somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিষিক্ত প্রেমের বিষাক্ত বাতাস...

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাথায় জল ঢাললেই যে কোন নেশা কেটে যায়। কিন্তু শৌমিকের বেলায় তা একেবারেই প্রযোজ্য নয়। দুপুরে স্নান সারা হয়ে গেলেই শৌমিকের কফি পানের নেশাটা পেয়ে বসে। তখন এক কাপ কফি পান না করলে আর সে চোখ মেলে তাকাতেই পারেনা। অবশ্য শৌমিকের কফি পানের দৃশ্যটাও দেখার মতো। ঘরের সব কটা দরজা জানালা বন্ধ করে সবগুলো বাতি নিভিয়ে এ'সির কনকনে ঠান্ডায় ইজি চেয়ারে কফির মগ নিয়ে বসে। সবগুলো বাতি নিভিয়ে দিলেও ঘরটা পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে যায়না। ঘরের সিলিং ফ্যানের পাখায় রেডিয়ামের চাঁদ তারা লাগানো। তাই ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে দিয়ে বাতি নিভিয়ে দিলেও ফ্যানের পাখায় লাগানো রেডিয়ামের আলোয় ঘরের মধ্যে কিছুটা আলো খেলা করে। রেডিয়ামের মিটিমিটি আলোয় ঘরটাকে কোন একটা চায়নিজ রেষ্টুরেন্ট বলে মনে হয়। কফির মগ হাতে নিয়ে শৌমিক ইজি চেয়ারে বসার আগে এসি বন্ধ করে সিলিং ফ্যানটা হালকা স্পিডে ছেড়ে দেয় তখন ফ্যানের দিকে তাকালে মনে হয় সবুজ আলোরা নৃত্য পরিবেশন করছে। শৌমিক কলকাতার সল্টলেকের এক অভিজাত ফ্ল্যাটে একাই থাকে। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান শৌমিক কলকাতায় থাকলেও বাবা-মা থাকেন শিলিগুড়িতে। শিলিগুড়িতে শৌমিকের বাবা অনুপম ব্যানার্জি একজন নামকরা ব্যবসাদার এবং শৌমিকের মা অনুরাধা ব্যানার্জি একজন কলেজ শিক্ষিকা। শৌমিকের পুরো নাম শৌমিত্র ব্যানার্জি শৌমিক। শৌমিকের জীবন চলে কলমের উপর নির্ভর করে। শৌমিকের কলমের আঁচড়ে যা-ই আঁকা হয় না কেন তার পাঠকেরা তা গোগ্রাসে গিলতে থাকে। তাই এই মুহুর্তে কলকাতার প্রতিষ্ঠিত ক'জন লেখকের নাম উচ্চারণ করলে শৌমিকের নামও উচ্চারিত হয়ে থাকে। কলকাতার প্রায় সব কটা চ্যানেলের কোননা কোনটাতে তার রচিত নাটক প্রতিদিন প্রচার হচ্ছে। শৌমিক অবশ্য ফরমায়েশ খাটা লেখকদের একজন যারা প্রডিউসারের দেয়া থিমের উপর নাটক সাজিয়ে লিখে থাকেন। এ নিয়ে শৌমিকের মনের মধ্যে সব সময় একটা দুঃখ ভর করে থাকে, কারণ নিজের মতো করে অনেক লেখা হয়ে উঠেনা প্রডিউসারের মন যোগাতে গিয়ে। এটা অবশ্য শৌমিকের পাঠকেরা বুঝতে পারেনা না। লেখক হওয়ার সবচে মজার দিক হলো লেখার মধ্যে যে কোন বিষয় অনায়াসে ফুটিয়ে তোলা যায়। এমন কি কোন সত্য ঘটনাকেও প্রকাশ করা যায় অবলীলায় কিন্তু অনেক পাঠক সেই গল্পের সত্যতা যাচাই করতে যাননা। স্নান ঘরে ঢোকার আগেই কফির জন্য চুলোর উপর জল চড়িয়ে দেয় গরম করার জন্য। স্নান সারা হয়ে গেলে জল ফোটতে থাকে তখন কফির মগে গরম জল ঢেলে তাতে দু চামচ মিক্স কফি দিলেই কফি তৈরী। শৌমিক রোজকার মতোই আজও স্নান সেরে এক কাপ কফি নিয়ে ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে দেয়। কফিতে চুমুক দিতেই সেলফোনটা বেজে উঠে। সেলফোনের পর্দায় কলারের নাম্বারটা দেখে শৌমিকের বুকটা কেঁপে উঠে। সে কখনোই ভাবতেও পারেনি অন্বেষা তাকে ফোন করবে। শৌমিক ফোন রিসিভ না করেই সেলফোনটাকে বুকের সাথে জড়িয়ে রাখলো। রিং হতে হতে লাইন কেটে যায় কিন্তু শৌমিক ফোনটা রিসিভ করেনি। মিনিট খানেক পরে আবারো অন্বেষা ফোন করলো। শৌমিক আগের মতো আবারো সেলফোনটা বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো কিন্তু রিসিভ করেনি।

বছর খানেক আগে হঠাৎ করেই শৌমিকের সাথে অন্বেষার পরিচয় হয় কোন একটা অনুষ্ঠানে। অন্বেষারা তিন ভাই-বোন। অন্বেষার বড় দাদা একজন ব্যাংকার, ছোট দাদা একটা বিদেশী ফার্মে কাজ করেন। আর অন্বেষা শান্তি নিকেতনে পড়াশোনা করছে। অন্বেষার বাবাও একজন ব্যাংকার ছিলেন। অন্বেষার সাথে শৌমিকের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠলেও তা খুব দ্রুতই প্রেমে রূপান্তরিত হয়ে যায়। শৌমিকের অমতেই শৌমিকের বাবা-মা শৌমিকের জন্য পাত্রী পছন্দ করে রেখেছে। তাই অন্বেষার সাথে পারিবারিক প্রস্তাবে কোন ফল বয়ে আনবে না বলে তারা নিজেরাই ঠিক করে রেখেছে খুব দ্রুত একে অপরের সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হবে। অবশ্য প্রথম দিকে শৌমিক নিজেই সরে আসতে চাচ্ছিলো কিন্তু অন্বেষার শক্ত বাঁধনকে অগ্রাহ্য করতে পারেনি কিছুতেই। অন্বেষার এক বন্ধু পরিমলও চাইছিলো না পারিবারিক অসম্মতিতে তাদের বিয়ে হোক তাই সেও দুজনকে পরামর্শ দিয়েছিলো এই সম্পর্ক থেকে সরে আসার জন্য কিন্তু সেদিন পরিমলের কথায় কষ্ট পেয়ে অন্বেষা এতোই কেঁদেছিলো যা দেখে শৌমিক নিজেকে এতোটাই দৃঢ় করেছিলো যে, যে কোন প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও সে অন্বেষাকেই বিয়ে করে ঘরে তুলবে। অন্বেষা তার এক মাসতুতো ভাই ও এক দূর সম্পর্কিয় মামার সাথে শৌমিকের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো তারাও চেয়েছিলো অন্বেষার সাথে শৌমিকের বিয়ে হোক। অন্বেষার এক পাতানো ভাই শান্তনুর সাথেও পরিচয় হয়েছিলো শৌমিকের যদিও শান্তনু এতোসব কিছু জানতো না। শৌমিক আর অন্বেষার সম্পর্কটা শুধু মানসিক ভাবেই আটকে থাকেনি, বার কয়েক শারীরিক ভাবেও তারা মিলিত হয়েছিলো। যেহেতু তারা মানসিক ভাবে প্রস্তুত খুব শীঘ্র তারা বিয়ে করছে তাই কারো কোন আপত্তি ছিলোনা শারীরিক ভাবে মেলা মেশায়। কিন্তু হঠাৎ করেই অন্বেষা নিজেকে পাল্টাতে শুরু করে। আগের মতো আর শৌমিকের সাথে যোগাযোগ রাখছেনা। শৌমিক ফোন করলে ব্যস্ততার অযুহাত দেখিয়ে ফোন রেখে দেয়। শৌমিক কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা তার কি করা উচিত বা হঠাৎ করেই কেন অন্বেষা এই আচরণ করছে। অন্বেষার এই অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণে শৌমিক মানসিক ভাবে খুব ভেঙ্গে পড়েছিলো। তারপরও নিজেকে শক্ত রেখে অন্বেষার সাথে যতই যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করে অন্বেষা ততই দূরে সরে যাচ্ছে। অন্বেষার সাথে শৌমিকের শেষবার কথা হয় পহেলা বৈশাখে। তারপর থেকে অন্বেষা আর কোন যোগাযোগ রাখেনি শৌমিকের সাথে। অতি সম্প্রতি শুভ জন্মাষ্টমিতেও অন্বেষার সেল ফোনে শৌমিক শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছিলো কিন্তু অন্বেষা সৌজন্যতা করেও তার কোন জবাব দেয়নি।

