রায়ানকে নিয়ে কিছু কথা বলার ছিল। হুটহাট কেন রায়ানকে নিয়ে লিখতে ইচ্ছে হল সেটা শেয়ার করতে ইচ্ছে হচ্ছে। এটা নিয়ে লেখার ইচ্ছাটা বেশ অনেক দিন ধরে কাজ করছিল। ইচ্ছে ছিল জন্মদিনে এটা পোস্ট দিব, হয়নি।বরাবরের মত। আমার যখন খুব ইচ্ছা হয় সেটা কেন জানি আর হয়ে উঠেনা শেষমেষ। এটাও হয় হয় করে হল না। সাহস হচ্ছিল না। মাঝে কত পোস্ট ও দেয়া হয়ে গেল। রায়ান- আর হয়না।
এবার স্মৃতিচারণ করি কিছু ঘটনার। আমার ইদানিং একটা অভ্যাস হয়েছে।লাইব্রেরিতে যেয়ে বসে থাকতে ভাল লাগে। পড়ি আর না পড়ি। লাইব্রেরিতে এখানে মানুষজনের সক্রিয় অংশগ্রহণ ভাল লাগে। এখানে স্কুল থেকে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে মা বাবা চলে আসে,লাইব্রেরিতে বসে হোমওয়ার্ক করে।আবার বাচ্চাদের রুমে সব বসে ইচ্ছামত আঁকাআঁকি।
আমি অবশ্য বই নিয়ে পাতা উল্টাই, আর নেটে বসে ব্লগে লেখা পড়ি, গুতাগুতি করি। সেদিন একটা বই নিয়ে পড়ছিলাম। মিচ এলবমের একটা বই। পাশের টেবিলে কালো মতন একটা মেয়ে দুই বেনী করা বসে বসে হোমওয়ার্ক করছে। আর তার চেয়ে আরেকটু লম্বা তার ভাই কানে হেডফোন নিয়ে মায়ের পাশে বসে আছে। ছেলেটা অংক করছিল-২৫+২৫....করতে পারছেনা। বারবার গুণতে বসেছে। আমার খুব হাসি পাচ্ছিল প্রথমে।মনে হচ্ছিল আমেরিকানগুলোর বাইরেই যা, অংকে এদের অবস্হা বেশ ভালই খারাপ। কাজের জায়গায়ও দেখি। বাসায় এসে এটা বললাম আম্মুকে।
বেশ অনেকদিন পর, আমার বই ফেরত দেয়া হয়নাই সময়মত বলে ফাইন হল।পড়ে পড়ে টাকা শোধ করব ঠিক হল।আধা ঘন্টায় ১ ডলার মাফ।
আবারও দেখা হল ঐ পরিবারটার সাথে। এবার আমার টেবিলেই। মা-টা ছেলেটাকে হোমওয়ার্ক করাতে চেষ্টা করছে। ছেলেটা খুব জোরে জোরে কথা বলে।মা-টা একটু পরপর ছেলেকে বলে-David, don't shout. Everyone is reading. it's a library.
ছেলেটা হেডফোনটা কান থেকে নামায়ে হোমওয়ার্ক করতে চেষ্টা করে, মার ভীষণ রাগ হয়। ছেলে কিছু পারেনা। আবারও করায়, আবারও বুঝায়।
আর ছেলেটা কিছুক্ষণ পরপর মাকে বলে- mom i am doing good , right? i am improving, you see! don't be sad, don't be mad at me...mommy!!
মা ছেলের দিকে স্নেহের দৃষ্টিতে তাকায়ে আবার শাসনের সুরে বলে-তোমাকে করতে হবে ডেভিড।ডোন্ট মেইক মি ফিল ব্যাড!!
