বইয়ের নামঃ জন্ম ও যোনির ইতিহাস
লেখিকাঃ জান্নাতুন নাঈম প্রীতি
প্রকাশনীঃ নালন্দা পাবলিকেশন
বিষয়ঃ ননফিকশন, ভ্রমণ কাহিনী
প্রচ্ছদঃ জান্নাতুন নাঈম প্রীতি
প্রথম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
মলাট মূল্য: ৫০০ টাকা
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৭৩ পৃষ্ঠা
বাংলাদেশে হঠাৎ করে লেখক লেখিকাদের আলোচিত কিংবা সমালোচিত হওয়ার জন্য খুব সহজ কিছু প্রমাণিত পন্থা আছে। পুরুষ লেখকদের জন্য সহজ রাস্তা হচ্ছে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে নোংরা কটুক্তি করে একাধিক পোস্ট দিয়ে ধর্মবিদ্বেষী সেজে সেনজেন ভিসা পাওয়ার রাস্তা পাকাপোক্ত করা। আর নারী লেখিকাদের জন্য রাস্তা আছে দুইটা, একটা হচ্ছে অযথা নোংরামি ও অশালীন দৃশ্য সম্মিলিত লেখালিখি করা কিংবা নিজেই ক্রমাগত অশালীন পোশাক পরে বিভিন্ন নোংরামি কাজ করে পত্রিকার গরম খবরে জায়গা করে নেওয়া। বহু বছর ধরেই এই দেশের বহু পুরুষ ও নারী লেখকগণ বেশ দক্ষতার সাথে এই পন্থাগুলো ব্যবহার করে এসেছে। যার ফলশ্রুতিতে আজ পর্যন্ত অনেক লেখক লেখিকারাই এই অজুহাতে দেশ থেকে সেনজেন ভিসা নিয়ে ইউরোপে স্থায়ী হয়েছে। আর কেউ বা এদেশে থেকেই অশ্লীল নোংরামিকে পুঁজি করে সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে হুট করে আলোচিত হয়েছে।
এই বইটার লেখিকা ফ্রান্সে সেনজেন ভিসা নিয়ে চলে যাওয়ার কারণে সেই দেশে থেকে বাংলাদেশে নিজের বইয়ের মার্কেটিং করা কিছুটা দুরুহ ব্যাপার হয়ে পড়েছিল। যার ফলশ্রুতিতে নিজের বইয়ের মার্কেটিং করার জন্য এক ভয়ঙ্কর চরমতম নোংরা রাস্তা বেছে নিয়েছে সে।
টাকার বিনিময়ে যারা দেহ দান করে তাদেরকে আমরা সহজ ভাষায় বেশ্যা বা বারবণিতা বলি। নিতান্তই পেটের দায়ে যারা এই নোংরা কাজে জড়িত হয় তাদের অন্তত একটা বিষয়ে বিশ্বাস করা যায় যে, তাদের কাছে যারা খদ্দের হিসেবে যায় তাদের তথ্য তারা নিরাপত্তার সাথে গোপন রাখে। কিন্তু যারা খ্যাতি লোভে, নিজেকে দ্রুত প্রতিষ্ঠিত করার লোভে বিনা পয়সায় এখানে-ওখানে শরীর বিলিয়ে বেড়ায় তাদেরকে আমি বেশ্যাদের সাথে তুলনা করে বেশ্যাদের অপমান করতে চাই না। তাই পাঠক পাঠিকাদের বিনীত অনুরোধ রইলো এই মেয়েকে বেশ্যা অভিহিত করে একটা পেশাকে অযথা অপমান করবেন না প্লিজ। বেশ্যারা শুধুমাত্র পেটের দায়ী এই নোংরা কাজ করে।
