somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন ছেলে ও তার বাবার মধ্যকার সম্পর্কের অন্তঃকাহিনী, নিজের জীবনের সাথে হয়তো মিলেও যেতে পারে,চলুন,পড়ে আসি। :)

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনার কি...মনে আছে সেই দিনগুলোর কথা যখন আপনার বাবার হাতের একটি আঙ্গুল পরম নিশ্চয়তার সাথে ধরে বাজারে যেতেন ? আপনার কি মনে হত না...কেউ আর আমার কিছু করতে পারবে না, ঐ দুষ্ট সবুজ ও না,কারণ বাবা আমার সাথে আছে?? আমার জীবনের কিছু কথা বলি...

আমার বাবা আমারে নিয়া যে কি শুরু করসে :( !! ঘটনাগুলা পড়েন, বুঝতে পারবেন , __

ক্লাস 3 তে যখন উঠলাম তখন বলল,বাবা, ৪র্থ শ্রেণীতে তো বৃত্তি আছে, তুমি যদি বৃত্তি পাও তাহলে আমি খুব খুশি হব :) ... যাক,অনেক কষ্টে Class 4 এর বৃত্তিটা পাইলাম ট্যালেন্টপুলে।

তারপর পঞ্চম শ্রেণীতে উঠার পর বলল , বাবা, এইবার যদি ট্যালেন্টপুলে পাও তাহলে একটা সাইকেল কিনে দেব:o . যাক, আবারো ছাগলের মত পড়াশোনা করে ট্যালেন্টপুলেই বৃত্তি পেলাম, আর সাইকেলটা কব্জা করে নিলাম :p

ক্লাস এইট এ যখন উঠলাম, তখন বলল , এইবার যদি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাও তাইলে ' কম্পিউটার' কিনে দিব ,বাবা... কি আর করা, অনেক দিনের শখ যেহেতু , তুমুল মনযোগ দিয়া পড়াশোনা করলাম আর ট্যালেন্টপুলেই বৃত্তি পেলাম... হিসাব মতে, কম্পিউটার আমার পাবার কথা... বাবাও আগ্রহী...এমন সময় কে যেনো আব্বার কানে দিলো , '' এই বয়সে বাচ্চার হাতে কম্পিউটার দিলে পোলাপাইন নষ্ট হয়ে যায় :(

আমি কিন্তু হাল ছাড়ি নাই... প্রবল অনশন ধর্মঘট এর মাধ্যমে আমার কম্পিউটার আমি আদায় করে নিলাম... ;)

অতঃপর নবম শ্রেণীতে উঠার পর প্রবীণরা পরামর্শ দিলেন যে ৯,১০ ...এই দুই বছর জীবন গঠন করার উপযুক্ত সময়, ইন্টারমিডিয়েট এ গেলে বহুত ঘুরার টাইম পাইবা,বুঝছ??? :O ...এই সময়ে বিপথে গেলে এক্কেরে্‌...। যাক A+ ই পেলাম। :)

বিপুল,আনন্দ আর উৎসাহ নিয়ে যখন কলেজে গেলাম,তখন শিক্ষকরা বলল , '' বাবারা, এই দুই বছর বলে দিবে তুমি জীবনে কি হইবা আগে তো তোমরা নদীতে পড়াশোনা করছ,এবার সাগরে এসে পড়ছ, সে এক বিরাট মহাসাগর এইসময়, মানুষ বিপথে যায় বেশী, সারাক্ষন লেখাপড়া না করলে পাশ করবা না ''। বাবার কথামত ঘুরার টাইম তো পাইলাম ই না,তার ওপর আবার সারাক্ষন পড়া, বাবা কি তাহলে মিথ্যা বলল? যাক, A+ ই পেলাম

◘ ◘X◘ ◘ এইবার, এডমিশন টেস্ট এর আগের তিন মাস সময় যখন আসল,তখন বাবায় আমার সামনে এসে বলল ,''বাবা , আমি তোমারে নিয়া অনেক আশা করি, নিশ্চই তুমি এর প্রতিদান দিবে, মেডিক্যাল এ টিকার পর তুমি সম্পূর্ণ স্বাধীন... তোমার কাছে আর কিছু চাব না,শুধু মেডিক্যাল এ চান্স পেয়ে আমাকে দেখাও , আমি গর্বিত হব,সত্যিই আনন্দিত হব যা আমি আর কোনদিন হইনি...'' :'(

বাবার মান সম্মান রাখতে ব্যাপক ভাবে পড়াশোনা করলাম।। অবশেষে মেডিক্যাল এ টিকেই গেলাম এবং স্বাধীনতার অস্তিত্ত্ব খুজে পেলাম এই যখন অবস্থা তখন,...

যেদিন মেডিক্যাল কলেজ এ ভর্তি হতে গেলাম, আমাদের আশেপাশে ভর্তির জন্য অপেক্ষমান এতো মেয়ে দেখে বাবার মুখে অন্যরকম কিছু দেখতে পেলাম,কেমন যেনো ;) :o

এর তিনদিন পরে, বাবা আমাকে বলল , বাহাদুর নামে তোমার এক আঙ্কেল আছে , তিনি বলেছেন , '' ওরে বইলেন যে , ৫ বছরের আগে যেনো আশেপাশে না তাকায়,নাইলে জীবন শেষ... "" তার মানে এই বলল যে ,কোন মেয়ের দিকে তাকাইবানা, কোন কথা বলবানা, কোন ভালোবাসাবাসির দরকার নাই...এইসব আমি বুঝে নিলাম আরকি :(

আমার অবস্থা ইকো পার্কের ঐ বাঘের মত , তুমি স্বাধীন কিন্তু এই বেড়ার বাইরে বের হইতে পারবানা''' :(

পরিশেষে, আমি স্বাধীন হতে চাই না... যে স্বাধীনতা আমার ভবিষ্যৎ জীবনকে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলবে সেই স্বাধীনতা আমার প্রয়োজন নেই, আমি আমার বাবার কাছে সারাজীবন পরাধীন থাকতে চাই... আমি তোমাকে শ্রদ্ধা করি বাবা,কারণ তোমার জন্যই আমার এতদূর আসা.. :)

লেখকের ইমেইল : [email protected]
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×