somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাঠ প্রতিক্রিয়া ২ - শায়মা হক এর “বসন্তদিন (বরুণা ও প্রতিফলন)”

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বইয়ের নামঃ বসন্তদিন
লেখার ধরণঃ কথোপকথন স্ট্যাইলে পত্রালাপ।
লেখকঃ বরুণা এবং প্রতিফলন
প্রকাশনীঃ এক্সেপশন পাবলিকেশন
প্রচ্ছদঃ শায়মা হক
প্রকাশঃ একুশে বইমেলা, ফেব্রুয়ারী ২০১৭
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১১২
মলাট মূল্যঃ ১৭৫/=

.
সচরাচর যাদের উপন্যাস, গল্প কিংবা কবিতার বই পড়ার অভ্যাস তাদের জন্য একেবারেই ভিন্নস্বাদের, ভিন্নধাঁচের, গতানুগতিকতার বাইরে অন্যরকম একটা বই হচ্ছে বসন্তদিন। অনেকটাই চিঠিপত্রের আদলে লেখা। পড়ার সময় অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করবে। বসন্তদিন আমি পড়া শুরু করেছিলাম অনেকদিন আগে, ২০১৯ সালে। শেষ করেছিও অনেকবার। তবুও মাঝে মাঝে অকারণেই বইটা খুলে পড়তে বসে যাই। ভালোলাগার লাইনগুলি আণ্ডার লাইন করে বই পড়ার অভ্যাস আমার বহুদিনের। বসন্তদিনের পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখতে বসে দেখি প্রায় অনেকগুলি পৃষ্ঠায় লেখা আণ্ডার লাইন করা। যারা কিছুটা স্লো বা ধীর স্থির টাইপের পাঠক, বই ধরে শেষ করার চাইতে বইয়ের প্রতিটা পৃষ্ঠাই মনোযোগ দিয়ে পড়তে পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটা চমৎকার একটা বই হতে পারে। তবে যারা ধর তক্তা মার পেরেক টাইপের পাঠক, তাদের কিছুটা বোরিং লাগবে এটা নিশ্চিতভাবেই বলে দেয়া যায়।
এর আগে এই লেখিকার কংকাবতী নামের আরেকটা বই পড়েছিলাম, তবে প্রকাশের দিক থেকে সম্ভবত এটাই প্রথম।
.
কাহিনীঃ
বসন্তদিন মূলত একটা মানবীয় সম্পর্কের গভীরতা, সংকট ও সমীকরণ মিলিয়ে নেবার আপ্রাণ চেষ্টার একটা সরব উপাখ্যান। পুরোটা জুড়েই আছে সর্ম্পকের টানাপোড়েন নিয়ে ঝড় ঝঞ্ছা এবং বিচ্ছেদ বিভেদ আর হাহাকারের বিভিন্ন রঙয়ের আস্তরন। লেখক লেখিকা দুইজনই আদ্যোপান্ত চেষ্টা করে গেছেন ঘটে যাওয়া সেই সময়ের বিভিন্ন খুটিনাটি বিষয়গুলি পাঠকের কাছে ফুটিয়ে তুলতে। ব্লগের অনেক পাঠকের কাছেই সম্ভবত এই বইটার নাম একেবারেই অজানা। বসন্তদিন বইটা নিয়ে আগে কিছু ধারণা দেয়া যাক। এটা সামু ব্লগে প্রকাশিত ধারাবাহিক কিছু পোস্ট এবং প্রতি-পোস্টের একত্রে সংকোলন করা একটা তুলকালাম ঘটনা। বইয়ের শুরুটাই হয়েছে ঠিক এভাবেঃ
'আচ্ছা, কোনটা ভালো? স্বপ্ন দেখতে না পারার যন্ত্রণা নাকি স্বপ্ন ভঙ্গের যন্ত্রণা?
কেউ বেছে নেয় স্বপ্ন না দেখাটাকে; কেউ বেছে নেয় স্বপ্ন ভঙ্গের কষ্টটাকে!
কেউ স্বপ্ন দেখে কষ্ট পেয়ে আর স্বপ্ন দেখতে চায় না।

.
লেখিকা নিজেই এই কাহিনী সর্ম্পকে কিছুটা ধারণা দিয়েছেন এভাবেইঃ
বরুণা ও প্রতিফলনের একটি না গল্প, না উপন্যাস বাট পত্রালাপীয় স্টাইলে লিখিত কিছু অতি বাস্তব সামাজিক চিত্রের ছত্রাবলী যা আমি লাভস্টোরীই বলবো....
আমি বরুণা। প্রতিফলনের সাথে যৌথ প্রয়াসে লিখেছিলাম বসন্তদিন নামে খেলাছলে খুব গভীর কোনো ব্যর্থ বা অব্যর্থ এক প্রেমের কাহিনী। যে কাহিনীটার শুরু কোথায় ছিলো জানা থাকলেও শেষ কোথায় জানা ছিলো না। এমনকি আজও জানিনা। আমরা লিখেছিলাম শুধুমাত্র সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের কারণে অকালে ঝরে যাওয়া আবেগ অনুভুতি ও ভালোবাসাময় দুটি হৃদয়ের কথা। ………সকল কিছু উপেক্ষা করে ধরে রাখতে চেয়েছিলাম জাত, পাত, ধর্ম ভেদাভেদ ভুলে দুটি নদীর মোহনায় মিলে যাওয়া কিছু অব্যক্ত হৃদয় কথন।
২০১৭ এর বইমেলার ঠিক আগে আগে প্রতিফলন আর আমি দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম এবছরেই সেই ইচ্ছেটা পূরণের। এই লেখার পিছে পুরোটাই আসলে বাস্তব কোনো ঘটনার ছায়া। এই এতগুলো বছরে হারিয়েছিও হয়তো তার অনেকখানি আবেগও তবুও ভালোবাসা এমনই এক অপার্থীব মোহমায়া যার রেশ আসলে কখনও ফুরিয়ে যায় না। থেকেই যায় এই পৃথিবীর ইথারে ইথারে, গলি ঘুচীর বাতাসে। কোনা ঘুপচীতে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকে....... সে যাইহোক......

.
যারা ব্লগে অনেকদিন ধরে আছেন তারা দুইটা ব্লগ নিক বরুণা এবং প্রতিফলনের সাথে আগে থেকেই পরিচিত। এই দুইটা ব্লগ নিকে বেশ কিছু লেখা পোস্টের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছিল একটা আংশিক একটা ঘটনার, যার শুরুটা হয়েছিল ২১ ডিসেম্বর ২০০৮ সালের রাত ১২-৪৩ টার সময়ে। বইয়ের শুরুতেই পাঠকদের একটানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সুদূর অতীতেঃ
প্রতিফলন, তোমার কি মনে পড়ে আমাদের প্রথম দেখা হওয়া মুহুর্তটির কথা? নিশুথী রাত ছিলো তখন। চারিদিক শুনশান নীরবতা। পৃথিবীর একপ্রান্তে জেগে আমি কম্পিউটারের সামনে। আর তুমি অপর প্রান্তে, ভীনদেশে। কি দুষ্টামী না করতাম আমি সেসব দিনে।
.
বইয়ের বিভিন্ন ঘটনার সত্যতার বিচারে আমি যাবো না, প্রশ্নই উঠে না। কারণ প্রথম পৃষ্ঠাতেই লেখিকা নির্দ্বিধায় বলে দিয়েছেনঃ
স্বভাবগতভাবেই মিথ্যে করে বললাম নিজের সব কিছুই। মিথ্যে নাম, মিথ্যে পরিচয় সে আমি অবলীলায় বলতাম। কাউকেই বিশ্বাস করতে নেই অনলাইনের, এমনটা আমার অনলাইনের চ্যাট শিক্ষার গুরু আমার কাজিনের উপদেশ। কাজেই মিথ্যে বলতে বাঁধেনি একটুও। নিদ্বির্ধায় অবলিলাক্রমে উল্টা পাল্টা একগাদা সত্যি মিথ্যে বানিয়ে বলে টলে তোমাকে ডিলিট করে দিয়ে ঘুমাতে গেলাম।
.

