somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্যুকাব্য

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ভোর ৬:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্প্রতি প্যারিস যাওয়া হয়েছিল, ঘুরতে। সবশেষ বার গিয়েছিলাম প্রায় বছর দশেক আগে, ২০১৪ সালে। অবাক লাগে, সত্যি, কিভাবে মাঝের দশটি বছর কেটে গেল! কত পরিবর্তন এসেছে জীবনে, আশেপাশে, কিংবা পুরো পৃথিবীতেই! মজার ব্যাপার হলো প্যারিস মনে হল যেন আগের মতই আছে। তেমন বিশেষ কিছু আমার কাছে চোখে পড়েনি। নয় বছর আগের মত এবারও রাতে বোটট্রিপে উঠেছিলাম সীন নদীতে। বোটে বসেই ভাবছিলাম সেবারের সাথে এবারের ট্রিপের কি কি পার্থক্য আছে। ভেবে নিজের মনেমনেই হিসেব মেলাচ্ছিলাম। সেবার গিয়েছিলাম বন্ধুদের নিয়ে, এবার সাথে জীবনসঙ্গিনী। সেবার ছিল প্রবাস জীবনের কেবল এক বছর আর এবার প্রায় ১০ বছর প্লাস! এর মাঝে থিতু হওয়া, স্থির হওয়া, আবেগ কমে কিছুটা সিরিয়াস হওয়া। জীবনে আসলেই অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে। তবে কেন জানিনা একটা প্রশ্ন বারবার মনে আসছিলো-আগেরবারের চেয়ে উচ্ছ্বলতা আর প্রাণশক্তি কি কিছুটা কমেছে এখন?
ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে হল সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটা আসলে অন্যখানে। দশ বছর আগের সেই পৃথিবীতে আমার প্রিয় অনেকগুলো মানুষ ছিলো। তারা আজ নেই। সমস্যা হল এই বোধের পরেই আমার মাথায় একটার পর একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগল।
যারা আজ নেই, তারা থাকলে কি আজ সময়টা অন্যরকম হতে পারতো? নাকি তারা যখন ছিল সেটাই এক অন্যরকম সময় ছিল? সে সময়টায় কি প্রাণ ছিল? নাকি সেটা অন্য এক জীবনই ছিল?
এ প্রশ্নগুলো অবশ্য সীনে-র তীরে সেই বোটট্রিপের সময়ই যে প্রথম মাথায় এসেছিল তেমনটা নয় তবে সেগুলো সেবার জেঁকে বসেছিলো, এটা বলা যায়। আর সেখান থেকেই এই লেখাটি লিখতে বসা। লেখা না বলে লেখাগুলো বললে বোধ করি যথার্থ হবে। কারণ এগুলো আসলে মনে অনেকদিন থেকে জমে থাকা কিছু কথা এবং অনুভূতির সংকলন। অনেকদিন ধরে লিখব লিখব করেও মূলত আলসেমির কারণেই লেখা হয়ে ওঠেনি। পঁয়ত্রিশোর্ধ এ জীবনটাতে কিছু মানুষ নানাবিধ কারণে হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিল। তাদের সবাই যে খুব ঘনিষ্ট ছিল তা কিন্তু নয়, এমনকি তাদের কারো কারো সাথে আমার কোনদিন দেখা পর্যন্ত হয়নি! তারপরও তাদের চলে যাওয়াটা গভীরভাবে মনে দাগ কেটেছিল। এমন কয়জনকে নিয়েই এই সিরিজের মত করে লেখাগুলো, যার নাম দিয়েছি আমি মৃত্যুকাব্য। কেন জানি মনে হয় এটা আমার জন্য আসলে এক ধরণের দায়মুক্তির মত। কেন? সেটা জানিনা! তবে পর্বগুলো পড়লে হয়ত ব্যাপারটা বোঝা যাবে খানিকটা।

