somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের নেপথ্যের কাহিনী

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাশিয়া ও ইউক্রেনের এই অসম মারাত্মক যুদ্ধ কেন শুরু হয়েছিল এবং কেন এত দীর্ঘকাল ধরে বিস্তৃত হচ্ছে, এই নিয়ে অনেক আলাপ আলোচনা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই যুদ্ধের পিছনের মূল কারণগুলো স্বঘোঘিত স্বনামধন্য কিছু মিডিয়ার কারণে কখনোই প্রকাশ করা হয়নি। নেপথ্যের এই কাহিনীগুলো সবার জানা দরকার বলেই এই পোস্টটা লিখতে বাধ্য হয়েছি।

ইউক্রেন ও রাশিয়াঃ
১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিকরা এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাশিয়ার তৎকালীন অস্থায়ী সরকারকে পদচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করে নেয়। ১৯২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর রাশিয়া সহ আরো কয়েকটি সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র একত্রিত হয়ে গঠন করে ইউনিয়ন অব সোভিয়েত সোশালিস্ট রিপাবলিকস (ইউএসএসআর) বা সোভিয়েত ইউনিয়ন। সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র ভেঙে যাওয়ার পরে ১৯৯১ সালের ২৬শে ডিসেম্বর, সোভিয়েত ইউনিয়নের ১৫টি প্রজাতন্ত্রের স্বাধীনতা ঘোষনা করে এবং ইউক্রেন সহ বেশ কয়েকটি দেশ রাশিয়া থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন সার্বভৌমত্ব দেশ গঠন করে। খাদ্যশস্য তৈরি বিপুল সম্ভাবনাময় এই দেশটি অর্থনৈতিক দিক থেকে যথেষ্ট সচ্ছল ছিল। ইউরোপেও রাশিয়ার পরেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয়তনের অধিকারী এই দেশ সম্ভবত। প্রতিবছর পৃথিবীর অনেকদেশ বিপুল পরিমাণে এই দেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করে।

যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি কারা করেছেঃ
ইউক্রেনের বর্ডার রাশিয়ার সাথেই।‌ সামরিক নিরাপত্তার কারণে রাশিয়া সবসময়ই ইউক্রেন একটি নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে দেখতে চেয়েছিল। রাশিয়া থেকে পৃথক হওয়ার পরে বহুবছর ধরে যারা ইউক্রেনের ক্ষমতা এসেছিল তারা রাশিয়া এবং পাশ্চাত্য দেশ বা ন্যাটোর সাথে একটা মোটামুটি স্থিতি অবস্থা বজায় রেখে দেশ পরিচালনা করতো। ন্যাটো ও আমেরিকার বহুদিনের ইচ্ছে ছিল রাশিয়ার বর্ডারেই একটা অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করা, যার ফলে রাশিয়া নিজের বর্ডার নিয়েই ব্যস্ত থাকবে এবং ন্যাটো আরো বেশি নিরাপদ অবস্থায় চলে যাবে। সেই প্ল্যানে পাশ্চাত্য দেশের বুদ্ধি অনুযায়ী নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমানে প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কি রাশিয়ার সাথে সর্ম্পক উন্নয়নের শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়েই পুরোপুরি উলটে যায়। যারা এই বিষয়ে কিছুটা সন্দেহের মধ্যে থাকেন তারা যেন এই প্রেসিডেন্টের প্রথমবারের মতো নির্বাচনে জয়লাভের ঘটনা দেখে আসতে পারেন।

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে প্রচলিত গোঁড়া ধারণাগুলোর বাইরে যাঁরা চিন্তা করেন, তাঁদের প্রান্তিক করে ফেলা হচ্ছে। প্রভাবশালী বহুজাতিক গণমাধ্যমে তাঁদের খুব কমই জায়গা দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বিকল্প ও ভারসাম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি ও কণ্ঠস্বরের অস্তিত্ব কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। ইতিহাস ও দৃষ্টিভঙ্গির আরও বৈচিত্র্যকরণ কি এই ‘নিশ্চিত পক্ষপাতমূলক’ দৃষ্টিভঙ্গির চেয়ে বেশি স্বাস্থ্যকর নয়? ইউক্রেনের এই ট্র্যাজেডি অনিবার্য করে তোলার ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের ভূমিকা ও ইতিহাস নিয়ে যে যারা কথা বলছেন, তাঁদের কেউই রাশিয়ার অপরাধমূলক আক্রমণের পক্ষে সাফাই গাইছেন না। অথচ নোয়াম চমস্কি, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন মের্শাইমার, সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত চাজ ফ্রিম্যানসহ অন্য বুদ্ধিজীবী যাঁরা যুদ্ধের পেছনের ইতিহাস ও পরিপ্রেক্ষিত তুলে ধরে অকাট্য তথ্য ও যুক্তি উপস্থাপন করছেন, তাঁদের সাক্ষাৎ শয়তান হিসেবে চিত্রিত করা হচ্ছে। অথবা তাঁদের ওপর নানাভাবে কলঙ্ক লেপনের চেষ্টা চলছে।

রাশিয়া কিন্তু শুরুতেই ইউক্রেন আক্রমণ করেনি।‌ বরং ইউক্রেনের বর্তমান সরকারকে বারবার সাবধান করে দেওয়া হয়েছিল ন্যাটোর সাথে সংযুক্তির আশা পরিত্যাগ করে নিরপেক্ষ একটা দেশ হিসাবে আচরণ করার জন্য।‌ এটা খুব স্বাভাবিক একটা চাওয়া রাশিয়ার মতো এত বড় একটা সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী দেশের জন্য, যারা সারা বিশ্বে ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম প্রধান ধারক ও বাহক হিসাবে অনেক বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে।