লেখাটা কোন পর্যায়ের সেটার ধারণা দেয়ার জন্য লেখিকার বয়ানে কিছু অংশ পড়ে আসা যাকঃ
আমি খুব ছোট থেকে প্রতিযোগীতামূলক মনোভাবের মানুষ। আমার ধারণা সূর্য্যপুত্রও তাই ছিলো। ওহ আমরা তো আবার একই রাশি। সে সিংহ, আমি সিংহী।
গল্পটা কোনো মিথ্যে কাহিনী হতে পারে। আমিও কোনো লেখার পিছনের ইতিহাস আসলে এক্সপ্লেইন করার পক্ষপাতি নই এবং সেই গল্প সত্য কি মিথ্যা সেটাও আমি কখনই বলবো না। তবুও অনেকেই বলেছিলো এই বসন্তদিনের এই সত্যিকারের মত করে লেখা মিথ্যে ভালোবাসার গল্পটার জন্য লেখিকার শুধুই ঘৃণাই প্রাপ্য। তবে গল্পটা বা ভালোবাসাটা কি সত্যিই ছিলো নাকি মিথ্যা তা হয়ত একমাত্র সূর্য্যপুত্রই ভালো বলতে পারবে। হা হা হা.... যাইহোক ....এই লেখা যে যাই ভাবুক, এটা একটা ডকুমেন্ট আমার আর সূর্য্যপুত্রের প্রপার্টি।

.
ঘটনা শুরু হয়েছিল অন্তর্জালে দুইজন একদম অপরিচিত নর এবং নারীর চ্যাট গ্রুপে পরিচয়ের মাধ্যমে। হুট করে পরিচয়, একে অপর’কে ভালোলাগা। হরেক রকমের আবোল তাবোল গল্পগুলি জমে উঠে কিবোর্ডের ক্রমাগত আঙ্গুলের খোঁচায়। কথা, পাল্টাপাল্টি কথা, তর্ক-যুদ্ধ-শান্তি কিংবা বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে এগিয়ে চলে সেই অব্যক্ত কথামালা। পরিনত বয়সের দুইটা হৃদয়ের যত ইচ্ছে আশা আকাঙ্খার, চাওয়া পাওয়া, আনন্দ বেদনা, পাওয়া না পাওয়ার হাহাকারের গভীর অনুভূতির নিবিঢ় বহিপ্রকাশ ঘটেছে ৫১টা পত্রালাপে। পত্রালাপের মাঝেই জমে উঠতো একে অপরের সাথে সুতীব্র প্রতিযোগীতা। কেউ যেন অপর’কে কোনভাবেই ছাড় দিতে চাইতো না। প্রখর বুদ্ধিদীপ্ত সেই ক্রমাগত প্রতিযোগীতায় উঠে আসতো সম-সাময়িক বিভিন্ন ঘটনা এবং জীবনের অল্পস্বল্প কাহিনী। দুইজনের চিন্তাভাবনায় একান্ত অমিল থাকলেও কী যেন এক চুম্বকের মতো টান দুইজনকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল অচেনা অজানা এক রাজ্যে!
আমি শুরু করলে-তুমি শেষ করছিলে; তুমি অর্ধেকটা বলার আগে, আমি বাকিটা বলে শেষ করছিলাম। ঠিক যেন আমার মতো কেউ একজন!! মনে আছে? তুমি বলেছিলে- "তুমি যেন আমার ঠিক একটা 'পুরুষ' সংস্করণ।" রাশিতে মিল দেখেই কি এটা হলো?
.
বরুণা ও প্রতিফলন নামের এই দুজন ব্লগার ছিলেন এই সামু ব্লগের অন্যতম আলোচিত চরিত্র। একগাদা চিঠিপত্রের মাঝেই ভেসে উঠেছে অতীতে পিছু ফেলে আসা সেইসব টুকরো টুকরো স্মৃতি, কিছু অমোচনীয় ঘটনা। ট্রেন্ডসে প্রথম গিফট দেয়া নেয়ার ঘটনা, ৯৯৯টা ফোনকল দিয়ে বরুণার নাম্বার খুঁজে বের করা, প্রথম দেখা হবার দৃশ্য, আড়ং দেখা হওয়া, এসএমএস নিয়ে গন্ডগোলের সূত্রপাত, থানায় ফোন দেয়া কিংবা বইমেলায় গেটে দেখা হবার ঘটনাগুলি খুব সুন্দরভাব ফুটে উঠেছে।
.
জীবনের বড্ড অমিলের গল্পটা শুরুই হয়েছিলে ঠিক এভাবেঃ “আজকের এই প্রথম দিনটিই শেষ দিন। আর কখনো কথা হবে না আমাদের।” উপেক্ষা ভয়াবহতা সেটা টেনে নিয়ে গিয়েছিন এক বসন্ত থেকে আরেক বসন্তে। মাঝখানেই পুরো সময়টা জুড়েই আবেগের সেইসব চিঠিগুলি লেখা হয়েছিলঃ
একটা বসন্তে যে সম্পর্কের শুরু হয়েছিল আরেকটা বসন্তেই যে সেটা শেষ হতে হবে; এমন কোন প্রয়োজন হয়তো ছিল না। কিন্তু আমাদের যে আরো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।
আরো কিছু জীবন, আরো কিছু স্বপ্ন, হয়তো আরো কিছু স্পর্শের বাইরের হাতছানি। কে বলতে পারে?