পর্ব-১: দুধালি বুড়ি


ছবি: কেলোকা আবাসিক এলাকা

আমি বড় হয়েছি দিনাজপুরে। দিনাজপুরের ছোট্ট মফস্বল শহর পার্বতীপুরে। বাবা রেলওয়েতে জব করতেন। দিনাজপুর তথা উত্তরবঙ্গ আসলে পুরো আলাদা একটা বাংলাদেশ। আমি অবশ্য আমার ছোটবেলার সময়কার কথা বলছি মানে ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে। আমাদের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী। প্রতি বছর শীতের ছুটিতে বাড়ি যেতাম আমরা। ফিরে আসার সময় ঢাকার উপর দিয়ে যেতে হত। উত্তরবঙ্গ, মানে যমুনা নদী পার হলে মনে হতো ভীনদেশে প্রবেশ করেছি। তেমন ঘন বসতি নাই, মাইলের পর মাইল শুধু ধানক্ষেত, কিংবা ধু-ধু প্রান্তর। সেই সাথে ঠাণ্ডা, কিছুটা নির্জন ও ধূসর। যাহোক, এমন একটা জায়গায় আমার জীবনের বড় একটা অংশ কেটেছিল। এবং বলা বাহুল্য জীবনের সবচেয়ে সোনালী সময়গুলোরও সাক্ষী ছিল পার্বতীপুর। কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা যেটাকে সংক্ষেপে সবাই বলত কেলোকা। কেলোকা ছিল বাংলাদেশে রেলওয়ের ইন্জিনগুলো মেরামত ও কমিশনিংয়ের জন্য সবচেয়ে বড় কারখানা। এখনও তাই-ই সম্ভবত। সেখানেই ছিল বাবার চাকুরী এবং আর সেজন্যই আমার বাল্যবন্ধুরা সবাই ছিল আমার বাবার কলিগদের ছেলেমেয়ে। কেলোকার অদূরেই ছিল রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জন্য এক বিশাল আবাসিক এলাকা। সেই কেলোকার সময়ের এক চরিত্র নিয়েই আজ আমার এই লেখা। মজার ব্যাপার হলো আমি কিন্তু তাঁর নাম জানতাম না। তাঁকে আমি প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিন থেকে শুরু করে সবশেষ দিন পর্যন্ত তার চেহারার কোনও পরিবর্তন দেখিনি। ডাকতাম তাকে „দুধালি বুড়ি“ নামে। আমাদের বাসায় উনি গাভীর দুধ বিক্রি করতেন। মানে পেশায় গোয়ালিনী। সেসময় আমাদের কলোনীতে এরকম অনেক দুধালি বুড়ি ছিলেন যারা একেকজন একেক বাসায় দুধ বিক্রি করতেন। কেলোকার আশেপাশের মাইল খানেক দূরে ছোট ছোট গ্রামে থাকতেন তারা। সেগুলোর দু একটার নামও মনে আছে আমার যেমন রামপুরা, হিন্দুপাড়া। দুধালি বুড়িকে আমি প্রথম দেখি সম্ভবত তৃতীয় শ্রেনীতে পড়ার সময়। মনে আছে খুব শীর্ণকায়, পান খাওয়া এক মুখ ছিল তার যেটাতে হাসি লেগে থাকতো সর্বক্ষণ। সেই হাসি কিন্তু মিষ্টি হাসি নয়, পান খাওয়া দাঁত বের করা হাসি। বুড়ির ঠোঁটের দু‘পাশ দিয়ে প্রায়ই পানের রস গড়িয়ে পড়তে দেখতাম। আমার নাম ঠিকমতো উচ্চারণ করতে পারতেন না। তাই ঝামেলা এড়াতে ডাকতেন „বাউ“ বলে। ওই অঞ্ছলের আঞ্ছলিক ভাষায় ছোটদের আদর করে এভাবে ডাকা হয়, আক্ষরিক অর্থ খুব সম্ভবত বাবা কিংবা বাছা (শুধরে দেবেন কেউ ভুল হলে)। বাউ ডাকলেও বুড়ি বয়সে ছিলেন আমার নানী-দাদীর মতো। একটা কথা বলে রাখি এ প্রসঙ্গে। বুড়ির চেহারার সাথে সম্ভবত কিছুটা মিলও ছিল আমার দাদীর। কিংবা আমরা যেহেতু অনেকদিন পর পর দাদী-নানীকে দেখতে পেতাম তাই হয়ত অবচেতন মন বুড়িকে দাদীর অবস্থানে বসিয়েছিল। কে জানে! আমাদের বাসায় দুধ দেয়া ছাড়াও বুড়ি আসতেন মাঝে মাঝে। এসে আম্মুর সাথে গল্প করতেন। আম্মুকে শাক, তরি-তরকারী কেটে দিতেন। চা খেতে পছন্দ করতেন। রুগ্ন গলায় সমসময় দেখতাম একটা পৈতা বাঁধা। গা থেকে জর্দার গন্ধ আসতো। বুড়ি কিন্তু ধূমপানও করতেন। এটা অবশ্য ওই অঞ্চলের অনেক মহিলাদেরই করতে দেখেছি আমি। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের দরিদ্র মহিলাদের। মাঝে মাঝে দেখতাম শাড়ীর আঁচলের গিটে পুটলির মত করে বাঁধা কিছু একটা। সেখান থেকে পান, সুপারি, বিড়ি বের হতো।


