৩য় পর্ব - Click This Link
এবারও রীণার প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে যথারীতি আবার প্রসঙ্গ পালটালেন মি: আশরাফ।
---আপনার কি মনে হয় এই চাকরিটা পাওয়ার যোগ্য আপনি? কেন আপনাকে চাকরিটা দেয়া হলো বলুন তো?
রীণা একটু ভয়ে ভয়ে বলল,
---জানি না স্যার । মাত্র কদিন হলো আমি জয়েন করেছি। আমার কাজটা কী তাই এখনো জানা হয়নি।
---আপনার বোনের মৃত্যুটা কী করে হলো?
আবার প্রসঙ্গ পরিবর্তন। লোকটা কোন কথা থেকে কোন কথায় চলে যাচ্ছে। লোকটা কি পাগল? রীণা এবার বিরক্ত হল। লোকটা বারবার ওর কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে পাশ কাটিয়ে অন্য কথায় চলে যাচ্ছে। ও কি এতটাই তাচ্ছিল্যের পাত্রী! ওর কি মানঅপমানবোধ নেই! হোন না তিনি বস, তাই বলে ওর সাথে যা তা ব্যবহার করার অধিকার উনাকে কে দিয়েছে? তাছাড়া ওর নিজস্ব ব্যাপার নিয়ে উনার অত কথা বলার দরকার কী? রীণা দাঁতে দাঁত পিষে চোয়ালটা শক্ত করে চুপ করে থাকলো। কিছু বলল না।
হঠাৎ মি: আশরাফের ফোনটা বেজে উঠলো। মি: আশরাফ ফোনটা রিসিভ করলেন।
---হ্যালো
---হ্যা বলো। কিছু জানতে পারলে?
---বুড়ি?
---কোথায় থাকে?
---ঠিক আছে কথা বলো ওর সাথে। সব তথ্য চাই আমার।
---হুম।
---রেকর্ড করে নিবে পুরোটা।
---পুরো ডিটেইল চাই।
---ঠিক আছে রাখছি।
মি: আশরাফ ফোনটা রেখে আবার রীণার দিকে তাকালেন।
---কী যেন বলছিলাম?
---আমার বোনের মৃত্যু কিভাবে হল।
---ও হ্যাঁ। কীভাবে মৃত্যুটা হল?
---স্যার, আমি বুঝতে পারছি না এসবের সাথে আমার চাকরির কী সম্পর্ক।
---মিস রীণা, আমি যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দিন। কথা এড়িয়ে যাওয়া আমি একদম পছন্দ করি না।
রীণা মনে মনে গজগজ করলো, হুহ, কথা এড়িয়ে যাওয়া উনি পছন্দ করেন না। কে যে বার বার কথা এড়িয়ে যাচ্ছে তা তো দেখাই যাচ্ছে। তাও আবার অফিসে বসে মানুষের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলাপ। আরে আমার বোনের মৃত্যু কীভাবে হল তাতে তোমার কী? নাহ, দরকার নেই এমন চাকরির। আজই ইস্তফা দিয়ে দিবো।
রীণাকে চুপ করে থাকতে দেখে মি: আশরাফ বললেন,
---ঠিক আছে আপনি এখন যেতে পারেন। ভাল করে গিয়ে ভেবে দেখুন চাকরিটা করবেন কি না। মন স্থির করে আমাকে জানাবেন। এবার আপনি আসতে পারেন।
রীণা কিছুটা লজ্জিত হল। লোকটা মাইন্ড রিডার নাকি রে বাবা। কী যে ফ্যাসাদের মধ্যে পড়া গেলো। রীণা আমতা আমতা করে বলল,
---না, মানে... বলছিলাম কি স্যার।
---মিস রীণা এক কথা দুবার বলা আমি পছন্দ করি না।
রীণা আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ কেবিন থেকে বেরিয়ে আসছিল ঠিক তখনই মি: আশরাফ আবার বলে উঠলেন,
---শুনুন। যদি মনস্থির করেন চাকরিটা করবেন তবে কাল থেকে আরেকটু ভাল কাপড়চোপড় পরে আসবেন। এই অফিসের সাথে মানায় এমন।