.
তারপর শেষ পর্যন্ত কী ঘটেছিল?
সেটার জানার জন্যই পাঠক‘কে পড়তে হবে বসন্তদিনের শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত!
.
চরিত্র চিত্রায়নঃ
পুরো বইটা শুধু মাত্র দুইটা চরিত্র ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। তবে লেখার একদম শেষ দিকে ব্লগার তাজিন নামে একটা বাস্তব চরিত্র দেখতে পাওয়া যায়।
.
কবিতা এবং আবেগের ব্যবহারঃ

অনেক কিছুর মিশেলে লেখা এই বইটাতে পাঠকরা পাবেন অনবদ্য কিছু কবিতা যার কয়েকটা মাত্রাতিরিক্ত রকমের আকর্ষনীয়। কবিতা সিলেকশন করতে যেয়ে মহা সমস্যায় পরে গিয়েছিলাম। এত এত কবিতার মাঝে কোনটা রেখে কোনটা দেবো? তবুও বেছে বেছে আমার পছন্দের কয়েকটা তুলে দিলাম পাঠকদের জন্য।
(১)
অপেক্ষারই প্রহর কাটে-
তাকিয়ে থাকা নীল জানালায়-
আসে যদি তোরই চিঠি
লেখা কথার পংক্তি মালায়।
প্রভাত আলোয় চমকে উঠি.......
মিছেই আশায় এ বুক বাঁধি
আসবে আবার আরেকটি রাত -
ভুল করে তুই ফিরিস যদি.....। (পৃষ্ঠা # ২৫)


(২)
ঝিঁঝিঁপোকার ঝিল্লীরবে-
স্মৃতিগুলো পাখনা মেলে,
শ্রবনলোকে তন্দ্রাগীতি-
যেদিনগুলো গেছিস ফেলে?
অপেক্ষা তোর শেষ হবেনা
প্রতীক্ষারও প্রহর যাবে,
আসবেনা তোর নীল সে চিঠি
নীল মনিহার হয়েই রবে!! (পৃষ্ঠা # ২৭)


(৩)
শেষ সীমানায় দুহাত বাড়াই - বুকে উছল ঢেউ
মন জানে তুই আছিস কোথায়, দৃষ্টিতে নেই কেউ। (পৃষ্ঠা # ৯৬)


(৪)
যখন আমায় নাইবা পাবি,
খুলে দুয়ার মনের,
দৃষ্টি ছূঁয়ে কেবল আঁধার,
প্রতীক্ষা নেই ক্ষণের।
তখন কি তুই স্মৃতির আগল,
খুলবি গোপন মায়ায়?
সংগোপনে জড়িয়ে বুকে,
গন্ধি কোমল ছায়ায়। (পৃষ্ঠা # ১০২)