আমেরিকা ও ন্যাটো কেন এত সাহায্য দিচ্ছেঃ
নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুসারে, রাশিয়াকে মোকাবিলায় ইউক্রেনকে এই পর্যন্ত ১০০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মাত্র একবেলা খাবারের জন্য বিশ্বের প্রতিদিনের ৪ কোটি ৩০ লাখ অভুক্তের নীরব আর্তনাদের সঙ্গে তুলনা করে বলা যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চাইলেই সারা বিশ্বের লাখ লাখ অনাহারির মুখে খাবার তুলে দিতে পারেন। তবে তিনি তা করছেন না বরং বাধাচ্ছেন যুদ্ধবিগ্রহ। যার ফলে মারা যাচ্ছে আরও মানুষ, বিশ্বে সৃষ্টি হচ্ছে অর্থনৈতিক সংকট। অথচ মানুষ বাঁচানোর বদলে হত্যাকেই বেছে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অস্ত্র কেনার জন্যই এর চেয়ে দশগুণ বেশি অর্থ ব্যয় করেছে। আর এসব অর্থায়নে যারা সমর্থন করেছেন ইতিহাসে হয়তো তারাও স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তারা হলেন, ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, রিপাবলিকান সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা মিচ ম্যাককনেল, নিন্মকক্ষের সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও রিপাবলিকান প্রতিনিধি লিজ চেনি। ইউক্রেনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কি ধরতে গেলে সিআইয়ের একজন এজেন্টের চেয়েও বড় ভূমিকা পালন করেছে।‌ তার কর্মকাণ্ড ন্যাটো ও আমেরিকাকে কতটুক সন্তুষ্ট করেছে সেটা গত এক বছর ধরে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম বিনামূল্যে দেওয়ার আগ্রহ এবং সরবরাহ থেকেই ঠিকই টের পাওয়া যায়।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতিঃ
কিছুদিন আগেই রাশিয়ার এক হামলায় ৫০ জেনারেলসহ বিপুল সেনা কর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি ইউক্রেন আর্মি ও জেলেনস্কি প্রশাসন। তবে এই ঘটনায় ইউক্রেন আর্মির জন্য বড় ধরনের বিপর্যয়কর ঘটনা বলে মনে করেন সমর বিশ্লেষকরা। এই ঘটনায় ভেঙ্গে পড়বে ইউক্রেন আর্মির মনোবল। জার্মানির ডয়েচে ভেলে অনলাইনে ইউক্রেনের ৫০ জেনারেল নিহতের খবর প্রকাশিত হলেও পশ্চিমা গণমাধ্যম এ খবর সম্পর্কে নিরব রয়েছে। রাশিয়ার সামরিক বাহিনী নতুন করে আক্রমণ শুরু করেছে ইউক্রেনে। এবার পূর্ব ইউক্রেনীয় অঞ্চল দোনবাসের আরও কিছু অঞ্চল অধিগ্রহণ করে নিতে পারে। রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান আক্রমণের প্রভাব অনুভূত হতে শুরু করেছে দোনবাস থেকে শত শত মাইল দূরবর্তী পূর্বাঞ্চলের শহর ও গ্রামেও। ইউক্রেনের টালমাটাল পরিস্থিতি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন দেশটির কর্মকর্তারা। কারণ রাশিয়া নতুন করে তার প্রায় দুই লাখ নতুন সেনাদের নামানোর আগেই ক্লান্ত ইউক্রেনীয় সেনারা অভিযোগ করেছেন যে, তারা ইতোমধ্যে সংখ্যায় উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে এবং অস্ত্রের মজুদ কমে গেছে। রুশ বাহিনী টি-৯০ ট্যাংকের মতো আরও অত্যাধুনিক অস্ত্র তৈরি করতে শুরু করেছে, যা আমেরিকার তৈরি জ্যাভলিনের মতো ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্রের লক্ষ্য নির্ধারণ ব্যবস্থা শনাক্ত করতে সক্ষম প্রযুক্তিতে সজ্জিত এবং ইউক্রেনীয় সমরাস্ত্রের কার্যকারিতা সীমিত করে দেবে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় বাহিনীর ব্যাপক ক্ষতি মুখোমুখি হচ্ছে। দোনবাসের একটি হাসপাতালের মর্গ ইউক্রেনীয় সেনাদের মৃতদেহ দিয়ে ভর্তি হয়ে গেছে। অন্য একটি হাসপাতালের করিডরে আহত সেনাদের ভিড় লেগেই রয়েছে এবং প্রায় সারা দিন ধরে অ্যাম্বুলেন্স আসা-যাওয়া করছে। রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের সামরিক দিক থেকে কোনো তুলনাই হয় না। একেবারে বদ্ধ পাগল একটা লোকও স্বেচ্ছায় কখনো ইউক্রেনের মতো সামরিক অবস্থা নিয়ে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ করতে যাবে না। পৃথিবীর যে কোন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনায়কের প্রথম কাজ থাকে নিজের দেশের নিরাপত্তার কথা প্রথমে নিশ্চিত করা। কিন্তু এই দেশের রাষ্ট্রনায়ক সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবে রাশিয়ার সাথে এই যুদ্ধ সৃষ্টি করেছে। এটা প্রমাণিত সত্য যে ইউক্রেন চাইলেই রাশিয়া সাথে এই যুদ্ধ শুরু হতো না।‌ ন্যাটোতে যোগ না দেওয়া সহ নিরপেক্ষ থাকার যৌক্তিক দাবিগুলো রাশিয়া বারবার মানার জন্য ইউক্রেনকে চাপ দিচ্ছিল।‌ যেখানে রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের বেশিরভাগ সীমান্ত অঞ্চল অবস্থিত, এত বড় একটা রাষ্ট্রের সাথে সমঝোতায় না এসে ইউক্রেন কেন সেখানে যুদ্ধে জড়িয়ে গেল এই প্রশ্নের উত্তর অনেক গভীর। কারণ এই সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের সরকারের নিজের কাছ থেকেও আসিনি।

