somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভৌতিক গল্পঃ অ-স্পর্শ (তৃতীয় পর্ব)

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঘটনার ধারাবাহিকতার জন্য পড়ে আসুনঃ
ভৌতিক গল্পঃ অ-স্পর্শ (দ্বিতীয় পর্ব)
ভৌতিক গল্পঃ অ-স্পর্শ (প্রথম পর্ব)

...........রুপা জ্ঞান হারিয়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ার আগে শেষবারের মতো দেখল ওর লম্বা চুলের ঝুটি ধরে ওকে কোথায় যেন টেনে নিয়ে যাচ্ছে…………

রিফাত বাসায় ফিরে বেডরুমের মেঝেতেই রুপাকে অজ্ঞান অবস্থায় খুঁজে পেল। শরীরের উন্মুক্ত বেশ কিছু জায়গায় লাল লাল দাগ, যেন কোন কিছু দিয়ে প্রবল আক্রোশে আঘাত করা হয়েছে। গতকালকে রাতেরবেলা বাসা থেকেই ওদের থেকে বের হওয়াই ঠিক হয়নি। রুপা'র ফোন পাবার পরই রিফাতের সন্দেহ হলে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে গতকালকে পূর্ণ অমাবস্যা ছিল। রুপাকে অমাবস্যা এবং পূর্ণিমার রাতে ঘর থেকে বের হওয়া তো দূরের কথা, বাসার বারান্দায় যেতেই বারণ করা হয়েছিল। হুট করেই রুপা'র কবজটার কথা মনে পড়তেই রিফাত পাগলের মতো সারা বাসা খুঁজেও সেটা আর কোথাও আর সেটা পেল না।

এই দুর্ঘটনার পর থেকে রুপা আর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠল না। এখন দিনের বেশ কিছু সময় রুপা অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায়ই থাকে। ঐ সময়ে রুপার নিজের উপর কোন নিয়ন্ত্রনই থাকে না। রিফাত'কে দেখলেই গর্জন করে আক্রমণ করার জন্য ঝাঁপিয়ে পরে। একটু দূর থেকে খেয়াল করলেই দেখা যায় রুপা উদ্ভুত পুরুষালী একটা কন্ঠস্বরে কারও সাথে যেন কথা বলছে কিন্তু কেউ কাছে গেলেই থেমে যায়। হঠাৎ হঠাৎ পাগলের মতো ছুটে কোথাও চলে যেতে চায়! বাধ্য হয়েই এখন একটা নির্জন ঘরে রুপাকে আটকে রাখতে হচ্ছে। রুপার শারীরিক অবস্থা দিন দিন ভয়াবহ খারাপ হয়ে গেল রিফাত কয়েকজন ডাক্তারের পরামর্শে একজন নামকরা সাইক্রিয়াটিস্টকেও দেখিয়ে আনল। দুইটা সেশন করার পর, উনি জানালেন রুপার ডুপ্লেক্স পার্সোনালিটি গ্রো করেছে। এই রোগের নাম জানালেন- Dissociative identity disorder, DID (previously known as multiple personality disorder, MPD). এই ধরনের পেশেন্টকে লংটার্ম ট্রীটমেন্ট করতে হবে। তাও পুরোপুরি কবে ঠিক হবে সেটার কোনই নিশ্চয়তা নেই!

বিয়ের পর থেকে গত পাঁচমাস ধরে ঘটে যাওয়া সবকিছু মিলিয়ে রিফাতের প্রায় পাগলের মতো অবস্থা হলো। ওর মায়ের পাঠানো সেই ভদ্রলোককে আবার খুঁজে বের করে মোবাইলে সবকিছু বিস্তারিতভাবে জানালে উনি সময় চাইলেন বিষয়টা আবার অনুসন্ধান করার। পরেরদিন উনি নিজেই ফোন করে রিফাতকে জানালেন, রুপাকে এখন কিছু করা উনার সাধ্য এবং ক্ষমতার পুরোপুরি বাইরে চলে গেছে। উনার দেয়া কবজ পরিহিত অবস্থাতেই রুপাকে আক্রমণ করা হয়েছে, যে সাধক এই কাজ করিয়েছে সে প্রচন্ড শক্তিশালী। উনার পক্ষে একে থামানো সম্ভব না। এখন এই বিষয়ে আবার নাক গলালে উনার উপরও ব্যক্তিগত আক্রমণ হতে পারে। উনি খুব নরম স্বরে ক্ষমা চেয়ে ফোন কেটে দিলেন।