.
পুরো বইটা বিভিন্ন পৃষ্ঠায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চুম্বকের মতো দুর্দান্ত কিছু লাইন। আমার খুব পছন্দের অনবদ্য কিছু লাইন পাঠকদের জন্য তুলে দিলামঃ
১। হয়তো 'ভালবাসার সম্পর্ক' ব্যাপারটা, সবার কাছেই তার স্পর্শের গন্ডির বাইরেই থেকে যায়। কারণ স্পর্শের বাইরে থাকে বলেই আমরা তাকে বারবার ছুঁতে যাই। বার বার ফিরে যেতে চাই সেই অনুভুতির ভেতরে।
২। ভালোবাসা জিনিষটা এমন; নিজেকে খালি প্রকাশ করতে চায়, ঘোষিত হতে চায় পৃথিবীর কাছে। কিন্তু, আমরা দুজন; কখনই এই মাটির পৃথিবীতে সেটা পারবো না। তাই ভাবলাম, এখানেই না হয় আসি; থাকি না হয় একটা সময় কাছাকাছি, এক সাথে।
৩। আচ্ছা ভালোবাসাও কি বর্ণিল নয়? কখনো লাজরাঙা গোলাপী, কখনো বেদনার নীল, কখনো উদ্যমতার লাল, কখনো বাসনার কমলা, কিংবা হতাশার ধূসর? তাই আমরাও হয়তো তার সাথে সাথে একটু হলেও বদলে যাই; কিংবা ভালোবাসাই আমাদেরকে বদলে দেয়।
৪। 'সময়' এর কোন সংজ্ঞা দেয়া খুব মুশকিল। অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যত আসলে ধারাবাহিক কোন পর্যায় নয়। তুমি যদি আমার বর্তমানে থাকো, তাহলে তুমি অতীতেও ছিলে, ভাবিষ্যতেও থাকবো। কখনো প্রকাশ্যে, কখনো বা চোখের আড়ালে। 'শক্তি ও বস্তুবাদ'- একবার কোন অস্তিত্য সৃষ্টি হলে তার কোন ধ্বংস নেই। খালি অবস্থানের পরিবর্তন হয়। মাত্রা বদলে যায়। বরুণা, যতবার এই শব্দটা উচ্চারণ করি; বুকের ভেতরের চাপা অভিমানটা কেঁপে উঠে। সারাজীবন ধরে চেষ্টা করে গেছি এই অভিমানটাকে সরিয়ে দিতে।
কিন্তু, সে বোধকরি আমাকে আর ছাড়লো না!
৫। কিছু কিছু অপূর্ণতা ভালোবাসাকে পূর্ণতা দেয়। ভালোবাসার অনুভব কখনো দৃশ্যমান হয়না। তবুও ভালোবাসার মানুষটির চোখে চোখ রেখে, মানুষ কি যেন খুঁজে বেড়ায়। অনন্তকাল নিস্পলক তাকিয়ে থেকেও, তার খোঁজ আর পাওয়া যায়না। তোমার সে চোখে কখনো চোখ ফেলা হয়নি আমার।
৬। কাউকে কাউকে বাইরে থেকে খুব নির্লিপ্ত মনে হয়। সব ধরণের দুশ্চিন্তা, হতাশা বা দুঃখবোধের একেবারেই উর্ধ্বে যেন তার বসবাস। কিন্তু খুব কাছ থেকে দেখলে বোঝা যায়; এরা অনেক বেশী অভিমানী, অনেক বেশী অন্তর্মূখী, অনেক বেশী একাকী। এদের অনুভুতির বহির্প্রকাশ, খুব কাছের লোকেরাও অনেক সময় ধরতে পারেনা। কেউ কেউ থাকে, যাদের কে ভালোবাসা টানে; কিন্তু বেঁধে রাখতে পারেনা।
৭. ভালোবাসার অনুভবটা কি বৃত্তের মতো? একটি কেন্দ্রকে ঘিরে যতই ঘুরপাক খাক না কেন; কখনো অতিক্রম করতে পারেনা তার ব্যাসার্ধকে! সেই গন্ডির কাঠামোতেই আটকে থাকে।
কিংবা ভালোবাসাটা হয়তো ঢেউয়ের মতো। কখনো শিখরচূড়ায়, কখনো বা অতল খাদের নীচে। ছোট ছোট পাওয়া না পাওয়ার হিসেব মেলাতে মেলাতে অতিক্রম করে ফেলে অনেকটা পথ। যেটাই হোক না কেন। ভালোবাসা স্থির নয়। কিংবা স্থিরতায় ভালবাসার বিনাশ ঘটে।
৮। ভালোবাসারা মরে যায় না; হারিয়ে থাকে অনুভুতির শবদেহ হয়ে। কখনো; অশ্রুবারিজল সেই ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে তুলে। ভালবাসা হলো ফিনিক্স পাখি। পুড়ে ছাই না হলে আবার জন্ম নিতে পারেনা। নিঃশেষে হারানোর ভেতর দিয়ে অনেক পাওয়ার স্বপ্নরা আবার বেঁচে উঠে। বসন্তদিন নাহয় আসুক। পুড়ে ছাই হওয়াটাই যে ফিনিক্স পাখীর জন্য অনিবার্য। সেই ছাই থেকে নাহয় জন্ম নিক চির বসন্তকাল।
৯। সব প্রশ্নের, সব কেন'র উত্তর মনে হয় জানতে হয় না। মানুষের মনের ভেতর কিছু প্রশ্ন, কিছু জিজ্ঞাসা সবসময় থাকা উচিত।
১০. উপেক্ষা জিনিসটা এত ভয়াবহ যে খুব বেশি নৈব্যাক্তিক না হলে মানুষ মেনে নিতে পারে না।
১১। এক ঈশ্বর সৃষ্টি করলেন আমাদের; দেখাও করিয়ে দিলেন। কিন্তু কেন যে তিনি, তার সাথে কিছু জটিলতা যোগ করে দিলেন? যেটাকে নিয়তি বলি। আমরা হয়তো তার খেলারই পুতুল।

