ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যা ঘটলো তার জন্য আপনি কিছুতেই ক্ষমা পেতে পারেন না। এই দায় আপনারও, কারণ আপনি এটা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছেন। উলটো আপনি এমনভাবে বললেন যেন একেবারেই অসাধ্য একটা কাজ। ভারতের এই ভিডিওটা দেখেন, আইন মানতে বাধ্য করানো হয় কীভাবে। মোদি সরকার ক্ষমতায় অথচ দেখেন মন্দিরেও কিভাবে লকডাউন ভেঙে যাওয়ার জন্য বেদম পেটানো হচ্ছে! জনস্বার্থে এমন অনেক কিছুই করে অনেকে। কোটি মানুষের জীবনের প্রশ্নে এটা মানা যায় না। যারা বিজ্ঞান মানতে চায় না, সরকারি নির্দেশ অমান্য করে, যারা কোটি মানুষের জীবনকে নিজের নির্বুদ্ধিতায় ঝুঁকিতে ফেলে, তাদেরকে বুঝিয়ে কাজ নাহলে যেকোনো উপায়ে নিয়ন্ত্রণে আনার উপায় আপনাকে জানতে হবে এবং সেটা প্রয়োগ করতে হবে। করতে না পারলে রাষ্ট্র ও সরকারের সার্বভৌম ও ক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
.
সেদিন শাপলা চত্বরে সৈয়দ আশরাফ যদি পেরে থাকেন, আপনারা কেন পারেন না? বাধাটা কোথায়? সমর্থন হারানোর ভয়? এই যে লাখো মানুষ সোশাল ডিসট্যান্স না মেনে রাস্তায় নামলো, এই লোকগুলো যে সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে না, তার কি গ্যারান্টি? এরা যে করোনাভাইরাসকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেবে না তার কি নিশ্চয়তা? যেখানে গুজরাটে একাই এক ধর্ম প্রচারক মৃত্যুর আগে গোটা গুজরাটকে আক্রান্ত করে গেছেন!
.
এটা স্রেফ আত্মহত্যা। আপনাদের সাথে সাথে গোটা জাতিও আত্মহত্যার পথে এখন। দায়িত্বপ্রাপ্ত যারা এই সমাবেশ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে তাদের সবাইকে কঠোর আইনের আওতায় আনতে হবে এবং হত্যা মামলা দায়ের হতে হবে। কারণ এটা ম্যাসিভ কিলিংয়ের সমতুল্য। এই লোকগুলো যে উপজেলায় যাবে, সেখানকার বাতাসকে দূষিত করবে। এই ভাইরাস বাতাসে ২৭ ফুট পর্যন্ত ভাসতে পারে। এমনিতেই পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতি আমাদের দেশ, তার উপর যদি এগুলো থামানো না যায়..
.
উনাদেরকে বুঝানো দরকার ছিলো যে এই বিপদ কেটে গেলে বড় করে অনুষ্ঠান কইরেন, কিন্তু এখন নয়। নিজেদের বাঁচার জন্য হলেও এটা তাদেরকে বুঝিয়ে না পারলে যেকোনো উপায়ে মানানো দরকার ছিলো। এদেরকে যেহেতু থামাতে পারেননি, তাহলে আজ থেকে অন্য যে কারো উপর আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রেও আপনারা প্রশ্নবিদ্ধ হবেন। ঘরে যার খাবার নাই, তাকে রাস্তায় পেটালে আপনি প্রশ্নবিদ্ধ হবেন। কারণ আপনি ওদের সাথে পারেননি, ঘরে বসে ত্রাণ না পেলে নিরীহ খেটেখাওয়া তো একদিন রাস্তায় নামবেই। মধ্যবিত্তরাও বাধ্য হয়ে নামবে কিছুদিন পর।
.
আমার নিজের ঘরেই খাবার প্রায় শেষ। ফেব্রুয়ারি থেকে বেতন পাচ্ছি না অজানা কারণে। আমি গত প্রায় ১ মাস বাসা থেকে বের হই না সরকারি নির্দেশ মেনে। এরপরেও আমি আজ আতংকিত, আমি ভীত। ফরিদপুর এখনও লক ডাউন করা হয়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারায়নগঞ্জ থেকে ফরিদপুর দূরে না। এরপর করোনার উপসর্গ নিয়ে আমার বা আমার মায়ের মৃত্যু হলে সেজন্য আপনারা নীতিনির্ধারক ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থারা দায়ী থাকবেন। দু:খিত। অবিলম্বে ১৪৪ ডাকুন, নইলে সারাদেশের অলিতে-গলিতে ভাইরাস ছড়িয়ে যাবে, মরবে কোটিতে কোটিতে। ভাইরাসের ছড়িয়ে যাওয়া রোধ করুন।
.
বাজার খোলা অথচ জানাজা মসজিদ বন্ধের ব্যাপারে যারা বলছেন, তাদের বলি- আপনার ঘরকে নাহয় গুদাম বানিয়ে ছয় মাসের খাবার কিনে রাখার সামর্থ রাখেন, সবাই কি তা পারে? যারা পারে না, তারা তো বাইরে যাবেই। বাজার বন্ধ করা যাবে না, তবে নিয়ম করে দেয়া যায় সপ্তাহে একদিন বাজারে যাওয়ার, আর সেনাকে দিয়ে ত্রাণ দেওয়ালে আশা করি দুর্নীতি কম হবে। ঘরে বসে ত্রাণ পেলে নিয়ম মানার প্রবণতা বাড়বে।
.
বাজার আর জানাজা এক না। ঘরে বসে প্রার্থনা করলে কি আল্লাহ শুনবেন না? আল্লাহ কি আপনার ঘরে নাই? যেহেতু জনসমাগমের কারণে বিপদ ডেকে আনছেন, সেহেতু আপাতত এসব থেকে বিরত থাকুন নিজের ও নিজের পরিবারের স্বার্থে। এই মহামারি শেষে নাহয় বড় করে অনুষ্ঠান করে বিদেহীর জন্য প্রার্থনা কইরেন সবাই মিলে। প্লিজ, জাতীয় স্বার্থে এমন বোকামি বন্ধ করুন।