অনেক ছোটবেলা থেকে একটা কথা শিখে এসেছি , এই পৃথিবীর অর্ধেক করিয়াছে নর, আর অর্ধেক করিয়াছে নারী, টাইপ কথা। কিন্তু বর্তমান সময়ে এই ধারনা টা মনে হয় পরিবর্তন করতেই হবে। ছেলে আর মেয়ে নিয়ে যেভাবে যুদ্ধ চলে সোস্যাল মিডিয়াগুলতে, মনে হয় মানুষ হিসেবে আমরা যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছি।
আপনি যেই হোন না কেনো, ভাবেন তো একবার, আপনি দুনিয়াতে আসলেন কিভাবে? ডাক্তারি ভাষায়, আপনার বাবার শুক্রানূ আর আপনার মায়ের ডিম্বানু ছাড়া এই দুনিয়া দেখার মত সোভাগ্য কারো হতনা। আপনার মা আপনাকে ৯ মাস পেটে রেখেছে, কিন্তু আপনার বাবা দিন রাত খেটে আয় করে এনেছে। কাল আপনার জীবনেও এমন কিছু হবে। দুনিয়াতে সব মানুষ ভালো এইটা তো আমি বলছিনা, আবার সব মানুষ খারপ সেইটাও আমি বলছিনা।
দেখা যায়, কোন একটা চান্স পেলেই মেয়েরা ছেলেদের দোষ দেয়া শুরু করে। শুধু একজনের জন্য পুরা পুরুষ জাতিকে দোষ দেয়া ধুম পরে যায়। মেয়ে হলে একবার ভেবে দেখেন, আপনার বাবা, ভাই, স্বামী, বন্ধু, সবাই কি খারাপ? আবার দেখা যায় একজন মেয়ে খারাপ হলে সব মেয়ে জাতিকে দোষ দেয়া শুরু হয়। ভাই থামেন, সবাই এক না। হাতের পাচ আঙ্গুল যেমন সমান না, তেমন মানুষ সবাই সমান না।
জাতিগত দিক থেকে বাংলাদেশিরা যেই লেভেলের সঙ্কর, সেইটার জন্য মনে হয় এমন হয়েছে। এখন নতুন ট্রেন্ড মেয়েরাই মেয়েদের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করে দিয়েছেন। মুখ খারাপ করে কথা, গালি সবই হচ্ছে, যা হয়ত কোন ছেলে ছেলেকেও বলেনা।
নিজের একটা অভিজ্ঞতা বলি, আমি যেখানে চাকরি করি সেইখানে মেয়েদের সহজে নিতে চায়না ম্যানেজমেন্ট। বিশেষ করে ফ্রেশারদের, অবিবাহিত তো একদম নিষিদ্ধ। তাদের ধারনা, ওরা নাকি পরিবেশ নষ্ট করে। এই প্রতিষ্ঠানের আগে আমি একটা টেলিকমে কাজ করে এসেছি। সেখানে দেখেছি, মেয়েদেরকে কেউ মেয়ে হিসেবে ট্রিট করতোনা, সবাই কলিগ হিসেবে দেখতো। মেয়েরাও ছেলেদের সেইভাবেই ট্রিট করতো। এইকারনে সেইখানে কোনদিন কোন সমস্যা হয়নাই। আমি রীতিমত যুদ্ধ করে এই ধারনা পাল্টাতে দুইজন মেয়ে জয়েন করাই। মেয়েদেরকে মেয়ে হিসেবে না, কলিগ হিসেবে দেখতে বলি। দুই মাস হতে চলল, যে সমস্যা ম্যানেজমেন্ট ভেবছিলো সেই সমস্যা এখনও হয়নাই এবং আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, এইটা হবেওনা। শুধু পর্যাপ্ত সম্মান দিয়ে চললে এইসব হয়না।
এইভাবে অনেক ইউনিভার্সিটিতেও সমস্যা হয় ছেলে আর মেয়ে নিয়ে। বিশেষ করে পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে, কারন ওইখানে ছেলে সহপাঠী আর মেয়ে সহপাঠী হিসেবে ভাগ করে নেয়া হয় বেশিরভাগ সময়ে। যারা তার বাইরে যেয়ে ভাবতে পেরেছেন, তারাই কিন্তু পরবর্তীতে অনেক ভালো ভালো বন্ধুত্ব বজায় রাখতে পেরেছেন। এই সমস্যাটা কিন্তু প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে নেই, কারন তাদের চিন্তার ভঙ্গি ভিন্ন। একজন হিজাবি মেয়ে বা নামাজি ছেলেও সেই সম্মান বজায় রেখে ভালো বন্ধুত্ব রেখে গেছে।
এই কথা গুলার একটাই অর্থ, আমাদের মধ্যে সম্মান করার ব্যাপারটা চলে গেছে। মানুষকে সম্মান করতে জানিনা আমরা। অনেক পুরাতন একটা প্রবাদ আছে, “পাপকে ঘৃণা কর, পাপিকে নয়” কারো ভুল হতেই পারে, সেইটা শুধ্রাইয় দেয়াটাই আমাদের কাজ। মানুষ এমনি এমনি না আমরা। আমরা দোষ গুণ আলাদা করতে জানি এইজন্য মানুষ। আজ যদি আপনার ভাই বা বোন ভুল করতেন, তাহলে কি পারতেন তাদের ঘৃণা করতে? মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই। এই কথাটা মেনে চলি। কাউকে হেয় করার মাঝে কোন আনন্দ নেই। ছেলে বা মেয়ে না, সবাইকে মানুষ ভাবি। দেশে অনেক সমস্যা, ছেলেরা খারাপ, মেয়েরা খারাপ, এইভাবে না ভেবে সবাইকে মানুষ এইভাবে ভাবি, সবাই মিলে দেশটাকে আগায় নেই। কেউ পিছিয়ে গেলে, ভুল করলে তাকে শুধরায়ে দেই। একজন মানুষ হিসেবে এইটুকু তো আমরা করতেই পারি।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪২