somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিরু আর সেই পাগল ছেলেটা.......আর.বৈশাখে শুরু হওয়া একটি গল্প

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১১ সকাল ৯:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিরু আপন মনে কবিতাটা আউড়ে যাচ্ছে।ভার্সিটি লাইফের প্রথম পহেলা বৈশাখ।এবং প্রথম পারফরমেন্স।আগের রাতে ঘুম হয়নি ঠিকমত।আবৃত্তি আর গান,দুটোই করতে হবে।এক সিনিয়র ভাইয়া পরামর্শ দিয়েছেন-স্যালাইন খেতে তাহলে গলা শুকাবেনা, তাই হাতে একটা স্যালাইনভর্তি বোতল।আর মনে মনে একসাথে আউড়ে যাওয়া-
"আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে
মোর মুখ হাসে মোর চোখ হাসে
মোর টগবগিয়ে খুন হাসে"

আগের দিন কাছের কিছু মানুষকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে,তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটাকে বলেছে আসতে,একে তো পহেলা বৈশাখ,তার উপর ভার্সিটি লাইফের প্রথম প্রোগ্রাম!
তবে বান্ধবীটার উপর মন বেশ খারাপ নিরুর।আসার সময় রাস্তা দিয়ে আসার সময় শহীদ মিনারের সামনে তাঁর বেস্টফ্রেন্ডটাকে দেখল এক বন্ধুর সাথে,হুম They are in relationship!!
কেন জানি নিজের বান্ধবীকে নিয়েও পসেসিভনেস কাজ করছে।এতবার ফোন দিল-এখনও আসছেনা,প্রেমিক হয়ে গেলে কাছের বান্ধবীটাও কি দূরের হয়ে যায়???
নাহলে এখনও আসছেনা কেন???
তার পরও নিরু আরেকবার চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে কবিতাটার উপর!গানের ও রিহার্সাল করা লাগবে!উফ!ভয় হচ্ছে খুব।
হঠাৎ পিছন থেকে ডাক!
হুম!এসেছে তাঁর প্রাণপ্রিয় বান্ধবী।
একটু হালকা অভিমানে রাগ রাগ চোখে তাকাল শ্যামার দিকে।
একি?
শ্যামাটা একা আসেনি,সাথে আরও কয়েকজন।আর সাথে ওর ভালবাসার মানুষটাও।
মনে মনে ভাবতে লাগল নিরু-ধুর!এখনও শ্যামাকে ঠিক মত পাওয়া যাবেনা।সাথের ঐ লেজটাকে বিদায় করতে পারলেই ভাল হত!কিন্তু এটা কি আর বলা যায়!
যাইহোক!আসার পর থেকেই তারা যাওয়ার জন্য পাগল করে ফেলছে শ্যামাকে।খুব রাগ উঠতে থাকে নিরুর।
তার মাঝখানথেকে একটা লম্বা ছেলে হঠাৎ করে বলে উঠল-
-তুমি গান গাবা??
--হুম,আবৃত্তি ও করব।থাকো তোমরা কিছুক্ষণ।
-শিউর ,তুমি গান গাবা?কোথায় গাবা?
--কেন?এই যে খোলা এই জায়গাটায়।
-যাক বাবা,ভাগ্যিস,কাঁচওয়ালা কোথাও করবানা গান,নাহলে তো ভেঙে যায়ে কি একটা বিতিকিচ্ছিরি অবস্হা হত,তাইনা???
(চোখে মুখে কি রকম একটা শয়তানি ভাব)
দপ করে রাগ উঠে গেল নিরুর।একে তো চিন্তিত,তার উপর এই চেনা নাই জানা নাই একটা ছেলে হঠাৎ করে এভাবে পচানো শুরু করল কি জন্য?
একটা মুখ ঝামটা দিয়ে শ্যামার দিকে ফিরল নিরু-এরকম ই ছিল প্রথম দিনটা।
তারপর অনেক দিন কেটে গেছে।শ্যামাকে নাকি জিজ্ঞেস করে ঐ ছেলে-নিরু রেগে আছে নাকি এখনও ওর উপর?
নিরুর তখন মনেও নাই এসব।
আরেকদিন বন্ধুদের আড্ডাতে আবার দেখা হল।
আস্তে আস্তে প্রায়ই দেখা হয়,কথা ও হয়।
একদিন হঠাৎ পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে দেখল,ঐ ছেলেটা বসে আছে।স্বভাবসুলভ ভাবেই কথা বলল নিরু।শ্যামার সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা বলল ছেলেটা।নিরু আগ-পিছ ভেবে রাজী হল যাওয়ার।বাসায় ফেরার আগে দেখা করে আসবে শ্যামার সাথে,পরীক্ষার জন্য অনেক দিন দেখা হয়না।
এই ছিল প্রথম রিকশা চড়ার গল্প।
তারপর প্রায় প্রায়ই ক্লাসের বিরতিতে দেখা হত ছেলেটার সাথে।,চানখার পুলে মামুনে,নীরবে কিংবা কলাভবনের খিচুড়ি খেতে প্রায়ই যাওয়া
হত একসাথে।আর চারুকলার ফ্রাইড চিকেন!
খাওয়া পার্টনার হতেই বের হওয়া হত একসাথে।নিরু তখনও জানত না,ছেলেটা তার ১টার ক্লাস শেষ হওয়ার পরও মেয়েটার জন্য বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অপেক্ষা করত!
একদিন হঠাৎ আবার ছেলেটা তার স্বভাবসুলভভাবেই নিরুকে খেপানো শুরু করল,নিরু এখন বুঝে গিয়েছে রেগে গিয়ে লাভ নাই।সে এখন উল্টা বলা শুরু করল-হুম সেটাই,আমিতো খারাপ ই।বল বল আরও বল,বলবাই তো!!
ছেলেটা ফোন কেটে দিল
বেশ কিছুক্ষণপর আবার ফোন করে বলল-
-তুমি কি আসলেই কিছু বুঝো না???

নিরু চুপ হয়ে গেল,মাথায় আসল না কিছু।ভাবতে লাগল সারাটা সময় ধরে।
নিরু আসলেই কিছু বুঝেনা-তা না।কিন্তু বুঝাটাকে পাত্তা দিত না,উড়িয়ে দিত ওর মনের ভুল ভেবে।কারন এরকম লম্বা বড় বড় ভাবের ছেলেটার সাথে ওর মত পিচ্চি একটা মেয়ে??
আর কখনওতো ভাবেও নি কিছু হতে পারে,যতবার আসতে চাচ্ছিল মাথায়,ঝেড়ে উড়িয়ে দিয়েছে মাথা থেকে।নাহ,ছেলের কি মাথা খারাপ ওকে নিয়ে কিছু ভাববে???
কিন্তু ছেলেটার বোধহয় আসলেই মাথা খারাপ!!!
এরপর দেখা হল,নিরু বা ছেলেটা কেউই এটা নিয়ে কিছু বলেনা।
একদিন ক্লাস শেষে ক্ষুধার্ত নিরু ক্যান্টিনে কিছু খুঁজে পায়নি,ছেলেটা ফোন করে বলে-সে আসছে।
দাড়িয়ে আছে রাস্তাটার মোড়ে।একসাথে রিকশা নিয়ে চলল,খিচুড়ি খেতে কলাভবনে।
কিন্তু রিকসা ফুলার রোড দিয়ে যাবার কি দরকার?
নিরু-একা একা তার স্বভাববশত বকবক করেই যাচ্ছিল।জানো আজ না এটা হয়েছে,ঐ দেখো দেখো,ঐ বাসার বারান্দায় একটা পুতুল!
--কই?তুমি তো এখানে?
(খুবই আস্তে করে বলল ছেলেটা)
-কি??(শুনেও যেন শুনেনি নিরু এমন ভাবে জিজ্ঞেস করল)
--উহু,কিছুনা,
আবার নিরু বকবক করতে থাকে,নিরুর সাদা সুতির সেলোয়ার কামিজ আর মিষ্টি গোলাপি ওড়নাটা উড়ে যাচ্ছিল,বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগের ঠান্ডা বাতাসটায়।
হঠাৎ কানের কাছে একটা মুখ এসে আলতো করে বলল যেন
"আমি তোমাকে ভালবাসি"
নিরু নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলনা যেন!কি বলে ছেলেটা??সাথেসাথে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল-
-বুঝতে পারছ কি বলছ তুমি?
--না বুঝে বলার মত ছেলে আমি না।
নিরু চুপ করে রইল
আর চোখ দিয়ে টপটপ করে বড় বড় ফোটায় পানি ঝরছে গাল বেয়ে
বৃষ্টিটাও শুরু হয়েছে
ছেলেটা হাতে তিনটা গোলাপ নিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে
সাদা ,লাল আর হলুদ গোলাপটার চাইতেও মেয়েটাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে যেন!
ভালবাসার বৃষ্টিস্নাত হয়ে আরো আরেকবার অনুভব করল যেন ছেলেটা
-হুম!!সে নিরুকে ভালবাসে!এটা তো তারই নিরুপমা!!!........................।
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১১:০৪
৩৭টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×