আমার দেখা থাইল্যান্ডঃ পর্ব- ২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
ব্যাংকক এয়ারপোর্টে সাবেক উপদেষ্টা মইনুল হোসেনের সাথে আমি।
হোটেল থেকে বের হয়ে সোজা রাস্তা দিয়ে হাটা দিলাম। রাত ১০ টা বেজে গেছে এখনও খাওয়া হইনি, ব্যবস্থা করতে হবে। ম্যাসেজ সেন্টার দেখতে দেখতে কিছু দূর এসে একটি ইন্ডিয়ান হোটেল দেখতে পেলাম। আর খোঁজাখুঁজি না করে সেটাতেই ঢুকে পড়লাম। স্ট্রিম রাইস, সি-ফুড আর ডাল দিয়ে রাতের খাবার খেলাম। মাছের কারিটা মিষ্টি মিষ্টি ভাব আছে। সিলভী বাড়তি কাচা মরিচ চেয়ে নিল। ও আবার ঝাল বেশি খাঁয়। ডালটা অনেক স্বাদ লাগলো। শুধু ডাল দিয়েই দুই প্লেট ভাত খাওয়া যায়। খাওয়া শেষ করে বের হয়ে আবার ফিরে আসতে লাগলাম। কোন একটা গলি পেলেই ঢুকে পড়ব ভাবছি। আসতে আসতে চোখে পড়ল একটি সাইন বোর্ড, “ভিততে বাংলাদেশী হোটেল” আছে। পুরাপুরি বাংলায় লেখা। যায়গাটা দেখে রাখলাম, একবার ঘুরে আসা যাবে। সামনে একটা গলি পেয়ে ঢুকে পড়লাম। সোজা উঠলাম বিচ রোডে। রাস্তা পার হয়ে ঐ পাড়ে রাস্তা থেকে বড় ফুটপাথ, ফুট পাথ ঘেসে সৈকত। সম্পূর্ণ ফুটপাথে রোড টাইলস বিছানো আর বড় বড় গাছের সারি। দুজন হাত ধরে গল্প গল্প করতে করতে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছি। ডানে তাকালেই সমুদ্রের পানি আর রংবেরঙের লাইটের ঝলকানি। ফুটপাথের উপরে প্রতিটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একজন করে নিশিকন্যারা। উদ্ভট সাজে পর্যটকদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে। আর একটু সামনে এসেই বড় করে একটা সাইন বোর্ড ঝুলতে দেখলাম। লেখা “ওয়েল কাম টু ওয়াকিং ষ্ট্রীট”, ঢুকে পড়লাম সেই এলাকার ভিতর। ঢোকার মুখেই পুলিশের ক্যাম্প বসানো, লেখা বিচ পুলিশ।
ওয়াকিং ষ্ট্রীট”
“ওয়াকিং ষ্ট্রীট” মুলত একটা রাস্তা, যেখান দিয়ে শুধুমাত্র হেঁটে চলাফেরা করা যায়। কোন বাহন চলতে পারবেনা। রাস্তাটা দীর্ঘ ১ কিঃমিঃ হবে। পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে আছে পুরা এলাকা। রাস্তার দুই পাশ দিয়ে বিভিন্ন ফাস্ট ফুডের দোকানপাট ও বার সেন্টার। ওপেন বার গুলো থেকে লাইভ গানের সুর ভেসে আসছে এবং ছেলে মেয়েদের নাচানাচি চলছে। আমরা এক একটি দোকানের দিকে তাকাচ্ছি আর মজা দেখছি। দোকানের সামনে দিয়ে রাস্তায় হাতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে মেয়েরা দাঁড়িয়ে আছে। তাঁরা কাস্টমারদেরকে নিজেদের দোকানে নেবার চেষ্টা করছে। ওয়াকিং ষ্ট্রীটের শেষ মাথা পর্যন্ত হেঁটে ফিরে আসছি। সিলভীর পানি পিপাসা লেগেছে। কোন একটা ফাষ্ট ফুড জাতীয় দোকানে বসে ঠাণ্ডা কিছু খাওয়া যায় কিনা দেখতে বলছে। বার গুলো সব ওপেন