somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নষ্ট সমাজ ব্যবস্থা ১২ঃ বিদ্যানন্দ না ধান্দানন্দ? সমাজসেবা, না টাকা লোপাট করার প্রতিষ্ঠান?

২০ শে এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :









'চল্লিশদিন চোরের আর একদিন গৃহস্থের!'

বাংলা ভাষার এই প্রবাদ প্রবচন পড়েননি এমন লোকজন মনে হয় খুব কমই আছে। এই প্রবাদ প্রবচনের জন্য বর্তমানে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে এই বিদ্যানন্দ নামের তথাকথিত সমাজসেবী প্রতিষ্ঠান। একই কুমিরের বাচ্চা সবাইকে বারবার দেখানোর পদ্ধতি অনুসরণ করে লোকজনের পকেটের টাকা লোপাট করার ধান্দায় আর মুসল্লিদের যাকাতের টাকা গায়েব করার অশুভ চক্রান্তে এরা যেভাবে মেতে উঠেছিল তা আজ গোপন সব তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ভন্ডুল হয়েছে।

নিজেদের নোংরা অপকর্ম ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর এরা সংখ্যালঘুদের তকমা নিজেদের গায়ে লাগিয়ে নিয়েছে। বিপদে পড়লে নিজেকে ডিফেন্ড করার সবচেয়ে ঘৃনিত পদ্ধতি হচ্ছে ধর্মীয় পরিচয় নিজের সামনে নিয়ে আসা। আমি চুরি করবো কিন্তু কেউ আমাকে চোর গালি দিলে আমি আমার সংখ্যালঘু ধর্মীয় পরিচয় সামনে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করবো, এটা অত্যন্ত বড় ধরণের একটা নোংরামি। গুজরাটের কসাই মোদিও কিন্তু হাজার হাজার মানুষ হত্যার হোলি খেলার পরে সনাতনী ধর্মীয় পরিচয় নিজের সামনে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেছিল।

একই কুমিরের বাচ্চার মতো একই গরু দেখানোর মতো করে এক ছবি বারবার লোকজনকে দেখিয়ে টাকা পয়সা তুলে লোপাট করার পরে যদি এখন সাংবাদিক সম্মেলনে এসে নিতান্ত ভদ্র মানুষ সাজে, সব অপরাধ অস্বীকার করে ভাজা মাছটাও উলটে খেতে জানে না ইত্যাদি ভাব ধরার চেষ্টা করে, তাতে অন্তত সাধারণ মানুষজন যাদের বিন্দুমাত্র বুদ্ধিশুদ্ধি আছে, তারা কখনোই বিভ্রান্ত হবে না। একবার ভেবে দেখুন, যদি এভাবে টাকা পয়সা লুটপাট করার তথ্য ফাঁস না হতো, কত হাজার হাজার মুসলিমের যাকাত সুষ্ঠুভাবে আদায় করা হতো না। আর নন মুসলিম একটা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মানুষজনের কাছে যাকাতের টাকা চায় তারা কোন হিসাবে? কোন যুক্তিতে? যাকাতের টাকা শুধুমাত্র যাকাত গ্রহিতা এবং যাকাতের ডিস্ট্রিবিউশনের কাজের নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য খরচ করার অনুমতি আছে। তবে সেক্ষেত্রে তাদেরের অবশ্যই মুসলিম হতে হবে। কোনোভাবে কোনো অমুসলিম এই যাকাত রিলেটেড কাজে মাঝে আসতে পারবে না। যদি কেউ সেটা দাবী করে তবে মিথ্যা বলেছে। যাকাত দেওয়ার ব্যপারে সুনির্দিষ্ট নিয়ম কানুন আছে। সেটার বাইরে কোনোভাবেই যাওয়া যাবে না।

এই প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো এই দেশের মুসলিমদের কাছে যাকাতের টাকা চাওয়া। যাকাতের টাকা লোপাট করার ধান্দাবাজি বুদ্ধি বের করার আগে এদের সম্পর্কে সমাজের সাধারণ মানুষজনের ভালোই ধারণা ছিল। “এক টাকার আহার” ক্যামোফ্লেজের আড়ালে আর সমাজে চিহ্নিত ধান্দাবাজ কিছু লোকজনকে সম্ভবত পেইড মার্কেটার হিসেবে নামিয়ে দিয়ে দুইনাম্বারী কাজ এতদিন ভালোভাবে চালিয়ে যাচ্ছিল। এদের পিছনে অনেক বড় হাত আছে। অনেকেই আর পরে ঘাটাঘাটি করতে সাহস পায়নি।

