শাইখ আবদুল গফফার (হাঃফি)
.
ফজরের ছালাতের ওয়াক্ত
লেখক লিখেছেন, ছুবহে ছাদিকের পর
হতে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হয়।
সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত থাকে।
সমস্যাজনিত কারণে সূর্যোদয়ের
পূর্ব পর্যন্ত আদায় করা যায়। এ
পর্যন্ত লিখে তিনি ৪৫৫ নং টীকা
যুক্ত করেছেন। টীকায় তিনি তাঁর
উপরিউক্ত কথার বরাত দিয়েছেন
বুখারী শরীফের ৫৫৬ ও ৫৭৯ নং
হাদীসের।
.
পর্যালোচনা: বরাত অনুযায়ী নম্বর
দুইটিতে ঐরূপ কোনো হাদীস আমি
পাইনি। নম্বর দুইটিতে যে হাদীসটি
আছে তা এই-
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ
ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺇِﺫَﺍ ﺃَﺩْﺭَﻙَ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ
ﺳَﺠْﺪَﺓً ﻣِﻦْ ﺻَﻼَﺓِ ﺍﻟْﻌَﺼْﺮِ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﺗَﻐْﺮُﺏَ
ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ ﻓَﻠْﻴُﺘِﻢَّ ﺻَﻼَﺗَﻪُ ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺃَﺩْﺭَﻙَ
ﺳَﺠْﺪَﺓً ﻣِﻦْ ﺻَﻼَﺓِ ﺍﻟﺼُّﺒْﺢِ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﺗَﻄْﻠُﻊَ
ﺍﻟﺸَّﻤْﺲُ ﻓَﻠْﻴُﺘِﻢَّ ﺻَﻼَﺗَﻪُ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের কেউ
যখন সূর্যাস্তের পূর্বে আসরের এক
রাকআত পায় তখন সে যেন তার
সালাত পূর্ণ করে এবং যখন
সূর্যোদয়ের পূর্বে সালাতে ফজরের
এক রাকআত পায় সে যেন তার
সালাত পূর্ণ করে ।’
লেখক হয়তো বলবেন, ‘আমি এই
হাদীসের বরাত দিয়েছি আমার
শেষোক্ত বাক্য ‘‘সমস্যাজনিত
কারণে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত
আদায় করা যায়’’-এর সমর্থনে’।
কিন্তু লেখকের বিরূদ্ধে তখন প্রশ্ন
দাঁড়াবে যে, এই হাদীসে তা বলা
হয়নি। এই হাদীসে যা বলা হয়েছে
তার মর্মার্থ হল, ফজরের এক
রাকআত পড়ার পর যদি সূর্য উদিত
হয়ে যায় তবে সূর্যোদয়ের কারণে
সে যেন সালাত পরিত্যাগ না করে,
বরং সে যেন তার সালাত পূর্ণ করে
নেয়। অর্থাৎ সূর্যোদয়ের পূর্বে
এক রাকআত আদায় করতে পারলে
তার দ্বিতীয় রাকআতটি সূর্যোদয়ের
মুহূর্তে আদায়কৃত হলেও তার সালাত
হয়ে যাবে । সূর্যোদয়ের পূর্ব
পর্যন্ত নয় বরং সূর্যোদয়ের
মুহূর্তে আদায় করার কথা বলা হচ্ছে।
উল্লেখ্য: সূর্যোদয়ের মুহূর্তে
সালাত আদায় অন্যান্য হাদীসের
বক্তব্য মতে হারাম। সেইসব
হাদীসের সঙ্গে এই হাদীসের
বক্তব্য সাংঘর্ষিক হওয়ায় এই
হাদীসের প্রায়োগিক ক্ষেত্র কী তা
নির্ণয়ে ফকীহ ও মুহাদ্দিসগণের
মাঝে বিস্তর মতভেদ রয়েছে। সেটি
স্বতন্ত্র এক আলোচ্য বিষয়।
সমস্যাজনিত কারণে সূর্যোদয়ের
পূর্ব পর্যন্ত আদায় করা যায়।
লেখকের এই কথাটি এই হাদীসে তো
নয়ই কোনো হাদীসেই নেই। দেখুন,
লেখক প্রথমে বলেছেন যে, ছুবহে
ছাদিকের পর হতে ফজরের ওয়াক্ত
শুরু হয়। সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত
থাকে। এটি শুধু লেখকের বক্তব্য নয়,
ওয়াক্ত সংক্রান্ত সব হাদীসের
বক্তব্যও তাই। সূর্যোদয়ের পূর্ব
পর্যন্ত যখন ফজরের ওয়াক্ত থাকে
তখন সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত
ফজর আদায় করা সর্বাবস্থায় বৈধ
হবে। কোন সমস্যা বা ওজর থাকুক
বা না থাকুক। সমস্যাজনিত কারণে
সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত আদায়
করা যায়’ - লেখকের এই কথা দ্বারা
বুঝা যায় যে, সমস্যা না থাকলে
সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত আদায়
করা যাবে না । অথচ একটু পূর্বে তিনি
বলে আসলেন যে, ফজরের ওয়াক্ত
সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত থাকে।
লেখকের বক্তব্য এখানে
স্ববিরোধী হয়ে যাচ্ছে। আসলে
‘সমস্যাজনিত কারণে’ শর্তটি লেখক
নিজের পক্ষ হতে যুক্ত করে
দিয়েছেন। সহীহ হাদীস জাল হয়ে
যায় এভাবেই। আমি ভাবছি, লেখক
জাল হাদীসের কবল হতে সালাতকে
মুক্ত করার অভিযানে নেমে নিজেই
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর সালাতকে জাল
হাদীসের কবলে নিক্ষেপ করলেন না
তো? নিজেই নিজের জালিয়াতির
জালে আটকা পড়ে গেলেন না তো?