তাহলে যুদ্ধের শুরুতে কী হয়েছিলঃ
যুদ্ধের শুরুতে রাশিয়া ধারণা করেছিল সামান্য সেনাবাহিনী নিয়ে ইউক্রেনকে আক্রমণ করে ভয় দেখালেই ইউক্রেন চুক্তিতে আসতে বাধ্য হবে এবং রাশিয়ার দাবিগুলো মেনে নিবে। ইউক্রেন কেন, পৃথিবীর প্রত্যেকটা দেশই তাই করতো। কারণ এটাই স্বাভাবিক আচরণ। নিজের দেশের লাখ লাখ মানুষকে অন্য দেশের সেনাবাহিনী হতে মৃত্যুবরণ করতে দেওয়া এবং দেশকে ধ্বংস হতে দেওয়া পৃথিবীর কোনো দেশের সরকারই কখনোই চাইবে না। কিন্তু ইউক্রেন বর্তমান সরকার সেটা চেয়েছে। যুদ্ধের এক বছর পরে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ইউক্রেন এখন একটা দেশ হিসাবে পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সমস্ত ইউরোপে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে যাওয়া জনসংখ্যার পরিমাণ প্রায় ৮০ লক্ষের কাছাকাছি। বিপুলসংখ্যক নাগরিক যারা ইউক্রেন ছেড়ে একেবারে পালিয়ে চলে গেছে, যাদের জিজ্ঞেস করার পরে তারা অনেকেই নিজের দেশে আর ফিরতে চায়নি। কারণ তারা জানে তারা ফিরে এসে পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপ ছাড়া আর কিছুই ফেরত পাবে না।

এই যুদ্ধের পিছনের গোপন কাহিনীঃ
বিশ্বের প্রভাবশালী বেশিরভাগ মিডিয়া আমেরিকা ও ন্যাটোর তাবেদারী কাজে জড়িত। এটা প্রায় প্রমাণিত সত্য যে, যেই মিডিয়া নিউজ সারা বিশ্বে প্রচারিত হয় সেটা আমেরিকাতে বসে ফিলটার করার মাধ্যমে তৈরি করা হয়। ইউক্রেন যুদ্ধে ইচ্ছে করেই বিপুল পরিমাণে রাশিয়া সেনাবাহিনীর ধ্বংসের খবর ছাপা হতো কিন্তু সেই যুদ্ধে ইউক্রেনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কখনই বলা হতো না। একবছর টানা যুদ্ধ করার পরে ইউক্রেন পুরোপুরি বিধ্বংস অবস্থায় পৌঁছে গেছে।‌ কিন্তু কখনো কি সেই নিউজ সারা বিশ্বের মিডিয়ার কাছে শুনতে পেয়েছেন?

কারো পিঠ চাপড়ে দিয়ে অজানা উদ্দেশ্যে উপরে উঠতে উৎসাহ দিয়ে বেশ কিছুদূর ওঠার পরে মই টান দিয়ে সরিয়ে ফেলার ব্যাপারে আমেরিকা অনেক বছর ধরেই বিখ্যাত।‌ এই নীতি অবলম্বন করে এরা ইরাককে দিয়ে ইরান ও পরবর্তীতে কুয়েত আক্রমণ করিয়েছিল। ভিয়েতনামেও এরা যুদ্ধ করেছিল বিনা কারণে। আফগানিস্তানে বহু বছর ধরে সেনাবাহিনী রেখে লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করেছিল বিনা কারণে।‌ আফগানিস্তানের সেনাবাহিনী পাঠানোর অন্যতম মূল কারণ ছিল রাশিয়ার বর্ডারে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করা। যা তারা অনেক বছর ধরেই করেছিল এবং শেষমেষ ইউক্রেনের সমস্যা তৈরি করে দিয়ে সেখান থেকে তারা চলে এসেছে।

কয়েকদিন ধরেই ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি জেলেনেস্কিকে ফকিরের মত ন্যাটো ও আমেরিকার পায়ে ধরে কান্নাকাটি করার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।‌ প্রতিদিন দুই বা তিনবার তাদের কাছে অস্ত্র সাহায্য চেয়ে হাউমাউ করে কান্নাকাটি করা এই রাষ্ট্রপতি হয়তো অবশেষে উপলব্ধি করেছে নিজের পায়ের নিচের মাটিগুলো আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে। পাশ্চাত্য মিডিয়াগুলিতে পুরোপুরি খবর প্রকাশ না হলেও এটা প্রায় নিশ্চিত যে রাশিয়ান বাহিনী চারিদিক থেকে ইউক্রেনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বেশ দ্রুত। আগেরবারের মতো সামরিক ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত না নিয়ে এবার রাশিয়া তার পূর্ণ শক্তি নেই আক্রমণ করেছে।

জার্মান সরকার অস্ত্র নির্মাতা রেইনমেটালের পক্ষ থেকে কিয়েভের কাছে ৮৮টি পুরনো লেপার্ড ট্যাংক বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। এইগুলো মেরামত শেষে কিয়েভের কাছে হস্তান্তর করা হবে। মেরামতে ব্যয় হবে ১০০ মিলিয়ন ইউরো। কারণ লেপার্ড ১ ট্যাংক এখন আর উৎপাদন করা হয় না। এইগুলোর গোলা নতুন লেপার্ড ২ ট্যাংকের তুলনার ভিন্ন ক্যালিবারের। যা দেয়া হচ্ছে আদতে সেইগুলো কী অবদান রাখবে যুদ্ধে বুঝাই যাচ্ছে !

