somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্প: বন্ধু ও ...

০৯ ই অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টিং টিং টিং শব্দে মোবাইলটা এলার্ম দিয়ে চলছেই, ঘুমে এতই বিভোর আমি যে মোবাইলের শব্দ আমার কানে এসে পৌছাতে পারছেনা। এলার্ম বেজেই চলেছে নিজের ইচ্ছামত, শেষমেষ এলার্মের শব্দের কাছে পরাজিত হয়ে বিছানা ছেড়ে উঠলাম। ব্রাশে টুথপেষ্ট লাগিয়ে বারান্দায় দাড়ালাম, এটা আমার নিত্য দিনের অভ্যাস, বারান্দায় দাড়িয়ে দাতঁ ব্রাশ করা। আজকের আকাশটা অনেক পরিষ্কার রোদের তেজ এখনো বাড়েনি তাই মুখ ধুয়ে ছাদে চলে এলাম। চলে এলাম আমরা রাজ্যে!!, ঈদের ছুটিতে ঢাকা অনেকটাই ফাকা, কোন কোলাহল নেই, খুব শান্ত একটা পরিবেশ, ছাদে কিছুক্ষন হাটাহাটি করলাম, নীচে নামতে যাব ঠিক সেই সময়ে একটা ফোন এল আমার এক বন্ধুর নাম্বার থেকে। কলটা রিসিভ করে মোবাইলা কানে ধরতেই ওপাশ থেকে যা শুনলাম তা শোনার জন্যে আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

সকালের নাস্তা না করেই বাসা বের হলাম, আমার বা হাতে তখন ব্যান্ডেজ করা তাই বেশী জোরে হাটতেও পারছিনা, কোন রিকশাও পাচ্ছিনা। হাতে বেশী সময় নেই, তাই একপ্রকার দৌড় শুরু করলাম। কিছুটা সামনে যেতেই একটা খালি রিকশা পেলাম। চরে বসলাম রিকশায়। রিকশা চলছে সামনের দিকে আর আমি ফিরে গেলাম পেছনে................