লেখিকার এই পুরো বইটাই হচ্ছে একটার পর একটা মিথ্যার বেশাতির জাল। খুব সূক্ষ্মভাবে লেখিকা বইয়ের এখানে সেখানে তার সাথে যাদের গন্ডগোল ছিল বা যারা তার স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করেছে কিংবা সে যেটা দাবি করেছে তারা সেটা দিতে ব্যর্থ হয়েছে তাদেরকে চূড়ান্তভাবে অপদস্থ করার আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছে। দ্বিচারিতা, মিথ্যাচার, তথ্য গোপন করা কিংবা কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে আড়াল করা আর কাউকে কাপড় খুলে প্রকাশ্যে উন্মুক্ত করে দেওয়ার কাজটা লেখিকা খুব ঠান্ডা মাথায় বইয়ের বিভিন্ন পাতায় করেছে।
বইটা পড়তে শুরু করলে কিছুদূর যাওয়ার পরেই যে কোনো পাঠক পাঠিকা সহজে উপলব্ধি করবেন যে লেখিকা সাইকোলজির ভাষায় সুপেরিয়রিটি কমপ্লেক্সের ভুগছে। ইচ্ছাকৃতভাবে বিখ্যাত সব ব্যক্তিদের সাথে নিজেকে তুলনা করার অর্থহীন, হাস্যকর ও প্রাণান্ত চেষ্টা পদে পদে পাওয়া যায় এই বইয়ের বিভিন্ন জায়গায়। ময়ূরের পেখম কাকের গায়ে লাগালে কোনো কাক কখনো ময়ূর হয় না, কোনদিনও হবে না। কিন্তু এই নোংরা মানসিকতার মেয়েটাকে এটা বোঝাবে কে?
লেখিকা বইয়ের বিভিন্ন পাতায় তার লেখার স্বাধীনতার পক্ষে পৃষ্ঠার পৃষ্ঠা অযৌক্তিক ও হাস্যকর দাবি লিখেছে। ধরুন, দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারী স্ব-ইচ্ছায় একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার পরে, কোনো কারণে এদের মধ্যে মনোমালিন্য হলো। এখন যদি কেউ এদের একজন আরেকজনের গোপন পরিচয় ও নোংরামির কাহিনী ছাপার কাগজে প্রকাশ করে দেয়, তাহলে কি সেটা তার লেখার স্বাধীনতা না ব্যক্তিগত তথ্য উন্মুক্ত করে গুরুতর দেওয়ার অপরাধ হবে?
এই লেখিকার কাছে যার/তার সাথে স্বার্থের প্রয়োজনে বিছানায় শুয়ে পড়াটা মোটেও কোনো অপরাধ না, বরং খুব স্বাভাবিক বিষয়। এটা তার দেহের স্বাধীনতা, ইচ্ছার স্বাধীনতা। কিন্তু তার মতের সাথে অমিল হলেই তার গুষ্টি উদ্ধার করে তার পরিচয় সহ তার যাবতীয় গোপন পরিচয় সহ এইসব রগরগে কাহিনী প্রকাশ্যে ছাপানো হচ্ছে তার কাছে লেখার স্বাধীনতা। এই ধরনের ভণ্ডামি যারা বিশ্বাস করেন কিংবা সমর্থন করেন, তারা আসলে মানসিকভাবে বিকৃত রুচির অসুস্থ রোগী। এদের অতি দ্রুত মানসিক রোগীদের মতো চিকিৎসা করা দরকার।
বইটা পড়ার সময় আপনারা খেয়াল করবেন বিভিন্ন জায়গায় খুব সূক্ষ্মভাবে কারো কারো পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে অথচ তার সাথে লেখিকার খুব ইন্টিমেট সম্পর্ক ছিল, তার সাথে লেখিকার বিভিন্ন রগরগে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে বইয়ের মার্কেটিং করা কিংবা কাটতি বাড়ানোর জন্য। অথচ এইসব ব্যক্তিদের নাম চতুরভাবে গোপন রেখে বা নাম না লিখে, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে জোর করে লেখার মাঝে এর নাম / ওর নাম টেনে নিয়ে এসে তাদের