ছবি: প্রতীকি, সূত্রঃ ইন্টারনেট (Dreamstime.com_Sjors737)

বুড়ির বাছুর যখন বড় হয়ে যেত তখন দুধও শেষ হয়ে যেত। আমাদের জন্য আর আর দুধ আনতে পারতো না বুড়ি। তখন আমাদের নতুন বাছুর হবার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। অবশ্য এর মাঝে নিয়মিত আপডেট দিতেন তিনি। কতদিন বাকি আছে আর। বাংলা পঞ্জিকার মাস হিসেব করে বলতেন। আশ্বিন মাস, কিংবা পোষ মাস এভাবে। আমরা ছোটরা তখন সেগুলোর মানে বুঝতাম না। কেন এভাবে আমাদের মাঝে মাঝে বুড়ির কাছ থেকে দুধ পাবার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। অবশ্য একেবারেই যে অভুক্ত রাখতেন আমাদের তা কিন্তু নয়। তার গ্রামের অন্য কেউ দুধ বেচলে তাদের থেকে সংগ্রহ করে হলেও আমাদের দিতেন। আমরাও তাই অন্য কারও কাছে যেতাম না। দুধ যখন দিতে পারতেন না তখন ডিম নিয়ে আসতেন। ডিম বেচতেন। বলাই বাহুল্য এসব কাজে কোন অসততা করতে কখনও দেখিনি তাকে। এমনকি দাম নিয়েও আমাদের সাথে কোন দামাদামি করতেন না। কেন জানিনা তবে এই কাজটিকে তিনি শুধু ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্কের মধ্যে রাখেননি। মাঝে মাঝে বৃষ্টির দিনগুলোতে বুড়ির গ্রামের রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যেত। কিন্তু তবুও বুড়ি চলে আসতো পানি মাড়িয়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে। আবার শীতের দিনে ঠান্ডায় পাতলা কাপড় জড়িয়ে চলে আসতেন। এমনকি অনেকদিনই দেখেছি বুড়ির শরীর খারাপ। জ্বর, কাশি কিন্তু তবুও তিনি হাজির। আমার গৃহিণী মা মাঝে মাঝে ওনাকে পান খাবার জন্য, সুপারি কেনার জন্য টাকা দিতেন। সে টাকাও খুবই অল্প। আমি আম্মুকে বলতাম এত অল্প টাকা দাও কেন। আরেকটু বেশী দাও। আম্মু হেসে বুড়িকে বলতেন দেখেছো বুড়ি তোমার জন্য কি মায়া। বুড়িও হেসে বলতো বড় হ বাউ, বড় হলে তোর বউয়ের থেকে নিব সব উশুল করে। যা হোক এই অল্প কিছু খুচরো টাকা পেয়েই বুড়ি কি যে খুশি হতেন! বুড়ির জন্য সবচেয়ে আনন্দের সময় ছিলো পূজোর সময়টা। আমাদের বাসায় হরেক রকম নাড়ু, মিঠাই নিয়ে আসতেন। আহ, কি মজার সেইসব খাবার! একদিন দুপুরে আমি স্কুল থেকে এসে দেখি বুড়ি বাসায়। আম্মু পিঠা বানাচ্ছিল। আশেপাশের বাসার আন্টিরাও আছেন। সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছেন। মজা করছেন। ওমা! দেখি বুড়ি এক পর্যায়ে নাচা শুরু করে দিল। আমি তো দেখে সে কি হাসি। এভাবে বুড়ি যেন আমাদের পরিবারের সাথে মিশে গেছিলেন। আমাদের কলোনীতে প্রতিদিন আসার আরেকটা কারণও ছিল। বুড়ি তার গরুর জন্য ঘাস কে্টে নিয়ে যেতেন। কলোনীর ভেতরের সবুজ ঘাসে ঢাকা মাঠ গুলো থেকে। উনি একাই নন, তার সাথে তাদের গ্রামের আরও অনেকেই আসতেন সে সময়। আগেই বলেছি বুড়ি খুব শীর্ণকায় ছিলেন। তার পরনের শাড়িও ছিল জীর্ণ। আব্বা প্রতি রোজার ঈদে আমাদের সাথে সাথে বুড়ির জন্যও কাপড় কিনতেন। আব্বা ঈদের বোনাস পাবার পর দেখতাম লিস্ট করতে বসতেন কাকে কি দেবেন। সেখানে লিখা থাকতো „দুধালি বুড়ির শাড়ি“
