somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই লেখাটি অবশ্যপাঠ্য

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি ছোট মানুষ, তবুও সমস্যার গুরুত্ব উপলব্ধি করে আগেই সতর্ক করে পত্রিকায় লিখেছিলাম। বিজ্ঞজনদের ধারণা, রোহিঙ্গাদের জায়গা দেওয়াটাই হয়েছে প্রথম ভুল। সেটা দেখে অন্যরাও আসার সাহস পাচ্ছে। একবার বর্ডারে যেতে পারলে আর ফিরে আসতে হবে না-- এমন ধারণা এখন সবার। অনেকেই এখন বলতে শুরু করেছেন-- আগে তাদেরকে তাড়িয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হোক, দরকার হলে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হোক, দরকার হলে সীমান্তে ফাঁকা ব্রাশ ফায়ার করা হোক, এমনিতেই সীমান্তের দিকে আসা বন্ধ হয়ে যাবে। আমার মত একটু ভিন্ন।
.
এখন এক দেশে নাগরিকত্বের কড়াকড়ি আর সহজ রোজগারের নানা সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের দৃষ্টিতে অপেক্ষাকৃত 'ঘুষ-দুর্নীতির অভয়ারণ্য' দেশে তো দলে দলে লোক ঢুকবেই! এমনিতেই আমার দেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ, তার উপর এতো বাড়তি লাখ লাখা মানুষকে জায়গা দিলে আমরা আগামীতে থাকবো কোথায়, খাবো কি আর করবোটাই বা কি? আমরা নাহয় কোনোমতে জীবনটা কাটিয়ে দেব, কিন্তু আমাদের পরের প্রজন্ম? তাদের জন্য কেমন দেশ রেখে যাচ্ছি? জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ঠেকাতে অনুপ্রবেশ বন্ধের পাশাপাশি অচিরেই পূর্ব এশিয়ার উন্নত দেশগুলোর মতো 'দুটি সন্তানই যথেষ্ট' এর বদলে 'দুটি সন্তানই কাম্য/আবশ্যক' নীতি নেওয়া দরকার।
.
মমতা ব্যানার্জি যতই বলুন, 'এনআরসি করতে হলে আমার লাশের ওপর দিয়ে..', বাস্তবতা হচ্ছে তিনি নিজেও সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী নন। তিনি সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে সবার উপস্থিতিতে শপথ নিয়েই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। সেগুলো তিনি মানছেন কিনা, তা দেখার জন্য সেখানে কেন্দ্র সরকার নিযুক্ত রাজ্যপাল আছেন। আপনারা ভারতীয় মিডিয়ার কল্যাণে জানেন, এই দুজনের মধ্যে সম্পর্ক ভালো নয়। ভোট ব্যাংকের কথা ভেবেই হোক, কিংবা সত্যিকারের মানবতার খাতিরে, এ নিয়ে ঐ দুই-তিনদিন রাস্তায় নামা বা অনশন করা পর্যন্তই-- এর বেশি করতে গেলে রাজ্যপাল তাঁকে শপথ ভঙ্গ ও দায়িত্বে অবহেলার কারণ দেখিয়ে সরিয়ে বাংলায় রাষ্ট্রপতির শাসন কায়েম করতে পারেন। তারপর সুবিধাজনক সময় পর্যন্ত সেটা রেখে মমতাদির জনসমর্থন ও ক্ষমতা নাই করে দিয়ে বিজেপির দিলীপবাবুকে বসিয়ে দিতেই পারেন মুখ্যমন্ত্রীর আসনে। এটাই হতে যাচ্ছে আসলে। তাই, মমতাদি চাইলেও অনেক কিছু করতে পারবেন না।
.
কোনো পড়ালেখা বা কর্মগুণ ছাড়াই এক দেশে শুধু নেতাদের সাথে থেকেই যখন কেউ কোটিপতি হয়ে যেতে পারে, সেই লোকটাই বর্ডার পেরিয়ে ভারতে গেলে দেখবেন হয় রাস্তার পাশে ভাসমান টংয়ের দোকান চালায় নতুবা অন্য কোনো ছোট কাজ করে। একসাথেই দেশান্তরি হলেও দেখা যায় ওদেশে কোনো আত্মীয় কাউকে দেখে না। এখনও পর্যন্ত ভারত পুশব্যাক শুরু করেনি, যারা আসছে আগাম ভয়ে স্বেচ্ছায় আসছে। তবে এনআরসি এর কারণে কেউ কখনও সেখানে বিপদে পড়লে আপন আত্মীয়ই পরিচয় দেবে না, উল্টো কুকুর তাড়ানোর মতো পেটাতেও ছাড়বে না। কাজেই, যাদের নাগরিকত্ব নেই, তারা তো ভয় পাবেই! আধার কার্ড, রেশন কার্ড ইত্যাদি মমতাদি আসার পর সহজেই পাওয়া গেছে কিছুদিন আগে বিজেপি আসার পরেও। তাই, এগুলোকেও আসলে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে নিতে পারছে না কেন্দ্র।
.