কিন্তু ফাস্ট ফুডের দোকান গুলো গ্লাসে ঢাকা সাথে পর্দা টানা। রাস্তায় দাঁড়ানো মেয়েদের কাছে জিজ্ঞেস করে এই ধরনের একটি ফাষ্ট ফুডের সপে ঢুকলাম। ভিতরে আমাদের দেশের চাইনিজ রেস্টুরেন্টের মত আলোর ব্যবস্থা। হটাত করে ঢুকলে তেমন একটা দেখা যায় না। ধীরে ধীরে সব পরিষ্কার হয়। আমাদের একজন পথ দেখিয়ে নিয়ে একটি সোফায় বসতে দিল। সামনে একটি স্টেজের মত প্লাটফর্ম আছে। এই স্টেজকে ঘিরে চারিদিকে বসার ব্যবস্থা। ভিতরে সাউন্ড বক্সে চলছে তুমুল গান। একটি মেয়ে চার্ট নিয়ে অর্ডার নিতে আসলো। শুধু সফট ড্রিংক্স চাইলাম। সে জানালো খুব উন্নত মানের হায়কেন বিয়ার বড় সাইজটার দাম ৮০ বাথ আর কোকের ক্যান ১১০ বাথ। তাহলে কেন আমি হায়কেন না নিয়ে কোক চেয়ে বোকামি করছি? একটু হেঁসে সিলভীকে দেখিয়ে বললাম সে বিয়ার খাঁয় না। মেয়েটি একটা হাঁসি দিয়ে কোক আনতে চলে গেল। অবাক হলাম অবস্থা দেখে, মদের থেকে পানির দাম বেশি। সামনে যে স্টেজ আছে তার চার কোনায় চারটা পাইপ উপরে উঠে গেছে। ঐ পাইপ চারটা ধরে চারটি মেয়ে বিভিন্ন ভঙ্গীতে গানের তালে নাচানাচি করছে। এখন আমার মনে পড়তে লাগলো থাই দুতাবাসের যে লোকটি দেশে থাকতে আমাদের ইন্টারভিয়্যু নিয়েছিল তার কথা। আমাদের ভিসা দেবার আগে দুতাবাসে আমাদের স্বশরীরে হাজির হতে হয়েছিল। ঐ সময় কথা প্রসঙ্গে লোকটি বলেছিল ফ্যামিলি ট্যুরের জন্য ফুকেট ভালো। কিন্তু এই সময় ফুকেট যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিলনা। ব্যাংকক থেকে বাসে ২২ ঘন্টার আর বিমানে ২ ঘন্টা জার্নি। খরচ অত্যাধীক বেশি। অবশ্য এর পরের বছর আমি আবার ফুকেট গিয়েছি।
একটি টেম্পের সামনে
দুতাবাসের অফিসারের কথাটা তখন কিছু বুঝি নাই। দেশে থাকলেই জানতাম যত ট্যুরিষ্ট থাইল্যান্ড যায় সে অবশ্যই পাতায়া যায়। আর এখানে সে ফ্যামিলি ট্যুর নিরুৎসাহিত করছে!! পাতায়ার এই সপে বসে এখন বুঝতে পারছি কেন সে বলেছিল ফ্যামিলি ট্যুরের জন্য ফুকেট ভালো। আমাদের সামনে যে মেয়ে চারটা নাচানাচি করছে তাঁদের শরীরে কোন কাপড় নেই। কাপড় যে কিছুই নেই সেটা না, ডান হাতে একটি করে লাল কাপড়ের ব্যান্ড বাঁধা আছে। কাপড়ের স্পর্শ বলতে এটা। এতক্ষন আশে পাশে খেয়াল করা হয়নি। এবার ডানে বায়ে তাকিয়ে দেখি গেস্ট যারা আছে তাঁদের সবার কোলে একটা করে হাতে ব্যান্ড বাঁধা থাই মেয়ে বসে আছে। ইন্ডিয়ান গেস্ট গুলো একটি বেশি বাড়াবাড়ি করছে। কারও দিকে তাকানোর কারও সময় নেই। সিলভী বলে কই আইলাম? কোকের অর্ডার দিয়ে বের হয়েও যেতে পারিনা। এর ভিতর যে চারটি মেয়ে ষ্টেজে ছিল তাঁদের ভিতর থেকে একজন নেমে আমাদের দিকে এগিয়ে আসলো। সুন্দর করে বাও করার মত করে আমার পাশে বসার অনুমতি চাইলো। সিলভীকে দেখিয়ে তাকে বুঝাতে চাইলাম আমার সাথে আছে, তোমাকে লাগবে না।