নামে নোংরামি কথা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই লেখিকা অভিযুক্ত ব্যক্তির সাথে আসলে আদৌ বিছানায় গিয়েছে, শরীর বিলিয়ে দিয়েছে নাকি অযথাই তার নামে নোংরামি কথাবার্তা তুলে দিয়েছে এটা প্রমাণ করা আসলে সম্ভব না। কাউকে বিনা পয়সার শরীর অফার করে বিনিময়ে কিছু না পেয়ে অথবা আশানরূপ সাফল্য না পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিষেদাগার করছে না, সেটা প্রমাণ কে করবে? তবে এটা চিরাইত সত্য যে, কেউ একটা মিথ্যা কথা বলতে পারলে তার পক্ষে এক লক্ষ মিথ্যা কথা বলাও কঠিন কিছু না।
একটা বই হিসেবে যদি এটাকে মূল্যায়ন করতে হয়, যা আমি সাধারণত পাঠ প্রতিক্রিয়ায় অন্যান্য বইয়ের করে থাকি, তাতে এই বইটাকে সাধারণ একটা "নন-ফিকশন" জনরার "ভ্রমণ কাহিনী" হিসেবে বলা যায়। লেখিকা ইউরোপে স্থায়ী হওয়ার পরে বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেরিয়েছেন, বিভিন্ন আর্ট গ্যালারি কিংবা শিল্পকর্ম দেখতে গিয়েছেন যার সুন্দর কিছু বর্ণনা এই বইতে পাওয়া যায়, যা এই বইটাকে একটা ভ্রমণ কাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, এর বেশি কিছু না। সরকারবিরোধী বেশ কিছু বক্তব্য পাওয়া যায় যার সাথে এই দেশের আপামর জনতার মতের যথেষ্ট মিল স্বাভাবিকভাবেই হবে। আমার ব্যক্তিগত ধারণা সে এই লাইনগুলো সচেতুরভাবেই দিয়েছে পাবলিক সিমপ্যাথি তার প্রতি নেওয়ার জন্য। তবে দেশ ও সরকার নিয়ে বইতে দেওয়া কথাগুলোর কোনটাই মিথ্যা নয়। পুরো বইতে যোনি সম্পর্কিত মাত্র একটা অংশে সামান্য কিছু লাইন ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। যেটা প্রমাণ করে যে যোনি শব্দটা ইচ্ছাকৃতভাবে বইয়ের নামকরণে ব্যবহার করা হয়েছে। যার যেমন রুচি সে তো সেটাই ব্যবহার করবে, তাই না?
এই ধরনের এত বিকৃত রুচির একটা বই কেন পড়েছি এই প্রশ্ন যে কেউ আমাকে করতে পারেন এবং সেটা খুবই স্বাভাবিক একটা প্রশ্ন। লেখিকার ব্যক্তিগত জীবনের খোলামেলা বিবরণে সাজানো বইটি নিয়ে পাঠক মহলে যথেষ্ট সাড়া পড়েছিল কিছুদিন আগে। নালন্দা প্রকাশনী থেকে বের হওয়া বইটি অল্প সময়ের মধ্যে উঠে এসেছিল পাঠক চাহিদার শীর্ষে। এই বইয়ের ঘটনা প্রথম জানতে পারি সোশ্যাল মিডিয়াতে কয়েকটা পোস্ট দেখে। এরপর লেখিকার ফেসবুকের পোস্টগুলিতে কিছু অস্বাভাবিক তৈলাক্ত মন্তব্য দেখে খুব সন্দেহ জাগলো আসলে ঘটনা কি? লেখিকার বইয়ের লেখার মান সম্পর্কে খুব জানতে ইচ্ছা করলো। বইটা পড়ার পরে অবশেষে উপলব্ধি করলাম লেজকাটা শিয়ালগুলো সব সময় অন্যকোনো লেজওয়ালা শিয়ালকেও লেজ কাটা বানাতে চায়। আর বিনে পয়সায় দুধের সড় খাওয়ার পুরুষের অভাব নেই এই দেশে। এত বেশি আলোচনা কিংবা সমালোচনা না হলে হয়তো এই বইটা আমি পড়তামই না। ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আর ব্যক্তিগত যৌন স্বেচ্ছাচারীতা দুইটা ভিন্ন জিনিসকে একত্রিত করে লেখিকা নিজের লেখার স্বাধীনতা দাবী করেছেন চূড়ান্ত হাস্যকর ভঙ্গিতে। এত জঘন্যতম নোংরা অভিলাষের বই আমি এর আগে পড়িনি।
