যাকে আমরা 'বঙ্গবীর' বলে ডাকি, রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে জানি, তিনি 'গার্ড অব অনার' আর 'জানাজা' যে এক জিনিস না তা জানেন না, এটা আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। অনেকে বলে বুড়ো বয়সে মানুষের নাকি মতিভ্রম হয়। আবার অনেকে বলে মৃত্যুর কাছাকাছি গেলে মানুষ অতিরিক্ত ধার্মিক হয়ে যায়। কিন্তু তাই বলে সেক্যুলার রাষ্ট্রের জন্য যুদ্ধ করে শেষ বয়সে কেউ মৌলবাদী হয়ে যাবেন? কীভাবে সম্ভব? সারা জীবনের অর্জিত সম্মান কেউ হঠাৎ ভিন্নপথে হেঁটে নিমিষেই পায়ে ঠেলে দিতে পারেন? নাকি উভয় পক্ষের কাছে ভালো থাকার চেষ্টা করে মানুষ মৃত্যুর আগে? বঙ্গবীর মহাশয় কোনটা হয়েছেন আমার জানা নেই। তাঁর সমালোচনা করার ক্ষমতাও আমার নেই।
ইউএনও একটি সরকারি পদ। পিএসসির মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত দেশের সর্বোচ্চ মেধাবী চৌকস কর্মকর্তাদের নানান প্রশিক্ষণের পরেই কেবল এই পদে পদায়ন দেয়া হয়। তাই এই পদে নারী না পুরুষ আছে, তা এখানে মুখ্য নয়। পদটাই মুখ্য। আমার জানামতে, কোথাও লেখা নেই যে গার্ড অব অনার শুধু পুরুষ ইউএনও দিতে পারবে। তাহলে বঙ্গবীর মহাশয় কীসের ভিত্তিতে এমন উক্তি করলেন?
কথায় কথায় বঙ্গবন্ধুকে টেনে আনা এখন বাঙালীর স্বভাব হয়ে গেছে। তাতে বঙ্গবন্ধুকে হেয় করা হচ্ছে কিনা, তা কেউ ভেবে দেখে না। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট ছিলেন, তা আমরা জানি। কিন্তু তাই বলে তিনি যেভাবে বলছেন যে এই নারী ইউএনওকে বঙ্গবন্ধু থাকলে লাথি মেরে ঢাকা পাঠিয়ে দিতেন, এটা আমি মানতে পারছি না। বঙ্গবন্ধু এমন কেন করবেন? বঙ্গবন্ধুর যে ইমেজ আমরা হৃদয়ে ধারণ করি, তার সাথে এটা যায় না।
আজ বঙ্গবীর বলেছেন 'এতসব পুরুষের মাঝে তাঁর (নারী ইউএনও) আসা উচিত হয় নাই', কাল যে নারীদের ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না মর্মে ফতোয়া জারি করবেন না, তা কি কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে? ইতিমধ্যেই সমাজে কার চুল দেখা গেলো, কোন মেয়ে নেইলপলিশ দিলো, কে পর্দা ছাড়া চলে এসব নিয়ে সমালোচনা, গায়ে থুতু দেওয়া শুরু হয়ে গেছে। হয়তো অচিরেই বাঙালি নারীকে আবার সেই বেগম রোকেয়ার 'অবরোধবাসিনী'র যুগে ফিরিয়ে নেওয়া হবে, আমরা সেই দিন দেখার অপেক্ষায় আছি?
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০২৩ রাত ১:২৬