ক্লাশ সিক্সে পড়ার সময়ে নতুন একটা ছেলে এসে ভর্তি হয় আমাদের স্কুলে, ওর নাম শামীম। ওর চেহারাটা ছিল খুব মিষ্টি, আমি মেয়ে হলে নির্ঘাত ওর প্রেমে পড়ে যেতাম। ও খুব ফর্সা ছিল দেখতে, বলদে গেলে একেবারে দুধ সাদা!! প্রথম দিনেই ওর সাথে আমার খুব ভাল বন্ধুত্ব্য হয়। এর পর থেকে প্রতিদিন টিফিন ভাগাভাগি করে খেতাম আমরা, স্কুল পালাতাম দু‌’জন এক সাথে। বিকেল বেলা দুজনে একসাথে ছাদে বসে গিটার বাজাতাম, ছয় তারের ঝংকারে আন্দোলিত করতারম সবাইকে। নচিকেতা আর হেমন্ত এই দুজনের গানের সুর ওর গিটারে একেবারে জীবন্ত হয়ে উঠত। সেই প্রথম নচিকেতার সাথে আমার পরিচয়, সেই থেকে আমি নচিকেতার ভক্ত। নচিকেতার একটি গান ছিল ওর খুব প্রিয়, অন্ত বিহীন পথ চলই জীবন, শুধু জীবনের কথা বলাই জীবন আর আমার ছিল নীলাঞ্জনা সিরিজের একটি গান: সে প্রথম প্রেম আমার নীলাঞ্জনা। সু-কর্ম হোক আর অপকর্ম হোক দুটেতেই ছিল আমাদের দুজনের সমান দক্ষতা। যাই করতাম দু’জনে একসাথে করতাম। ওর ইচ্ছা ছিআল একটা ব্যান্ডদল তৈরী করা, নামটাও ঠিক করে রেখেছিল ও “ব্ল্যাক রেস” কি ভেবে ও সেই নামটা ঠিক করেছিল তা আমি জানতে পারিনি কখনো। জিজ্ঞেস করলেই বলত: পর বলব। সকালে স্কুল, বিকেলে গিটার আর সন্ধ্যার পরে ড্রামস পেটানো এই ছিল আমারদের নিত্যদিনের রুটিন। আমি তখন সবে মাত্র ধুমপান করা শিখেছি, তবে ওকে না জানিয়ে। ওর কোন বাজে অভ্যাস ছিল না, আমারো না, তবে কিভাবে যেন আমি ধুমপানে অভ্যস্ত হয়ে উঠলাম। ও যেদিন জানতে পারে সেদিন আমাদের মাঝে খুব ঝগড়া হয়, ও অনেক রাগ করে আমার উপর এরপর থেকে ওর সাথে আর আমার কোন যোগাযোগ হয় নি, আমি ভেবেছিলাম এয ও আমার উপর রাগ করে আছে, রাগ ভাংলেই আবার আমাদের বাসায় আসবে আমাকে ডাকতে। সাত দিপর পার হয়ে গেলেও শামীম আর আসে না। তাই আমি নিজ থেকেই ওদের বাসায় গেলাম। ওদের বাসা এর আগে কোনদিন আমি এত নিস্তব্ধ দেখিনি। ওর ঘরে গেলাম, দেখি খাটে শুয়ে আছে। আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে অনেক্ষণ কাদঁল সাথে আমিও কাদঁলাম কোন কারন ছাড়াই সেদিন আমি কেঁদেছি। জীবনে সেই প্রথম আমি ওর চেখে জল দেখেছিলাম, এর আগে কোনদিন ওকে আমি হাতাশ গ্রস্থ হতেও দেখেনি। কাদাঁর কারণ জিজ্ঞেস করতে ও যা বলল তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। ওর বাবা রোড এ্যকসিডেন্টে মারা গিয়েছেন। এর পর থেকেই শামীম স্কুলে অনিয়মিত, আড্ডায় ওকে পাওয়াই যেত না। ক্লাশ এইটে ওঠার আগেই আমাদের স্কুল থেকে বিদয় নিল ও, বাসা পরিবর্তন করে চলে গেল ঢাকার বাইরে। সেই থেকে অনেক দিন আমরা দু’জন ছিলাম বিচ্ছিন্ন।

কোন দিকে যামু?? ডাইনে?? রিকশাওয়ালার ডাকে ধ্যান ভাংল; বললাম ডানে যান। রিকশা থামল একটা মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রর সামনে। শামীম আজ মাদকাস্ত। নেশার জগতে এমন কোন মাদক নেই যেটা ও ব্যবহার করেনি। সারাক্ষন নেশায় বুদ হয়ে থাকত। বেশ কয়েকবার পুলিশ ধরে নিয়েগিয়েছিল ওকে। কোন উপায় না দেখে ওর মা ওকে এখানে ভর্তি করান। যদি ও ভাল হয়, যদি ও ফিরে আসে সেই অন্ধকার জগৎ থেকে। ভিতরে ঢুকে দেখি শামীমের মাথার কাছে দাড়িয়ে আছে ওর ছোট ভাই, শিহাব, মেঝেতে বসে বিলাপ করছে ওর মা, আরো কিছু বন্ধু এসে দাড়িয়ে আছে, ওর খাটের পাশে। আমি গিয়ে শিহাবের কাছে দাড়ালাম। শিহাবের চোখে জল, আমাকে দেখে বলল: ভাইয়া নেশার জগৎ থেকে ফিরে এসেছে!! ও আর কোনদিন নেশা করবে না। গিটার হাতে তুলবে না আর সুরের ঝংকার।

মাদক!!!!!! জীবন থেকে জীবন কেড়ে নিয়ে গেল, আসহায় হয়ে তা চেয়ে চেয়ে দেখলাম শুধু................
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×