.
যা যা ভালো নাও লাগতে পারেঃ
-খুব অল্প কিছু চরিত্র নিয়ে লেখার কারনে এটা অনেকের কাছেই বোরিং লাগতে পারে।
-টানা ৫১টা চিঠি পড়ে যেতে অনেকের কাছে একঘেঁয়ামীও লাগতে পারে।
-এ ছাড়াও কবিতা বিদ্বেষী কিছু ভয়ংকর পাঠক থাকে যারা শুধুই কবিতা থেকে দূরে থাকা জন্যই উপন্যাস বা গল্প পড়ে থাকেন।
এদের ভয়ে গল্পকার বা উপন্যাসিকরাও লেখার মাঝে কবিতা দেয়ার ব্যাপারে প্রচুর দ্বিধা সংকোচে থাকেন।
তাদের জন্য এই বসন্তদিন হচ্ছে দশ নাম্বারী মহাবিপদ সংকেত!
.
পরিশেষঃ
একটা প্রকাশিত বই’কে তুলনামূলকভাবে রেটিং জন্য নিন্মোক্ত পদ্ধতি আমি সবক্ষেত্রে ব্যবহার করি-
* থীম / প্লট - ১
* কথোপকথন - ১
* চরিত্র বিন্যাস - ১
* ট্যুইষ্ট / পাঠকের আকর্ষন – ১
* লেখার মুন্সিয়ানা – ১

আমার দৃষ্টিতে'বসন্তদিন' এর জন্য মার্কিং হবেঃ
* থীম / প্লট – ০.৫০
* কথোপকথন - ১
* চরিত্র বিন্যাস - ০.৫০
* ট্যুইষ্ট / পাঠকের আকর্ষন – ১
* লেখার মুন্সিয়ানা – ১
[*প্লট এবং চরিত্র বিন্যাসে কম দেয়ার কারণঃ মাত্র দুইজন’কে ঘিরে পুরো লেখার আবর্তন]
.
কিছু লেখা একবার পড়লে মন ভরে না। বারবার পড়তে ইচ্ছে করে। পুরো বই শেষ করার কিছুদিন পরে আবার পড়তে ইচ্ছে করে। বসন্তদিন হচ্ছে ঠিক এইরকম একটা বই। আমার কাছে অনেকেই প্রেমের গল্প বা উপন্যাস লেখার ব্যাপারে সাহায্য চায়। আমি নির্দ্বিধায় তাদের এই বইটা মনোযোগ দিয়ে পড়তে বলে দেই। বহুমাত্রিক বই লেখার ব্যাপারে যাদের আগ্রহ আছে তারাও এই বইটা পড়ে দেখতে পারেন।
.
এই বইটার পাঠক’কে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখার আকর্ষনটা আমার কাছে দুর্দান্ত লেগেছে। এক বসন্তে শুরু হয়ে অসমাপ্ত থাকার আশংকা নিয়ে যে আচমকা গল্পটা শুরু হয়েছিল ধীরে ধীরে সেটা এগিয়ে যায় নিজস্ব গতিধারায়। পড়তে শুরু করলেও পাঠকের মনে বার বার প্রশ্ন উঠে আদতে কি তাদের কখনই দেখা হয়েছিল? হলেই বা শেষ পর্যন্ত কি ঘটেছিল?
.
জীবনের গল্পগুলি এগিয়ে যায় তার নিজের পথ ধরে। সেই পথে অনেক কিছুই ঘটে, আবার অনেক কিছুই অস্পষ্ট থেকে যায়। হুট করে মনে হয় গল্পের বুঝি এখানেই পরিসমাপ্তি ঘটলো। সেখান থেকেই হয়তো নতুন কোন গল্পের সূচনা হবে। এভাবেই গল্প'রা শেষ হয় কিন্তু তার রেশ রয়ে যায় মনে।
.

