somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যখন এদেরকেও পুরুষ আর মানুষ বলতে হয়!!!

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগে দু’টি ঘটনা বলি।দু’টি ঘটনাই আক্রন্ত দুই নারীর মুখে শোনা।তবে আমি এখানে ছদ্মনাম ব্যবহার করছি।
ঘটনা ১: নীলক্ষেত থেকে ফাল্গুন বাসে উঠেছে তামান্না। উদ্দেশ্য রামপুরাতে যাবে। সারাদিন ক্লাশ করে সে খুব ক্লান্ত থাকায় জ্যাম ঠেলে বাস ঢাকা কলেজ পাড় হবার আগেই ঘুমিয়ে পরে। সে ঘুমের ভেতরেই অনুভব করে কেউ তাঁর কোমরে এবং আরও স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয়ার চেষ্টা করছে। প্রথমে ক্লান্তির ঘুমের কারণে না বুঝলেও একটা সময় বুঝে এক লাফে উঠে যায়। এবং তাঁর ঠিক পেছনে বসে থাকা মানুষের মত দেখতে পুরুষ সেজে বসে থাকা লোকটিকে জোরে ধমক দেয় । এবং অনেকটা কেদেই ফেলে তামান্না। লোকটি উল্টো প্রতিবাদ করে বাস থেকে নেমে যায়। কেউ তাকে একবার আটকায়ও না আর কেউ কিছু বলেও না।

ঘটনা-২: রোমানা অফিস শেষ করে আজীমপুর থেকে ১৩ নাম্বার বাসে করে করে মোহম্মদপুর বাসায় ফিরছিলো। আজীমপুরেই তাঁর পাশে বেশ ইয়াং এবং দেখতে বেশ ভদ্র ছেলে ওঠে(রোমানার ভাষায়)। ছেলাটা এক মিনিট পরেই ঠিক রোমানার পেছনের সিটে গিয়ে বসে। রোমানা হুট করে একটু পরে টের পায়, পেছন থেকে কেউ একজন সিটের নীচ থেকে স্পর্শকাতর অংশ হাত দেয়ার চেষ্টা করছে। প্রথমবার নড়ে বসলেও, দ্বিতীয়বার সে ঘুরে সেই ছেলেটিকে ধমক দেয়। সাথে সাথে বাসের অন্যান্য লোকজনও ছেলেটিকে আটকায়। আর চড়-থাপ্পর দিয়ে ছেলেটিকে মাফ চাইয়ে বাস থেকে নামিয়ে দেয়। আজও রোমানা অফিস থেকে ফিরছিলো। সাইন্সল্যাব থেকে হঠাত করেই সেই ছেলেটি ওঠে। এবং একবারেই রোমানা চিনে ফেলে। এবং ছেলেটিও চিনে ফেলা এবং পুরাটা পথ খুব বাজে ভাবে তাকিয়ে থাকে রোমানার দিকে। ঝিগাতলার পর বাস খালি হলে ঠিক রোমানার পেছনের সিটেই এসে বসে ছেলেটি । এবং একইভাবে আজকেও কিছু করার চেষ্টা করার সাথে সাথে রোমানা ঘুরে ওকে থাপ্পর দেয়। এবং চিৎকার করে বলতে থাকে। কিন্তু পুরো বাসের মানুষ নির্বাক বসে ছিল আর ছেলেটি নিরপদে নেমে চলে যায়।

ঘটনা দুটি একবারেই বাস্তব। আমার বানানো কোন গল্প নয়জরায় কাছাকাছি ঘটনা ঘটতে অনেকেই দেখছে মোহম্মদপুর থেকে উত্তরায় যাওয়া ভুঁইয়া পরিবহনে। আমাকে দ্বিতীয় ঘটনার ভিকটিম জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা এদেরকে কি অপরাধে পুলিশে দেয়া যায়? আমি চিন্তা করলাম , পুলিশে দিলেই কি পশু মানুষ হয়ে যাবে? তাহলে তো আমাদের যে প্রানী ভালো লাগে তাকেই ধরে পুলিশে দিয়ে মানুষ করে ফেলতাম।