মানব-সমাজ তো দূরের কথা, বন জঙ্গলে যে পশুপাখিরা থাকে, তারাও সেখানকার পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলার চেষ্টা করে। কোনো সমাজে থাকলে সমাজের প্রতিষ্ঠিত নীতি নৈতিকতার আদর্শ মানতে হয়। কিন্তু লেখিকা সেটা না মেনে ধুরন্ধর রাস্তায় শর্টকাটে ইউরোপে যাওয়ার একটা সুযোগ তৈরী করেছেন বলেই প্রতিয়মান হলো।
অল্প বয়সী মেয়েদেরকে মাত্রাতিরিক্তভাবে ব্যক্তি স্বাধীনতা দিলে তারা কী পরিমাণ নষ্ট হতে পারে এই লেখিকা তার আদর্শ উদাহরণ! বাবা কিংবা চাচার বয়সী লোকদের সাথে নিজের স্বার্থের প্রয়োজনে শারীরিক সম্পর্ক করে স্বার্থ উদ্ধার করে আবার তাদেরকে নিয়ে ইচ্ছামতো সমালোচনা করা কতটা বিকৃতভাষ্য আচরণ কল্পনা করে দেখুন! অল্প বয়সে কম পরিশ্রম করে উপরে উঠবার জন্য যে আসলেই গোপন পথ আছে এবং সেই পথে হাঁটলে সহজে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায় তার একটা সম্পূর্ণ দলিল এই বইটা। অল্প বয়সী থেকেই এত বেশি বেহায়াপনা করার কারণে লেখিকার লজ্জা শরম সম্ভবত পুরোপুরি উবে গিয়েছে। যে পরিমাণ নোংরা, অশালীন শব্দ ও বাক্য এই বইতে লেখা হয়েছে যে কোনো সুস্থ সাহিত্যচর্চা করা শালীন লেখক লেখিকাদের পক্ষে সহজে লেখা সম্ভব না। ইচ্ছে করলেও এতটা বেহায়া যে কেউ খুব সহজে হতেও পারবে না বলেই আমি বিশ্বাস করি।
মিডিয়ায় লোকেদের বা কর্পোরেট কালচারে সেক্সুয়্যালিটি ও সামাজিক অনাচার কোনো অত্যন্ত গোপন ব্যাপার নয়, এটা প্রায় সবাই জানে। জেনেশুনে সেখানে গিয়ে নিজের আখের গুছিয়ে নিয়ে পরে এই কালচারের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করা দ্বিচারিতা ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না।
স্কুল-কলেজে দেখতাম ব্যাকবেঞ্চে বসে অন্য বই বা খাতার ভেতরে ঢুকিয়ে কেউ কেউ চটি বই পড়তো, কারণ চটি বই ছিল নিষিদ্ধ। চটি বই কেন নিষিদ্ধ? কারণ সেখানে নোংরা রগরগে যৌন কাহিনীর বর্ণনা থাকে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে চটি বই যদি নিষিদ্ধ হয় তাহলে এই বইটা কেন নিষিদ্ধ করা ভুল হবে? যে কেউ ইচ্ছে করলেই সাহিত্যের নামে এসব নোংরামি লিখে চটি সাহিত্যের বই প্রকাশ করবে আর সেটা বইমেলায় প্রকাশ্যে বিক্রি হবে এটা একটা অসম্ভব ব্যাপার, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