বুড়ি থাকতেন গ্রামে তার ছেলেদের সাথে। একবার তার এক ছেলের বিয়েতে আমাদের দাওয়াত করলেন। আমার ছোট বোনটা কেবল হয়েছে তখন। বুড়িকে নিয়ে তারও একটা স্মৃতি আছে। সে-ও আমাদের সবার দেখাদেখি বুড়িকে „বুড়ি“ ডাকা শুরু করে দিলো। আব্বা একদিন রাগ করে বললেন, এই তুমি ওনাকে বুড়ি ডাকো কেন। বোনেরও সরল প্রশ্ন, তাহলে কি বলে ডাকব? আব্বা জবাব দিলেন, „কাজলা দিদি“ বলে ডাকবা! সে নামে অবশ্য ডাকেনি সে। বুড়ি আমাদের কাছে „বুড়ি“-ই রয়ে গেল। যা হোক আম্মু খুব জোর ধরলেন আব্বুর কাছে বুড়ির ছেলের বিয়েতে যাবার জন্য। আমরা গেলাম সেবার। সম্ভবত আমার জীবনে সেটাই ছিল প্রথম কোন হিন্দু রীতির বিয়ে দেখা। বুড়ি আমাদের রাজকীয় সংবর্ধনা দিল। তাদের গ্রামের বাড়ি দেখা। মাটির ঘরগুলোতে কি সুন্দর করে জিনিষপত্র সাজিয়ে রেখেছিল। মাটির ঘরে থাকার কারনেই কি বুড়ি মাটির মানুষ হয়েছিল কিনা কে জানে! আমাদের সেই মাটির মানুষ বুড়ির জীবনে সুখ বেশিদিন স্থায়ী হল না। তার ছেলেরা বেশিরভাগই তার ও তার স্বামীর দায়িত্ব নিতো না। শুধু যেই ছেলেটির বিয়েতে গিয়েছিলাম সে কিছুটা দেখভাল করতো। অবশ্য তারাও যে খুব অবস্থাপন্ন ছিল তাও কিন্তু নয়। তবুও বুড়ি এসে যখন তার দুঃখের কথা বলতো তখন আমাদের খুব খারাপ লাগতো। আমি বাবার সাথে মাঝে মাঝে সাপ্তাহিক বাজার করার জন্য বাজারে যেতাম। সেই বাজারে বুড়ির ছেলে মাছ বিক্রি করতো। আব্বা তার কাছে মাঝে মাঝে তাদের বাড়ির খোঁজ নিতেন। একটা সময় আসলো যখন বুড়ির গাভিটি মারা গেল। নতুন গাভি কেনার মত সামর্থ্য ছিল না বুড়ির । তাই আমাদের আর দুধ দিতে পারতো না। তবুও আসতো আমাদের বাসায়। শেষের দিকে বুড়ির শরীর দেখতাম প্রায়ই খারাপ থাকতো। আমি ততদিনে স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে উঠেছি। পড়াশুনার ব্যস্ততার কারণে বুড়ির সাথে কম দেখা হত। মনে আছে একবার ইন্টার পরীক্ষার আগে বুড়ি বাসায় এসেছিল। আম্মা বলেছিল, বুড়ি গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দাও ভালোমত যাতে পরীক্ষা ভালো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তো আমি বাসা থেকেই দূরে চলে গেছিলাম। ছুটিতে আসলে কালেভদ্রে বুড়ির সাথে দেখা হত। একদিনের কথা মনে আছে। আমি আগের দিন রাতে এসেছি। পরেরদিন সকাল ১০-১১ টার মত বাজে সম্ববত, আমি তখনও ঘুমাচ্ছিলাম। আম্মু ডেকে তুললো আমাকে। এই ওঠ, ওই যে দুধালি বুড়ি তোকে দেখতে চলে এসেছে। বসে আছে সকাল থেকে। আমি উঠে দেখি বুড়ি কাশছে। খুব অসুস্থ্য। আমাকে দেখে করুণ সেই মুখে হাসি ফু্টে উঠলো। বললো, কিরে বা, ভাল আছিস? আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম বুড়ি্র অবস্থা দেখে। এই শরীর নিয়ে কিভাবে সে এতদূর হেঁটে এসেছে! আমার সেদিন কেবল মনে হচ্ছিল আমি কবে, কত তাড়াতাড়ি বড় হব। তাহলে বুড়িকে টাকা দেব যাতে সে ভাল চিকিৎসা নিতে পারে। সে সুযোগও আমি পাইনি, আমার ছেলেবেলার বুড়ির চিকিৎসাও নেয়া হয়নি।