টেকনোলজিক্যাল ওয়ার ফেয়ারে রাশিয়া আমেরিকার সমকক্ষ একটা দেশ। অনেকক্ষেত্রে আমেরিকার চেয়েও এগিয়ে থাকে। বিভিন্ন দেশ থেকে কুড়িয়ে সামান্য কিছু অস্ত্র এনে ইউক্রেনকে দিয়ে রাশিয়াকে যে কখনো হারানো যাবে না সেটা পাশ্চাত্য দেশগুলো খুব ভালো করে জানে। তারা প্রথমে ধারণা করেছিল এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে রাশিয়া অর্থনৈতিক দিক থেকে পঙ্গু হয়ে যাবে। কিন্তু রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি পুতিন ওদের চেয়েও যে বেশি বুদ্ধি নিয়ে চলেন সেটা যুদ্ধ শুরু হওয়ার চার-পাঁচ মাসের মাথায় ঠিকই বুঝা গেল যখন রাশিয়ার অর্থনীতি নিচের দিকে না নেমে সোজা উপরের দিকে উঠা শুরু করলো।‌ পাশ্চাত্য দেশগুলোর অনৈতিক উৎসাহ দিয়ে এই যুদ্ধ ত্বরান্বিত করার কাজ জোট নিরপেক্ষ বেশিরভাগ দেশ সমর্থন করেনি। ইউক্রেনকে দিয়ে এই অনৈতিক কাজের সমর্থন আফ্রিকার একটা দেশ থেকেও পায়নি পাশ্চাত্য দেশগুলো।

বর্তমান পরিস্থিতিঃ
সবকিছুরই একটা লিমিট থাকে, সীমান্ত থাকে, ইচ্ছে থাকলেও যেটা অতিক্রম করে আর যাওয়া যায় না।‌ আমেরিকার কুচক্রের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে ন্যাটো প্রথমে যুদ্ধে গরম বাতাস দিলেও এখন অবশেষে উপলব্ধি করতে পারছে পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে। জিরো প্লাস জিরো ইক্যূয়াল টু জিরো। ন্যাটোর বেশিরভাগ দেশগুলোর মধ্যে জার্মান, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ছাড়া বাকি কোনো দেশেরই সামরিক দিক থেকে এমন কোনো সামর্থ্য নেই যেটা রাশিয়া আক্রমণ করলে নিজেরা বাঁচাতে পারবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানরা খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করেছিল রাশিয়ার সাথে ঝামেলায় জড়ালে কত ভয়ানক শাস্তি পেতে হয়। ন্যাটোর বেশিরভাগ রাষ্ট্রই যুদ্ধাস্ত্র আমদানি করে আমেরিকা থেকে। ন্যাটোর মধ্যে খুব কম দেশ যুদ্ধাস্ত্র নিজ দেশে তৈরি করার ব্যাপারে স্বয়ংসম্পন্ন। গত এক বছর ধরে হুজুগে পড়ে ইউকে সহ অনেক দেশ গাদা গাদা অস্ত্র সামগ্রী পাঠিয়ে এখন এরা উপলব্ধি করছে যে নিজেদের অস্ত্রের ভান্ডার নিঃশেষ করে ফেলে এরা নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বনিম্ন অবস্থায় নামিয়ে এনেছে।

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে অবরোধ আরোপ করে রাশিয়াকে পঙ্গু রাষ্ট্রে পরিণত করে ফেলে দেয়া যাবে এই অলীক স্বপ্ন যারা দেখেছিল তারা এখন ধীরে ধীরে উপলব্ধি করছে কত বড় ভুল তারা করেছে। যুদ্ধের পরিসংখ্যান বলছে ইউক্রেন সেনাবাহিনী পাশ্চাত্য দেশগুলো থেকে সাহায্য না পেলে অল্প কয়েকদিন মাত্র টিকে থাকতে পারবে।

পাশ্চাত্য দেশগুলো কতদিন এভাবে টানা সাহায্য দিয়ে যাবে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের?
নিজের দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়ে এরা ইউক্রেনকে সাহায্য আর কতদিন করবে?

ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি চরম দুরবস্থায় এসে পৌঁছেছে।‌ এটা শুধু সময়ের অপেক্ষা, খুব শিগগিরই ইউরোপের বাকি দেশগুলো অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। রাশিয়ার থেকে সহজ শর্তে যে গ্যাস পেতো এরা, এখন সেটাও বন্ধ। রাশিয়া যে দাঁতে দাঁত চেপে সব সহ্য করছে এটা ন্যাটোর দেশগুলো এখন খুব ভালো করেই জানে। খুব শীঘ্রই ইউক্রেনের সমস্যার সমাধান করার পরে রাশিয়া বিশেষ করে পুতিন ন্যাটোর যেই দেশগুলো বেশি লাফালাফি করেছে এদেরকে চরমতম শাস্তি দেবে। যত বড় গলাবাজির নাটকই করে বেড়াক, ন্যাটো খুব ভালো করেই জানে আমেরিকার সাহায্য না করলে পুরো ইউরোপকে ধ্বংস করতে রাশিয়ার খুব বেশি সময় লাগবে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমেরিকা কি নিজের দেশকে ধ্বংস করার প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হয়ে রাশিয়ার সাথে সেই সময় যুদ্ধ করবে নাকি আটলান্টিকের অপর পাড়ে বসে নিজের দেশকে নিরাপত্তা দেওয়াটাই বেশি যৌক্তিক মনে করবে?

ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল পরিমাণের সমরাস্ত্র পাঠানোর কারণে এই দেশগুলোর সামরিক দিক থেকে অনেক পিছিয়ে পড়েছে। এই ঘাটতি পূরণ করার জন্য তাদেরকে অস্ত্র কিনতে হবে। কিন্তু কার কাছ থেকে কিনবে?

আমেরিকার কী লাভ?
এবার দেখা যাক ইউক্রেন যুদ্ধে গরম হাওয়া অনেকদিন ধরে টানা দিয়ে যাওয়া রাষ্ট্র আমেরিকার কী লাভ এই যুদ্ধ টিকিয়ে রেখে? কয়েকদিন আগেই আমেরিকার সিনেটের একটা আইন পাস করা হয়েছে, সেখানে প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের জন্য সমরাস্ত্র সংগ্রহ করতে সরাসরি অস্ত্র তৈরি করা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করবে।‌ খুব সহজে একটা আইন, অস্ত্র কিনবে তো অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই, তাই না?

না, ব্যাপারটা এত সহজ নয়। আমেরিকার নির্বাচন নিয়ে যাদের সামান্য কোনো ধারণা আছে তারা জানেন একজন ব্যক্তিকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে গেলে তার যে পরিমাণ ডোনেশন সংগ্রহ করতে হয় সেটার উপরই অনেক কিছু নির্ভর করে। ইচ্ছে করলেই যে কেউ এসে আমেরিকায় নির্বাচন করতে পারবে না, যদি না তার ট্রাম্পের মতন বিপুল পরিমাণে নিজস্ব তহবিল থাকে। ট্রাম্প নিজের টাকায় নির্বাচন করেছে, সেজন্য সে অস্ত্র ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে মোটেও পাত্তা দিত না। এই কারণে সারা বিশ্বে কোথাও যুদ্ধ ট্রাম শুরু করার প্রয়োজন বোধ করেনি। অস্ত্র ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো ট্রাম্পের উপর ছিল মহাখ্যাপা। তাদের ব্যবসায় মন্দায় এনে দিয়েছিল ট্রাম্প। তাই এবার তারা বিপুল টাকা বিনিয়োগ করে ডেমোক্রেটদের জয় করিয়ে বাইডেন্টকে নিয়ে এসেছে। কয়েক বছর ধরেই আমেরিকার অস্ত্র ব্যবসায় মন্দা চলছে, এদিকে আফগানিস্তানে টাকা পয়সা লুটপাটের ধান্দাও বন্ধ। সারা বিশ্বে কোথাও যুদ্ধ না লাগলে তো অস্ত্র বিক্রি করা যায় না।

সুখে থাকলে কেউ কখনো সমরাস্ত্র কিনবে না। সুতরাং অস্ত্র ব্যবসায় জমজমাট অবস্থা আনার জন্য একটা যুদ্ধ দরকার। ইউক্রেন যুদ্ধে সমরাস্ত্র সরবরাহের জন্য সবচেয়ে বেশি অর্ডার পেয়েছে আমেরিকার অস্ত্র ব্যবসায়ীরা। এমনকি ন্যাটোর বিভিন্ন দেশ যে গোলাবারুদ ইউক্রেনে পাঠিয়েছে সেগুলোও আমেরিকার অস্ত্র ব্যবসায়ীদের তৈরি। এই অস্ত্রগুলো ইউক্রেনে পাঠিয়ে দেওয়ার পরে যে শূন্যস্থান তৈরি হবে এসব দেশে, সেটাও আমেরিকান যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করা প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা হবে ন্যাটোর নিয়ম অনুসারে।

অনেকের হয়তো বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে।‌ খুলে বলছি। আমেরিকা সম্প্রতি ঘোষণা করেছে তারা আরো ছয় বিলিয়ন ডলারের সমরাস্ত্র দিবে ইউক্রেনকে। কারা বানাবে এই অস্ত্রগুলো? অবিশ্বাস্য হলেও দেখবেন এই পুরোটাই সরবরাহ করেছে আমেরিকার যুদ্ধ অস্ত্র তৈরি করার প্রতিষ্ঠানগুলো।‌ অনেকদিন পরে তাদের অস্ত্রের ব্যবসা-বাণিজ্যের পালে হাওয়া লাগিয়েছে। গত এক বছরে আমেরিকা থেকে যে পরিমাণ বিপুল বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্রগুলো এসেছে সেগুলো এই প্রতিষ্ঠানগুলো বানিয়েছে। এই যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হবে, আমেরিকা মানবাধিকার সংরক্ষণের নামে আরো বিলিয়ন বিলিয়নের অস্ত্র পাঠাবে ইউক্রেনে তার পুরোটাই তৈরি হবে আমেরিকার বিভিন্ন অস্ত্র তৈরীর প্রতিষ্ঠানগুলোতে। নিশ্চিতগত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে কিয়েভকে এই পর্যন্ত ২৯ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব অস্ত্রের মধ্যে থাকছে হিমার্স ক্ষেপণাস্ত্র এবং গ্রাউন্ড লঞ্চড স্মল ডায়ামিটার বোমাও। নতুন প্যাকেজ পাওয়ার পর ইউক্রেনের সেনাদের দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে পারবে। এগুলো দেড়শ কিলোমিটার দূরের টার্গেটে হামলা করতে সক্ষম। নিশ্চিতভাবে বাইডেনের দ্বিতীয়বার নির্বাচনে ফান্ড জোগাড় করতে কোনো অসুবিধাই হবে না। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবারও লড়তে যাচ্ছেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন জো বাইডেন।

