ্রাভিটি ওয়েল’ বা মহাকর্ষ কূপ।এই মহাকর্ষ কূপ এর গভীরতা নির্ভর করে বস্তুর ভরের উপর অর্থাৎ ভর যত বেশি হবে কূপ বা গর্ত ততই গভীর হবে।এইভাবেই গ্রহ নক্ষত্রের মত অত্যধিক ভরসম্পন্ন বস্তুগুলি তাদের কাছাকাছি স্পেসের অদৃশ্য ইলাস্টিক ফেব্রিকটাকে বিকৃত করে বা বাকিয়ে দেয় এবং এই বক্রতাই হল আমরা যেটাকে মহাকর্ষ বলি বা মহাকর্ষ হিসেবে অনুভব করি।
এই ব্যাপারটা সহজভাবে এভাবে বলা যায় যে... “আমি যদি একটা ফোমের খাট নেই যেটা সাধারনভাবে সমতল এবং তারপর এতে একটা ক্রিকেট বল(কাঠের) রাখি তাহলে যেখানে বলটা রাখলাম সেখানটায় কিছুটা ডেবে যাবে...এখন আমরা যে অংশটা ডেবে গেছে সেখানে যদি একটা মার্বেল রাখি তাহলে মার্বেলটা একটা সর্পিল(স্পাইরাল) পথ অনুসরন করে ক্রিকেট বলটার দিকে এগিয়ে যাবে বা আকর্ষিত হবে।অর্থাৎ পারিপার্শ্বিক বক্রতার জন্য ক্রিকেট বল আর মার্বেলের মধ্যে এক ধরনের আকর্ষনের উদ্ভব হয়েছে।এখন আমি যদি ক্রিকেট বল না নিয়ে একটা বেসবল বা বাস্কেটবল নেই তাহলে ফোমটা আরও বেশী ডেবে যাবে এবং এক্ষেত্রে মার্বেল নিলে তা আগের চেয়ে দ্রুত কেন্দ্রের দিকে গতিশীল হবে।অর্থাৎ এটা দাঁড়ায় যে, পারিপার্শ্বিক বক্রতার উপর বস্তুর আকর্ষনের তীব্রতা নির্ভর করে।মহাকর্ষও ঠিক এভাবেই কাজ করে,অর্থাৎ জেনারেল থিওরী অফ রিলেটিভিটির মতে,ভর মহাশুন্য বা স্থান বা স্পেসে বক্রতা বা কার্ভেচার তৈরী করে আর বস্তু যখন এই কার্ভেচারে গতিশীল হয় তখনই মহাকর্ষীয় গতির উদ্ভব হয়।”
এখন আমরা উপরের উদাহরনের সাথে মহাজাগতিক বস্তুর গতির তুলনা করি।মনে করি ভিন্ন ভরের দুইটি গ্রহ পরস্পরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।তাহলে ছোট গ্রহটা বড় গ্রহের মহাকর্ষ কূপের গর্তের প্রভাবে বড় গ্রহের দিকে নিম্নমুখী গতি লাভ করবে।(এটা নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রের মতই ঘটনা যে বড় বস্তু ছোট বস্তুকে তার দিকে টেনে নেয়।তাই নিউটনের সূত্র এখানেও প্রয়োগ করা যাবে এবং অধিকাংশ বস্তুর ক্ষেত্রেই এটি যুক্তিপূর্ণ।)।আইন্সটাইনের মহাকর্ষ মডেলে ছোট গ্রহটি যদি পর্যাপ্তভাবে দ্রুতগতিতে ঘুরতে থাকে তাহলে তা বড় গ্রহের মহাকর্ষ কুপ থেকে বের হয়ে আসবে এবং এর নিজস্ব গতিপথে চলতে থাকবে।অন্যদিকে এটা যদি এই মুক্তিবেগের থেকে কম গতিতে চলে তাহলে এটি বড় গ্রহটির মহাকর্ষ কূপে আটকা পড়বে এবং হয় এটি বড় গ্রহকে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে আবর্তন করতে থাকবে অথবা বড় গ্রহটিতে আছড়ে পড়বে...
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×