somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাতকাহনের গল্প রাজপ্রাসাদের নিচে লুকানো এক বিশাল শহর

০৮ ই মে, ২০১৬ সকাল ৮:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চীনের ফরবিডেন সিটির নাম নিশ্চয় শুনেছেন । চীনের আগেকার রাজাদের প্রাক্তন প্রাসাদ আয়তনে এতটাই বড় ছিল যে তাকে বলা হয় ফরবিডেন সিটি! জনসাধারণের জন্য এই প্রাসাদ এক সময় নিষিদ্ধ ছিল। আর এর বিশাল আয়তনের কারণেই কিন্তু একে শহরের সঙ্গে তুলনা করা হয়!


সম্প্রতি এক প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষা চমকে দিয়েছেন সবাইকে। খননকার্যে জানা গেছে ওই ফরবিডেন সিটির নিচে লুকিয়ে রয়েছে আরো একটা প্রত্নতাত্ত্বিক শহর। অনেক বছরের পুরনো তার ঘরদোরের গঠন এমনটাই দাবি করছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা ও বিশেষজ্ঞরা।
মঙ্গোল ইউয়ান রাজবংশের সময় ওখানে প্রথম রাজকীয় নগরী গড়ে ওঠেছিল। ইউয়ান রাজবংশের পর মিং বংশের সম্রাট হোংকু রাজধানী বেইজিং থেকে নানকিংয়ে নিয়ে যান এবং ইউয়ান প্রাসাদ পুড়িয়ে দেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তার ছেলে সম্রাট হয়ে রাজধানী আবার বেইজিংয়ে নিয়ে আসেন এবং এখানে প্রাসাদ নির্মাণের আদেশ দিয়ে তৈরি করান।
ফরবিডেন সিটি ছিল মিং এবং কিং রাজাদের একটি বাসস্থান। যেটি গড়ে উঠে ১৩৬৮সাল থেকে ১৯১১সালের মধ্যে। অন্য দিকে প্রাসাদের তলায় যে শহরের সন্ধান মিলেছে বিশেষজ্ঞদের মতে ধারণা করা হচ্ছে তা ইউয়ান বংশের শাসনের সময়ে নির্মিত হয়েছিল। অর্থাৎ ১২৭১ সাল থেকে ১৩৬৮ সালের মধ্যে তা নির্মাণ করা হয়েছিল।


সব মিলিয়ে চিনের প্রত্নতাত্ত্বিকদের মধ্যে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। প্রত্নতত্ত্ব বিদদের বক্তব্য সদ্য আবিষ্কৃত ওই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থল থেকে চীনা রাজপ্রাসাদের গঠন এবং বিবর্তনের কাঠামোটি খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।ফরবিডেন সিটি ৭ লাখ ২০ হাজার বর্গমিটার বা ৭৮ লাখ বর্গফুট এলাকা জুড়ে নির্মিত প্রাচীর ঘেরা এক বিশাল জগৎ। তার মধ্যে ৯৮০টি প্রাসাদ ভবন ও বাগান, ভাস্কর্য, জলাশয় এবং প্রাঙ্গণ রয়েছে। ১৪০৬ সাল থেকে ১৪২০ সালের মধ্যে ফরবিডেন সিটির মূল কয়েকটি স্থাপনা গড়ে ওঠে। ফরবিডেন সিটি ছিল চীন সম্রাটদের বাসস্থান এবং পাঁচশ বছর ধরে চীনের প্রশাসনিক ক্ষমতার মূল কেন্দ্র।চীনের ইউয়ান রাজবংশের সময় ফরবিডেন সিটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হলেও এর মূল স্থাপনাগুলো গড়ে ওঠে মিং এবং ছিং রাজবংশের শাসনকালে। সম্রাটের অনুমতি ছাড়া এই এলাকায় কেউ প্রবেশ করতে বা এলাকা ত্যাগ করতে পারতো না বলেই এর নাম ফরবিডেন সিটি।


ফরবিডেন সিটি এখন আর নিষিদ্ধ নেই। এখানে এখন আছে প্যালেস মিউজিয়াম। মিং রাজবংশের সময় নির্মিত চীনা মাটির অপূর্ব সুন্দর একটি শিল্প নিদর্শন । সোনা, রূপা, জেড পাথরসহ বিভিন্ন মহামূল্যবান রত্নে তৈরি শিল্প সামগ্রী, চীনা রেশমের কারুকার্যময পোশাক, দুর্লভ হস্ত শিল্পটি এখন রয়েছে প্যালেস মিউজিয়ামে। তাছাড়াও এখানে রয়েছে তাং এবং সং রাজবংশের অসাধারণ সব মূল্যবান শিল্প সংগ্রহ। রয়েছে ৫০ হাজার পেইন্টিং।