ওই যে শুরুতে বলেছিলাম না একদিন হবে গৃহস্থের-
এদের ধান্দাবাজি ফাঁস হয়েছে মানুষের কাছ থেকে যাকাতের টাকা চাওয়ার পরে। নন মুসলিম হওয়ার কারণে যাকাতের ব্যাপারে এদের ধারণা ছিল সম্ভবত সামান্য। আমাদের জন্য যাকাত ইসলামের ফরজ বিধান। প্রতিদিন নিয়মিত সালাত আদায় করার মতোই গুরুত্বপূর্ণ এবং অবশ্য পালনীয়। যাকাতের দেওয়ার নিয়ম, যাকাত দেওয়ার পরিমাণ, আর কোথায় দেয়া যাবে আর কোথায় দেয়া যাবে না কিছু সুস্পষ্ট ও পরিষ্কারভাবে নিয়মকানুন বলে দেয়া আছে। কারো উপর যাকাত ফরজ হলে তাকে সেটা দিতেই হবে, এটা নিজের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে না। যাকাত দেওয়ার সময় তাকে নিশ্চিত হতে হবে যে যাকাতটা সঠিক মানুষকেই দেওয়া হচ্ছে। আর ঠিক এই কারণেই মানুষজন বিদ্যানন্দকে যাকাত দেওয়ার আগে তারা আসলে কী করছে? কীভাবে টাকা কোথায় ব্যবহার করছে? সেটা সম্বন্ধে বিস্তারিতভাবে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করে। যখন ভালোমতো এদের সম্বন্ধে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়, তখনই এদের গোমর ফাঁস হওয়া শুরু হয়ে যায়।

সোশাল মিডিয়ায় অনেক মানুষ এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে টাকা দেওয়ার পরে আর কিছুতেই কোথায় দিয়েছে সেটার হিসাব দেয় না। মেসেজ দিয়ে জানতে চাইলে সোজা ব্লক করে দেয়। ফোনও রিসিভ করে না। ভয় দেখানোর কিছু রেকর্ডও আছে। অলংকারের ছবি এরা উই এর এক মেয়ের পেজ থেকে নিয়েছে। সোশাল মিডিয়ায় ধরা পড়ার পরে প্রথমে কিছুতেই স্বীকার করে না। মেয়ে আপত্তিও জানিয়ে মেসেজ পাঠানোর পরে সোজা মেয়েকে ব্লক করেছিল। ফেসবুকে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে তখন এটা স্বীকার করে নেয়। এদের অনেককিছুই এখন পেজ থেকে সরিয়ে নিয়েছে। তাই এদের পেজের বেশ কিছু ছবি পোস্টের প্রথমেই দিয়ে দিয়েছি।

শুরুতে কিছুটা হইচই দেখে তবুও হালকা সন্দেহ হচ্ছিল, কিন্তু এদের পক্ষে সাফাই গাইতে যারা মাঠে নেমেছে, তাদের দেখার সাথে সাথেই এদের পরিচয় জেনে তখনই পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে গেলাম, এরা পুরোপুরি ধাপ্পাবাজ একটা প্রতিষ্ঠান। কারণ একটা চোরে চোরে সব সময় মাশতুত ভাই হয়। সবসময় দেখবেন একজন চোর ধরা পড়লে বাকি চোররা এসে ধরা পড়া চোরের পক্ষে ক্রমাগত সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করে যায়। এটা নতুন কিছু না। একটা ওয়েলফেয়ার বা সমাজসেবী প্রতিষ্ঠান পেইড মার্কেটিয়ারদের মাঠে নামাবে কেন? সোশাল মিডিয়ার একে পর এক এদের পক্ষে বানোয়াট পোস্ট দেওয়াবে কেন? ইদানীং আবার বাতাস প্রতিকূলে থাকার কারণে এইসব পেইড মার্কেটিয়াররা আবার ভোল পাল্টানো শুরু করেছে।

