somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লালন গীতির সাধরণ অর্থ, গূঢ়ার্থ ও ভাবার্থকরণ পদ্ধতি।

০৫ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দাড়া- “দেহতত্ত্ব”

খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কমনে আসে যায়।
তারে ধরতে পারলে মনো বেড়ি দিতাম পাখির পায় ॥
আট কুঠুরী নয় দরজা আটা মধ্যে মধ্যে ঝরকা কাটা
তার উপরে সদর কোঠা আয়না মহল তায় ॥
কপালের ফে’র নয়লে কি আর পাখিটির এমন ব্যবহার
খাঁচা ছেড়ে পাখি আমার কোন খানে পলায় ॥
মন তুই রইলি খাঁচার আশে খাঁচা যে তোর কাঁচা বাঁশে
কোন দিন খাঁচা পড়বে খ’সে লালন ফকির কয় ॥

শব্দার্থ :- খাঁচার ভিতর = দেহ অবকাঠামোর অভ্যন্তরে ॥ : অচিন পাখি = আত্মারূপী কর্তা, যিনি দমেরসনে দেহে আসা যাওয়া করেন ॥ : মন বেড়ী = মনরূপ বেড়ী বা শৃঙ্খল ॥ : আটকুঠুরী = মুখ, মস্তক, কপোল, গ্লীবা, বাম স্তনের নিচে নাভী, মেরুদণ্ড ও মূলাধার ॥ : নয় দরজা = চক্ষু, কর্ণ নাসিকা (ছয় দ্বার) এবং মুখ, উপস্থ, গুহ্য (তিন দ্বার) ॥ : ঝরকাটা কালবের রন্ধ্রসমূহ ॥ : সদর কোঠা = সহস্রা বা মস্তিক্য ॥ : আয়না মহল = জ্ঞান পদ্ম বা আজ্ঞাচক্র, যেখানে রূপ প্রতিভাত হয় ॥ : ফে’র = দুর্ভোগ ॥ : খাঁচার আশে = দেহের উপর নির্ভরতা ॥ : কাঁচা বাঁশে = ক্ষণভঙ্গুর বা নশ্বর বস্তুতে সৃষ্ট ॥ : পড়বে খ’সে = মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যার পরিসমাপ্তি ঘটবে ॥

ভাবার্থ : এই পদটি দেহতত্ত্ব দাড়ার অন্তর্গত দাড়ার পরিচিতি হচ্ছে, স্রষ্টার সমগ্র সৃষ্টবস্তুর মধ্যে অন্যতম ও স্বার্থক সৃষ্টি হল মানব দেহ অবকাঠামো। ফকিরগণের সাধন-ভজনের ক্ষেত্রে বা কেন্দ্রও হচ্ছে এই মানব দেহ। তাদের স্থির বিশ্বাস “অটল সাঁই” মানবের দেহভান্ডে অবস্থান করে মানবের সঙ্গে তার আনন্দানুভুতি ও সুখ-দু:খের সমভাগিদার রুপে বিরাজ করেন। সেই জন্য এই দেহভান্ডটি তাদের কাছে কাবা ঘরের সমতুল্য। তারা বলেন, আরবের কাবা ইব্রাহীম খুলিলের তৈরী, কিন্তু দেহ কাবার স্থপতি হচ্ছেন সাঁই স্বয়ং অর্থাৎ তিনি নিজে তৈরী করেছেন। অর্থাৎ দেহ ভজলেই তাঁকে ভজনা করা হয়।
এই পদে পদ কর্তা বলছেন যে দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলিকে প্রতীকী নাম দিয়ে সাধন ভজন প্রক্রিয়া সংগঠিত হয়ে থাকে। সাধু শাস্ত্রানুযায়ী কাম ও কর্ম ইন্দ্রীয় আঠকিয়ে আট কুঠুরী ও নয় দরজার সাধন ভজন করতে হয়।
পিঞ্জিরা স্বরূপ দেহভান্ডে সদা জাগ্রত আত্মা রূপী কর্তা অর্থাৎ সাঁই সর্বদা হওয়ার রূপ ধরে দমের মাধ্যমে দেহাভ্যন্তরে আসা যাওয়া করেন। সেই জন্যই মানবাত্মা দেহ নির্ভর, অর্থাৎ দেহকে ঘিরে আবর্তিত হতে থাকে। কিন্তু মনের দোষে আমি কোন দিন তার সন্ধ্যান পেলাম না। গুরুগুণগ্রাহী ও সৎ গুণ সম্পন্ন মানুষ সাধন ভজন গুণে হয়তো বা তার দর্শন পেলেও পেতে পারেন।
এক্ষণে বিশ্ব মানবতার জাগ্রত প্রহরী মহাত্মা লালন ফকির বেদনাহত চিত্ত্বে অধিক কাতর হয়ে রোদন ভরা কণ্ঠে বলছেন যে, ক্ষণভঙ্গুর নশ্বর দেহ নিয়ে গর্ব করা কখনই কারও উচিত নয়। কারণ এই দেহ একদিন কালের আবর্তে বিলীন হয়ে যাবে, এবং অতি আদরে পোষা প্রাণ পাখিটিও এই সাধের খাঁচা ছেড়ে পালিয়ে যাবে। তখন জাগতিক কারণে দেহ খাঁচাটি মাটির গর্ভে নিপতিত হয়ে বিলীন হয়ে যাবে। পঞ্চভূতে সৃষ্ট দেহভান্ডটির পরিসমাপ্তি এমনি ভাবেই ঘটবে।

(নিয়ামত মাষ্টারের ১১০৯ টি লালনগীতির ভাবার্থ থেকে সংকলিত)

৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×