আরেকটা সুবিধা আছে।‌ বিরাট বড় সুবিধা, আমি সুবিধাটা নাম দিয়েছি, জুজুর ভয় সুবিধা।‌ ঘরের কাজের বেটিকে পিটিয়ে যেমন বউকে সতর্কতামূলক মেসেজ দিয়ে দেওয়া যায়, আমেরিকাও সেক্ষেত্রে এই কাজটাই করেছে। ন্যাটোর সবগুলো দেশকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমেরিকার সাথে তাল না মিলালে এবং আমেরিকা থেকে নিয়মিত অস্ত্র না কিনলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো সমস্যা হলে তারা কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাবে না। তাই নিরাপত্তা পেতে গেলে আমেরিকার কাছে থেকে নিয়মিত অস্ত্রশস্ত্র কিনতে হবে। রাশিয়ার ভয়ে কাবু ন্যাটো রাষ্ট্রগুলো এখন বিপুল পরিমাণে সমরস্ত্র মজুদ করা শুরু করবে। এবং যার বেশির ভাগই আসবে আমেরিকার অস্ত্র প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে। ফুলে ফেঁপে এই প্রতিষ্টানগুলো অনেক বড় হয়ে যাবে।

এখন একটা বিরাট প্রশ্ন এসে যায় যে রাশিয়া কেন জেনেশুনে এই ফাঁদে পা দিল। পুতিন একজন নামকরা বিজ্ঞ ব্যক্তি। রাশিয়া ভালো করে বুঝতে পেরেছে ইউক্রেনজনিত সমস্যা শেষ হলে এই পাশ্চাত্য দেশগুলো আরেকটা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করবে। সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলতে একের পর এক দেশ এভাবে সমস্যা সৃষ্টি করতে থাকবে। সুতরাং সবগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার আগেই একটা কালকেউটে সাপের বিষ নামিয়ে ফেলাটা সহজ।‌ রাশিয়া ইউক্রেনকে চরমতম শাস্তি দিবে এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। সম্ভবত রাশিয়ান বাহিনী যখন ইউক্রেন থেকে চলে আসবে এটা পুরোপুরি একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে যা আশেপাশের দেশগুলোর জন্য চরম একটা উদাহরণ হিসেবে দাঁড়া করিয়ে রাখবে রাশিয়া, যেন ভবিষ্যতে বাকি দেশগুলো কখনো রাশিয়ার বিরুদ্ধে টু শব্দ করতেও সাহস না পায়।

অনেকেই আছেন পাশ্চাত্য মিডিয়া দ্বারা তৈরি করা ইউক্রেন যুদ্ধে ইউক্রেনীয় বাহিনী ব্যাপক সাফল্যের কথা শুনে রাশিয়া হেরে যাবে হেরে যাবে বলে রব তুলেছে।‌ যেই দেশের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক বোমা সঞ্চিত আছে, সবচেয়ে বড় আধুনিক বিমানবাহিনী আছে তারা এই যুদ্ধ কিভাবে হেরে যাবে এই সামান্য যৌক্তিক চিন্তাটা তারা কখনো করে না। রাশিয়ার যুদ্ধের শুরুতে তেমন আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ইউক্রেনে আসেনি।‌ তাই প্রাথমিকভাবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী কিছুটা সাফল্য পেলেও এখন টের পাচ্ছে রাশিয়া টেকনোলজিক্যাল দিক থেকে কত ভয়ংকরভাবেই এগিয়ে আছে। আজকেই ইউটিউবে একটা ভিডিও দেখলাম, যেখানে মিডিয়া প্রকাশ করেছে যে মাত্র অল্প কয়েকদিনে রাশিয়ার অত্যাধুনিক জ্যামিং সিস্টেমের কারণে ইউক্রেনের বেশিরভাগ ড্রোন আকাশে উড়ন্ত অবস্থাতে মাটিতে পড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। যুদ্ধে চালিয়ে যাওয়ার মতো কোনো ড্রোন এখন ইউক্রেনের হাতে নেই।‌ ইউক্রেনের কাছে যুদ্ধবিমান বলতে সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের তৈরি মিগ ২১ ও মিগ ২৯ ছাড়া এমন উঁচু দরের কোনো চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান নেই। কয়েকদিন আগে প্রকাশ পাওয়া একটা ভিডিওতে দেখা গেছে রাশিয়ান এক বৈমানিক তার সুখই ৩৫ দিয়ে একাধারে তিনটা ইউক্রেনের যুদ্ধবিমান এবং দুইটা হেলিকপ্টার গুলি করে ভূপতিত করেছে। বিভিন্ন মিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনী পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। জেলেনেস্কি এখন যে বিমানের জন্য কান্নাকাটি করছে তার মূল কারণ হচ্ছে রাশিয়ার অত্যাধুনিক বিমান বাহিনীর সামনে অসহায় সমর্পন ছাড়া এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই ইউক্রেনের।

