আমি ক্রিকেট বিটের রিপোর্টার । তবুও আমি প্রায় সময়ই বাংলাদেশের মানুষের ক্রিকেট খেলা নিয়ে বাড়াবাড়ি করাটা সহ্য করতে পারি না। যারা আমাকে চেনে তারা এটা খুব ভালভাবে জানে। এই জন্য আমি প্রায়ই একটা কথা বলি, আমি পেটের দায়ে খেলা দেখি।
ক্রিকেট খেলাটা আমি কেন পছন্দ করি না, তাও বলে দিচ্ছি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রায় সময় দেখা গেছে ক্রিকেট খেলা আমাদের নানান অসুবিধায় ফেলেছে। ক্রিকেট খেলার জন্যও অনেক সময় মানুষ ভুলে যাচ্ছে বিভিন্ন অন্যায় অবিচার।
খুব বেশি দূরে যেতে হবে না , ঢাকা টেস্ট জয় পাওয়ার দিনই সারাদেশের মানুষকে স্তব্ধ করে দেয় ' চলন্ত বাসে তরুণী ধর্ষনের পর হত্যা' এই সংবাদটি। কিন্তু দেখবেন, মানুষ ব্যাস্ত আছে কেন ক্রিকেটারদের ছয় কোটি টাকা বোনাস দেয়া হল!!
এদের বেশিরভাগই আবার দেশের ফেসবুকের নব্য সুশীল এবং সমাজসেবক। যাদের কাজ হচ্ছে কিছু ঘটলেই স্ট্যাটাস দিয়ে দেশ উদ্ধার কিন্তু নিজে কাজের সময় ঠনঠন। এদের ধারণা একটা স্ট্যাটাস দিলেই দেশ উদ্ধার হয়ে যাবে।
এদের এখন সবচেয়ে বড় চিন্তা কেন ক্রিকেটারদের এত টাকা বোনাস দেয়া হচ্ছে ? সেই টাকা কেন বণ্যার্তদের দেয়া হচ্ছে না?
এবার আসুন ক্রিকেটারদের ছয় কোটি টাকার হিসেবটা আগে করি। ছয় কোটি টাকার মধ্যে চার কোটি টাকা কিন্তু বোনাস না। চার কোটি টাকা পাচ্ছে আইসিসি থেকে। গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রদিতে বাংলাদেশ যে সেমিফাইনালে উঠেছিল এই চার কোটি টাকা তার প্রাইজমানি। বাকী দুই কোটি টাকা তাদের বোনাস।
একেকজন ক্রিকেটার কিন্তু দুই কোটি টাকা করে পাচ্ছে না। কিংবা ছয় কোটি টাকা করে পাচ্ছে না। সক্ল ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফসহ প্রায় ৪০/৪৫ জনের মধ্যে এই টাকাটা ভাগ করে দেয়া হচ্ছে।
এবার আসি, অনেকেই বলছেন সরকারি টাকা থেকে বণ্যার্তদের না দিয়ে কেন খেলোয়ারদের দেয়া হচ্ছে? আরে ভাই আগে জানু, বুঝুন তারপর বলুন। টাকাটা মোটেও সরকারি টাকা না। টাকাটা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আয় থেকেই দেয়া হচ্ছে। আপনারা অনেকেই জানেন না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নিজস্ব আয় আছে।
এবার আথলে আমাকে নিশ্চই ধরবেন, ' ব্যাটা বিসবির চামচামি কর? আয় করে তাইলে বণ্যার্তদের দেয় না কে? তাদের মত অতি আবেগী এবং না জাইনা চিল্লানো মানুষদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, ' এবার বিপিএলের উদ্ধোধনী অনষ্ঠান হচ্ছে না। '
নিশ্চই বলবেন, জিগাই কি আর ব্যাটা বলে কি? একটু ধৈর্য ধরুন বলছি। বিপিএলের জমকালো উদ্দ্বোধনী অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে সেই টাকা দিয়ে অলরেডি গত ২৫ তারিখ অলরেডি ত্রাণ দিয়ে এসেছে নিজেদের উদ্যোগে। আর বিপিএলের আয় থেকে অগ্রিম আরও দুই কোটি টাকার ত্রাণ তহবিল দেয়া হয়েছে। আর ক্রিকেটাররা নিয়মিত ব্যক্তি উদ্যোগে সাহায্য করে যাচ্ছেন বণ্যার্তদের। আসলে তারা আপনাদের মত নিয়মিত ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শো অফ করতে পারছে না বলে আপনারা হয়তো জানেন না।
এখন আসি আপনাদের ব্যাপারে। এতক্ষণ তো সবই শুনলেন। আপয়ান্দের অফিস মোট কত কোটি টাকার বেতন বোনাস দিচ্ছে আপনাদের ঈদে? তা কি বাসায় নিচ্ছেন নাকি পুরাটাই বণ্যার্তদের দিয়ে যাচ্ছেন? ক্রিকেটাররাও আপনাদের মতই চাকুরিজিবী। আপনাদের মতই পরিবার আছে তাদের। তাদেরও বেতন-বোনাসের দরকার হয়।
এবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলুন তো, নিজে সব বেতন-বোনাস দিয়ে যে হাটের বড় গরুটা কিনে খাবেন সেটা অন্যাইয় না। আর যারা এত সাহায্য করলো তারা বোনাস পাইলেই সমস্যা। আগে আমরা নিজেরা বদলাই, তারপর নাহয় এদের ধরে ধরে বদলে দিবানি।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:৫৩