somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাঙা জীবন....পর্ব...(১)-(২)-(৩)

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভাঙা জীবন.....(১)
সময় যেন আর কাটে না । মাঝে মাঝে মনে হয় এই জীবনের সকল চাওয়া পাওয়ার পরিসমাপ্তি টানি । সুখ কে যেখানে নিজের হাতে গলা টিপে হত্যা করেছি সেখানে আর কাকে আমি দায়ি করিব । কার কাছে চাহিবো জবাবদিহিতা । ভালবেসে বিয়ে করে ছিলাম সংসারে সকলের অবাধ্য হয়ে । সেই এক জ্বালা আবার মায়া দেখিয়ে ঘরে তুলেছিলাম অসহায় বান্ধবীকে । আজ সে সহায় আর আমি নিজেই অসহায় ।

পারু তার অতীত দিন গুলির কথা বেলকনিতে পাতানো ইজি চেয়ারে বসে টবে নুয়ে পড়া সূর্যমুখী ফুলের সাথে শেয়ার করে । বলে সূর্যি সব ফুলই তো সুন্দর । সবই তো ফুটে তার সৌন্দর্য শোভায় ভ্রমরের মনে আলিঙ্গন করতে । আর তাতেই তার সার্থকতা । সে আর কয় জনের ভাগ্যে জোটে ।
দেখিস না বেলি সাধারণ একটি ফুল । যে নীরবেই ঝরে পদ দলিত হয় । আর তার কি কদর । সাধারন বেলি হয়ে উঠে অ সাধারণ । ডালায় ডালায় সাজে । ফুল থেকে হয়ে উঠে মালা । বিনিময় হয় প্রেমের আলিঙ্গনে । দুটি প্রাণের স্পন্দন ঘটায় ।
আর এই তুই সূর্যমুখী তোর দেহে কত কারোকাজ । কত সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকিস । কেউ তোকে ফিরেও দেখে না । জানিস আমার কপালটাও না তোর মত । রুপে গুনে অন্য দশ টা মেয়ের চেয়ে কম নেই আমার তবু জীবনভর শুধু হতাশা আর হতাশা । কষ্ট আর কষ্ট । নীরব বেদনা আমার দেহ মন আজ বড়ই সিক্ত ।
প্রাচীর ভেদে আমি পথ খুঁজি বাঁচিবার । কোন পথ পাইনা । যে পথেই তাকাই শুধু কণ্টকময় । কেন যে জীবনটা এমন হল । কারো মনে প্রশ্নও রাখতে পারি না । সবাই বলে আমি কেন ভাগ্যকে দোষ দেই সব দোষই নাকি আমার নিজের ।


ভাঙা জীবন.....(২)

গভীর রাত । নীরব শহর । পারু বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দেখছে বিস্তীর্ণ আকাশ টাকে । কি সুন্দর সুনীল গগণ,তারা গুলিও বড় নিবিড়তায় ঘুমিয়ে পড়েছে । সারা দিনের কর্ম ব্যস্ততা কাটিতে শহরের মানুষ গুলোও ঘুমিয়ে । ঘুমিয়ে পড়েছে শহরের প্রতিটি দানাল কোঠা । পারুর চোখে ঘুম নেই । ভাবে তার মত এই সুন্দর শহরটিতে আরেক টা হৃদয় আছে কিনা যার অস্তিত্ব জোড়ে শুধু কষ্ট আর কষ্ট । যার চোখের পাতা ভরিয়ে থাকে শুধু বেদনার লোনা জ্বলে ।

আসলে এই পৃথিবীতে সবাই কি এক সময় স্বার্থপর হয়ে যায় ? ভাই বোন বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজন খেলার সাথী সবাই কি শুধু সুখের দিনেরই বন্ধু হয় ? পারুর মনে নানা রুপ প্রশ্ন । কোন উত্তর খোজে পায় না । বেলকনিতে পাতানো ইজি চেয়ারটাই যেন তার এখন একমাত্র প্রিয় বন্ধু । প্রিয় সাথি । মাঝে মাঝে ভাবে এও হয়ত চলে যেত পাশ কাটিয়ে ঘৃণা,অবজ্ঞায় মুখ ফিরিয়ে নিত কিন্তু স্থবিরতাই হয়ত তাকে তার বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে । ফেস বুকের পাতায় চোখ রাখে পারু । চেট করে । সুরুটাতে সব বন্ধুদের সহমর্মিতা পায় তার মনের কষ্ট গুলো একটু হলেও লাঘব হয় । সস্থির নিঃশ্বাস ফেলে । কেউ আবার কাটা ঘায়ে দিয়ে বসে নুনের ছিটা । যেদিন তার জীবণটাতে সুখ কানায় কানায় ভরপুর ছিল সেদিন যারা তার সাথে কথা বলত সে দিনের কথা আর আজকের কথা বলার মাঝে যেন সে আকাশ পাতাল ব্যবধান খোজে পায় । অবাক হয়। নীরব আধারে একা একা ভাবে মানুষ কত বিচিত্র হতে পারে । কত বিচিত্র হতে পারে মানুষের মন। প্রকৃতির রুপ পালটায় হয়ত নিয়মে মানুষের রুপ পাল্টানোর যেন যখন তখন ।

সেদিন সারা দিন পারুর মনটা খারাপ ছিল । কারো সাথেই খুব একটা কথা হয়নি তার । জীবনটার প্রতিও তার্র বি-তৃষ্ণা ছিল চরমে। হঠাত খুব কাছের বান্ধবী মিতা রাত বারটা দশ মিনিট ফোন দেয় । অনেক দিন তার সাথে পারুর কোন যোগাযোগ নেই । কারন পারুর হাসবেন্ড সম্পর্কে মিতা কি যেন একটা কটুক্তি করেছিল বলেই সে থেকে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন ।

