লেখা আর কথা বলা ছেড়েই দিয়েছিলাম। সব বন্ধ করে দিছি। সবাই সারাদিন হেদায়েত করে এভাবে লিখলে ক্ষতি হবে। অমুকে ধরে নিয়ে, তমুকে এনকাউন্টার করে দিবে। তাই সব বন্ধ করে দর্শক হয়ে গেছিলাম। আর দেখলাম লিখে কোনও লাভও নেই। যে বাঙালি সেই বাঙ্গালিই রয়ে যাচ্ছি আমরা। অনুভূতিহীন গন্ডার যেন একেক এক জন। কিন্তু হঠাত গত কয়েকদিনের পরিস্থিতি দেখে চিন্তা করলাম লিখি। আর কিছুদিন হয়তো বা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে লিখতে পারবো না। আমার কথা বলার আগে আজ আমি বলবো, সিকিমকে কিভাবে ভারত দখল করেছিল। একটি স্বাধীন দেশ কিভাবে পরাধীনতার শেকলে বন্দী হয়েছিল।তারপর আপনারাই বুঝবেন পরাধীনতার শেকল পরা থেকে কতটা দূরে।
ব্রিটিশরা ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার পর গণভোটে সিকিমের মানুষ ভারতের বিরুদ্ধে তাদের ঐতিহাসিক রায় প্রদান করে এবং ভারতের পণ্ডিত জওয়াহের লাল নেহরু সিকিমকে স্বাধীন রাজ্য হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হন।
১৯৬২ সালে ভারত-চীন যুদ্ধের পর সিকিমের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। ১৯৬৩ সালে সিকিমের রাজা থাসী নামগয়াল এবং ১৯৬৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহরু মারা গেলে পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যায়। থাসী নামগয়াল এর পরে সিকিমের নতুন চোগওয়াল (রাজা) হন পাল্ডেন থন্ডুপ নামগয়াল এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন ইন্দিরা গান্ধী।
নেহেরু স্বাধীন সিকিমের পক্ষে থাকলেও ইন্দিরা গান্ধী সিকিমের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেন নি, ফলে ক্ষমতা গ্রহণ করেই ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সর্বশক্তি নিয়োগ করেন সিকিমকে পুনরায় দখল করার জন্য। প্রাথমিক কূট কৌশল হিসেবে তিনি কাজে লাগান তৎকালীন সিকিমের প্রধানমন্ত্রী কাজী লেন্দুপ দর্জিকে। ভারতের কৌশল ছিল লেন্দুপ দর্জিকে ভারতের পা চাটা গোলাম বানিয়ে তাকে দিয়ে সিকিমকে খেলানো। সিকিমের জনগণের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করা, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা, সিকিমে ভারতের প্রভাব বৃদ্ধি করা, সিকিমের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ভারতের তাঁবেদারি করা, সিকিমের জাতীয়তাবাদী নেতা ও জনগণকে হত্যা করা, তাদের বন্দী ও নির্যাতন করা, ভারতের জন্য কৌশলে সিকিমের সীমান্ত উন্মুক্ত করা, সিকিমকে ভারত নির্ভর করে দিয়ে সমগ্র বিশ্ব থেকে আলাদা করা, সিকিমের অর্থনীতি ধ্বংস করা সহ বিভিন্ন কৌশল বাস্তবায়নের জন্য ভারত লেন্দুপ দর্জিকে সেখানে গোপনে তাদের দোসর হিসেবে নিযুক্ত করে। লেন্দুপ দর্জি নিজ মাতৃভূমির মায়া-মমতা ও দেশ প্রেমকে জলাঞ্জলি দিয়ে নিজ দেশকে ভারতের কাছে বিক্রয়ের জন্য তাদের তাঁবেদারি শুরু করেন।