ঠিক তিনদিন পরে রিফাত সেই ভদ্রলোকের কাছ থেকে আবার একটা ফোন কল পেল, যেখানে ঢাকা শহরের সুনির্দিষ্ট একজন প্রসিদ্ধ শায়খের কাছে রিফাতকে অবশ্যই যেতে বলা হলো।

পরেরদিনই রিফাতকে পুরানো ঢাকার খুব প্রাচীন একটা মসজিদের বারান্দায় অধীর আগ্রহে সেই শায়খ সাহেবের অপেক্ষায় আরও অনেক মানুষের সাথে বসে থাকতে দেখা গেল।

শায়খ সাহেবের সাথে কথা বলতে পারলো রিফাত প্রায় দুইঘন্টা পরে। রুপার সবকিছু শুনে উনি রিফাত'কে আগে বাসায় ফিরে সুনির্দিষ্ট কিছু কাজ পরীক্ষা করে দেখতে বললেন। সর্ম্পূণ নিশ্চিত না হয়ে উনি রুগীর এইধরনের চিকিৎসা করেন না। খরচ কত লাগবে জানতে চাইলে উনি হেসে রিফাত'কে বললেনঃ
-আমি এইসব কাজ বিনামূল্যেই করে থাকি। বিপদগ্রস্থ এই ধরনের ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য রাসুলে পাক (সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসালাম) এর সরাসরি নির্দেশ আছে।

রিফাত অবাক হয়ে উনার দেয়া একটা কাগজ হাতে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিল। এত শত শত মানুষজনকে উনি ফ্রী ফ্রী চিকিৎসা করেন? এই রকম দ্বীনদার পরোপকারী মানুষ এই দুনিয়ায় আছে এখনও!

নয়

তিনদিন ধরে শায়খ সাহেবের দেয়া নিয়ম মোতাবেক সবকিছু করার পরেও যখন রুপার তেমন কোন উন্নতি হলো না, রিফাত উনার কাছে ফিরে আবার উনার সাহায্য চাইলো। উনি এবার আর রিফাত'কে ফিরিয়ে দিলেন না।

বিকালবেলা থেকেই রুপার আচরণ যে বদলে গেল সেটা বাসার সবাই টের পেল। ঘরের ভিতর প্রচন্ড গর্জন করার সাথে সাথে যে কাউকে দেখলেই এখন মারতে আসছে। গায়ে অসুরের মতো শক্তি! ভয়ে রুপার কেউ কাছে যেতেই সাহস পাচ্ছে না। তবে ঠিক একঘন্টা পরে হুট করে রুপা অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পরে গেল।

