somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

wrong অথবা রঙ-এর গল্প

২৬ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের গ্রামের ছেলে হাসিবুর রহমান।নিতান্তই আলাভোলা,সাদা সিধে,হ্যাংলা পাতলা ধরণের একটা মানুষ।আমাদের অঘোষিত বড়ভাই।তাকে দেখলে কখনই মনে হবে না যে,এই রকম একজন কে সবাই ভাই ডাকতে পারে।অবশ্য ভাই ডাকার পেছনে একটা গল্পও আছে।ছোটবেলায় সে একবার পাশের গ্রামের হাসি নামের এক মেয়ে কে প্রেম পত্র দিয়েছিল।মেয়ে সেই চিঠি নিয়ে পরের দিন উনার সামনে এসে শুধু বলেছে, “আপনাকে আমি বড় ভাইয়ের মত দেখি।আর আপনি? ছিঃ।” এর পর থেকে হাসিবুর এর নাম হয়ে গেল "হাসি বু’র ভাই" ওরফে হাসিবুর ভাই।

হাসিবুর ভাই আবার হিন্দি গানের ব্যাপক অনুরাগী।নতুন যেকোন হিন্দি সিনেমা’র গান তাঁর অবশ্যই জানা থাকবে।গত শীতে গ্রামে গিয়ে তাঁর সাথে যখন দেখা,তখন তাঁর কাছেএকটা গান শুনেছিলাম।প্রেমিক তার প্রেমিকা কে সুরে সুরে যা বলছে,তার বাংলা অনুবাদ করলে কিছুটা এরকম দাঁড়ায়, “এতদিন বহু ভাল কথা বলছি,এখন থেকে শুধু খারাপ কথা বলব।খারাপ কথা... খারাপ কথা... খারাপ কথা...।”গান শেষ হলে হাসিবুর ভাই জিজ্ঞেস করেছিল, “ক্যামন?” জবাবে শুধু বলেছিলাম, “অভাগিনীর কপাল পুড়িলো...”

কার কাছ থেকে যেন শুনেছিলাম,হাসিবুর ভাই মাস চারেক হলো ঢাকায় থাকেন।দেখা হয়নি কখনও।কোন এক গার্মেন্টস-এ নাকি চাকরিও পেয়েছেন।কাল তাঁর সাথে দেখা হয়েই গেল।হাসিখুশি হাসিবুল ভাইয়ের মুখ শুকিয়ে কেমন চিমসে হয়ে গিয়েছে।মনটাই খারাপ হয়ে গেল।কারণ জিজ্ঞেস করলাম,উনি মন খারাপের বিশালতা দেখাতেই কিনা বিরাট বড় করে কয়েকটা দীর্ধশ্বাস ফেললেন।এরপরে যা বললেন তা হল,
-কি আর বলি ভাই,ব্যপক পেরেশানিতে আছি।
-ক্যান? কি হইছে আবার?
-ঢাকায় আসার পর এক মেয়ে কে খুব ভাল লাগছে।
-বাহ্‌,ভাল তো। তা মেয়ের নাম কি?কোথায় থাকে? জানেন কিছু?
-হু... জানি।ব্যাপক বড়লোকের মেয়ে।
“আরে ধুর...।তাতে কি হইছে!জীবনে এত সিনেমা টিনেমা দেখে এই শিখলেন মিয়াঁ!” আরও নানান রকম কথা বলে তাকে উৎসাহ দিতে থাকি।উনিও চুপচাপ আমার কথা শুনতে লাগলেন।দীর্ঘ নিরবতার পর হঠাৎ বললেন, “ভাবছিলাম তাবিজ করবো।”
-কি করবেন?
-তাবিজ।এক মওলানা’র কাছে গিয়েছিলাম।উনি মেয়ে’র একটা চুল যোগাড় করতে বলেছিলেন।

