somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

[ছোটগল্প] “একটি ঝুম বৃষ্টির দিন এবং কিছু ভালোবাসা”

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের কোন এক মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে সাব্বির্। তার বাবা সরকারী চাকুরে আর মা স্বাভাবিকভাবেই , গৃহিনী। নিতান্ত আটপৌরে জীবনযাপন তাদের্। ছোট ছোট স্বপ্নপূরণ তাদের যুদ্ধজয়ের আনন্দ যোগায়। সাব্বির ছোটবেলা থেকেই বেশ ভালো ছাত্র এবং বুদ্ধিমান। সে ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে।

অন্যদিকে , বুদ্ধিমতী ও লাজুক স্বভাবের মেয়ে, মৌমিতা। সাব্বিরদের বাসার পাশেই ওরা থাকে। ওদের ফ্যামিলি স্ট্যাটাস উচ্চ মধ্যবিত্ত। তার মানে , ওরা ছোটছোট স্বপ্নগুলো পূরণ করার পাশাপাশি কিছু বড় স্বপ্ন দেখার যোগ্যতা রাখে। মৌমিতা কিন্তু বেশ ভালো মেয়ে এবং সুন্দরীও বটে।

সাব্বির এবং মৌমিতা। ছোটবেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছে ওরা। সেই প্রাইমারী স্কুল থেকে হাই স্কুল পর্যন্ত। একসাথে খেলাধুলা , ঝগড়াঝাটি , খুনসুটি , মারামারি , দুষ্টুমির সাথে সাথে ওদের বন্ধুত্ব যে কখন ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে, জানেই না ওরা। ছোটবয়সী ভালোবাসাগুলো পবিত্র হয়।

সাব্বির যখন ক্লাস সেভেনে পড়ে , ওদের স্কুলের সামনে এক ফেরীওয়ালার কাছ থেকে দশ টাকা দিয়ে একজোড়া কমদামী চুলের ফিতা কিনে মৌমিতাকে দিয়েছিলো। এটা পেয়ে মৌমিতা কি যে খুশি হয়েছিলো! মৌমিতার মুখের টোল পড়া হাসি দিকে সাব্বির চেয়েছিলো অপলক। সে দৃষ্টিতে কোন কাম' ছিলো না , ছিলো না কোন স্পর্শকাতর ইচ্ছা , ওই দৃষ্টিতে ছিলো কিছু নিষ্পাপ ভালোলাগা , হৃদয় ছুঁয়ে যায় এমন।

একদিনের ঘটনা। সেদিন প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিলো। মৌমিতা ওর কলেজের গেইটের সামনে দাড়িয়ে। আশেপাশে আর কেউ নেই। মৌমিতা দূরে তাকিয়ে দেখে সাব্বির ছাতা মাথায় দৌড়ে আসছে এদিকে। এসেই মৌমিতার মাথার ওপর ছাতা ধরে বললো ,

- একা একা দাড়িয়ে আছিস কেন?
- তুই আসবি তাই
- আমি আসবো তুই জানলি কি করে? ( অবাক হয়ে)
- বা রে! আপনি যে রোজ কলেজ ছুটির পর আড়ালে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমাকে লক্ষ্য করেন , আমি ঠিক জানি , হুম!
- হুহ! তোকে দেখতে আমার বয়েই গেছে! কি বিদঘুটে দেখতে তুই! (হেসে)
- ইশশ! এখন ভদ্র সাজা হচ্ছে! আয়নায় নিজের চেহারা দেখেছিস একবার! জিরাফ একটা।

সাব্বির হেসে দিলো। বললো ,
- চল্‍, হাঁটা শুরু করি। বৃষ্টি পড়ছে ভীষণ , তোর ঠান্ডা লেগে যাবে।

সাব্বির আর মৌমিতা পাশাপাশি হাঁটছে । সাব্বিরের এক হাত দিয়ে মৌমিতার মাথার ওপর্। সে হাতে ছাতা ধরে আছে সে।

- মৌমি?
- কি ?
- একটা কথা বলি?
- বল!
- থাক , আজ না আরেকদিন বলবো ( মন খারাপ করে)
- আচ্ছা। (অবাক হয়ে)

কিছুক্ষণ পর্।

- মৌমি?
- হুম?
- ওইইইই
- কি হইছে?
- একটা কথা বলি?
- না!
- বলি না প্লিজ???
- ন্যাকা!! সোজাসুজি বলতে পারিস না?
- আমি না তোকে ভালোবাসি! ( একটানে) ,
- ( মৌমিতা অবাক হয়ে দাড়িয়ে পড়ল , ওর মেরুদন্ড বেয়ে মৃদু শিহরণ বয়ে গেলো উপর থেকে নিচে, কিছু বলতে যাবে এমন সময় ……)

- দাড়া! একটা জিনিস দেখাচ্ছি!

এই বলে সাব্বির ওর প্যান্টের পকেট হাতড়ে একটা দুমড়ানো মোচড়ানো লাল গোলাপ বের করলো। মোটে পাঁচটা পাপড়ি অবশিষ্ট আছে তাতে। বের করেই মৌমিতার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

- ভালোবাসি তোকে মৌমি!

ফুলের অবস্থা দেখে মৌমিতা হেসেই কুল পাচ্ছেনা। মৌমিতার হাসি দেখে সাব্বির ভ্যাবলার মতো দাড়িয়ে রইলো হা করে। মৌমিতা হেসেই যাচ্ছে।

কিছুক্ষণ পর্।

ভীষণ বৃষ্টির মাঝে দুটো ছাতা পাশাপাশি এগিয়ে যাচ্ছে। তার নিচে মানবের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে মানবী, ছুটে যায় যদি? ছাতার ফাঁক গলিয়ে বেড়িয়ে আসা মৌমিতার হাসি জলতরঙ্গের মত শোনাচ্ছে দূর থেকে , পবিত্র সে হাসি।
১১টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×