বইয়ের ১১৫ নম্বর পাতায় নির্বাসিত নিবন্ধে লেখিকা বইয়ের সবচেয়ে হাস্যকর কাণ্ড ঘটিয়েছেন তসলিমা নাসরিনের ইসলাম ধর্ম বিদ্বেষীতা, দ্বিচারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে। তাজ্জব ব্যাপার হচ্ছে এই পুরো বইটাতেই ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে সুক্ষভাবে একের পর এক নোংরামি কথাবার্তা লেখিকা নিজেই লিখেছেন। ইসলাম ধর্ম নারীদের স্বাধীনতা দিয়েছে। কিন্তু বেহায়াপনা করতে অনুমতি দেয়নি, যত্রতত্র শরীর বিকিয়ে দেওয়ার অনুমতি দেয়নি, বিবাহ ব্যতিরেকে ২৫ বছরে ৩৮ জনের সাথে দৈহিক সম্পর্কের অনুমতি দেয়নি। ইসলাম কেন এই পৃথিবীর কোনো ধর্মই এই অনুমতিগুলো দেবে না। এখন যদি লেখিকা এইসব অনুমতির জন্য ইসলাম ধর্মকে অপমান করে নোংরা কথাবার্তা লেখে তাহলে তাতে ইসলামের কোনো ক্ষতি হবে না, বরং লেখিকা যে একজন বিকৃত রুচির সেটাই পাঠকের কাছে মুখ্য হয়ে প্রকাশিত হবে।
জান্নাতুন নাঈম প্রীতির আত্মকথা 'জন্ম ও যোনির ইতিহাস' বইতে দেশের সামাজিকভাবে নষ্ট কিছু মানুষরূপি প পশুর মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছে। এর আগে কিছু নষ্টের মুখোশ উন্মোচন করেছিলেন তসলিমা নাসরিন। তবে বিনা অনুমতিতে ব্যক্তিগত তথ্য উন্মুক্ত করা সমর্থনযোগ্য নয়। কারো আত্মজীবনী মানেই সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিদের প্রাইভেসি ব্রেক করা নয়। নিজের সম্পর্কে একগাদা মিথ্যাচার এনে নারীবাদ, মৌলবাদের তকমা টেনে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায়নি।
অথচ লেখিকা ইচ্ছে করলেই এই বইটাকে নষ্ট সমাজ ও রাজনীতির ভিক্টিম একজন প্রতিবাদী মানুষ হিসেবে রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার নামক আয়নায় ক্ষতবিক্ষত একজন মানুষ কেমন করে বাঁচে তার নিদারুণ সংগ্রামের আখ্যান বানাতে পারতেন। কিন্তু তার বদলে সে এক চটি সাহিত্য প্রসব করেছে। কতটা বেহায়া হলে কেউ নিজের সম্পর্কে এটা লিখতে পারে? ৭৬ পৃষ্ঠায় এসে আমার পুরুষেরা নিবন্ধে প্রীতি যা বলেছেন তার একটি অংশ এখানে হুবহু তুলে দিলাম।
তিনি লিখেছেন-
"নিউ ইয়ার পার্টিতে মদ খেতে খেতে আমার জার্মান বন্ধু নিনা গল্পচ্ছলে জিজ্ঞেস করেছিল
- আমার জীবনে পুরুষের সংখ্যা কত?
আমি শ্যাম্পেনের গ্রাসে চুমুক দিয়ে হাসতে হাসতে বলেছিলাম
- এতগুলো যে মদ খেতে খেতে সবার নাম মনে করা সম্ভব না।
- তাও আন্দাজ করলে?
- এই ধরো ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ!
সে ছোট্ট শিস দিয়ে বলল,
- কিছু মনে না করলে জানতে পারি, বয়স কত তোমার?