রীণার কান ঝাঁ ঝাঁ করতে লাগলো। কোনরকমে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো ও। নিজের কেবিনে এসে কোনরকমে চেয়ারে বসলো। শরীর কাঁপছে ওর। রাগ আর লজ্জা মিশে গিয়ে একটা মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে। অত ভাল না হলেও একেবারে খারাপ কাপড় পরে আসেনি ও। অত ভাল কাপড় কেনার পয়সা কই ওর। তাই বলে কারো কাপড় নিয়ে সামনাসামনি এভাবে কথা বলতে পারে কেউ? অভদ্র কোথাকার। কে বলেছে সেধে উনাকে চাকরি দিতে। চাকরি দিয়ে আবার এত বড় অপমান। আর এক মুহুর্তও এই অফিসে থাকা সম্ভব নয়। রেজিগনেশন লেটারটা পাঠিয়ে দিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে এলো ও।
মাথা মুণ্ডু কিছুই ওর মাথায় ঢুকছে না। ওর ব্যক্তিগত ব্যাপারে লোকটার এত আগ্রহের কারণ কী। বাড়িতে ফিরে এসেও ঐ একই চিন্তা ওর মাথায় ঘোরপাক খাচ্ছিল। চাকরির জন্য ফোন আসা, কোন ইন্টারভিউ ছাড়াই চাকরি হয়ে যাওয়া, বসের ওর উপর গোয়েন্দাগিরি করা, ওর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানতে চাওয়া। তারপর ওকে এভাবে অপমান করা। সবকিছু কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিল।
---কীরে এসেছিস পর থেকেই অন্যমনস্ক হয়ে আছিস। কিছু হয়েছে?
পাঁচ
রীণার জন্য চা নাশতা রেডি করতে করতে বললেন রীণার মা রেজিয়া বেগম।
---না তো কিছু হয়নি। কিন্তু তুমি কেন এসব করছ? তোমাকে কাজ করতে ডাক্তার মানা করেছে না?
---আমি না করলে কে করবে বল? আর আমার কোন অসুবিধা হচ্ছে না। তুই চিন্তা করিস না তো।
হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন রেজিয়া বেগম।
---সে তো দেখতেই পাচ্ছি আমি। তুমি এখানে এসে বস তো মা। আমি কাজ করবো।
বলে ধরে ধরে এনে মাকে চেয়ারে বসালো রীণা।
---তুই চাকরি করবি না ঘর সামলাবি বল। এত কাজ করে নিজেই যে অসুস্থ হয়ে পড়বি রে মা।
বলে আবার হাঁপাতে লাগলেন রেজিয়া বেগম। একটু কাজ করেই হাঁপিয়ে উঠছেন তিনি। একটা কাজের মানুষ না হলেই নয়, রীণা মনে মনে ভাবতে লাগল। কিন্তু কাজের মানুষ রাখা এখন ওর পক্ষে সম্ভব নয়। মায়ের মুখে চাকরির কথাটা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। কী করে মাকে বলবে চাকরিটা আর নেই। রীণার চাকরি হয়েছে শুনে আশার আলো ফুটে উঠেছিল রেজিয়া বেগমের দুচোখে। সেই আলোটাকে নিভিয়ে দিতে ইচ্ছে করলো না রীণার। কিন্তু মা তো একদিন বুঝেই ফেলবে। চাকরিটা ছেড়ে কি ভুল করলো ও? মায়ের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। এদিকে দীপুর পড়াশোনার খরচও বেড়ে চলেছে দিন দিন। একটা কাজের লোকও বড্ড বেশি প্রয়োজন। কী করে এসব সামাল দিবে ও? কী দরকার ছিল রাগের মাথায় হুট করে চাকরিটা ছেড়ে দেয়ার? লোকটা অপমান করেছে তো কী হয়েছে? যার পায়ের তলায় মাটি এত নড়বড়ে তার আবার এত কীসের মান অপমান। চাকরিটা যে পেয়েছিল তাই তো শত জনমের ভাগ্য ছিল। বড্ড ভুল হয়ে গেলো। ভুলটা শুধরাবার আর কোন উপায় নেই। লোকটার কাছে গিয়ে হাত পায়ে ধরবে নাকি আবার? নাহ, লোকটার যা দেমাক। ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবে ওকে।
