এনএসটিইউতে দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল ভালমন্দতে। আগেই বলেছি আমি হলে ঊঠেছিলাম বাকিদের চেয়ে কিছুদিন পর। এর আগে প্রথম যেদিন আমাদের ব্যাচের স্টুডেন্টদের জন্য হল খুলে দেয়া হয় সেদিনই তারা দেখে ভার্সিটি উত্তপ্ত। প্রথম ব্যাচের স্টুডেন্টদের ক্রেডিট ফি কমানোর দাবিতে আন্দোলন। এই ঘটনাটা আমাদের বেশীরভাগের জন্যই একটা নতুন এবং অবশ্যই ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা ছিল। যদিও আমার নিজের দেখা না তারপরও বাকিদের মুখে শুনে ঘটনার একটা চিত্র মোটামুটি দাঁড় করিয়েছি। স্বাভাবিকভাবেই অনেকের অভিজ্ঞতা ভিন্ন হবে।
হলে উঠার পর সবাই দেখল প্রশাসনিক ভবনের সামনে সিনিয়ররা সবাই জড়ো হয়ে আন্দোলনরত। প্রত্যেকের মুখ গম্ভীর, চোয়াল শক্ত। নতুন হলে উঠা বেশিরভাগ ছেলেপেলে তখন সর্তকভাবে পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করছে এবং অবশ্যই নিরাপদ দূরত্বে থেকে। ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছাসের আগে উপকূ্লের কাছে থেকে চলাচল করা মাছ ধরা ট্রলারের মত। এর মধ্যে দু’য়েকজন যারা একটু স্মার্ট ছিল তারা ঘটনাস্থলের আশেপাশে হেঁটে এসে সবাইকে পরিস্থিতি সম্পর্কে আপডেট দিচ্ছিল। তাদের মুখ থেকে কিছু শোনার জন্য বাকিরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছিল। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিল আন্দোলনকারীদের চেয়ে তারাই বেশি সিরিয়াস। বলাবাহুল্য গুজব এবং অতিরঞ্জিত খবরই ছিল বেশী। সন্ধ্যা হতেই যেগুলো ডালপালা মেলা শুরু করল। আমার এক বন্ধুর ভাষ্যমতে কেউ একজন এসে তাকে বলল রাতে যে কোন সময় পুলিশ হলে ‘রেট’ দিতে পারে। এজন্য রাতে ঘুমানো যাবেনা। মোটামুটি রাত ৮-৯ টার দিকে হল থেকে সিনিয়র বড়ভাইরা এসে সবাইকে আন্দোলনের ব্যাপারে ব্রিফ করল এবং নতুন ছেলেপেলে সবাইকে আন্দোলনে শরীক হতে বলা হল। আন্দোলনে যুক্ত হবার কথা শুনে সবার মধ্যে প্রচন্ড উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ল। সিনিয়ররা চলে যাবার পর দু’একজন এর একটা শেষ দেখে ছাড়তে হবে এমন কথাবার্তা শুরু করে দিল। পারলে তখনই জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন শুরু করে দেয়। কেউ কেউ ছিল যারা আবার ওখানে কি হচ্ছে তার প্রতি মুহূর্তের লাইভ আপডেট দিচ্ছিল তাদের গার্লফ্রেন্ডদের। ওইপাশ থেকে নিশ্চই প্রচন্ড উৎকন্ঠা ছিল যার জন্য এ পাশ থেকে বারবার বলতে শোনা যাচ্ছিল ‚‘আমাকে নিয়ে ভয় পেওনা। সাবধানে আছি। তবে কতক্ষণ নিজেকে ধরে রাখতে পারব জানিনা! কখন কি হয় বলা যায় না। এত বড় অন্যায়, অন্যায্য দাবী! মানা যায়, বল?’ তবে যারা ভেবেছিল রাতে ‘কিছু একটা’ হবে তারা হতাশ হয়ে শেষরাতে ঘুমাতে চলে গেল। সকালে আবার সেই আলোচনা। কি হবে, কি হবে! দুপুরের দিকে আবার সেই জমায়েত তবে এবার নতুন স্টুডেন্টরাও পার্টিসিপেট করল। এদের সবার মুখে অত্যধিক গাম্ভীর্য। এদিকে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করার খবর শোনা যাচ্ছে। এসব খবরে উত্তেজনা আরও বাড়ছে। এভাবে যাবার পর দিনশেষে খবর এল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে দাবী দাওয়া মানা হবেনা বলে মোটামুটিভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে স্যাররা সন্ধ্যার দিকে হলে আসবেন কথা বলার জন্য। খবর অনুযায়ী তাঁরা এলেন এবং উওেজিত ছাত্রজনতার তোপের মুখে পড়লেন। একপর্যায়ে ‘আপোষহীন’ ছাত্রজনতা তাঁদের একটা রুমে আটকে ফেলল। এ ঘটনায় পরিস্থিতি মোটামুটি নাটকীয় কিছু মোড় নিয়ে ফেলল। ভার্সিটি প্রশাসনের টনক নড়ল। তারা পুলিশে খবর দিয়ে দিলেন। এদিকে সিনিয়ররা জুনিয়রদের হলে এসে শাসিয়ে গেল যাতে প্রশাসনের কাছে কেউ মাথা নত না করে। সবাইকে আন্দোলনে থাকতে হবে। এখন মুখ বুঝে পড়ে থাকার সময় নয়। ‘এ্যাকশনের’ সময়। অতঃপর সবাই এ্যাকশনের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল। এই সুযোগে কেউ কেউ সিনিয়রদের সাথ ঘনিষ্ঠ হয়ে গেল। এক সাথে সিগারেট ধরিয়ে আন্দোলন নিয়ে উত্তপ্ত পরিকল্পনা কিংবা হাতে ইট-পাথর নিয়ে একসাথে অকথ্য গালিগালাজ করে প্রশাসনের গুষ্টি উদ্ধার ইত্যাদি সবই হচ্ছিল। এমন উওাল অবস্থায় ভার্সিটি প্রশাসন পুলিশের সহায়তা নিয়ে বন্দী শিক্ষকদের উদ্ধার করল। বাকিরাতটাও এভাবে চিল্লাচিল্লি, গুজব আর আতঙ্কে কাটল কি হয়, কি হয় ভেবে। সকালে অবশ্য কিছু হবার আগেই সবাই দেখল পুরো ক্যাম্পাসে ছাত্রছাএীর চেয়ে বেশী সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা। সবাইকে অনির্দিষ্টকালের জন্য হল ছেড়ে যেতে বলা হল। হল লাইফ শুরুর দু‘দিনের মাথায় এভাবে চলে যাবার এই ঘটনাটা নতুন স্টুডেন্টদের একেকজনের কাছে ছিল একেকরকম অভিজ্ঞতা। কারো জন্য ভীতিকর, কারো জন্য রোমাঞ্চকর। অভিজ্ঞতা যেমনই হোক পরে সবার কাছে শুনে মনে হল এটা ছিল অনেকটা ‘উফ যা ভয় পাইছি তয় মজা হইছিল’ টাইপ একটা ব্যপার। অনেকসময় মন্দের মাঝেও কিছু ভাল ব্যাপার থাকে। এই ঘটনার ভাল দিকটা ছিল ওই দুইদিনের মাঝে অনেকে তাদের ভবিষ্যতের বন্ধুদের পেয়ে গেল। আমার কাছে এই ঘটনা যতবারই বলা হয়েছে ততবারই নিজেকে দুর্ভাগা মনে হযেছে থাকতে না পারার জন্য। যেটা আজও মনে হয়!
