somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উঠট্যা পড়। চল তাজিংডং জয় করে আসি।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৩,৪,৫ ছুটি ছিল। সঙ্গে আরো দুই দিন ছুটি ম্যানেজ করে ফেললাম। ২ তারিখ রাতে মোট ১২ জন বান্দরনের উদ্দ্যেশে যাত্রা শুরূ করলাম। ৮ জন উঠলাম এস.আলম এ আর বাকি ৪ জন হানিফ এ। প্রায় ১৫ দিন আগে গিয়েও সরাসরি বান্দরবানের টিকেট সংগ্রহ করতে পারিনি। অগত্য চিটাগাং পর্যন্ত সকাল ৬ টার আগেই পৌছে গেলাম। এখান থেকে একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করে ৮ টার দিকে বান্দরবান শহরে পৌছে গেলাম। এখান থেকে একটা চান্দের গাড়ি ভাড়া করে ক্যাক্ষংঝিরি বাজার পৌছালাম, সেখান থেকে নৌকায় করে প্রায় আড়াই ঘন্টা পর আমরা রূমা বাজার গেলাম, রূমা বাজার থেকে চঁান্দের গাড়ি করে বগা লেকের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরূ করলাম, ইতিমধ্যে আমাদের এক বন্ধু এই রাস্তা দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল সে আর সামনে যাবে না। মায়ের কোলের ছেলে কোলেই ফিরে যাবে। যাহোক ঘন্টা দুয়েক এর মধ্যেই বগা লেকে পৌছালাম। আহ! লেকে বিকালের দৃশ্য অসাধারন। যে যার মত কিছু ঝটপট ছবি তুললাম, এই আলোতে ছবিগুলি বেশি জীবন্ত হয়ে ধরা দেয়।
সেদিন রাতে বগা থেকে পরদিন সকালে কেওকেরাডং আর জাদিপাই ঝরনার উদ্দেশ্যে হাটা দিলাম। ও বলতে ভুলে গেছি, রূমা বাজার থেকেই আমরা একজন গাইড নিয়ে নিয়েছি। সকাল ৭ টায় শুরূ করে দার্জিলিংপাড়া হয়ে দশটার আগেই সবাই মিলে কেওকেরাডং এ উঠলাম। উঠলাম বললাম এই জন্য যে এখানে জয় করলাম শব্দটা খুব বেশি বেমানান হয়ে যায়। এবার সকলে মিলে জাদিপাই ঝরনা দেখতে যাত্রা শুরূ করলাম। প্রায় দেড় ঘন্টা হেঁটে আমরা জাদিপাই এসে পড়লাম। জাদিপাই এর রাস্তা ভয়ংকর রকমের খারাপ। গতবার যখন নাফাখুম গেছিলাম তখন্ও এতো কষ্ট হয়নি। তবে জাদিপাই পৌছে আমাদের সব কষ্ট মূহুর্তে ম্লান হয়ে গেল যখন দেখলাম পাহাড়ের গায়ে রংধনু খেলা করছে। জাদিপাই সত্যিই সুন্দর, তবে কষ্টের কথা ভেবে যারা এখন না যাওয়ার কথা ভাবছেন তাদের জন্য খবর হলো আগামী বছরের মধ্যে এই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলবে। জাদিপাই থেকে ফিরতে আমাদের প্রায় তিন ঘন্টা লাগল। পথে জাদিপাইপাড়া আর পাচিংপাড়ায় আমরা যাত্রা বিরতি দিয়েছি। কেওকেরাডং ফিরে আমরা দুপুরের খাবার খেলাম, কেওকেরাডং এর মালিক লালা ভাই আগে থেকেই আমাদের খাবার রেডি করে রেখেছিল। আমাদের গ্রপের সকলে সেইদিনই বগাতে ফিরে এল। থেকে গেলাম শুধু চারজন যাদেরকে তাজিংডং হাতছানি দিচ্ছে।