দেয়ালে টাঙানো বাবার আর বোনের ছবির দিকে তাকালো ও। কী সুন্দর হাসিমুখ দুজনেরই। কী সুন্দর ছিল ওদের সংসারটা। বাবার ভাল চাকরী ছিল। অঢেল টাকা পয়সা না থাকলেও সংসারে সচ্ছলতা ছিল। তারপর কী থেকে কী যে হয়ে গেলো। তাসের ঘরের মত যেন ভেঙে পড়লো সব। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে রীণার বুক থেকে। ফোনটা বেজে উঠতেই ভাবনায় ছেদ পড়লো ওর। স্ক্রীনে অপরিচিত নাম্বার। অপরিচিত নাম্বার থেকে কে কল করলো? দ্বিধাগ্রস্ত মন নিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো ও।
---মিস রীণা।
ধ্বক করে উঠলো রীণার বুকটা।
---জ্বী স্যার বলুন।
---আপনার রেজিগনেশন লেটারটা কিন্তু এখনো গ্রহণ হয়নি।
---মানে---আপনার কথা বুঝতে পারলাম না, স্যার?
---মানে আপনার চাকরিটা এখনো বহাল তবিয়তে আছে। নিশ্চয়ই মনে মনে আফসোস করছেন চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে?
রীণার মনটা খুশিতে নেচে উঠলো। আসলে লোকটাকে যতটা খারাপ ও ভেবেছে ততটা খারাপ হয়তো নয়।
---আপনি কি মানুষের মন পড়তে পারেন, স্যার?
---অনেকটা।
রীণা চুপ করে রইল।
---কাল আসছেন তো অফিসে?
রীণার মনে হলো চাকরিটা ওর ভীষণ দরকার। এভাবে রাগের মাথায় হুট করে এত ভাল চাকরিটা ছেড়ে দেয়া বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই মৃদু কণ্ঠে ও বলল,
---আসবো স্যার।
---নাহ, দেখা যাচ্ছে মাথায় কিছুটা হলেও বুদ্ধি আছে।
রীণা ফোনের এপাশে রাগে কটমট করতে লাগলো। তবে মি: আশরাফের কণ্ঠে এবার আর শ্লেষ নেই। বরং কিছুটা নরম স্বরেই কথা বলছেন এখন।
---রাগে কটমট করলে কিছু হবে না। আপনার কাঁধে অনেক বড় গুরুদায়িত্ব।
রীণা বিস্মিত হয়ে বলল,
---কীসের গুরুদায়িত্ব স্যার?
---সময় হলে সব জানতে পারবেন। তার আগে নিজেকে ভাল ভাবে তৈরি করতে হবে। শুনুন মিস রীণা, হয়তো আমার কথাবার্তা কিছুটা রূঢ়। কিন্তু এই মুহূর্তে আপনাকে আমার বড় প্রয়োজন। আর আপনারও এই চাকরিটা ভীষণ প্রয়োজন। অর্থাৎ আমাদের দুজনেরই দুজনকে প্রয়োজন। আবার আমার যে কাজে আপনাকে প্রয়োজন সেই কাজটায় আপনারও একটা বড় স্বার্থ জড়িত। অর্থাৎ লাভের পাল্লাটা আপনার দিকেই ভারী। তাই হুট করে কোন বোকামি করতে যাবেন না। যাই করেন ভেবে চিন্তে করবেন।
রীণার বিস্ময়ের পরিধি আরও বাড়লো। কী বলছে লোকটা এসব আবোলতাবোল। লোকটার মাথা কি আসলেই খারাপ নাকি? রীণাকে লোকটার কী প্রয়োজন হতে পারে? মাত্র তো আজই ওদের পরিচয় হলো। তার উপর লোকটার প্রয়োজনের সাথে নাকি রীণারও স্বার্থ জড়িত। মাথা মুণ্ডু কিছুই রীণার মাথায় ঢুকছে না।
---আপনার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, স্যার।
---বুঝবেন। কাল আপনাকে সব বুঝিয়ে বলবো। আর ঐ কাপড়ের কথাটায় অপমানিত বোধ করার কিছু নেই। আপনার মধ্যে আত্মবিশ্বাসের একটু অভাব আছে। ভাল কাপড়চোপড় পড়লে কনফিডেন্স লেভেল আপনাতেই কিছুটা উপরে উঠে যায়। খরচের কথা ভাববেন না। কালই আপনাকে অগ্রীম বেতন দিয়ে দেয়া হবে। আরেকটা কথা, আমার কথাবার্তা আপনার কাছে এলোমেলো মনে হতে পারে। আপনি আমাকে পাগলও ভাবতে পারেন। কিন্তু আসলে আমি পরিস্থিতির শিকার। পরিস্থিতি আমাকে এমন বানিয়ে দিয়েছে। তাই উল্টাপাল্টা কিছু কখনো বললে মনে নিবেন না।