যাহোক দুর্ভাগ্য মেনে নিয়ে নতুন জায়গায় খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। গত পর্বে বলেছিলাম আমার সীট ছিল হলরুপী একাডেমিক ভবনের পঞ্চম তলায়। এর নিচে চতুর্থ তলায় ছিল কম্পিউটার সায়েন্স (CSTE) ডিপার্টমেন্ট। তার নিচের তলায় ফার্মেসী বিভাগ। উপর থেকে দুই লাফ দিলে ক্লাশরুমে চলে যাওয়া যায় এমন অবস্থা। প্রথমদিন ক্লাশে গিয়ে দেখি ক্লাশে দুই ধরণের স্টুডেন্ট। একদল বেশী সিরিয়াস আরেকদল অতিমাএায় উদাস। প্রথম ক্লাসে চেয়ারম্যান স্যার সবাইকে ফার্মেসী এবং ভার্সিটি নিয়ে ধারণা দিলেন। স্যার একইসাথে মেয়েদের হলের প্রভোস্টও ছিলেন। ছাত্রীদের কোন সমস্যা আছে কিনা জিজ্ঞেস করতেই এক এক করে ছাত্ররা তাদের সমস্যা বলা শুরু করলো। মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে, রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে এক পা হঠাৎ হাঁটু-বালির ভিতর ঢুকে গেছে। ডাইনিংয়ে হাত ধোয়ার গামলা মনে করে ডালের বাটিতে হাত ধুয়ে ফেলেছে। আর কত কি! সব শুনে স্যার বোর্ডে ওনার নাম্বার লিখে বলেলেন‚ ‘এটা আমার নাম্বার। এরপর থেকে কোন সমস্যা হলে জানাবা।’ প্রায় সাথেসাথেই কেউ একজন মিসডকল দিয়ে বললো‚ ‘স্যার এটা আমার নাম্বার।’ আমি আর আমার বন্ধু পরাগের অবশ্য এসবে মন নাই। আমরা পুরো ক্লাশে মেয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছি। কার সাথে বাকি চারটা বছর কাটাব সেটা নিয়ে সিরিয়াস আলোচনা চলছে। নিজের ডিপার্টমেন্টে না পেলে অন্য ডিপার্টমেন্টেও যে খুঁজতে হবে সেটা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। সেদিন সন্ধ্যায় প্রথমবার গেলাম পরাগের ডর্মে। যেখানে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের মেধাতালিকার সব প্রথম সারির ছেলেরা থাকে। তারা পাঁচ তলার মত গণরুমে গাদাগাদি করে থাকতনা। একরুমে ৩ জন। তাদের রুমে এটাচ্ড বাথরুম এবং গ্রাউন্ড ফ্লোরে ছিল ডাইনিং। রাজকীয় ব্যাপার-স্যাপার। ডর্মে গিয়ে বুঝলাম একাডেমিক এবং ডরমিটরীর ছেলেদের মধ্যে একটা মনস্তাত্বিক দ্বন্দ আছে। ডর্মবাসী ভাবে একাডেমিকের ছেলেরা বখাটে আর একাডেমিকের এরা ভাবে সব আঁতেল এবং সুশীলের বসবাস ডর্মে (সুশীল শব্দটা তখন ব্যাঙ্গার্থে ব্যবহৃত হত ক্যাম্পাসে; এখনও কি?) যাই হোক এই মনস্তাত্বিক দ্বন্দ ক্যাম্পাসের পুরো সময়টা জুড়ে ছিল। কিন্তু ভুললে চলবেনা প্রদীপের নিচেই থাকে অন্ধকার। ডর্মেও কিছু ‘বখাটে’ ছিল যারা সেই ‘সুশীল’ পরিবেশে যোগ্য সঙ্গের অভাবে হাসফাঁস করত। তারা এসে একাডেমিকের ছেলেদের সাথে মিশে গেল। মজার ব্যাপার হল ক্লাশের বাইরে আমার ফার্স্ট সেমিস্টার বলতে গেলে পুরো সময়টাই কেটেছে ডর্মে। সন্ধ্যায় আড্ডা দিতে