গাইড ঠিক করলাম ২ জন। সেদিন রাতেই তেল, মসলা, শুকনা খাবার পাচিংপাড়া থেকে কিনে রাখলাম, কারন পথে আর কোন দোকান পাব না, আর ঐখানে বোম আদিবাসীদের বেশিরভাগই তেল মসলা ছাড়া রান্না করে। সেদিন রাত কাটালাম কেওকেরাডং এর চূড়ায়। পরদিন ভোর পাচটায় আমরা গিয়ে গাইডকে ডেকে উঠালাম। যাত্রা শুরু করলাম ছয়টার দিকে, ইচ্ছা ছিল মুরংপাড়া গিয়ে ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করব। কিন্তু কপাল খারাপ, কারবারি(আদিবাসীদের নেতা) বাড়িতে না থাকায় সেখানে খাবার জুটল না। সাথে থাকা হালকা কিছু খাবার খেয়ে হাটা শুরু করলাম, ভয়ংকর সুন্দর সে রাস্তা, পথে পথে ঝরনা, পানির খুব একটা অভাব নেই। এক বোতলে স্যালাইন অন্য বোতলে পানি ভরছি কিছু সময় পর পর। ঘন্টা খানিক হাটার পর শুরু হল আসল বেচে থাকার লড়াই। প্রচন্ড খাড়া সে এক পায়ে রাস্তা, একটু এদিক ওদিক হলে হাজার খানেক ফুট নিচে পড়ে যাব। এর আগে ছোট কিছু পাহাড়ে উঠলেও এটা একেবারেই অন্যরকম। হটাৎ করেই আমাদের মত কারো তাজিংডং জয়ের স্বপ্ন দেখা উচিত না।
ঘন্টা তিনেক নিরবিছিন্ন হাটা, পথে কোন মানুষ, পশু পাখি কারো সাথেই আমাদের দেখা হয়নি। এবার পৌছালাম বাকলাইপাড়া, এখানেও বিধিবাম, পাড়ার সবাই দা্ওয়াত খেতে গেছে প্রাতাপাড়ায়, কারবারি বাড়িতে নেই তাই আমরা একটু বসার সুযোগও পেলাম না। অতপর পাশের আর্মি ক্যাম্পএ রিপোর্ট করে আরো কিছুক্ষন হেটে পৌছালাম প্রাতাপাড়াই। সেখানে বিরাট আয়োজন। কিন্তূ তা আমাদের জন্য নয়। ওরা খাবে কালো হরিণ। অগত্য আমাদের জন্য মুরগি ধরে জবাই করা হলো। পাহাড়ি চাল আর প্রচন্ড শক্ত মুরগি দিয়ে পরম তৃপ্তি নিয়ে আমাদের দুপুরের খাওয়া শেষ করলাম। একটু রেষ্ট নিয়ে এবার হাটা শুরু করলাম সিমল্তাংপি পাড়ার উদ্দেশ্যে, তিন ঘন্টায় যখন সেখানে পৌছালাম তখন প্রায় সন্ধা। রাতে কারবারির বাড়িতে থাকলাম। বারবিকিউ করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু দেড় ঘন্টা পোড়ানোর পরও এই পাহাড়ি মোরগ এর কিছুই করা সম্ভব হল না। অগত্য নিরস্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। আহ প্রতিটা রাত ঘুম যা হয়েছে না সারাদিন হাটার পর!
পরদিন সকাল সাতটায় শুরূ হল আমাদের তাজিংডং যাত্রা, মাত্র এক ঘন্টা হেটেই পৌছে গেলাম আমাদের দেশের সর্ব্বোচ চূড়ায়। আহ সে এক অন্য অনুভূতি, ফোন করলাম প্রিয় মানুষদেরকে ভাগ করে নিলাম আমাদের আনন্দ সবার সাথে। তাজিংডং এর ঠিক পাশের পাহাড়টাকে(চিরচিনময়) বেশি উচু মনে হল।
অতপর ফেরার পালা, প্রথম বিরতি নিলাম শেরকমপাড়ায়, এর পর বোডিংপাড়া হয়ে থানচি। বোডিংপাড়ার ব্যাপারটা অন্যরকম, একই সাথে আদিম আর আধুনিক। সেদিন রাতে থানচি থাকলাম, পাহাড়িকা হোটেলে খেলাম (ডাল, ভাত, আলুভর্তা-কত দিন পর!) পরদিন রাত দশটার মধ্যেই ঢাকা চলে এলাম, কিছু সাদাসিদা চমৎকার মানুষের ছবি, চিরচিনময় পাহাড়ে পাখির নাচ, ভোর রাতে কেওকেরাডং পাহাড়ের উপর তারা খসে পড়ার দৃশ্য, জাদিপাই ঝরনাতে রংধনুর রং বদল, আর ভয়ংকর সুন্দর কিছু রাস্তার স্মৃতি মাথায় নিয়ে।
উঠট্যা পড়। চল তাজিংডং জয় করে আসি। ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে তবেই যাওয়া উচিৎ। প্রয়োজন পড়লে আওয়াজ দিয়েন, পরামর্শ দিব উপদেশ নয়।
১০টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×