somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লালন দর্শনে “নাড়া” শব্দের সার্থক ও বুৎপত্তিগত বিচার বিশ্লেষণ।

২২ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহাত্মা লালন ফকির ও অন্যান্য ভাবগীতিকারদের ভাবগীতিতে “নাড়া” শব্দের প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। এই অঞ্চলে “নাড়া” শব্দটি অপ্রতক্য ভাষারুপে “ফকির” শব্দের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে বিভিন্ন প্রকার সসমস্যার সৃষ্টি করে কোন একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মনোকষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন মুসিলিমদের “নেড়ে”। হিন্দুদের “মালাউন”। কারীগরদের “জুলা”। চাষীদের “ফাটা” এবং ফকির সম্প্রদায়কে “নাড়ার” ফকির বলে সম্বোধন করলে সকল সম্প্রদায়ই মনে ষ্ট অনুভব করেন। এখানে মহারসিক লালন ফকির কি ভাবে তার গানে “নাড়া” শব্দটির ব্যাখ্যাদান করেছেন তা একটু বিচার বিশ্লেষন করে দেখা যাক। নাড়া শব্দের শাব্দিক অর্থের ক্ষেত্রে উদাহরণ স্বরূপ বলা চলে যে, একটি বৃক্ষের পাখা প্রশাখা কেটে বা ছেটে দিলে তাকে নাড়া বৃক্ষ বলে। মানুষের মাথার চুল কেটে বা চেটে দিলে তাকে নাড়া মাথা বলে এবং মাঠের ধান কেটে নিলে ধানের অবশিষ্ট অংশকে ধানের নাড়া বলে। আবার এই উপমহাদেশে রাগসংগীত শিক্ষার ক্ষেত্রে ওস্তাদ বা গুরুগণ শিষ্যের ডান হাতে লাল রংয়ের সুতা অর্থাৎ “নাড়া” বেঁধে দিয়ে নিজ ঘরানাই গ্রহনের রেওয়াজটি আজও চালু আছে।
যেমন :- বড়ে গোলাম আলী খাঁ (সংগীতে)। বিসমিল্লা খাঁ (শানাইয়ে)। কেরামত উল্লাহ খাঁ (তবলায়)। আকবর আলী খাঁ (শরদে)। পন্ডিত রবীশংকর (সেতারে)। ভি জি যোগ (বেহালায়)। ভি, বালসারা (পিয়ানোই)। শিবোপ্রসাদ চৌরাশিয়া (বংশী বাদনে)। এই সকল সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও প্রাত:স্মরনীয় ওস্তাদগন ঘরনা অনুযায়ী “নাড়া” বাঁধার রেওযাজটি অদ্যাবধি চালু রেখে গেছেন।
এছাড়া সহান আল্লাহ পাক “সুরা এখলাসে নিজেকে নিরাভরন বা “নাড়া অর্থাৎ তিনি কারো সঙ্গে সম্পৃক্ত নন” বলে নিজের পরিচয় দান করেছেন। বল হে মুহাম্মাদ (দঃ) ( আল্লাহ এক, তিনি অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি, তার সমতুল্য কেউ নেই।
এছাড়া লালন ফকির তার একটি গানে বলেছেন যে, “একজন “নাড়া” জগৎ জোড়া, কাজটি তাহার জগৎ ছাড়া”। এই ছন্দটিতে তিনি “সুরা এখলাসেরই পুন:ধ্বনি করেছেন মাত্র। অন্যত্র আর একটি ছন্দে তিনি বলেছেন যে, “নাড়ার” সঙ্গে হয়ে নাড়ি, পরণে পরেছি ডুরি, দেবনা আঁচির কড়ি, বেড়াবো চৈতন্যের পথে”। সাধিকা যেদিন হতে নাড়ার সঙ্গে নাড়ি অর্থাৎ “নারী সাধিকা” হয়ে জোড়া বেঁধেছেন। সেদিন হতে তিনি সন্তান উৎপাদন বন্ধ করে, আঁচি ঘরে যাওয়া বন্ধ রেখে আঁচির কড়ি অর্থাৎ সমস্ত রকম খরচাদির পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন তারা প্রেমের পথে নিয়োজিত হয়ে জগৎময় প্রেম বিতরণে ব্রতি হয়েছেন।
তিনি পুনরায় বলেছেন যে, “ভবে আসতে “নাড়া” যেতে “নাড়া” দুদিন কেবল হড়া জড়া”। অর্থাৎ মানব শিশু যখন মাতৃজঠর হতে ভূমিষ্ঠ হয় তখন সে “নাড়া” বা নিরাবরণ অবস্থায় থাকে এবং বয়:বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যৌবন প্রাপ্ত হয়ে জাগতিক আমোদ- আহলাদে লিপ্ত হয়ে পড়ে। বয়;শেষে অর্থব হয়ে জীবনাবসানের মধ্য দিয়ে জাগতিক সমস্ত রকম কর্মকান্ডের সমাপ্তি ঘটিয়ে পৃথিবী ছেড়ে পরপারে যাবার সময় “নাড়া” অর্থাৎ শূন্য হাতে দুনিয়া হতে চলে যান। কিছুই সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন না।
পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনাদৃষ্টে শুধুু একটি কথাই প্রতীয়মান হয় যে, সুদক্ষ নাবিকের মত লালন ফকির তাঁর মহানগীতি কাব্যে যে কোন একটি তুচ্ছাতিতুচ্ছশব্দকে বেছে নিয়ে তাঁর মায়াময় তুলির আঁচড়ে সুদক্ষ শিল্পীর মত অসামান্য অনেক কিছু সৃষ্টি করে দেখাতে পারতেন। অত্র প্রবন্ধে “নাড়া” শব্দটির বিভিন্নার্থক ব্যবহার তার একটি জলন্ত উদাহরণ। এখন থেকে ফকির সম্প্রদায়ভুক্ত সদস্যগন “নাড়া” শব্দের প্রকৃত অর্থ অবগতির পরে তাদের মনে আর কোন খেদ, বিদ্বেষ ও বিতৃষ্ণা থাকবে না বরে আমি আশা করি।

(নিয়ামত মাষ্টারের লালন বিষয়ক শতাধিক প্রবন্ধ থেকে।)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:২৭
৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×