যেতাম। ফিরতাম মাঝরাতে। কিংবা মাঝেমাঝে ওখানেই ঘুমাতে যেতাম। ভার্সিটিতে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের অনেকের সাথেই তখন পরিচয় হয়। জিতু, সুদীপ, তান্না, পরিতোষ আর মুকুল দিয়ে শুরু…এই পরিচয়ের সুবাদে অর্জনও কম ছিলনা। সিগারেটে হাতেখড়ি, তাস শিখে ফেলা এবং নারী মনস্তত্ব বিষয়ে বিশদ গবেষণার দ্বার উন্মোচিত হওয়া। ডর্মের সামনে একটা বিশাল দীঘি। চমৎকার একটা ঘাট সেটার। একদিন বিকেলে ফুটবল খেলে এসে সেখানে গোসল করতে গিয়ে মনে হল আহ্ লাইফটা তো খারাপ না! কি আনন্দ, কি আনন্দ! তবে এভাবে বললে আমার নিজের হল আই মিন একাডেমিকে কাটানো দিনগুলোর প্রতি অবিচার করা হয়। একাডেমিকে আমি যে গণরুমে ছিলাম সেখানে আমরা আসলে কতজন ছিলাম সেটা প্রথম এক মাস জানতামই না। সারাদিনই দেখতাম রুমে প্রচুর ছেলেপেলে। আবার রাতে ঘুমানোর সময় দেখতাম নতুন নতুন মুখ। এরকম কিছুদিন যাবার পর এক সময় আমরা রুমমেটরা সবাই মিলে ঠিক করলাম রুমের একটা নামকরণ করা উচিত। এ কাজটা অন্যান্য রুমের ছেলেপেলেরা করে ফেলেছে ইতিমধ্যে, সুতরাং এটা সময়ের দাবী। ভেবেচিন্তে সর্বসম্মতিক্রমে নাম দেয়া হল ‘রিফিউজি ক্যাম্প’। একটা কাগজে নাম লিখে তার নিচে রুমের সব সদস্যের নামের লিষ্ট দেয়া হল। একদিন পর নতুন একজন আমাকে একপাশে ডেকে নিয়ে বললো, ‘মামা আমার নামটা লিষ্টে লিখলিনা কেন? আমিওতো এই রুমেরই।’ আমি অবাক হয়ে বললাম কিন্তু তোকেতো আমি কখনই এই রুমে দেখি না। বেচারা আরো বিমর্ষ হয়ে বলল, ‘আমি থাকি কিন্তু ঘুমাই অন্য রুমে।’ ওকে স্যরি বলে নাম এডিট করে নতুন লিষ্ট করা হল। সেইবারই আমরা প্রথম জানতে পারলাম কারা আমাদের আসল রুমমেট! রিফিউজি ক্যাম্প নামটা কিভাবে যেন বেশ পরিচিতি লাভ করল। খোদ হল প্রভোস্ট যেমন একবার একজনকে কোন এক কারণে তাঁর অফিসে ডেকে কথা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তা তুমি কি রিফিউজি ক্যাম্পে থাক নাকি?’ রুমের বাকিরাও এই নামে পরিচয় দিতে বেশ গর্ববোধ করছিল তখন। রিফিউজি ক্যাম্পে আমার অনেক মজার স্মৃতি আছে। আসলে শুধু রিফিউজি ক্যাম্প না একাডেমিক ভবনে কাটানো প্রায় দেড় বছরের পুরো সময়টাই ছিল নির্মল আনন্দঘন। পরবর্তীতে আমাদের সবাইকে মূল হলে শিফট করানো হয়। অনেক ঘটনা। সব পারবোনা হয়ত কিন্তু স্মৃতি থেকে যততুকু পারা যায় লিখার আশা রাখি।