অত্যাধুনিক স্যাটেলাইট সিস্টেমের কারণে ইউক্রেন বাহিনী যে আধুনিক পাশ্চাত্য সমরাস্ত্রগুলো ব্যবহার করে কিছুটা সাফল্য পেয়েছিল তা এখন নিয়মিতভাবে ব্যাপকহারে ধ্বংস করা শুরু করেছে রাশিয়া। অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক জ্যামিং সিস্টেমের কারণে প্রতিনিয়ত যুদ্ধে ইউক্রেন বাহিনী বিপুলভাবে বিধ্বস্ত হচ্ছে। যুদ্ধের শুরুতেই এলন মাস্কের দেয়া স্টারলিংক সিস্টেম দিয়ে কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে কিছুটা সাফল্য পেলেও রাশিয়ান বাহিনী বেশ কিছু স্টারলিংক সিস্টেম দখল করার পরে সেটাও ডিকোড করে ফেলেছে। এখন এই কমিউনিকেশন সিস্টেমের ব্যবহার করা মানে রাশিয়ার জালের মধ্যে আরো ব্যাপকভাবে জড়িয়ে যাওয়া।

বিশ্বের সর্বাধুনিক ট্যাঙ্ক বলতে যে কয়টাকে বলা হয় তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাশিয়ার টি সিরিজের ট্যাঙ্কগুলো। হাজার হাজার রাশিয়ান ট্যাংকের সামনে ইউক্রেনকে মাত্র কয়েকশ ট্যাংক দিয়ে উপকার করছে নাকি বাঘের গর্তের সামনে নিয়ে ফেলছে সেটা আসলেই প্রশ্নের ব্যাপার। নামকরা সমরবিদরা সবাই ইউক্রেনের কাছে এই ট্যাংকগুলো না দিতেই অনুরোধ করছে। আমেরিকা এই আব্রাম ট্যাঙ্ক দিবে কিনা সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত নয়। এত বছর ধরে এই ট্যাঙ্কের সুনাম এই যুদ্ধে সম্ভবত পুরোপুরি বিধ্বস্ত হবে। অত্যাধুনিক রাশিয়ার বিমানবাহিনীর কাছে এই ট্যাঙ্কগুলো নিতান্তই গুলি প্র্যাকটিস করার মতন অবজেক্ট ছাড়া আর কিছুই হবে না।
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে নিয়ে মিডিয়ার নিউজগুলোকে পড়লেই বিশ্বাস করবেন না। কারণ এর বেশিরভাগ ফেইক, রিমেকড ও ফেব্রিকেটেড। যার প্রমাণ একটা দিচ্ছি। কয়েকদিন আগে পোল্যান্ডের উপরে একটা মিসাইল এসে পড়লে বেশিরভাগ মিডিয়া প্রচার করে সেটা রাশিয়ান মিসাইল অথচ তারা খুব ভালো করে জানতো এই মিসাইল ছোড়া হয়েছে ইউক্রেন সেনাবাহিনী থেকে।‌ কয়েকদিন আগে রাজধানী কিয়েভে একটা আবাসিক ভবনে মিসাইল পড়ে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাওয়া ঘটনাকে নিয়েও পুরোপুরি মিথ্যাচার করেছিল পাশ্চাত্য মিডিয়া। রাশিয়ার ইনকামিং মিসাইলগুলোকে ফেলে দেওয়ার জন্য ইউক্রেন যে হিমার্স মিসাইল ব্যবহার করেছিল তার একটা ফেইল করে গিয়ে সেই আবাসিক ভবনের উপর বিধ্বস্ত হয়েছিল। তাতে বিপুল পরিমাণে লোক মারা গিয়েছে। অথচ সেই দোষটা রাশিয়ার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল।‌ যে সমস্ত যুদ্ধের ভিডিও প্রকাশ করা হয় ইউটিউবে সেইগুলো ভিডিও এডিটিং করে বানানো।

এভাবেই চলছে, মিডিয়ারা এভাবেই সবকিছু চালাচ্ছে। ন্যাটোর রাষ্ট্রগুলো ও আমেরিকা অস্ত্র সাহায্য বন্ধ করলে ইউক্রেন কত ঘন্টা টিকে থাকবে সেটা বের করার জন্য ক্যালকুলেটরও লাগবে না। কয়েকদিন পর পরেই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সমরাস্ত্র আমেরিকা নিজেও আর দেবে না। ইতিমধ্যে ন্যাটোর দেশগুলোর মধ্যে গণ্ডগোল লেগে গিয়েছে। ইতালি সহ ন্যাটোর বেশ কয়েকটা রাষ্ট্র ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে ইউক্রেনকে তারা কোনোভাবে কোনো সাহায্য সহযোগিতা করবে না।‌ খুব শীঘ্রই এই রাষ্ট্রগুলোর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকবে। কয়েকদিন পরেই ইউক্রেন একটা বন্ধুহীন রাষ্ট্রে পরিণত হবে। কারণ দিনশেষে কেউই নিজের দেশের সর্বনাশ করে ইউক্রেনকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব নেবে না। কারণ এইসব বেশিরভাগ রাষ্ট্রগুলো রাশিয়ার বর্ডারের কাছাকাছি। রাশিয়ার এদের আক্রমণও করতে বেশি বেগও পেতে হবে না।‌