রুপাকে যখন ড্রয়িংরুমে সেই শায়খ সাহেবের কাছে নিয়ে আসা হলো, তখন রুপা সর্ম্পূণ অপ্রকৃতিস্থ অবস্থায় আছে। উনি রুপার সবকিছু আবার প্রথম থেকে খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। রুপাকে কিছুক্ষন পরীক্ষা করে জানতে চাইলেন রুপার এখন কি কি ধরনের চিকিৎসা করা হচ্ছে। রিফাতের কাছে সব ধরনের চিকিৎসার বিস্তারিতভাবে জানার পর সাইক্রিয়াটিস্ট সাহেবের মতামত কি শুনে উনি একটু মৃদু হাসলেন, তারপর রিফাতের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ
-পবিত্র আল ফুরকান এই পৃথিবীর যেকোন রোগের চিকিৎসার জন্যই যথেষ্ঠ। কারণ সুস্থ করার মালিক হলো একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। তিনি নিজেই তো ঘোষনা করেছেনঃ
“We revealed in the Qur’aan what is a healing and mercy for the believers.” (Qur’aan,17:82) মাত্র সুরা আল ফাতিহা দিয়ে একজন সাহাবী স্করপিয়নের ভয়ংকর বিষে আক্রান্ত মৃতপ্রায় একজন ব্যক্তিকেও পুরোপুরি সুস্থ করে তুলেছিলেন। এর মূলে রয়েছে বিশ্বাস আর সৃষ্টিকর্তার উপর আস্থা।
-সাইকোলজি এখনও এইসব বিষয়ে প্রায় কিছুই জানে না। এই ধরনের পেশেন্টের মুখ দিয়ে যখন এর উপর সিহর করা এক বা একাধিক জ্বীন কথা বলে তখন সাইকোলজি বলে DID অথবা MPD disorder কিন্তু যখন জ্বীন কথা বলে না তখন সাইকোলজি বলে Schizophrenia. আজও মেডিক্যাল সায়েন্স epilepsy রোগের কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা বের করতে পারে নি। অথচ আমাদের সবার শিক্ষক শায়খ ইবন তায়মিয়াহ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) এইধরনের রুগীর দুইকানে মাত্র আজান আর ইকামত দিয়েই তাকে সুস্থ করে তুলতেন।
-আপনার স্ত্রীর উপরে কোন খারাপ জ্বীন সিহর করেছে। এটাকে আমরা sara‘ al-jinn (demonic possession) বলি। এটা দুই ভাবেই হতে পারে। জ্বীন স্বেচ্ছায় আসতে পারে অথবা কেউ তাকে কুফরী যাদুর মাধ্যমে আপনার স্ত্রীর কাছে পাঠাতে পারে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি ঈমান থাকলে কেউ এই ধরনের কাজ করার সাহস পায় না। এটা ভয়ংকর গুনাহের কাজ, এটা করার সাথে সাথেই ঈমান চলে যায়। ইনসাল্লাহ আপনার স্ত্রী আবার সুস্থ হয়ে যাবেন। কিন্তু সুস্থ হবার পর থেকেই আপনাদের জীবনযাত্রা পরিবর্তন করতে হবে। ইসলামের বিধি বিধান মোতাবেক আপনাদের চলতে হবে। না হলে আবারও একই সমস্যা হতে পারে। আপনি যখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশিত রাস্তায় চলবেন তখন আল্লাহই আপনাকে রক্ষা করার দায়িত্ব নেবেন। আপনি নিশ্চয় শুনেছেন উনি কি বলেছেন পবিত্র কুরআন শরীফেঃ
“Surely, every soul has a protector over it.”[Qur’aan, 43:36]
“Each [person] has a succession of angels in front of him and behind him, protecting him by Allaah’s command.”[Qur’aan, 13:11]
“He is the Irresistible, high above His servants, and He sends protectors over you.”[Qur’aan, 6:61]

কিছুক্ষন চুপ থেকে উনি আবার বললেনঃ
-রিফাত সাহেব, আপনি যদি আমাকে ওয়াদা করেন এখন থেকে আপনারা পরিপূর্ন ভাবে আল্লাহর দেয়া রাস্তায় চলবেন তাহলে আমি এখনই আপনার স্ত্রী চিকিৎসা শুরু করবো।
রিফাত সাথে সাথে রাজী হয়ে গেল। শায়খ সাহেবের শুধু উপস্থিতিই ওর মনে অনেক সাহস এনে দিয়েছে। কেন জানি রিফাতের মনে হচ্ছে উনিই রুপাকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলতে পারবেন।

শায়খ সাহেব কিছুক্ষন পবিত্র কুরআন শরীফের সুনির্দিষ্ট কিছু আয়াত পড়ার পর রুপার দিকে তাকিয়ে আদেশ দিলেনঃ
-সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আদেশ মেনে এই মুহূর্তে তুমি এই দেহ ছেড়ে চলে যাও। তুমি কি জান না জ্বীন এবং ইনসানের আবাস স্থল আলাদা করে দেয়া হয়েছে। শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লালাহু আলাহিস ওয়াসালাম) আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশে তোমাদের খাদ্য এবং আবাসস্থল ঠিক করে দিয়েছেন। কোন সাহসে তুমি আল্লাহর আদেশ অমান্য করছো?