পারু ভালবেসে বিয়ে করেছে । নর মাংসের সাদ পেলে একটা ক্ষুধারত বাঘের যেমন দশা হয় পারুর যেন তাই হয়েছিল । সবার চোখে স্বামী রুমনের খারাপ দিকটা ধরা পড়লেও পারুর চোখে স্বামী রুমন যেন ছিল ফেরেস্তার মত । স্বামী সম্পর্কে আপন পর যেই কিছু বলতে যেত পারু যেন ধুলায় মিশিয়ে দিত । প্রয়োজনে সে দীর্ঘ দিন তার সাথে কোন রুপ যোগাযোগই রাখতো না । সব কিছু অস্বীকার করলেও পারু একটি বিষয় কে মনে প্রাণে স্বীকার করত যে তার অন্যান্য বোন জামাইদের চেয়ে স্বামী রুমনের অবস্থা তুলনামূলক একটু খারাপ । তাই পারু দিনের পর দিন রাতের পর রাত লেখা পড়ার পাশাপাশি টিউশনি করিয়ে উপার্জনের সমস্ত টাকা স্বামী রুমনের হাতে দিত ।
পড়া লেখায় যথেষ্ট ভাল পারু । পঞ্চম শ্রেনীতে টেলেন্ট পুলে বৃত্তি অষ্টম শ্রেণীতেও টেলেন্ট পুলে । এসএসসিতে গুল্ডেন এ প্লাস । ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার দশ দিন আগে হল ট্রাইফয়েড জ্বর । জীবন বাঁচাতে ডাক্তারের পরামর্শে সেবার আর পরীক্ষা দেওয়া হল না । মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে পারু বেঁচে উঠল । প্রস্ততি চলল পরবর্তী পরীক্ষার । পরীক্ষা হল । রেজাল্টও হল আশানুরূপ । গুল্ডেন এ প্লাস ।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস । সকল রেজাল্ড ভালর পরও পারুর আশা পুরণ হল না । সেজ বোন ডাক্তার । ঢাকা মেডিক্যাল থেকে পাশ করা এখন সে বড় ডাক্তার । পারুর ইচ্ছা ছিল তার মত একজন নামি দামি ডাক্তার হয়ে মায়ের আশা টা পূরণ করবে । অভাগা যে দিকে চায় সাগর যেন শুকিয়ে যায় । মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোথায়ও চান্স হল না ।
অবশেষে ইংলিশ অনার্সে ভর্তি হল ঢাকা কলেজে । একে একে অনার্স মাস্টারস কমপ্লিট করল । এখানেও রেজাল্ড ভাল হল । সেকেন্ড ক্লাস পেল । মনে পুনরায় আশা বাঁধল বিসিএস দিয়ে ভাল সরকারী কোন এক গেজেটেড কর্মকর্তা হবে । পরপর বিসিএস দিয়েও তার ভাগ্যে আশানুরুপ ফল জোটল না ।
ভাগ্যের সাথে পাল্লা দিতে লাগল পারু । জীবন কে ধাপিত করল অন্য মোহনায় । বাবা মা ভাই বোন সকলে ভাল নামিদামি পাত্রের সন্ধ্যান করতে লাগল । পারু তাতে রাজি হল না । কত সু- দর্শন ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার, প্রফেসার । ঢাকায় সু প্রতিষ্ঠিত নামি দামি ব্যবসায়ী । বিলেত বসবাসরত বাংলাদেশী নাগরিক । কোন টাই পারুর যেন ভাল লাগল না । একে একে সকলের মন থেকে বের হতে লাগল । এক সময় পরিবারের সকল কে সরাসরি জানিয়ে দিল তার বন্ধু রুমন কে ছাড়া সে আর কাউকে বিয়ে করবে না ।
এই নিয়ে পরিবারে সবার মধ্যে শুরু হল বাক বিতরক্য । মেঝ বোন শেপু আর তার মমতা ময়ি মা রাবেয়া খানম ছাড়া আর কেউ পারুর এই সিদ্ধান্তে রাজি হল না ।
এক পর্যায়ে পারু সকলের সীদ্ধান্ত কে নস্যাত করে গুপনে বিয়ে করে ফেলল ।

অনেক বাক বিতর্কের পর বিয়ে টা সকলে মেনে নিলেও ভাঙ্গা মনে যেন আর জোড়া লাগল না । যতটুকু চলতো তত যেন ফরমালিটি ছাড়া আর কিছু না । পারু বুঝতে পারল ।

ভাঙা জীবন.....(৩)

পারু অবহেলিত স্বামীর প্রতি আন্তরিক হয় । তাকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য উঠে পড়ে লাগে । সংসারে যেখান থেকে যে ভাবেই যা পায় সব দিয়ে স্বামী রুমন কে সহযোগীতা করার চেষ্টা করে । সহজ সরল পারুর একটাই আশা একটাই সপ্ন তার সকল বোনদের সারিতে নিজেকে দাড় করাতেই হবে । ভাল বেসে না হয় এক দরিদ্র ছেলেকে বিয়ে করেছে পারু । আর তাতেই কি জাত গেছে । আজ পরিবারের সকলেই তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে । মুখে দু একটি কথা হলেও অন্তরে অন্তরে যে সবাই তাকে ঘৃণা করে শিক্ষিত পারু তা বুঝতে আর বাকি রাখে না । সব চেয়ে বেশি অবাধ্য পারুর সেজ বোন ডাক্তার নীলা । একদিন সে ছোট বোন পারু কে যেমন মন থেকে খুব বেশি ভাল বাসত এহেন ঘটনার পর সে যেন মন থেকেই তেমনি খুব বেশি ঘৃণা করতে শুরু করেছে ।

চলব..........


সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৬
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×