- ছাব্বিশ হতে যাচ্ছি!
সে নিজের গ্লাসের অবশিষ্ট শ্যাম্পেনটুকু পেটে চালান করে দিয়ে বলল
- সে কি, বয়সের চেয়ে বেশি!”
বইটির এক পর্যায়ে এসেছে চলচিত্র পরিচালক সেলিমের সহকারী শিপ্রা দেবনাথের কাহিনী। এই শিপ্রা মেজর সিনহা হত্যা মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। লেখিকা বইয়ে সেলিমের অ্যাসিট্যান্ট শিপ্রা দেবনাথের প্রসঙ্গ সম্ভবত বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে নিয়ে এসেছে। সাথে এনেছে পুলিশের কথিত এনকাউন্টারে নিহত মেজর সিনহার কিছু ঘটনা। তিনি বইটিতে এমন কিছু তথ্য প্রকাশ করেছেন, যা সিনহা মার্ডার কেসের সাথে সম্পর্কিত। এই বিষয়ে আমি কিছুই আপাতত লিখতে চাইছি না।
এই বইয়ের বিভিন্ন পাতায় বিভিন্ন লোকজন সম্পর্কে যে কাহিনীগুলো বলা হয়েছে তার শোনা কথা। না জেনে পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে যা লিখেছেন তা নি:সন্দেহে চরম অনৈতিক কাজ। এই অনৈতিকতাকে প্রকাশের অধিকার বলার কোনো সুযোগ নেই।
পরিশেষঃ
লেখিকা এই বইয়ের বিভিন্ন অংশে সচতুরভাবে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে
তিনি টাকার জন্য বা কোনো ফায়দা নেওয়ার জন্য কারো বিছানায় যেতেন, এটা যাতে প্রতিয়মান না হয়। তিনি নিজেকে প্রফেশন্যাল যৌনকর্মী বা বেশ্যাদের চেয়ে নিজেকে আলাদা প্রমাণ করতে চেয়েছেন। একই কাজ করে সে নিজেকে ভালো প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে কিন্তু পেশাদার যৌনকর্মীরা যেহেতু টাকার বিনিময়ে শরীর ভাড়া দেয় তাই তারা খারাপ লেখিকার কাছে! এই ধরণের বিকৃত মন মানসিকতা কারো একদিনে গড়ে উঠে না।
একটা ডিসফাংশনাল পরিবার থেকে উঠে আসা এই লেখিকার বাবার প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণার প্রমাণ বইয়ের বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যায় যেটা তার ব্যক্তিসত্ত্বাকে বিষাক্ত ও বিকৃত করে পুরুষদের প্রতি বানিয়েছে প্রতিহিংসা পরায়ন। সে একজন ক্রমশ মানসিক রোগীতে পরিণত হয়েছে।
তবে বইয়ের নোংরা অংশগুলো বাদ দিয়ে ভালো অংশগুলো পড়ার পরে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে তার লেখনি যথেষ্ট ভালো। উপযুক্ত গাইডেন্স কিংবা mentoring পেলে সে একজন দুর্দান্ত লেখিকা হিসেবে গড়ে উঠবে। উনার সাহিত্যিক প্রতিভা আছে। এই ধরনের বিকৃত রুচির নোংরা সাহিত্যের লেখার ইচ্ছা বা মন-মানসিকতা থেকে উনাকে অবশ্যই বের হয়ে আসতে হবে। সুস্থ ধারার সাহিত্য চর্চার চেষ্টা করতে হবে। আর যদি উনি সেটা না করেন, তাহলে বাংলা সাহিত্যে রসময় গুপ্তের সাথে উনার নামও জোরেসোরে উচ্চারিত হওয়ার জোর সম্ভাবনা আছে।
ধন্যবাদ ও শুভ কামনা...
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, মার্চ ২০২৩
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ১০:২৪