একাডেমিক ভবনে এরকম উপরে থাকার ব্যবস্থা আর নিচে একাডেমিক কার্য্যক্রম চলায় মাঝেমাঝেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হত। স্পীকারে গান শোনা ছিল এর মধ্যে অন্যতম। এছাড়া দেখা গেল কেউ উপরের ফ্লোরে উচ্চশব্দে গালিগালাজ করছে অথচ নিচে গুরুগম্ভীর ক্লাশ চলছে। একটা ঘটনা মনে আছে। একদিন রাতে প্রভোস্ট স্যার এলেন ছেলেপেলের সাথে কথা বলতে। কারেন্ট ছিলোনা তখন। চার্জারলাইট জ্বালিয়ে স্যার কথা বলছিলেন। কথার এক পর্যায়ে জিজ্ঞেস করলেন ‘CSTE ডিপার্টমেন্টের সামনে ফ্লোরে আমের আঁটি পড়ে থাকতে দেখা গেছে। কাজটা কে করেছ?’ শুনে সবাই এর-ওর মুখের দিকে তাকাচ্ছিল। নাম না বললে স্যার নিজে খুঁজে বের করে পেলে কঠিন এ্যাকশন নিবেন বলে ধমক দিলেন। ধমক শুনে অপরাধী না এলেও কারেন্ট চলে এল। বিকট শব্দে কোন এক রুমের কারও সাউন্ড স্পীকারে AKON’র ‘I just had sex....’ বেজে উঠল। প্রভোস্ট স্যার আমাদের বিরুদ্ধে কঠিন ‘এ্যাকশন’ নিবেন বলে দ্রুত চলে গেলেন। আরেকদিন রাতে আরেকজন শিক্ষক ডিপার্টমেন্টের কাজ শেষ করে ফিরছিলেন সিঁড়ি দিয়ে। লোডশেডিংয়ের কারণে সামনে থাকা স্যারকে আমাদের এক বন্ধু কাঁধে হাত রেখে বলে, ‘মামা মোবাইল আছে না সাথে? একটু আলোটা মারতো। সিমটা চেঞ্জ করমু।’ এরপরের ঘটনা ইতিহাস।
......দিন কেটে যাচ্ছিল। এবং অবশ্যই বেশ মজাতে। মজা পাবার কারণও ছিল। এই প্রথম বাবা-মায়ের শাসনবিহীন মুক্ত জীবন। পড়ালেখা নাই, যখন যা ইচ্ছা করছি, ঘুরছি, খাচ্ছি। তবু মাঝেমাঝে সেলফ-মোটিভেশনের দরকার হত। যখন কিছু করার থাকত না তখন এসব কাজে দিত। যেমন? আগেই বলেছি আমরা আসার পর নানা অভাব আর সমস্যায় জর্জরিত ছিল ক্যাম্পাস। প্রায়ই ভাবতাম কিভাবে এখানে বাকি চার বছর থাকব! রাতে টং থেকে ফেরার সময় রাস্তার দু‘পাশের গাছের সারির মধ্যে দিয়ে ভেসে আসা বাতাসে একবার একটা চিন্তা এলো মাথায় এবং আস্চর্য্যজনকভাবে সেটা বেশ শান্তি দিল। প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদ নতুন নতুন বিদেশ গিয়ে এরকম সমস্যায় পড়েছিলেন। কিছুই ভাল লাগেনা তাঁর। একদিন বাইরে তুষার পড়ছিল। তিনি রুমে বসে। তুষারগুলো যখন পড়ছিল রোড লাইটের আলোয় সেগুলোকে তাঁর কাছে নাকি জোনাকির মত লাগছিল। লেখক ভেবে নিলেন তিনি তাঁর গ্রামের বাড়িতে বসে জোনাকি দেখছেন পূর্ণিমার আলোয়। তাঁর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমিও ভেবে নিলাম আমার দুপাশে পাইন গাছের সারি। আর আমি হাঁটছি ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার রাস্তা ধরে। ভিসা আর টাকা যেহেতু লাগেনা তাই এভাবে প্রায়ই রাতে হেঁটে আসতে আসতে নির্মল প্রশান্তি পেতাম।
(চলবে)
বি.দ্রঃ আজ ২২ জুন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিন। বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। এক যুগে পা দিল সেই ছোট্ট এনএসটিইউ। বর্তমান এবং সাবেক, দেশ-বিদেশে থাকা সব এনএসটিইউয়ানের জন্য শুভেচ্ছা থাকলো। শুভকামনা থাকলো চোখের সামনে বেড়ে ওঠা বিশ্ববিদ্যালয়টার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১৭ সকাল ১০:৩০