এদেশের জেলা পর্যায়ের কোনো কোনো বড় সরকারদলীয় হিন্দু নেতারও একসাথে দুইদেশের নাগরিকত্ব আছে বলে অভিযোগ ও তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। এমন যারা দ্বৈতনাগরিক আছেন, তাদেরকে বরং সপরিবারে ঐদেশে পাঠিয়ে দিলে দেশের বোঝা কিছুটা কমবে। এদেশে রোজগার করা অবৈধ টাকা খাটিয়ে ওখানে করছেন বিশাল সম্পদের পাহাড়, দোকান, বাড়ি, বাস ইত্যাদি কিনে সময় খারাপ হলেই সটকে পড়বেন এমন চিন্তায় আছেন যারা, তারা এবার কেটে পড়ুক এটাই আমাদের কাম্য। পাশাপাশি আমাদেরকে এটাও বুঝতে হবে যে বন্ধু দেশ বলেই তারা একাত্তরে যুদ্ধের সময় আমাদের ১কোটি মানুষকে সীমান্ত খুলে দিয়ে আশ্রয় খাদ্য ট্রেনিং দিয়েছিলো এবং বন্ধু দেশ বলেই যে তারা সারাজীবন তাদেরকে রেখে দেবে-- এমনটা করতে তারা বাধ্যও নয়। মমতাদির ঐ মমতাও শুধুমাত্র ভোটের জন্য, এই যাত্রায় তিনি অল্পের জন্য গেরুয়া ঝড়ের থেকে বেঁচে গেছেন টলিউডের তারকারাজি ও দেশান্তরি ভোটারদের কারণেই-- এমনটাই সবাই বলে।
.
এখন যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে এই মানুষের ঢলকে জায়গা দেবেন নাকি সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে দিবেন। আসলে, ফিরিয়ে দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে, কারণ এমনিতেই আমাদের আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি। নিজের দেশ ও দেশের মানুষকে নিরাপদ করতে শুধু বর্ডাররক্ষা বাহিনীই হয়তো যথেষ্ট নয়, দরকার আছে কাঁটাতারের বেড়ারও। ভারত আমাদের অধিকাংশ দিক ঘিরে আছে বিধায় আমাদের সেটা না থাকলেও এতোদিন চলেছে ওদের আছে বিধায়। মায়ানমারের সাথে আগেই থাকলে এই রোহিঙ্গারা আসতে পারতো না, আমার 'আমরা যেন নিজের লড়াই রেখে অন্যেরটা লড়ছি' শীর্ষক লেখাটি প্রকাশিত হবার বেশ পরে যার নির্মাণকাজ চালু হয়েছে। নিজস্ব বর্ডার থাকলে আর আমাদের অভিযোগ করতে হবে না যে 'বিএসএফ এর সহযোগিতায় ওরা বর্ডার দিয়ে ঢুকে পড়ছে', কারণ ওরা খুলে দিলেও আমাদেরটা তো বন্ধ থাকবে! আবার এদেশের যারা অবৈধ সুবিধা নিয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে পাহাড়া দিয়ে অলক্ষ্যে অনেককে আসার ও থাকার সুযোগ করে দিচ্ছেন, তারাও পারবে না বেড়া থাকলে। তবে প্রচুর খরচ করে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের দরকার হবে না যদি ভারত-বাংলাদেশের মানুষ আন্তরিক ও সৎ হয় এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীগুলো ও সরকারকে সহযোগিতা করে।
.
নতুন নাগরিকত্ব সংশোধন বিল পাশ হলেও নানা ধর্ম-বর্ণ-জাতের বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারতে লোক যাওয়া আপনি কিছুতেই ঠেকাতে পারবেন না, যদি না দেশের মানুষ দেশটাকে ভালোবাসতে পারে এবং পর্যাপ্ত কাজ ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পায়। পাশাপাশি সংখ্যালঘু নির্যাতনকে শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে। এখন আর মুসলিম কর্তৃক হিন্দু নির্যাতন করে সাম্প্রদায়িক ইস্যু হতে না দিয়ে সংখ্যালঘুদের কিছু অসৎ লোককে অবৈধ সুবিধা দিয়ে নেতা বানিয়ে নিরীহ ও বুদ্ধিজীবী সংখ্যালঘুদেরকে শায়েস্তা করা হয় এখন, যেটা বন্ধ করতে হবে। আবার হিংসাসহ নানাবিধ কারণে এক সংখ্যালঘু অন্যকে দেখতে পারে না বিধায় শত্রুতা করে এমন নজিরও আছে। আমি নিজেই ভুক্তভোগী। অচিরেই এসব বন্ধ করতে হবে।
.
তবে ভারতের এই বিলের কারণে এদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় জেনে গেছে, নির্যাতিত হয়ে বর্ডার ক্রস করলেই নাগরিকত্ব দেবে ভারত। তাই কেউ কেউ উন্নত জীবনের আশায় ও নির্বিঘ্নে ধর্মকার্জ পালনের আশায় দেশান্তরি হতে উদ্বুদ্ধ হতেই পারে। আবার পাশের বাড়ির মুসলিম ভাইটি বা এলাকার মোড়লও চাইতে পারে এলাকার অবস্থাসম্পন্ন হিন্দু বসতিটিকে নতুন উদ্যমে খোঁচাখুঁচি শুরু করতে, যাতে তারা একটু ভালো থাকার আশায় সব বিক্রি করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। এসব দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
.
তবে সবার আগে রোহিঙ্গাদেরকে যে করেই হোক ফেরত পাঠাতে হবে। নাহলে সামনে এনআরসির মতো আরও অনেক অনেক বিপদ আসবে-- খাদ্য-আবাস-কর্মসংকট হবে, দূরারোগ্য ব্যাধির মহামারি হবে, উচ্চশিক্ষিত প্রজন্ম দেশ ছেড়ে উন্নত দেশে যেতে বাধ্য হবে। আমাদেরকেই ঠিক করতে হবে আমরা আগামীতে কাদেরকে এই দেশে রাখতে চাই। সেই অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে ঠিক এখন থেকেই।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×