.
.
কত বসন্তই এসেছে, আবার চলে গেছে। এরপর নতুন কোন বসন্ত নিয়ে এসেছে নতুন কোন জুটির জন্য ভালোবাসার প্রহর।
.
তবুও চেনাজানা এই পৃথিবীতে যতদিন বসন্ত আসবে/যাবে, বসন্তদিনের ভালোবাসার দুর্বার এই কাহিনী পাঠকদের বুকে আলোড়ন তুলেই যাবে...............
.


[এই সর্ম্পূণ পাঠ প্রতিক্রিয়াটা আমি এর আগে একবার লিখেছিলাম। লেখা শেষে ব্লগার শায়মা হক'কে নক করেছিলাম তার মতামতের জন্য। উনি রিপ্লাই দিলেন দুই বা তিনদিন পরে। এর মধ্যেই আমার বাসার কম্পিউটারে বড় ধরণের একটা ঝামেলার কারণে কিছু ফাইল আমার অজান্তেই গায়েব হয়ে গিয়েছিল। কয়েকদিন পরের যখন লেখা ব্লগে প্রকাশ করার জন্য এটা খুঁজলাম তখন দেখি আর নেই। তন্নতন্ন করে সব জায়গায় খুঁজেছি কিন্তু লেখাটা আর পেলাম না। বাধ্য হয়েই পুরো লেখাটা আবার নতুন করে লিখতে হলো।]

উৎসর্গঃ ব্লগার শায়মা হক। বহুমুখী প্রতিভার এই ব্লগারের আরেকটা বই পড়ার অধীর অপেক্ষায়…….

সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, জানুয়ারী ২০২১

.

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৫৪
২৫টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোমলমতিদের থেকে মুক্ত না'হলে, ড: ইউনুসকে আমেরিকাও টিকায়ে রাখতে পারবে না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১১:৩০



কোমলমতিদের সম্পর্কে আমি সামুতে লিখে আসছি আন্দোলনের শুরু থেকে, এরা "সাধারণ ছাত্র" নয়। এখন ২ মাস পর, দেশের বেশীরভাগ মানুষ এদের চিনে ফেলেছে। ড: ইউনুস যদি এদের থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মতামত জানতে চাই

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ০৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


ছবির এই উক্তিটি প্রসঙ্গে ব্লগে কিছু মানুষের মতামত জানতে চাই। এই কথাগুলিই যদি কেউ যুক্তি দিয়ে বলতে চায়, তাকে তারা ভারতের দালাল হিসেবে অবিহিত করে। এই পোস্টে এরকম... ...বাকিটুকু পড়ুন

শারদীয় দূর্গা পূজার শুভেচ্ছা

লিখেছেন ঠাকুরমাহমুদ, ০৯ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১২:২৩



মহাকাশ বিজ্ঞান নাসা’র মহাকাশযান ছুটে চলেছে মহাকাশের অনন্ত পথের দিকে। হয়তো, আজ কাল পরশু অথবা অযুত লক্ষ নিযুত কোটি বছর পর - হয়তো কোনো একদিন প্রমাণ হবে - আদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=গোলাপী পাপড়িতে লিখে রাখি আল্লাহর নাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৯ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:১১



আমি মুগ্ধতায় হই বিভোর,
তাঁর দয়াতেই দেখি নিত্য আলো ফুটা ভোর,
আমি স্নিগ্ধ আবেশ গায়ে মেখে মুখে নিই আল্লাহর নাম,
কী সুন্দর সৃষ্টি তাঁর, কত নিয়ামতে ভরা এই ধরাধাম।

ফুল ভালোবাসি, জলে ভাসা শাপলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ম্যাজিষ্ট্রেট তারাসসুম কি সামুর পোষ্ট পড়ে পালালো?

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৯ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:৪১



নারী ম্যাজিষ্ট্রেট তারাসসুম প্রাণ ভয়ে পালিয়ে গেছেন; সামুর কয়কজন ব্লগার উনাকে দোষী করে পোষ্ট দিয়েছিলেন, অনেকে মন্তব্য করেছেন যে, ম্যাজিষ্ট্রেট তারাসসুম অপরাধ করেছে। আসলে, সরকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×