এবার আমাকে নড়েচড়ে বসতেই হল।বুঝতেই পারছি,নতুন কোন কিছু একটা ঘটে গিয়েছে।আগ্রহ নিয়ে বললাম, “তারপর?” উনি ফুস্‌ করে সিগারেট ধরিয়ে বললেন,
-মওলানা’র কথা মত মেয়ের মাথার চুল যোগাড় করতে লেগে গেলাম।সে কি আর এত্ত সোজা! কোথায় পাই,কোথায় যাই,কি করব কিছুই মাথায় আসছিল না।টানা দুই সপ্তাহ মেয়ের পেছন পেছন ঘুরি।সে ভার্সিটি গেলে আমিও যাই,মার্কেটে গেলে সেখানেও যাই।কিন্তু কোনভাবেই কাছে যাওয়ার সাহস পাই না।একদিন ভাগ্যক্রমে পেয়ে গেলাম।মেয়ে গিয়েছে বসুন্ধরা সিটি তে।আমি তো পেছনে লেগেই আছি।মেয়ে চলন্ত সিঁড়িতে চড়ে ওপরে ঊঠছে,আমিও উঠছি।ভাবলাম যা থাকে কপালে।ডান হাতে ব্লেড নিয়ে মেয়ের একেবারে কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ালাম।সুযোগ বুঝে টুকুস্‌ করে একটা চুল কেটেও ফেললাম।মেয়ে তো দুরের কথা,আমার পাশের জনও টের পায় নি।”

আমি আক্ষরিক অর্থেই দম বন্ধ করে গল্প শুনছিলাম।এরকম গল্পের শুরুতেই সম্ভবত লেখা থাকে যে, “শিশু ও হার্টের রোগীদের না পড়ার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।” যাই হোক,আমি আরও উৎসাহ নিয়ে বললাম, “বলেন কি! আয় হায়... তারপর?”
-তারপর আর কি!চুল নিয়ে গেলাম মওলানা’র কাছে।উনার হাতে চুল দিতেই উনি চোখ বড়বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন “নাউযুবিল্লাহ্‌”।আমি বললাম, “কি হইছে হুজুর?”।উনি বলেন যে, “তুই একটা যুবক পোলা হইয়া এক বুড়ি মাইয়ারে বান মারতে চাস্‌? ছি ছি...।” হুজুরের কথায় আমিও অবাক,ব্যটা কি কয় এইসব!আমি তাকে যতই বুঝাই যে,এই মেয়ে বুড়ি না,কম বয়সী,সে ততই আমাকে নানান কথায় অপমান করে।শেষে বিরক্ত হয়ে বললাম, “এটা ছেমড়ি না বুড়ি আপনে ক্যামনে বুঝলেন?” “এই দ্যাখ মেয়ের চুল ধলা”-হুজুর বলে ওঠে”।
গল্পের এই পর্যায়ে আমারও আক্কেল গুড়ুম।সামলাতে না পেরে বলেই ফেললাম,
-মেয়ে’র মাথার চুল পেকে গেছে নাকি! আপনেও খুঁজে খুঁজে সেই পাকা চুলটাই কাটতে গেলেন?
-আরে নাহ্‌,চুল পাকা না।ওই যে, মেয়েরা চুলে রঙ করে না! সেই রঙ করে চুল সাদা বানিয়েছে।
-ও... আচ্ছা... হতেই পারে,আধুনিক মেয়ে তো!
-হুম।
-তারপর?
-তারপর আর কি! হুজুর কোনমতেই ওই চুল দিয়ে তাবিজ করবে না।তার মতে,কেমিক্যাল লাগানো চুল দিয়ে তাবিজ হয় না।
-তাহলে এখন কি করবেন?
-এসব বাদ।
-বাদ!?
-হুম।হুজুর বলেছে কেমিক্যাল ছাড়া,মানে কাল চুল নিয়ে যেতে হবে।আর পারব না ভাই...

হাসিবুর ভাইকে দেখতে ফাঁসির আসামীর মতো লাগছে।এই প্রথম উনাকে দেখে আমার খুব মায়া হল।বললাম,
-মন খারাপ করেন না ভাই।আপনার জন্য বনলতা সেন অপেক্ষা করতিছে।একদিন ঠিকই সামনে এসে দেখা দিবে।
-বনলতা সেন আবার কে?
-আছে কেউ একজন।
-নাহ্‌, হিন্দু মেয়ে বিয়ে করা যাবে না।আব্বা বাড়ি থেকে বের করে দিবে।থাকো তুমি,আজ যাই।

বলে দাঁড়িয়ে কোলাকুলি করলেন।তারপর হনহন করে চলে গেলেন।আমি বসে বসে উনার চলে যাওয়া দেখি আর টঙের দোকানদার মামা-কে বলি, “মামা,ভালবাসা কারে কয়!সে কি শুধুই যাতনা ময়!”
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:৩২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×