রীণা মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন নিয়ে ফোনটা রাখলো।
ছয়
আরেকটা বিনিদ্র রজনী। আবীর বিছানা থেকে উঠে বসে। ঘরের ভেতর অস্থির পায়চারি করে কিছুক্ষণ। তারপর ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। আকাশটা আজ কী সুন্দর তারায় তারায় সাজানো। হেসে হেসে রয়েছে একেকটা তারার ফুল। পৃথিবীটা আসলেই খুব সুন্দর। রাতের সৌন্দর্য অবলোকন করতে করতে হেসে উঠে আবীর। বিষাদভরা হাসি। এই সুন্দর পৃথিবী তার জন্য নয়। হাসতেই হাসতেই আবার কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। আবার তারাগুলোর দিকে তাকায়। তারাগুলো হেসে রয়েছে এখনো। কিন্তু সেই হাসিতে যেন এবার বিদ্রুপ ঝরে পড়ছে। তারার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও। বাড়িঘেরা গাছগুলোর দিকে তাকায়। দিনের আলোয় যাদের দেখে মনে হয় সবুজের সমারোহ, রাতের অন্ধকারে তারাই যেন হয়ে উঠেছে একেকটা নিকষ কালো দানব। দানবগুলো যেন হঠাৎই সরব হয়ে উঠলো। যেন সবাই একসাথে চিৎকার করে বলে চলেছে, তুই পাপী, তুই পাপী, তুই পাপী। আবীরের মনে হলো এখনি ওর কানের পর্দা ফেটে যাবে। দুইহাত দিয়ে কানদুটি বন্ধ করে রেলিঙের পাশে বসে পড়লো ও। কিছুক্ষণ পর মনে হল যেন শব্দগুলো আর নেই। কান থেকে হাত সরিয়ে উঠে দাঁড়ালো ও।
সবকিছু আবার যেন স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। ঝিরিঝিরি বাতাসে তিরতির করে কাঁপছে গাছের পাতাগুলো। চারিদিকে যেন এক প্রশান্তির ছায়া। হঠাৎ করেই আবার রূপ পাল্টে ফেলে প্রকৃতি। গাছগুলো যেন আবার দানব হয়ে উঠেছে। মনে হচ্ছে ধেয়ে আসছে
ওর দিকে। কড়মড় করে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে ওকে। আবীর দিশেহারার মত আকাশের দিকে তাকায়। আকাশটাও মনে হচ্ছে যেন নিচে নেমে আসছে। তারাগুলো সব যেন একেকটা অগ্নিকুণ্ড। এখনই পুড়িয়ে ছাই করে দিবে আবীরকে। ভয়ে মুখটা ঢেকে ফেলে ও।
এই আকাশ, এই তারকারাজী, এই গাছগাছালি সব তার পাপের সাক্ষী। এই পৃথিবীতে কোন কিছুই আর সুন্দর নেই। সবকিছুই কুৎসিত আর, ভয়ঙ্কর মনে হয় আজ। সুন্দরের মোহ তাকে আজ এনে ফেলে দিয়েছে এক কুৎসিত দুর্গন্ধময় নর্দমায়। যেখানে শুধু হাবুডুবুই খেতে হয়। বাঁচার কোন পথ খোলা নেই। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসতে আসতেও আটকে যায়। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে চায় সে। কিন্তু পারে না। দম বন্ধ হয়ে আসে। বড় কষ্ট হয়! একি তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত? আবার হাসে সে। প্রায়শ্চিত্ত! সে যে পাপ করেছে তার প্রায়শ্চিত্ত কি এত সহজ! ফিরে আসে নিজের রুমে। আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। কি সুন্দর চেহারা! কি সুন্দর একটা অবয়ব! কে বলবে এই সুন্দর অবয়বটার পেছনে লুকিয়ে রয়েছে একটা রাক্ষস। একটা দানব। আবীর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুলগুলোতে চিরুনি চালায়। তারপর চিরুনি রেখে পরিপাটি চুলগুলোকে আবার এলোমেলো করে দেয়। এলোমেলো চুলগুলোকে এবার মুঠো করে ধরে টানতে থাকে পাগলের মত। মুখ দিয়ে একটা গোঙানির মত কান্না বের হয়। কিছুক্ষণ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এভাবেই কাঁদতে থাকে আবীর।
তারপর একসময় কান্না থামিয়ে ফিরে তাকায় বিছানায় শুয়ে থাকা তানির শরীরটার দিকে। ভারী হয়ে এসেছে নিঃশ্বাস। ঘুমের অতলে তলিয়ে যাওয়া একটা অপূর্ব সুন্দর শরীর। কি সুন্দর একখানা মুখ। এমন একটা সুন্দর মুখ সারা পৃথিবী খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। আবীর আরো কাছে এগিয়ে যায় তানির। যেন এক ঘুমন্ত অপ্সরা। আবীর তানির মুখের উপর ঝুঁকে পড়ে দেখতে থাকে ওকে। এই ঘুমন্ত নিষ্পাপ পরির মত সুন্দর মেয়েটিকে দেখলে কে বলবে এর মাঝেও লুকিয়ে আছে এক হিংস্র ভয়াল রাক্ষসী ডাইনী। আবীর চুপিসারে একটা বালিশ হাতে নেয়। একবার মুখটায় ভাল করে চেপে ধরতে পারলে কয়েক মিনিট লাগবে শেষ করে দিতে। একে শেষ করতে পারলে কিছুটা হলেও শান্তি পাবে এই পুড়ে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া হৃদয়টা।
হঠাৎই পাশ ফিরে তানি। আবীর চমকে ওঠে। কী করতে যাচ্ছিল ও? কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। বালিশটা রেখে দেয় হাত থেকে। কপালের ঘামটা মুছে নিয়ে ওয়াশরুমে যায়। বেসিনের টেপটা ছেড়ে অনবরত পানির ঝাপটা দিতে থাকে সারা মুখে। বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে তোয়ালে দিয়ে চেপে চেপে মুখটা মোছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত তিনটে। নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে তিতলির রুমটার দিকে যায় সে। তিতলি কোলবালিশটা আঁকড়ে ধরে শুয়ে আছে। তিতলির পাশে গিয়ে বসে। কোঁকড়া চুলগুলো চোখের উপর এসে পড়েছে। আবীর মেয়ের মুখের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিলো। সুন্দর, মায়াবী, মিষ্টি একটা মুখ। আবীরের ইচ্ছে হল তিতলির কপালে একটা চুমু খায়। কিন্তু তার আগেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো আরেকটি সুন্দর,মায়াবী মিষ্টি একটা মুখ। সেই মুখটাই যেন কেটে এনে বসিয়ে দেয়া হয়েছে তিতলির মুখে। আবীর তাড়াতাড়ি মুখটা ফিরিয়ে নেয়। ছুটে বেরিয়ে যায় তিতলির রুম থেকে। নিজের রুমে এসে তানির পাশে রাখা বালিশটায় মাথাটা এলিয়ে দেয়। কী হতভাগা সে! নিজের মেয়েকে একটু মনভরে আদরও করতে পারে না। হঠাৎ একরাশ ভয় এসে গ্রাস করে আবীরকে। আবীর ভয় থেকে বাঁচতে বালিশটাকে আঁকড়ে ধরে তাতে মুখ লুকোয়।
©নিভৃতা
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:২০