কলকাতার জনপ্রিয় দৈনিক আনন্দ বাজারে একটা উপন্যাস ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। উপন্যাসের লেখক শৌমিত্র ব্যানার্জি শৌমিক। না, এই উপন্যাসটা কোন প্রডিউসারের দেয়া থিমের উপর দাঁড় হয়নি। এই উপন্যাসের বিষয় বস্তু স্বয়ং শৌমিকের পোড় খাওয়া জীবন থেকে নেয়া। উপন্যাসের ষোলটা পর্ব ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়ে গেছে। বাকি আছে আর মাত্র ক'টা পর্ব সেগুলোও তৈরী হয়ে আছে প্রকাশের অপেক্ষায়। ঠিক তখনি শৌমিকের সেলফোনে এলো অন্বেষার কল। কফির মগ পাশে রেখে সেলফোনটা বুকে জড়িয়ে নিলেও শৌমিক অন্বেষার ফোন রিসিভ করেনি। একই দিনে সন্ধ্যায় আবারো অন্বেষা ফোন করে শৌমিকের সেলফোনে। তিন তিন বার অন্বেষার ফোন এড়িয়ে গেলেও চতুর্থ বারে আর অগ্রাহ্য করতে পারেনি। শৌমিক অন্বেষার ফোনটা ধরে হ্যালো বললো...
- কেমন আছো ?
- ভালো। তুমি কেমন আছো ?
- আমিও ভালো আছি। আচ্ছা আপনার সাথে শান্তনু দা'র কোন ঝামেলা হয়েছে নাকি ?
- নাহ! ঝামেলা হবে কেন ?
- এমনি বললাম।
- আচ্ছা তুমি আমাকে আপনি আপনি করে বলছো কেন ?
- এখন ত আপনি আপনি করে বলাটাই স্বাভাবিক, তাই নয় কি ?
- ও হ্যা তা ঠিক।
- আচ্ছা আপনাকে একটা অনুরোধ করবো। বলুন আপনি আমার অনুরোধ রাখবেন।
- তুমি আগে বলো তারপর ভেবে দেখবো।
- না আপনি আমাকে কথা দেন রাখবেন।
- তুমি বলো আমি চেষ্টা করে দেখবো। যদি সম্ভব হয় তবে রাখবো।
- আনন্দ বাজারে আপনার যে উপন্যাসটা প্রকাশ হচ্ছে আমি চাই এই উপন্যাসটা যেন আর প্রকাশ না হয়। এবার বলুন আপনি আমার অনুরোধ রাখবেন কি না ?

শৌমিক ভেবে পাচ্ছেনা কি বলবে। যে কষ্ট সে বুকে ধারণ করে আছে পাথরের মতোন। তা সে সরাতে চাইছিলো তার লেখার মাধ্যমে। তাও আর হতে দিচ্ছেনা। প্রডিউসারের নির্দেশে পাল্টাতে হয় তার লেখার কোন কোন কাল্পনিক চরিত্র তাতে মন খারাপ হলেও মানিয়ে নেয় কিন্তু এবার বাস্তবের চরিত্র গল্পে রূপদান করতে গিয়ে অন্বেষার অনুরোধের ঢেঁকি হয়তো গিলতে হবে। হয়তো পাল্টে যাবে উপন্যাসের দৃশ্যপট কিংবা থেকে যাবে যেভাবে লেখা হয়েছিলো। শৌমিক মনে মনে ভাবে আহা, যদি গল্পের মতোই পাল্টে দেয়া যেতো জীবনটাকে... ভাবতে ভাবতে ভারী হয়ে উঠে চারপাশ নিষিক্ত প্রেমের বিষাক্ত বাতাসে।

জবরুল আলম সুমন
সিলেট।
৯ই সেপ্টম্বর ২০১১ খৃষ্টাব্দ
রাত ১১টা ৩০ মিনিট।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৩৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×