……………………………………………………………………………………………………………………………

আরও অনেক ঘটনা ছিল। আরও অনেক স্মৃতি ছিল। খাপছাড়া ভাবে। সব এখন মনে পড়ছে না। বাবার বদলির কারণে আমরা পার্বতীপুর ছেড়ে চট্টগ্রাম চলে আসি ২০১১ সালের দিকে। তারপর আর দেখা হয়নি বুড়ির সাথে। বুড়ির কাছে কোন ফোন ছিলনা। তার সাথে কথা বলার সুযোগ ছিলনা। এর দু‘বছর পর আমি বিদেশ চলে আসি। আসার কিছুদিন পর জানতে পারি বুড়ি মারা গেছে। আম্মু আমাকে যেদিন বলে তারও নাকি বেশ কিছু মাস আগে মারা গেছে আমাদের দুধালি বুড়ি। আমি স্তব্ধ হয়ে গেলা্ম। আম্মুকে বারবার বলছিলাম আমাকে আগে বলোনি কেন। আম্মু নিজেই নাকি বুড়ি মারা যাবার অনেকদিন পর খবর পেয়েছিল। এরপর ২০১৬ সালে প্রথমবার যেবার দেশে যাই সেবার একটা কাজে পার্বতীপুর গিয়েছিলাম। ইচ্ছা ছিলো বুড়ির গ্রামের বাড়ি যাবার। সৎকারের পর তার ছাই সংরক্ষণ করা হলে সম্ভব হলে সেখান থেকে কিছু ছাই নিয়ে নিজের কাছে নিয়ে রাখব। হলো না। সময় স্বল্পতা (পড়ুন আত্মকেন্দ্রিকটা কিংবা স্বার্থপরতা)-র কারণে সেবারও যাওয়া হলোনা বুড়ির কাছে। এই পৃথিবীর সব বস্তুবাদিতা, সব স্বার্থপরতার কাছে হার মেনে গেলাম বরাবরের মত। আমি জানিনা এটা কি নিজেকে সান্ত্বনা দেবার জন্য ভাবা কিনা। তবে বুড়ির জন্য আমার মনে একটা জায়গা আছে, এবং সবসময় থাকবে। বুড়ির কোন ছবি আমার কাছে নেই। তবে ছোটবেলা্র কথা মনে হলে কিংবা বন্ধুদের কারও সাথে কেলোকার পুরনো দিনগুলো নিয়ে কথা উঠলে আরও অনেক স্মৃতির সাথে বুড়ির সেই পান খাওয়া দাঁতের হাসি ভেসে উঠে মনে্র মাঝে। সে ছবিটি আজও হারায়নি, মলিনও হয়নি।

বুড়ি ভাল থাকুক, যেখানেই থাকুক। পরের জনমের রীতি মেনে আর যদি কখনও সে ফিরে আসে, তবে সে যেন হয় পৃ্থিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ভোর ৬:৩৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×