বেশ কয়েকবার বলার পরও যখন রুপার কাছ থেকে কোন উত্তর আসলো না তখন শায়খ সাহেব রিফাতের দিকে ফিরে বললেনঃ
-রিফাত সাহেব, শায়খ ইবন আল-কাইয়ুম (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, কারও উপর যদি সিহর করা অনেকদিন হয়ে যায় তাহলে শুধুমাত্র Qur’ânic verses and prophetic methods এর মাধ্যমে রুকাইয়া করে তাকে ভালো করা সম্ভব নয়। এই ধরনের জটিল রুগীর চিকিৎসার জন্য শায়খ ইবন তায়মিয়াহ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) Qur’ânic spiritual medicine এর সাথে approved arabic method ব্যবহারের জন্য অনুমতি দিয়েছেন। এই রুগীকে সুস্থ করে তোলা এখন আমার পবিত্র দায়িত্ব যা আমি কোনভাবেই অস্বীকার করতে পারবো না।

এরপর উনি রিফাতকে কিছু দোয়া পড়া সুতা দিলেন এবং সেইগুলি দিয়ে রুপার হাতে এবং পায়ের প্রতিটা আঙ্গুল একটার সাথে আরেকটা বাঁধতে বললেন। রিফাত উনাকে বাঁধতে বললে উনি রাজি না হয়ে বললেনঃ
-আপনার স্ত্রী আমার জন্য গায়েরে মাহরাম। উনাকে সামান্য স্পর্শ করাও আমার জন্য হারাম।

সুতা বাঁধার সময় রুপা প্রচন্ড অস্থির ভাবে নড়াচড়া করতে লাগলো। পাগলের মতো ছুটে চলে যেতে চাইলো। রিফাত আর বাসার আরও চারজন মিলেও রুপাকে প্রায় ধরে রাখতে পারছে না। অনেক কষ্ট করে সবগুলি সুতা বাঁধা শেষ হবার পর শায়খ সাহেব কিছুক্ষণ দোয়া পড়ে ফু দিয়ে রুপাকে নাম জিজ্ঞেস করলেন। প্রথমবার রুপা নিজের নাম বললেও দ্বিতীয়বার ভিন্ন একটা কন্ঠস্বরে আরেকটা বেশ দুর্বোধ্য নাম বলল। শায়খ সাহেব এবার নিশ্চিত হলেন যে রুপার উপর সিহর হয়েছে। মাত্র একটা নাম বলার কারণে একটা জ্বীন যে রুপার দেহে আশ্রয় নিয়েছে সেটাও নিশ্চিত হওয়া গেল। এরপর এই জ্বীনকে জিজ্ঞেস করা হলে জানালো, সে একজন অমুসলিম পুরুষ জ্বীন। এবং তাকে একটা সুনির্দিষ্ট কাজের জন্যই এখানে পাঠানো হয়েছে। এবং রুপাকে এর বেশ পছন্দ হয়েছে, তাই রুপাকে এটা কোনভাবেই ছেড়ে যাবে না। এমন কি শায়খ একে ইসলাম গ্রহন করার আমন্ত্রন জানালে সেটাও অস্বীকার করলো।