এই যুদ্ধে কার কার কী লাভ হলোঃ
রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধে আমার মতে সবচেয়ে সফল হয়েছে নতুন অস্ত্র প্রস্তুতকারী দেশ ইরান। বহু বছর ধরে ইরান বিভিন্ন রকমের সমরাস্ত্র তৈরি করলেও সেটা বহির্বিশ্বে কোথাও যুদ্ধ লাগিয়ে পরীক্ষা করতে পারছিল না আমেরিকা ও রাশিয়ার মতো। এই যুদ্ধ যেন শীতকালেও বসন্তের সুবাস নিয়ে এসেছিল ইরানের জন্য। কামাকাজি ড্রোন দিয়ে ইউক্রেনকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছিল রাশিয়া। একটা কামাকাজি ড্রোনের দাম মাত্র দশ হাজার ডলারের কাছাকাছি। অথচ এগুলোকে ফেলতে ইউক্রেন বাহিনী পাশ্চাত্য দেশগুলোর কাছ থেকে নেয়া লাখ লাখ ডলারের মিসাইল ব্যবহার করেছিল। তার ফলে রাশিয়া যা চেয়েছিল তাই হয়েছে। আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ইউক্রেনের এখন মিসাইল সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এই যুদ্ধে ব্যাপক সাফল্যের পরে বিশ্বের অনেকগুলো দেশে ইরান থেকে ড্রোন কেনার জন্য ঝুঁকে পড়েছে। বিরাট বড় ব্যবসা পাবে ইরান। ঠিক যেভাবে তুরস্ক আজারবাইজান ও আর্মিনিয়ার নিয়ে যুদ্ধে ব্যাপক সাফল্যের পরে সারা বিশ্বে বিপুল পরিমাণে ড্রোন ব্যবসা অর্জন করেছিল। রাশিয়ার অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র ও বিমানগুলোর দুর্দান্ত সাফল্য দেখে ইতোমধ্যেই বিশ্বের অনেকগুলো দেশ এই যুদ্ধবিমান ও সমরাস্ত্রগুলো কেনার জন্য রাশিয়ার সাথে যোগাযোগ করছে বলে গুজব রটেছে। ইরান এক ব্রিগেড সুখই যুদ্ধবিমান কেনার ব্যবস্থা করে ফেলেছে। ইরান বহু বছর ধরেই চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধ বিমান কেনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছিল। ইসরাইলের এফ ১৬ যুদ্ধবিমানের বিপরীতে এখন ইরানের হাতে অত্যাধুনিক বিমান থাকবে। ইসরাইল এখন ইরানে যুদ্ধবিমান নিয়ে ঢোকার আগে দশবার চিন্তা করবে এটা সুনিশ্চিত।

বিশ্ব রাজনীতিতে যেকোনো সময় যেকোনো কিছু বদলে যেতে পারে। শীতল যুদ্ধের সময় সারা বিশ্বের দেশগুলো দুইটা ভাগে বিভক্ত ছিল যার নেতৃত্বে ছিল রাশিয়া ও আমেরিকা। ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ হলে বলয় আবার এভাবেই দুটো গড়ে উঠবে।

যুদ্ধের পরিনতি এখন কোন দিকে?
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ইউক্রেনের এক পঞ্চমাংশ জমি দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন। যুদ্ধ ইতি টানতে জো বাইডেনের পক্ষ থেকে এ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধের দ্রুত ইতি টেনে চীনের ওপর ফোকাস করা। ওয়াশিংটন পোস্ট সূত্র জানায়, গত মাসে সিআইএ ডিরেক্টররা চুপি চুপি কিয়েভে গিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কির সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সিআইএ প্রধান ইউনিয়াম বার্নস শান্তি প্রস্তাবে মধ্যস্থতা করতে যান। দুপক্ষকে তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কিয়েভ বা মস্কো কেউ এই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। রাশিয়া এই প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে। মূলত প্রস্তাবটি ছিল যুদ্ধের সমাপ্তি করতে ইউক্রেনের এক পঞ্চমাংশ জমি দেওয়া। এই প্রস্তাব তৈরি অর্থ হচ্ছে এই যুদ্ধে ইউক্রেনের হেরে যাওয়া ইতোমধ্যেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে।

ইতোমধ্যেই আমেরিকা গুজব রটিয়েছে তাইওয়ানকে চীন ২০২৫ সালে দখল করে নিতে পারে। একই জুজুর ভয় দেখিয়ে তাইওয়ান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া সহ আশেপাশের দেশগুলোতেও বিপুল পরিমাণের অস্ত্র বিক্রির ব্যবস্থাও করে ফেলেছে। চীন যদি নাও চায়, সম্ভবত আমেরিকা এমন কোন কিছুর একটা ব্যবস্থা করবে যার ফলে চীন বাধ্য হয়ে তাইওয়ানকে আক্রমণ করবে। তাহলে আগামী কয়েক বছরের জন্য আবার যুদ্ধ ব্যবসা চাঙ্গা হয়ে উঠবে, সাথে আমেরিকার অস্ত্র ব্যবসায়ীরাও।

সারা বিশ্ব সম্ভবত কিছুদিনের মধ্যেই আরেকটা ভয়াবহ যুদ্ধ দেখতে যাচ্ছে। কারণ বাইডেন পরের বার আবার নির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষনা দিয়েছে। নির্বাচনে দাঁড়াতে ডলার লাগে। কে দেবে সেই রাশি রাশি ডলার?


সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, ফেব্রুয়ারি ২০২৩









সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:০৯
২৩টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হেঁটে আসে বৈশাখ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০০


বৈশাখ, বৈশাখের ঝড় ধূলিবালি
উঠন জুড়ে ঝলমল করছে;
মৌ মৌ ঘ্রান নাকের চারপাশ
তবু বৈশাখ কেনো জানি অহাহাকার-
কালমেঘ দেখে চমকে উঠি!
আজ বুঝি বৈশাখ আমাকে ছুঁয়ে যাবে-
অথচ বৈশাখের নিলাখেলা বুঝা বড় দায়
আজও বৈশাখ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×