somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে সংঘটিত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা কত? ৩ লক্ষ নাকি ৩০ লক্ষ

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোরের একটি নিউজ লিংকে দেখলাম য, তথাকথিত মার্কিনী দালাল আলযাযিরা চ্যানেল এক ভিডিও নিউজে দাবী করে বলেন যে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন ৩০ লক্ষ নয় মাত্র ৩-৫ লক্ষ্য মারা গিয়েছে!!
-
সেখানে যে ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়েছে তাতে পুরুষেরা শার্ট প্যান্ট আর মহিলারা টপস /স্কার্ট পরা এবং এরা বর্ণে শ্বেতাঙ্গ!
-
[আমি আমাদের বর্ণ কৃষ্ণাঙ্গ বলছি না কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ছবির মানুষগুলো আমাদের আগের জেনারেশনের কেউ নয়]
-
মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ৩০ লক্ষ নয় মাত্রা ৩-৫ লক্ষ!!
কেউ কেউ বলেন ৯ মাস অর্থাৎ ২৭০ দিনের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ্য লোকের মৃত্যুবরণ ঘটেছে!! মানে প্রতিদিন প্রায় ১১,১১১ জন কে হত্যা করা হয়েছে! ব্যাপার টা আসলেই যেন কেমন কেমন!!
-
একজন মানুষ কে হত্যা করলে কত খবর হয়ে যায় আর এত মানুষ প্রতিদিন মারা হইছে? কেমনে কি??
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে প্রায় ৪৩ বছর আগে অথচ এই বিতর্ক এখনো যাচ্ছে না ... যে মহান মুক্তিযুদ্ধে নাকি ৩০ লক্ষ লোক শহীদ হয় নাই ... হয়েছে মাত্র ৩ লক্ষ!
আচ্ছা বেশি তর্ক বিতর্কের দরকার নাই!!

কয়েকটা নমুনা দেখিঃ
(১) মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের লোক সংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ কোটি। এখন যদি প্রত্যেক পরিবারে ৫ জন করে সদস্য করে থাকে তবে ১৯৭১ সালে মোট পরিবারের সংখ্যা গড়ে দেড় কোটি।
৩০ লক্ষ শহীদ মোট জনসংখ্যা সাড়ে ৭ কোটি অর্থাৎ = ৪%
অর্থাৎ = ১,৫০,০০,০০০ x ৪% = ৬,০০,০০০ পরিবার
অর্থাৎ ৬,০০,০০০ পরিবারের কেউ না কেউ তো মারা গিয়েছেন। এখানে এটা বুঝতে হবে অনেক পরিবারের এমনও হয়েছে কেউ বেঁচে ছিলেন না, আবার ১ জন ছাড়া সবাই মারা গিয়েছেন, আবার ১ জন মারা গিয়েছেন অথবা পরিবারের কেউ মারা যাননি! অর্থাৎ দেড় কোটি পরিবারের মধ্যে ৬ লক্ষ পরিবার হামলার শিকার হয় নি একথা নিশ্চয়ই আপনার না বিশ্বাস করার কথা!
অথবা এভাবে দেখুন, দেড় কোটি পরিবার ছিল আর প্রতি পরিবারে সদস্য সংখ্যা গড়ে ৫ জন! ৩০ লক্ষ লোক দেড় কোটি পরিবারের মারা গিয়েছে অর্থাৎ প্রত্যেক পরিবারে শতকরা ০.২০ জন। অর্থাত ১০০ পরিবারে মধ্যে ২০ টি পরিবার যারা পাকি / পাকির দোসর দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে! সংখ্যাটা কি অমূলক!! আপনিই বলেন?

(২) মানব ইতিহাসে যত গণহত্যা হয়েছে এর মধ্যে বাংলাদেশের ১৯৭১’ এর গণহত্যায় স্বল্পতম সময়ে এই সংখ্যা সর্ববৃহৎ। গড়ে প্রতিদিন ৬,০০০ - ১২,০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। .. .. .. এটি হচ্ছে গণহত্যার ইতিহাসে প্রতিদিনে সর্ব্বোচ্চ নিধনের হার।

তার মানে দাঁড়াইতাছে, পাক বাহিনী এই নাপাক কামডা (দিনপ্রতি ৬০০০-১২০০০ বাঙালী নিধন) করছে মোটামুটি ২৬০দিনে (একাত্তুরের ২৫-এ মার্চ থেইক্যা শুরু কৈরা ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত)। আওয়ামী বাকশালী ভারতের দালাল গো দেওয়া তথ্য না, ইউ এন এর নিরপেক্ষ ডাটা লৈয়া একটু হিসাব করণ যাক। আহেন ভাইসব, একটু ক্যালকুলেটর লৈয়া বসি:

বাঙালী নিধনের লোওয়ার লিমিট: ৬০০০ x ২৬০ = ১৫,৬০,০০০ (১৫ লক্ষ ৬০ হাজার)। আর নিধনের আপার লিমিট: ১২০০০ x ২৬০ = ৩১,২০,০০০ (৩১ লক্ষ ২০ হাজার)।

যদি আমরা “হ্যার মাঝামাঝি” লৈয়া হিসাব করি, তাইলে সংখ্যাডা দাঁড়ায়: ২৩,৪০,০০০ (তেইশ লাখ চল্লিশ হাজার)। ... আচ্ছা যান ৩০ লক্ষ নয় তাই বলে ৩লক্ষ তো আর হতে পারে না! অন্তত ২৩ লক্ষ তো হবেই!!

(৩) মুক্তিযুদ্ধে চলাকালীন ৯ মাস অর্থাৎ ২৭০ দিনের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ্য লোকের মৃত্যুবরণ ঘটেছে!! মানে প্রতিদিন প্রায় ১১,১১১ জন কে হত্যা করা হয়েছে! ব্যাপার টা আসলেই যেন কেমন কেমন!!
হিসেব টা একটু অন্যভাবে দেখলে হয় না!
৪৮০ টি থানা, ৪৫০০ ইউনিয়ন, ৬৮০০০ গ্রাম এই ভাবে একটু ক্যালকুলেশন করেন না!
অর্থাৎ প্রতিদিন প্রতিটি থানায় = (৩০,০০,০০০ / ২৬০) / ৪৮০ = ২৪ জন (আনুমানিক) হত্যা করা হয়েছে
একই সূত্রে প্রয়োগ করলে প্রতিদিন প্রতি ইউনিয়নে ৩ জন (আনুমানিক)
আর প্রতিটি গ্রামে ২৬০ দিনে মারা গিয়েছেন = ৩০,০০,০০০ /৬৮০০০ = ৪৪জন (আনুমানিক)
সংখ্যাটি কি খুব বেশি??
গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে ... জনমানব শূন্য হয়ে গিয়েছে!
আচ্ছা শুধুমাত্র ২টা দিনের কথা বলি,
২৫ শে মার্চ অপারেশন সার্চ লাইটের অভিযানে শুধুমাত্রা রাজারবাগ পুলিশ লাইনে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও শিক্ষক কোয়ার্টার সহ ঢাকা শহরে শুধুমাত্র ৩ ঘন্টায় আনুমানিক ৬,০০০ জনকে হত্যা করা হয়েছে!

পরিশেষে বলতে চাই এইসব বিশ্ব মিডিয়া ঢালাও ভাবে প্রচার করছে যে ৩০ লক্ষ নয় মাত্র ৩ লক্ষ মারা গিয়েছে!
ভাই আমি আরো কমাইয়া দিলাম যান ৩ হাজার জন মারা গেছেন!
তো আপনি কি বলতে চান ৩ হাজার কোনো সংখ্যা না!
শুধুমাত্র একটা ইনটেলেকচুয়াল জেনারেশন আমাদের মধ্যে হারিয়ে গেছে ... কে দিবে সেই ক্ষতি পূরণ?
মুনীর চৌধুরী বেঁচে থাকলে কত লিজেন্ডারি উপন্যাস পাওয়া যেত! জহির রায়হান বেঁচে থাকলে বাংলাদেশের সিনেমা সংস্কৃতি আজকে এখানে পড়ে থাকতো না। উনাদের অভাব কি আমারা টের পাচ্ছি না ...
এক হূমায়ুন আহমেদে মারা গিয়েছেন ... তার জায়গাটাই তো কেউ পূরণ করতে পারছেনা।

মোদ্দা কথা যাকে সাপ দংশন করেনি সে কিভাবে বুঝবে সাপের দংশনের যন্ত্রনা।
দুঃখ একটাই আমরা স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরে এসেও কেউ পাকির দালাল কেউ ভারতের কেউ আম্রিকার কিন্তু বাংলাদেশের দালাল কেউ হতে পারলাম না!

প্রয়োজনীয় লিংকঃ

১) তথ্য’বিনা মিথ্যা বোনা

২) ত্রিশ লক্ষ শহীদ : মিথ নাকি বাস্তবতা ?


লেখকের ফেইসবুক লিংকঃ
মোঃ মামুন চৌধুরী

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:০৪
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×