স্বচ্ছ পানিতে আমি
সে নাছোড়বান্দা। আমার পাশে বসবেই! দুজনকে দুপাশে রেখে আমার মাঝে বসতে সমস্যা কোথায় সে বুঝতে পারছেনা। অবশেষে সিলভী তার হাত ধরে নিজের পাশে নিয়ে বসালো। সে সিলভীর পাশে বসে পিছন দিয়ে আমার ঘারে হাত তুলে দিল। বুঝলাম সে আমাদের মগা পেয়ে মজা নিতে চাচ্ছে। এতক্ষন তো হেসেছি। এইবার হাঁসি বন্ধ করে বললাম তুমি তাড়াতাড়ি খবর নাও আমার অর্ডারের কি হলো। সে সাথে সাথে উঠে খোঁজ নিতে গেল। একটু পর নিজেই হাতে করে নিয়ে আসলো। যতক্ষণ ছিলাম ঐ মেয়েকে দেখলাম আমার বউ এর সাথে কুটকুট করে গল্প করছে। অন্য কোন ছেলের কাছেও আর উঠে গেলনা। গেলে হয়তো এক্সট্রা টাকা পেত। আমরা বের হবার সময় মেয়েটির হাতে ২০ বাথ টিপস হিসাবে তুলে দিলাম। মেয়েটি টাকাটা হাতে নিয়ে মাথা নিচু করে থ্যাংকস জানালো। সিলভীর হাত চেপে ধরে বলল তুমি অনেক সুন্দর ও ভাগ্যবতী। তোমার লাইফ পার্টনার অনেক চমৎকার। বউকেও দেখলাম থাই মেয়েটিকে প্রশংসা করতে করতে বের হচ্ছে। ওখান থেকে বের হয়ে আবার বিচের পাড় ঘেঁষে হাটতে লাগলাম। কিছুদূর যেয়ে সমুদ্রের দিকে মুখ দিয়ে ফুটপাথের উপর বসে পড়লাম। ঐ দূরে পাহাড়ের উপর জ্বলজ্বল করে জ্বলছে লেখা PATAYA CITY আর সেই লাল নীল আলো এসে আঁচড়ে পড়ছে সমুদ্রের পানিতে। অন্যরকম আবহ তৈরি করছে চারপাশ। বউ এর দিকে তাকিয়ে দেখি লান নীল আলোর আভা তার মুখের উপর এসেও পড়ছে। তাকেও অন্যরকম লাগছে দেখতে। স্বপ্নিল পরিবেশে বউ এর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে খারাপ লাগছেনা। মনে হচ্ছে একটি জীবন আমি শুধু এই চোখের দিকে তাকিয়েই পার করে দিতে পারি।
স্বপ্নের দেশ থাইল্যান্ড
রাত ১ টার দিকে হোটেলে ফিরে আসলাম। হোটেলে ঢুকতে যেয়ে দেখি গাছের নিচের কন্যারা হোটেলের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। লবিতে মানিক সাহেবের সাথে দেখা, কালকের প্রগ্রাম কি করা যায় তার পরামর্শ চাইলাম। তিনি কোরাল দ্বীপে যেতে বলল। কাল তার বাহিনী কোরালের পথে রওনা দিবে। আমাদের দুজনের খরচ বাবদ ২০০০ বাথ দিয়ে দিলাম। তারাতারি ঘুমিয়ে পড়তে হবে। সকালে রওনা দিতে হবে কোরাল দ্বীপের পথে।
---- (চলবে) -----
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া
একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন
ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই
রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।
ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!
~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে
ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন