অ্যাপাতি হলেন ছলনার দেবী এবং দেবতা ডলসের(আগের পর্বে বর্ণিত) যোগ্য স্ত্রী। প্যান্ডোরাস বক্সের মধ্যে মানবজাতির জন্যে শাস্তিস্বরূপ রাখা বিভিন্ন স্পিরিট এর মাঝে অ্যাপাতিও একজন বলে ধারণা করা হয়। কারো কারো মতে অ্যাপাতি দেবী নিক্স থেকে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে জন্ম নিয়েছেন।
মমাসের কাহিনী বেশ মজার। মমাস কে বলা বিদ্রূপ ও উপহাসের দেবতা। তাকে নিয়ে বর্ণিত গল্প-কাহিনী থেকে তার বুদ্ধিমিশ্রিত ধারালো বিদ্রূপশক্তির প্রমাণ পাওয়া যায়। তিনি এমনই খুঁতখুঁতে ছিলেন এমনকি দেবতা ও দেবীদের কাজের মাঝেও তিনি খুঁত ধরে বেড়াতেন এবং সেসব নিয়ে উপহাসও করতেন। জিউসের নির্দেশে পসাইডন যখন মানুষ সৃষ্টি করলেন তখন মমাস সেখানে এসে বিদ্রূপ করে বললেন মানুষ নির্মাণে ত্রুটি রয়েছে। মানুষের বুকে অবশ্যই একটি জানালা রাখা উচিৎ ছিলো যা দিয়ে তার মনের গোপন খবরগুলো জানা যাবে। এছাড়াও জ্ঞানের দেবী অ্যাথেনা মানুষের থাকার উপায় ও আশ্রয় হিসেবে যখন প্রথম একটি ঘর নির্মাণ করলেন তখন মমাস সেটাকে নিয়েও মজা করতে ছাড়েন নি। তিনি বললেন, সেই ঘর বানিয়ে লাভ কি যেটা কি না এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বহনই করা যায় না ! বিরক্তিকর প্রতিবেশীর হাত থেকে বাঁচার তো কোন উপায় থাকে না তাতে। শুধু এখানেই শেষ না। স্বয়ং আফ্রোদিতিকেও তার রূপ নিয়ে খোঁচা দিয়েছিলেন তিনি। অপর এক দেবতা কোন একটা প্রয়োজনে কিছু ষাঁড় সৃষ্টি করেছিলেন। ষাঁড়ের কাঠামো দেখে মমাস বলেছিলেন, ষাঁড়ের শিং দুটি আসলে ঠিক জায়গায় বসানো হয় নি। দু’চোখের মাঝামাঝি জায়গাটিতে শিং বসালে ষাঁড় নাকি আঘাত করতে আরো বেশী সুবিধা পেত। এমনই আরো হাজারো খোঁচায় অতিষ্ঠ হয়ে দেবতারা শেষ পর্যন্ত তাকে অলিম্পাস থেকে বহিষ্কার করেন। প্রাচীন চিত্রকর্মে তাকে একটি রঙ্গমুখোশ ধরে থাকতে দেখা যায়।
শ্যারন অথবা খ্যারন যেই নামই হোক না কেন এই দেবতাটি কিন্তু গ্রিক বিশ্বাসের খুবই মৌলিক একটি দায়িত্ব পালন করেন। গ্রিক বিশ্বাসে মৃত্যুর পরে মানুষের আত্মাকে মৃত্যু দেবতা থানাটস স্টিক্স নদীর তীরে পৌঁছে দেন। নদী স্টিক্স ও অ্যাখেরন নামের অপর একটি নদী পার হয়েই তবে আত্মাটি আণ্ডারওয়ার্ল্ডে প্রবেশ করতে পারে। তবে কোন আত্মাই নিজে নিজে এ দুটি নদী পার হতে পারে না। মৃত আত্মাদের নদী পার করে দেয়ার জন্যে সেখানে একটি নৌকা ও একটি বৈঠা নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন শ্যারন। পূর্ব-নির্ধারিত শর্ত মোতাবেক এক ওবোল(প্রাচীন গ্রিক স্বর্ণমুদ্রা) এর বিনিময়ে মাঝি দেবতা শ্যারন বিদেহী আত্মাদেরকে নদী পার করে আণ্ডারওয়ার্ল্ডে পৌঁছে দেন। গ্রিকদের মৃতদেহ সৎকারের সময় মৃতদেহের সাথে একটি অবোল কয়েন দিয়ে দেয়া হত পাথেয় স্বরূপ। ধারণা করা হয় কেউ যদি এই কয়েন দিতে অসমর্থ হয় অথবা কোন মৃতদেহের যদি সৎকার করা না হয় তাহলে সেই আত্মাকে শ্যারন তার নৌকায় জায়গা দেন না। ফলে সেসব আত্মাকে শাস্তি স্বরূপ একশ বছর ধরে ঐ নদী তীরে পায়চারি করতে হয়। রুক্ষ ও কঠোর চরিত্রের শ্যারন জীবিত কাউকেই নদী পার হতে দেন না। যদিও কিছু হিরো যেমন হারকিউলিস, সাইকি, থিসিয়াস, পার্সি প্রমুখ্ জীবিত থাকতেই শ্যারন’কে ভুলিয়ে অ্যান্ডারওয়ার্ল্ডে প্রবেশ করেন এবং জীবিত বেড়িয়েও আসেন।
নিক্সের আরো কিছু সন্তান আছে। এরা এতটাই অগুরুত্বপূর্ণ যে এদের নিয়া আলোচনা না করলে কিছুই যায় আসে না। এই পর্বে বর্ণিত সন্তানরা সবাই দেবী নিক্সের সন্তান হলেও সবাই কিন্তু তার স্বামী এরেবাসের সন্তান ছিলেন না। মিথ সহ সর্বক্ষেত্রে দেবী নিক্স এর এই সন্তানরা খুব বেশী একটা আলোচিত হন নি। যতটুকুও বা আলোচিত হতে পারতেন তাও ম্লান হয়ে গেছে পরবর্তী কালের দেবতা টাইটান ও অলিম্পিয়ানদের জনপ্রিয়তায়। রাত্রি দেবী নিক্সের সন্তান হওয়ায় এবং প্রায় আড়ালেই থেকে যাওয়ায় তাদের নিয়ে লিখিত আমার এই পর্বটির নাম দিলাম দ্য চিলড্রেন অফ নাইট।
কেমন লাগলো জানাবেন এবং সাথেই থাকবেন। গ্রিক মিথের এই সৃষ্টিগল্প বর্ণনায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে না গিয়ে আমি একটি নির্দিষ্ট পথ ধরে এগোনোর চেষ্টা করছি। পূর্বের মত আশা করছি এ পথ আনন্দদায়কই হবে। ভালো থাকবেন।
তথ্যসূত্রঃ
১। এন আরটিকল অন গ্রিক নাইট;
২। হেসিওডস থিওগনি;
৩। এনসাইক্লোপিডিয়া অফ গ্রিক এন্ড রোমান মিথলজি;
৪। অনলাইন।
ছবি সংগ্রহঃ গুগল এন্ড পিন্টারেস্ট।
পরবর্তী পর্বঃ গ্রিক মিথলজিঃ ইউরেনাস- আ ফেইলড ফাদার (A Failed Father)