১৯৪৫ সালে কাজী লেন্দুপ দর্জি খাং শেরপা সিকিম প্রজামণ্ডল নামে এক রাজনৈতিক দল গঠন করে এর সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে তিনি সিকিম স্টেট কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত স্বপদে বহাল থাকেন। ১৯৬২ সালে সিকিমের স্বতন্ত্র দল, রাজ্য প্রজা সম্মেলন এবং সিকিম স্টেট কংগ্রেস ও সিকিম ন্যাশনাল পার্টির কিছু দলছুট নেতাদের নিয়ে গঠন করেন সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস। গোত্র কলহ, রাজতন্ত্রের বিরোধিতা এবং গণতান্ত্রিক সংস্কারের দাবিকে সামনে রেখে এ দলের যাত্রা শুরু হয়। এপ্রিল ১৯৭৩ সিকিম জনতা কংগ্রেসও এ দলের সাথে অঙ্গীভূত হয়ে যায়। লেন্দুপের মতে, এ দল গঠনের উদ্দেশ্য ছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করা, জনগণের শান্তি, উন্নতি এবং দেশের উন্নয়ন। তৃতীয় সাধারণ নির্বাচনে তার দল ১৮টির মধ্যে আটটি আসন লাভ করে। ১৯৭০ সালের চতুর্থ সাধারণ নির্বাচনে এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলর নিয়োগ পান। কৃষি, পশুপালন এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয় তার দায়িত্বে চলে আসে। ১৯৭২ সালে এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলরের পদ থেকে অব্যাহতি নেন। উল্লেখ্য, উপমহাদেশ বিভক্তির সময় ব্রিটেন সিকিমের স্বাধীনতার প্রতি উদার নীতি অবলম্বন করে। সিকিমের স্বাধীন রাষ্ট্রীয় সত্তা বজায় থাকুক ব্রিটেনের এ প্রত্যাশায় কোনো ঘাটতি ছিল না। সিকিমের প্রটেক্টরটের ক্ষমতা ব্রিটিশ রাজ ভারতের হাতে হস্তান্তর করে। কিন্তু অখণ্ড ভারতের স্বপ্নবিলাসী নেহরু গণভোটের মাধ্যমে সিকিমের ভারত অন্তর্ভুক্তির সে চেষ্টা সফল হয়নি। প্রটেক্টরেট হিসেবে ভারত সিকিমের প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। সাংবিধানিক সরকারের আদলে চোগিয়ালের ভুটানে ১৯৫৫ সালে স্টেট কাউন্সিল গঠন করে, যা ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত কার্যকর ছিল। ১৯৭০ রাজতন্ত্রবিরোধী সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি পুনর্নির্বাচন এবং নেপালি জনগোষ্ঠীর অধিকতর প্রতিনিধিত্ব দাবি করে। ১৯৭৩ সালের ভোটের ফলাফলে অসন্তুষ্ট হয়ে সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে দেশব্যাপী তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। সে আন্দোলন সরাসরি রাজতন্ত্রের পতন আন্দোলনে পরিণত হয়। সিকিম জনতা কংগ্রেস এবং সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস একীভূত হয়ে এ আন্দোলন পরিচালনা করে। ১৯৬৫ সাল থেকে রাজ্য শাসনরত রাজা চোগিয়াল পলডেন থনডুপ নাম গয়াল বিক্ষোভ সংঘর্ষ থামানোর জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সহায়তা কামনা করেন।
আধিপত্যবাদী ভারত এ সুবর্ণ সুযোগের অপেক্ষায় ছিল দীর্ঘ দিন ধরে। ভারতীয় সৈন্যরা রাজার প্রাসাদ ঘিরে ফেলল। ভোরে নাম গয়াল তার জানালা খুলে দেখলেন, পুরো গ্যাংটক ভারতীয় সৈন্যদের দখলে। সাজানো নির্বাচন হলো। রাজতন্ত্রের পতনের পর ১৯৭৪ সালের নির্বাচনে লেন্দুপ দর্জির দল ৩২টি আসনের ৩১টিতেই জয়লাভ করে। ব্র“ট মেজরিটি আর কাকে বলে। এ নিরঙ্কুশ ম্যান্ডেটের ওপর ভর করে লেন্দুপ দর্জি নতুন গভর্নর নিয়োগের ক্ষমতা পেলেন। চোগিয়াল আর লেন্দুপ দর্জির সাপে নেউলে সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে ভারত পৃথিবীর মানচিত্র থেকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের মানচিত্র মুছে ফেলার মোক্ষম সুযোগ কাজে লাগাতে এক মুহূর্তও বিলম্ব করল না। কাউন্সিল অব মিনিস্টারের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী লেন্দুপ দর্জির ইচ্ছায় পার্লামেন্টে বিনা বিরোধিতায় রাজতন্ত্রের অবসান করা হলো। সিকিমের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লেন্দুপ দর্জি ভারতীয় পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করার এবং স্টেটহুড স্ট্যাটাস পরিবর্তন করার আবেদন জানান। ১৪ এপ্রিল ১৯৭৫ সিকিমে ভারতীয় সেনাদের ছত্রছায়ায় এক গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। লেন্দুপের ইচ্ছার প্রতিফলন দেখানো হয় গণভোটের ফলাফলে। ২৬ এপ্রিল ১৯৭৫ সিকিম ভারতের ২২তম অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়। ১৬ মে ১৯৭৫ সরকারিভাবে ভারত ইউনিয়নভুক্ত হয় এবং লেন্দুপ দর্জিকে করা হয় সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী। রাজতন্ত্রের পতনের ফলে ‘চোগিয়াল’ পদের অবসান ঘটে। চীন ছাড়া অন্যান্য বেশির ভাগ জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র সিকিমের এ পরিবর্তনকে দ্রুত অনুমোদন করে। লেন্দুপ দর্জি সিকিম ভারতভুক্তির আগে ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত সিকিমের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভারতের অঙ্গীভূত হওয়ার সাথে সাথে তার দলও ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেস দলে বিলীন হয়ে যায়।
ভারতীয় আধিপত্যবাদের সেবাদাস লেন্দুপ দর্জিকে ২০০২ সালে ভারত ‘পদ্মবিভূষণ’ খেতাবে ভূষিত করে।
এবার আসি আমাদের সোনার বাংলার কথায়। অনেক কট্টর কুতুব কুতুব বড় ভাইরাই আমাকে বলেছে এত সহজ মনে কইরো না বিষয়টা। কিন্তু পুরো ঘটানা দেখেও যাদের মনে হচ্ছে না যে, বিষয়টা সহজ তাদেরকে আর একটু সহজ করে দেই।
সিকিম দখলের জন্য র তখন আর একটা কাজ করেছিল সেটি ছিল সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। যেটা এখন এদেশে বিদ্যমান। এদেশের নারী-শিশুরা বাংলার চেয়ে হিন্দী অনেক ভাল পারে ও জানে কারণ তারা সারাদিন হ্নদী চ্যানেল গুলো দেখে বেড়ায়। কাজেই দেশের অনেকেই মনে করতে শুরু করেছেন ভারতের মধ্যে থাকলেই ভাল হবে। তাহলে বেশি বেশি হিন্দী........
আর একটু কাছে আসি। নতুন একটি ট্রেন চালু হল বাংলাদেশে। সবাই খুশি। কিন্তু সমস্যা বাধলো এর কোন নির্দেশিকা বাংলায় নয়। হিন্দী এবং ইংলিশে। আর কর্মচারীরা বেশির ভাগই ভারতীয়। বাহ বলার নেই কিছু। সিকিমের সাথে আমদের কোন মিল নাই বলে চোখ বন্ধ করে ঘুম দেয়াটাই এখন সমাধান।
বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তক গুলোতেও দেখা যাচ্ছে ভারতীয় লেখকদের আধিক্য। এমনকি আগের সব ভ্রমন কাহিনীগুলো বাদ দিয়ে দেয়া হচ্ছে ভারতের বিভিন্ন স্থানের বর্ণনা। এমনকি থাকছে অবিভক্ত বাংলা বিরোধী কবিতাও।
এসব কথা বলে লাভ নাই। ঐ যে মোশারফ করিমের ভাষায়, আমরা সব আসলেই ফইন্নি। আজ আমি কিছুই বলবো না। সিকিমের ইতিহাস্টা পড়বেন আর আমার শেষ বলা কথাগুলো মিলিয়ে আপনারাই সিদ্ধান্ত নিবেন কি করবেন। জানি কিছুই করবেন না দাঁত কেলাইয়ায়া বলবেন , আরে ধুর এতই সোজা।
আমিও একটা সময় বলতে বলতে থেমে যাবে কারণ খালি লিখে একটা দেশ স্বাধীন রাখা যায় না। তাহলে আর বলা হতো না যে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয় তা রক্ষা করা অনেক কঠিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৬ রাত ৮:৩২