এবার শায়খ সাহেব বাধ্য হলেন কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে। আল ফুরকানের সুনির্দিষ্ট কিছু আয়াত তিলোয়াত করা শুরু করলে রুপার দেহে আশ্র‍য় গ্রহণকারী জ্বীন প্রচন্ড যন্ত্রনায় ছটফট করতে লাগলো। রুপাকে এখন সবাই মিলেও ধরে রাখতে পারছে না। পাগলের মতো ছুটে দূরে কোথাও চলে যেতে চাইছে। শাস্তির তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে একপর্যায়ে জ্বীন রুপার দেহ ছেড়ে একবারে চলে যাবার অনুমতি চাইলে শায়খ সাহেব আগে একে বিস্তারিত ভাবে সবকিছু, বিশেষ করে কে তাকে পাঠিয়েছে, কিভাবে কোথায় কার দ্বারা রুপার উপর কুফরী যাদু করা হয়েছে সেটা জানাতে বললেন। সুতা দিয়ে বেঁধে রাখার জন্য ইচ্ছে করলেও এখন এই জ্বীন রুপার দেহ থেকে বের হতে পারবে না। প্রথমে উত্তর না দিয়ে জ্বীন চুপ করে আছে দেখে উনি আবারও তিলোয়াত করা শুরু করলে এবার জ্বীন গড়গড় করে একদম প্রথম থেকে সবকিছু বলে দিল।

শায়খ সাহেব রিফাতকে বললেনঃ
-কুফরী দ্বারা জ্বীন চালনা করতে হলে রুগীর ব্যবহার্য কোন কিছুর উপর যাদু করে সেটা কোথাও লুকিয়ে রাখা হয়। এটা আগে তুলে সর্ম্পূণ নষ্ট না করা পর্যন্ত এই জ্বীনকে পুরোপুরি দূর করে দেয়া যাবে না। আপনি এখনই রুপার গ্রামের বাড়িতে রুপার ঘরের বাইরে আমগাছের উপর বেঁধে রাখা যাদুর তাবিজ এটার বলে দেয়া জায়গা থেকে বের করে আনুন। এই তাবিজ পুরোপুরি নষ্ট করার পরই রুপার চিকিৎসা আবার শুরু করবো। কোন স্টেপই বাদ দেয়া যাবে না।

রিফাত ওর শ্বশুরকে সাথে সাথেই ফোন দিয়ে সবকিছু বিস্তারিত জানালে উনি একই সাথে দুইটা কাজ করলেন। গাছে ঝুলানো তাবিজ তো বের করলেনই, তার সাথে এই বদমায়েস রফিককে ধরে নিয়ে আসলেন। এর জন্যই উনার মেয়ের এই অবস্থা! মারের চোটে রফিক সবকিছু স্বীকার করে দিল। শায়খ সাহেবের কথামতো তাবিজ খুলে ভিতর থেকে রুপার কিছু চুল, ছোট্ট এক টুকরো কাপড়, চিরুনির ভাঙ্গা একটা অংশ এবং আরবীতে লেখা একটা কাগজ পাওয়া গেল। রুপা’র সুচিকিৎসার প্রয়োজনে এই কাগজে কি লেখা আছে সেটা জানা খুবই দরকার। শায়েখ সাহেবের অনুরোধে রুপার বাবা কাছের মসজিদ থেকে একজন ইমাম সাহেবকে ডেকে এনে সেই কাগজ পড়তে দিলেন। ইমাম সাহেব ভালো করে লেখাটা পড়ার পর, কাগজে কি কি নক্সা আঁকা আছে এবং কিভাবে কাগজে লেখা হয়েছে সেটা বিস্তারিতভাবে শায়খ সাহেবকে ফোনে জানালেন। এবার শায়খ সাহেব কাগজের লেখা এবং নক্সার পাঠোদ্ধার করে ফেললেন। উনার ধারনাই ঠিক হলো। পবিত্র কুরআনের আয়াত উল্টো করে আরবীতে লিখে এই যাদু করা হয়েছে। সাধারণ কেউ এটা পড়ে কিছুই বুঝতে পারবে না। এরপর এরপর শায়খ সাহেব দেয়া পদ্ধতি মোতাবেক সহী শুদ্ধ ভাবে রুপার বাবা সেই ইমাম সাহেবকে দিয়ে সেই কালো যাদুর তাবিজের সবকিছু একসাথে নষ্ট করে ফেলা হলো। রিফাত অবাক হয়ে দেখল রুপা মুহুর্তের মধ্যেই অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠল। শায়খ সাহেব সেই সিহর করা জ্বীনকে এবার চলে যাবার আগে সৃষ্টিকর্তার নামে পরপর তিনবার ওয়াদা করালেন যে সেটা আর কখনই রুপার কাছে ফিরে আসবে না। জ্বীন কোনদিক দিয়ে বের হয়ে যাবে জানতে চাইলে উনি বললেনঃ
-আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আদেশ মেনে তুমি যেদিক দিয়ে অন্যায় ভাবে এইদেহে প্রবেশ করেছ, ঠিক সেইজায়গা দিয়েই বের হয়ে যাও।