এদের মানুষ নাহয় পরে করি । আগে আমাদের মানুষ হওয়ার ঘটনায় আসি। তিনদিনের ঘটনায় একদিন মানুষ প্রতিবাদ করেছে। তাও খুব সাধারণ নিউমার্কেটের দোকানদাররা। কারণ রাতে ১৩ নাম্বার বাসে সাধারণত আসে নিউমার্কেট ও আশেপাশের এলাকার দোকানদাররা। অন্য বাস দুটি তে সাধারণত চলেন আমাদের সমাজের তথাকথিত ভদ্রলোকরা। যারা সারাদিন শেষ অফিস থেকে বাসায় এসে টিভিতে ধর্ষণের নিউজ পরে আর বলে, “দেশটা শেষ হইয়া গেলো। অবশ্য মেয়েদেরও পোশাক ঠিক নাই।তাই এমন হয়।”

কিন্তু বিশ্বাস করেন যে মেয়ে দুইটার কথা বলছি, এদের কোন দিন আমি দেখি নাই এমন কোন পোষাক পরতে তাতে খুব যৌণ উত্তেজনা জাগে। আসলে আমাদের এই ভদ্রলোকেরা একজনও ভদ্র না সব ভদ্রলোক সাইজা বইসা থাকে। না কেউ এদের বউ আর মেয়ের সাথে খারাপ কিছু করে ততক্ষণই এরা ভদ্রলোক সাইজা বইসা থাকে। প্রতিটা ক্ষেত্রে এরা ভাবে, এটা তো আমি বা আমার কারো সাথে হয়নি। আমি এখানে কিছু বলবো ক্যান?

কিন্তু এরা একবারও ভাবে না, আজ যদি এরা এই পশুটাকে শাস্তি দেয়। সবাই মিলে আওয়াজ তোলে তাহলে কাল এরা তাঁর মেয়ে, বউ এর সাথে কিছু করার সাহস পাবে না।

আর এই পশুগুলোর কথা কি আর বলবো!! একবার মহাখালী পাড় হচ্ছিলাম সাইকেলে। ৩/৪টা ছেলে আমার পাশেই দাড়ুয়ে আছে। একটা মেয়ে রাস্টা পাড় হচ্ছিলো। তাদের একজন মেয়েটার বুকে একটা ধাক্কা দিলো। আর তাতেই তাদের সেকি আনন্দ। আমি হাইসা বললাম, কি একটা ধাক্কা দিয়াই অর্গাজম হইয়া গেছে ভাই? এই পুরুষত্ব? তারা ৪ জন থাকলেও আমার কথার না প্রতিবাদ করেছিল না কিছু করার সাহস পেয়েছিল । তারা পালিয়েছে দ্রুত। অন্যাকারী ১০০ জন হলেও আপনি একা ঘুড়ে দাঁড়ান, দেখবেন তারা না পালাক। ধাক্কা খাবে।

আমাদের দেশে প্রায় ২০ কোটি মানুষ। ধরলাম এই খারাপের মানুষগুলার সংখ্যা ২ কোটি। কিন্তু আমরা ১৮ কোটি ঘুরে দাঁড়ালে, এরা কি টিকতে পারবে? পারবে না। কিন্তু পারছে কারণ তারা এক হয়ে অন্যায় করছে আর আমরা ১৮ কোটি মানুষ ভদ্রলোক সাইজা বইসা আছি। আমরা ভদ্রলোক যতক্ষণ না কেউ আমার পুচ্ছদেশে লাথি দেয় , ততক্ষণ আমি কিছুই বলি না।

অনেক আগে, আমরা একটা গ্রুপ খুলে একটা সিদ্ধান্ত নিছিলাম। আমরা যারা ভালো কিছু করতে চাই, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করতে চাই। তারা এক হয়ে চাঁদা তুলে বাঁশি আর লাল রুমাল কিনবো। যেখানেই এমন অন্যায় দেখবো, সেখানেই আমরা বাঁশি বাজিয়ে লাল রুমাল উড়াবো। কিন্তু প্রজেক্ট সফল হয়নি। কারণগুলো ছিল, কেউ বলেছে এটা অন্য একজনের আইডিয়া আমরা এটায় কেন আমরা কাজ করবো? কেউ বলেছে এত সহজ নাকি ? আবার কেউ বলেছে বাঁশি বাজানোর পর অন্য কেউ যদি পাশে না থাকে উল্টা বিপদ হবে। আসল কথা আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেই চাই না, তাই সাহস করে ভালো কাজটাও শুরু করতে পারি না। আর তাই এমন পশুগুলো সাহস পাচ্ছে প্রতিদিন সুন্দর সমাজ নষ্ট করার। প্রতিদিন এমন পশু জন্ম নিচ্ছে এসমাজে। যাদেরকে আমরা পুরুষ আর মানুষ বলি।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:১১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×