আল সুন্নাহ ফাউন্ডেশন একটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং সারা বাংলাদেশে জনহিতকর ও মানবদরদী কাজগুলো করে বেড়ায়। সারা দেশ জুড়ে এদের এত এত সুনাম এবং এদের প্রতি মানুষের এত বেশি আস্থা দেখে, বিদ্যানন্দও ঠিক একই তকমা গায়ে লাগিয়ে কাক যেমন ময়ূর সাজার চেষ্টা করে, এরাও সেটা দেখানোর চেষ্টা করেছিল। আপনারা খেয়াল করে দেখবেন, আস সুন্নাহকে যাকাত দিলে এদেরকে কেন দেওয়া যাবে না ইত্যাদি তেনা প্যাঁচানো বিভিন্ন ডায়ালগ এদের পেইড মার্কেটেদের কাছ থেকে নিয়মিতই শোনা যাচ্ছিল। একশটা মানুষের মধ্যে যদি একজনকেও বিভ্রান্ত করে যাকাতের টাকা আদায় করতে পারে, তাহলে সেই টাকাই মেরে দেওয়া যাবে। বলুন তো আস সুন্নাহকে কী কোনোদিন পেইড মার্কেটিং করতে দেখেছেন? আজ পর্যন্ত এদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠেছে?

পোষ্টের শুরুতেই এদের ধান্দাবাজি পোস্টগুলো সব অ্যাটাচ করে দিলাম প্রমাণ হিসাবে। কীভাবে এর পেইড মার্কেটিং করে দেখুন? মূল ধান্দাবাজ আবার নিজেকে সমাজসেবী প্রমাণ করার জন্য নিজে বাচ্চা না নেওয়ার মতো নোংরা ও কলুষিত ধান্দাবাজিও মিডিয়ায় প্রকাশ করেছে। কতটা নির্লজ্জ ধান্দাবাজ হলে একজন মানুষ এতটা নিচে নামতে পারে? কিশোরের ভাব দেখে মনে হয় সে একজন মাদার তেরেসা হতে চায়? তুমি যদি শুধু যদি সমাজসেবাই করতে চাও তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের গিয়ে জায়গা লিজ নেওয়ার কি দরকার? তোমার এই প্রতিষ্ঠান কি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান? তুমি তো দাবি করো তোমরা শুধু সমাজসেবা করো? জায়গা জমি লিজ নেওয়া কী ধরণের সমাজসেবা?

দেশের এই ক্রান্তি লগ্নে জ্বলন্ত হারিকেন দিয়ে লোকজন এখন সমাজের কণ্ঠস্বর হিসেবে নিজেরাই দাবি করা শাহাবাগবাসীদের সব জায়গায় খুঁজে বেড়াচ্ছে। একবার ভেবে দেখুন, বিদ্যানন্দের মতো বিতর্কিত ঘটনা যদি আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের ক্ষেত্রে ঘটতো তাহলে শায়েখ আহমদুল্লাহ সাহেব নির্ঘাত এতক্ষণে জেলের মধ্যে ইফতার ও সেহরি করতেন। আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনকে সারাজীবনের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবিতে দিনরাত উচ্চস্বরে মাইক হাতে আজ মুখরিত থাকতো শাহবাগ প্রাঙ্গনে বিরিয়ানীর প্যাকেটখোরদের প্রচারণায়। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি প্রতিকূলে এখন। তাই এই সময় এরা এখন মাথার উপর একগাদা লেপ কম্বল দিয়ে ঢেকে, কানের মধ্যে মোটা তুলা গুঁজে দিয়ে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।

তবে এখনো কিছু বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, বেকুব আর নির্বোধরা এই ধান্দাবাজ প্রতিষ্ঠানের স্বপক্ষে মিউ মিউ করে লেখা ছাপাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিভিন্ন বানোয়াট মিথ্যা পোস্ট দিয়ে যাচ্ছে আম জনতার চিন্তাধারা অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এদিকে যে এই প্রতিষ্ঠানের গায়ের সব কাপড় খুলে গেছে, তাতেও এদের এখনো টনক নড়েনি! সবাইকে তবুও এই ধান্দাবাজ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সবসময় সর্তক থাকার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।

সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইলো!
মাহে রামাদান ও ঈদ উল ফিতর এর শুভেচ্ছা
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, এপ্রিল ২০২৩


সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ১০:৩৪
২৮টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×