আর ঐদিকে কোণায় পাশের একটা টেবিলে দুইটা মেয়ে হাসতে লাগল ব্যাপারটা নিয়ে। ওরা খুব মজা পাচ্ছিল ডেভিডের এসব কাজে।
হঠাৎ করে কি জানি হল মা-টার।এতক্ষণ ধরে যার ধৈর্য দেখে অবাক হচ্ছিলাম-হুট করে সেই মা খেপে গেল। তারপর ডেভিড কে বলছিল-তুমি কি বুঝোনা তোমাকে নিয়ে কিছু স্টুপিড মেয়ে হাসাহাসি করে! তাড়াতাড়ি করো, আমরা এখান থেকে যাব।
মেয়েগুলোও কেমন-সাথে সাথে বলে উঠল-আমরা স্টুপিড না। তোমার ছেলে স্টুপিড।
মা-টা চেতে গেল, একপর্যায়ে রাগে দু:খে কেঁদে দিল, কিন্তু ডেভিড বেচারা অসহায়ের মত তাকানো ছাড়া আর কিছুই বোধহয় বুঝতে পারেনি। মা-টা ছেলেকে হাতে ধরে লাইব্রেরিয়ানের কাছে বলে চলে গেল।যাওয়ার সময় আমাকে বলে গেল- "তুমি এখন পড়তে পারবে, এতক্ষণ অনেক জালিয়েছি আমরা, আসলে আমার ছেলেটা অটিস্টিক তো।"
আমি বললাম- "কোন সমস্যা নাই।আমার কোন ডিস্টার্ব হয় নাই।ভাল থেকো।"
ঐদিনের ঐ মায়ের কান্নাটা আমার খুব খারাপ লেগেছিল। প্রথমদিন আমিও তো কেমন ভুল বুঝেছিলাম।কেমন যেন কষ্ট আর অনুতাপ মেশানো অনুভূতি কাজ করছিল।
আরেকদিন বাসে করে ফিরছি কাজ থেকে।আমার পিছনে বসা একটা পাণ্জাবি ফ্যামিলি-শিখ।বাচ্চাটা ভীষণ কাঁদছে, চিল্লাচ্ছে এবং তারপর খালি ই প্রশ্ন করে-একই প্রশ্ন।বাবাটা উত্তর দিচ্ছিল।কিন্তু শেষে মা টা কেমন কুকড়ে যাচ্ছিল যেন।লজ্জা পাচ্ছিল যেন ছেলের এমন আচরণে। পরে একসময় ধমকই দিল। ছেলে শুরু করল চিৎকার।কেমন যেন একটা অবস্হা তখন।
এই দুইটা ঘটনায় আমার খুব মনে হল আমি এটা নিয়ে কিছু লিখতে চাই।
কিন্তু সাহসে কুলাচ্ছিলনা। এতদিন করি করি করেও যেটা লিখতেই বসা হয়নাই, সেটা ঐদিনের এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় হয়ে গেল।
কেন জানি ঐদিনের মন খারাপের পর, মনে হল আজই লিখে ফেলা দরকার।যদি সত্যি ব্লগ থেকে চলে যাওয়া লাগে, অন্তত তার আগে এটা লিখতে চাই।এটা নিজের কাছে করা একটা প্রমিজ ছিল।সেদিনের ঐ ব্যাপারটায় সবাই যেভাবে আমাকে সাপোর্ট দিয়েছিলেন, বিশ্বাস করবেন কীনা জানিনা-আমার শুধু মনে হচ্ছিল আমার এই ৬মাসের ব্লগ জীবন সার্থক, এত অল্পদিনে যারা আমাকে এতটা বিশ্বাস দেখিয়েছেন, এভাবে পাশে দাড়িয়েছেন-আসলেই কিছু বলার নাই আমার।শুধু বলব- আগে মন খারাপে কেঁদেছিলাম।এরপরেও কেঁদেছি কিন্তু সেটা কৃতজ্ঞতার, আনন্দের! এত অল্পদিনে এতটা নির্ভরতা এত ভালবাসা স্নেহের যোগ্য আমি কীনা আমি জানিনা।শুধু জানি আমি ব্লগটাকে অনেক ভালবাসি। সব কিছুর পরেও। আর ধন্যবাদ ঐ লেখক কে, যার এই কাজের জন্য আমার এতদিনের একটা ইচ্ছাটা আমি লিখতে পেরেছি।তেমন কিছু হয়নি, কিন্তু লিখে আমি নিজের কাছে শান্তি পেয়েছি।না হলে হয়ত এভাবে আস্তে আস্তে আর লিখতেই বসা হতোনা।
অন্য আরেকটা কথা, ফার্স্ট ইয়ারে একটা প্রজেক্ট করতে গিয়ে কিছু শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষজনকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল।আমার নিজের একটা কাজিনও শারীরিক প্রতিবন্ধী।তখন একটা কথা খুব বেশি ভাল লেগেছিল-
THEY ARE NOT PHYSICALLY DISABLED,THEY ARE PHYSICALLY CHALLANGED!
কখনও এমন একদিন আসবে হয়ত, যখন এসব সাধারণ সমাজের অসাধারণ কিছু মানুষদের কে নিয়ে আমাদের ভাবনা গুলো প্রসারিত হবে।সম্মান বাড়বে একে অন্যের প্রতি...মানুষ গুলো আসলেই যেন মানুষ হয়।মানুষ বলতে যেন পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণী না হয়ে উঠে.....
YOU MAY SAY I'M A DREAMER
BUT I'M NOT THE ONLY ONE
I HOPE SOMEDAY YOU JOIN US
AND THE WORLD WILL LIVE AS ONE
জানি সবাই শুনেছেন তবুও জন লেননের গানটা শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারছিনা-ইমাজিন
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১১ সকাল ৯:২৯