এরপর রুপার দেহে থেকে রিফাত শায়খ সাহেবের নির্দেশ মেনে সেই সুতাগুলি খুলে ফেললে রুপার দেহ একবার ভয়ংকর কেঁপে উঠলো এবং রুপা সাথে সাথেই জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পড়ে গেল।

শায়খ সাহেব চলে যাবার আগে রুপার শারীরিক সুস্থতার জন্য দ্রুতই সাধারণ চিকিৎসা করার নির্দেশ দিয়ে গেলেন।

দশ

শায়খ সাহেবের কাছে দেয়া ওয়াদা রিফাত এবং রুপা বাকি জীবনে বেশ ভালোভাবেই মেনে চলেছে এবং এদের দাম্পত্য জীবনেও এই ধরনের আর কোন সমস্যাই হয় নি। যেই সাধক রুপার উপর এই কালোযাদু করেছিল তাকে এলাকা থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। কিন্তু রুপার কাহিনী শুনার পর কেউ তাকে এর চেয়ে বেশি কিছু করার সাহস পায় নি। পরিবর্তিতে ভালোমতো খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে সেই সাধক হিন্দু ছিল। বংশ পরিক্রমা ধরে এটাই তাদের ব্যবসা। দুইবাচ্চা সহ রুপা এখন মধ্যবয়স্ক একজন মহিলা। বেশ কিছুদিন আগে রুপার থেকে তার জীবনের ভয়াবহ এই কাহিনী উদ্ধার করা হয়েছিল। সরাসরি রুপার সাথে কথা না বলার কারণে কিছু তথ্য এবং এই ঘটনার সবকিছু সুচারুভাবে উদ্ধার করা সম্ভব হয় নি।


পুনশ্চঃ
১। রুপার (আসল নাম গোপন করা হয়েছে) ঘটনার শেষ কাহিনী আমি পুরোপুরি জানতে পারিনি। শেষের দিকের কিছু অংশ লেখার জন্য আমি মিসরীয় একটা সত্য ঘটনার উপর ভিত্তি করে লিখেছি। কায়রোর বিখ্যাত সেই রাকীর নাম হলো Abdul-Khaaliq al-‘Attaar.
২। পবিত্র কুরআন শরীফের আয়াত ইংরেজিতে বর্ণনা করা হয়েছে যেন এর অর্থ পরিষ্কার ভাবে সবাই বুঝাতে পারে।
৩। ইসলামিক সহী পদ্ধতিতে রুকাইয়া করার জন্য সারা পৃথিবীতেই রাকী'রা শায়খ ইবন তায়মিয়াহ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর দেয়া নিয়ম একনিষ্ঠ ভাবে মেনে চলেন। উনিই প্রথম এই বিষয়ের উপর সাহাবীদের (রাজিয়াল্লাহু আনহু) পদ্ধতিগুলি লিপিবদ্ধ করেন যা আজও সারা পৃথিবীতে বিনা প্রশ্নেই অনুসরণ করা হয়।


সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত@ নীল আকাশ, নভেম্বর ২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:১৭
২৩টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×