১৪০৬ সালে ফরবিডেন সিটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। ১৫ বছর ধরে দশ লাখেরও বেশি শ্রমিক এই প্রাসাদ নির্মাণের কাজ করেন। দক্ষিণ পশ্চিম চীনের অরণ্য থেকে আনা হয় মহামূল্যবান ফোবে চেনান কাঠ ও মার্বেল আর পাথরের বিশাল সব খণ্ড দিয়ে সাজানো হয়েছিল প্রাসাদের বিভিন্ন কক্ষ। তৈরি হয়েছিল অসাধারণ সব ভাস্কর্য। প্রাসাদকক্ষের মেঝে তৈরি হয় সোনালি ইট দিয়ে। মিং রাজবংশের ১৪ জন সম্রাট এবং ছিং রাজবংশের ১০ জন সম্রাট ফরবিডেন সিটিতে বাস করেন এবং এখান থেকে পুরো চীন দেশ শাসন করেন।


সারা ফরবিডেন সিটি এখন পর্যটকদের জন্য একটি উন্মুক্ত ও পর্যটক কেন্দ্র। ফরবিডেন সিটি হলো প্রাচীন এবং মধ্যযুগীয় চীন সভ্যতার শিল্পকীর্তির প্রতীক। বেইজিংয়ের প্রাণকেন্দ্র থিয়েন আনমেন চত্বরের বিপরীত দিকেই রয়েছে ফরবিডেন সিটিতে প্রবেশের প্রধান ফটক বা তোরণ। এই তোরণটি এত বিশাল যে একে একটি স্বতন্ত্র প্রাসাদ বলে মনে হয় ।


ফরবিডেন সিটিতে প্রবেশের মূল তোরণগুলোর মধ্যে মেরিডিয়ান গেট ও গেট অব ডিভাইন মাইট, ওয়েস্ট গ্লোরিয়াস গেট, ইস্ট গ্লোরিয়াস গেট এবং গেট অব সুপ্রিম হারমোনি বিশেষ বিখ্যাত। ফরবিডেন সিটির পুরো এলাকা ৭.৯ মিটার উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। ফরবিডেন সিটি প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত। সামনের প্রাসাদগুলো সম্মুখ দরবার আর ভিতরের দিকের প্রাসাদগুলো অন্দর দরবার নামে পরিচিত।


সম্মুখ দরবার প্রধানত উৎসব অনুষ্ঠানের জন্য আর অন্দর দরবারের প্রাসাদগুলো রাজপরিবারের বাসস্থান এবং সাধারণ প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের জন্য এটি ব্যবহৃত হতো। সম্মুখ দরবারের প্রথম প্রাসাদটি সুপ্রিম হারমোনি চত্বরে অবস্থিত। এই ভবনে রয়েছে তিনটি বিশাল হল বা দরবার কক্ষ। এই হলগুলোর নাম সুপ্রিম হারমোনি ও সেন্ট্রাল হারমোনি এবং প্রিসারভিং হারমোনি।


এর মধ্যে সুপ্রিম হারমোনি হলো সবচেয়ে বড়। মেঝে দেয়াল এবং সিলিংয়ের অপূর্ব কারুকার্য পর্যটকদের বিস্মিত এবং মুগ্ধ করে। এখানে সম্রাটের অভিষেক অনুষ্ঠান হতো। মিং ও ছিং রাজবংশের শাসনামলে এখানে শুধুমাত্র বিশেষ অনুষ্ঠান যেমন সম্রাটের অভিষেক ও রাজপরিবারের বিয়ে এবং বিশেষ দরবারের আয়োজন করা হতো। অন্যান্য হলগুলোতে নিয়মিত দরবার বসতো। যদিও তিনটি হলেই সিংহাসন ছিল তবে সবচেয়ে জমকালো সিংহাসন ছিল সুপ্রিম হারমোনি হলে।


সম্মুখ দরবারের দক্ষিণ পশ্চিম এবং দক্ষিণ পূর্বে রয়েছে মিলিটারি এমিনেন্স হল ও লিটারারি গ্লোরি হল। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে প্রথমটিতে মন্ত্রী এবং সামরিক কর্মকর্তাদের নিয়ে দরবারটি বসতো। দ্বিতীয়টিতে রাজ্যের পণ্ডিত ব্যক্তিরা বক্তৃতা করতেন। এখানে রয়েছে যুবরাজের বসবাসের জন্য প্রাসাদ এবং অন্যান্য প্রাসাদ।অন্দর দরবার ছিল মিং ও ছিং রাজবংশের সম্রাট এবং তার পরিবারের সদস্যদের বাসস্থান ছিল। অন্দর দরবারের প্রাসাদগুলোর কারুকার্যে মুগ্ধ এবং বিষ্মিত দর্শকরা অনুভব করেন চীনের সম্রাটদের অতুল ঐশ্বর্য ও শিল্পীদের অসাধারণ নৈপুণ্যকে।


অন্দর দরবারে রয়েছে ভাস্কর্য এবং জলাশয় শোভিত বাগান। যা শিল্প ও বিলাস এবং সৌন্দর্যের অপূর্ব নিদর্শন।পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে অসংখ্য পর্যটক প্রতিদিন ফরবিডেন সিটিতে আসেন। ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও শিল্প নিদর্শন,সম্পদ এবং সৌন্দর্যের দিক থেকে ফরবিডেন সিটি হলো পৃথিবীর বুকে মানুষের সৃষ্টি সবচেয়ে সুন্দর অন্যতম স্থাপনা।


ছবিওতথ্যসূত্র ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৬ সকাল ৮:২৭
১৩টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×