আপনি যখন কোন একটা বিষয় বা ব্যক্তিকে ফলো করবেন , তখন আপনার মধ্যে সীমাবদ্ধতা চলে আসবে। ধরুন আপনি একজন মানুষকে ফলো করেন। এখন আপনার চিন্তা ধারা হবে, আপনি তার মত হতে চান। আপনি তার মতই কাজ করতে চান। ফলে আপনি আর বেশি কিছু চিন্তা করার ক্ষমতা হারয়ে ফেলেন।
তবুও আমাদের ছোটবেলা থেকেই শেখানো হয় , অমুককে দেখো তাকে অনুসরণ কর। তার মত হও। সেটা হও। ফলে আপনার চিন্তা সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। আপনি আপনাকে সেট করে দেয়া লক্ষ্য বা মানুষকেই অনুসরণ করুন কেবল।
আর এর খুব বাজে প্রভাব পরে সমাজে। ধরুন আপনাকে ছোট বেলা থেকে বুঝানো হল, এলাকার অমুক ডাক্তারের মত হতে হবে। ফলে আপনি লেগে যান ডাক্তার হওয়ার নেশায়। অথচ আপনার মধ্যে যে প্রতিভা আছে, তা নিয়ে ভাবার সুযোগই আপনার ব্রেইন পাবে না।
অথচ আপনার ভেতর যে প্রতিভা লুকিয়ে আছে , তা যদি আপনি ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেন তবে আপনারও ভাল আর দেশেরও ভাল। ধরুন আপনি বেশ ভাল আশেপাশের চরিত্রগুলোকে বোঝেন। আপনি চাইলেই এই চরিত্রগুলোকে সহজে অসাধারণ একটি চলচ্চিত্রে রুপান্তর করতে পারেন। আপনি মেধাবী । এজন্যই এটা পারেন। কিন্তু আপনার পরিবার আপনাকে বলে দিলো আপনাকে বিসিএস দিয়ে ক্যাডার হতে হবে। অনেক টাকা ইনকাম করতে হবে। পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করতে হবে।
ব্যাস আপনি আপনার প্রতিভা ভুলে লেগে গেলেন বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে। এবার আসি আপনি যদি একজন ভাল মুভি মেকারই হতে পারেন তাহলে টাকা হাতে কেন আসবে না! মুভি মেকাররা পরিবার ও নিজের নাম উজ্জ্বল করছে না! সত্যজিৎ রায় তো পুরো পরিবার ও দেশের নাম উজ্জ্বল করেছিল।
গত কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে ইয়াবার চেয়েও মারাত্মক নেশার মত ছড়িয়ে পরেছে 'বিসিএস' নেশা। তরুনদের রঙ্গিন স্বপ্ন দেখানো হয় । বিসিএস ক্যাডার হও, সুন্দর জীবন যাপন কর। ফলে তরুণরা নেমে যাচ্ছে অন্ধের মত যুদ্ধে। তারা ভুলে যাচ্ছে সমাজের প্রতি তাদের দায়। তার নিজের যোগ্যতা কোনটা সেরা! তার কি হওয়া উচিৎ? কি হলে সে দেশ এবং সমাজকে কিছু দিতে পারবে।
মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, আমাদের তরুণদের ধ্বংস করার আরও একটি বড় নেশা এই বিসিএস। আপনি দেখবেন , একজন বিসিএস পরীক্ষার্থী দেশ-বিদেশে নানান খবর জানার পরও তার কোন অন্যায়ের ব্যাপারে কোন প্রতিবাদ নেই। কিংবা সে অন্যায় নিয়ে মাথাই ঘামাচ্ছে না। তার মাথা জুড়ে কেবল বিসিএস। দেশ-সমাজ কিংবা মানুষ গোল্লায় যাক। এমন শিক্ষার এ সমাজের কি দরকার!
লেখা পড়ে বিসিএস ক্যাডার কিংবা বিসিএস পরীক্ষার্থীরা হয়তো বলবেন, ব্যাটা নিজে বিসিএস দিতে পারে নাই তাই এহন এইসব কইতেছে। কথাটা বলাটাই স্বাভাবিক, কারণ আপনারা চিন্তা করার ক্ষমতা হারিয়েছেন। কেবল তোতা পাখির মত শেখানো কথা বলতে শিখেছেন। চিন্তা করার ক্ষমতা থাকলে উপরের লেখাটা পড়ে এতক্ষণে চিন্তা করতে শুরু করতেন।
আর সবচেয়ে বড় কথা। আমার পরিবারের কখনও আমার উপর চাপ ছিল না। তাদের লক্ষ্য ছিল, আমি যেখানে যা করে আনন্দ পাচ্ছি সেটাই করতে দেয়া। কারণ কাজে আনন্দ থাকলে , সেই কাজে তার পারদর্শীতা থাকলে। সে সেখানে ভাল কিছু করবেই। আর ভাল কিছু করতে পারলে আপনি টাকা আর সম্মান দুটোই পাবেন। তবে চিন্তায় তবু থেকেই যাচ্ছে হয়তো যে, সরকারী চাকুরি না থাকলে মেয়ের বাপ মেয়ে দিবে না তাই না!!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:৪৪