somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেষ বেদনা-একটি প্রেম কাহিনীর ইতিহাস- রিমিক্সি।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমেই বলি এই গল্পটা আমি এভাবে রূপ দিয়েছি কারণ এটা আমি প্রথম আলো ব্লগে আপলোড করব তাই। অপমান গল্পের মিক্স এটা। যারা অপমান পড়েছে তারা পড়তে পারে নাও পারে।


মনটা ভালো লাগছিল না তাই নিউইয়োর্ক যাচ্ছি। আর ডাক্টারও দেখাবো চেকআপের জন্য। আজ প্রায় পনেরো বছর হয়ে গেছে। আর মাত্র কয়েকটা দিন আমি এই পৃথিবীতে আছি। আমি আজ সফল। মনে হয় কখনোই আর তার সাথে আমার দেখা হবেনা । ওর থেকে আজ আমি ওনেক দূরে। ও যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক। আমি এখন আমস্টেরর্ডাম ইয়ারপোর্টে। আমার পাশে যে বসে আছে তাকে খুব চেনা চেনা লাগছে। তার আচরণ গুলো দেখে মনে হচ্ছে সে সুস্থ । একলা একলা তার ভালো লাগছেনা। ওর আচরণ গুলো অনেকক্ষাণী অভ্র এর মত। ওর চেহারাটা ভালো করে দেখার চেষ্টা করলাম। আরে ওতো অভ্রই মনে হচ্ছে। ওর এই বিশেষভাবে কাগজ ছেড়া আমি ভুলবনা। আগেও যখন ও আমার সাথে রাগ করত এভাবেই কাগজ ছিড়ত। কি আশ্চর্য এমনটি আমার সাথেই হল। আসলেই কি ও অভ্র। হয়ে থাকলে আল্লাহ তোমাকে হাজার শুকরিয়া। জানি আমাকে ও মনে রাখবেনা। ওমনে হয় বিয়েও করেছে। ও আমার মত নাকি। দেখি ও আমাকে চিনতে পারে কিনা। আমি এখন অনেক আনন্দিত। ওর সাথে কথা বলে দেখি। আমি বলি, "আমি কি আপনার সাখে কথা বলতে পারি।"

ও কি জানি ভেবে অনেক্ষন পরে উত্তর দিল। আমি আমার পরিচয় দিলাম। কি জানি ভেবে আমি আমার নাম মিথ্যা বল্লাম বুঝলাম না। ও ওর নাম বল্ল। আমি এখন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ। কারণ শেষ বারের জন্য হলেও আমি আমার প্রিয়ার সাথে দেখা করতে পেরেছি। আমি আমার আনন্দের জোয়ার আটকিয়ে রাখতে পারছিনা। নাচতে ইচ্ছা করছে। ও অনেক কথা বলছে আমার কানে কিছুই যাচ্ছেনা। আমি এমন ভাব করছি যেন আমি ওর সব কথাই শুনছি। আমি বাহিরে প্রকাশ করছি না যে আমি অনেক খুশি। কিন্তু আমি হঠাৎ থমকে গেলাম । ও বলে, ও নাকি ওর ছেলের বাড়ি যাচ্ছে অনেকদিন তার নাতিপুতনিদের সাথে নাকি দেখা করেনি। এ কথা শুনে আমার মন কেমন জানি শুন্য শুন্য হয়ে গেল। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, "তুমি বিবাহিত"
ও হতবম্ভিত হয়ে গেল। আমি বলি,
"তুমি আমাকে চিনলে না। আমি চিনেছি, সবসময় চিনব।"
"বুঝলামনা"- ও বলে।

ও কি যে বলছে বেশির ভাগই আমি বুঝতে পারছিনা। বুঝলাম ওর মনে আসছেনা আমার কথা তখন আমি ওকে মনে করানোর জন্য বলি,
"মনে আছে চৌদ্দ বছর আগে CATS EYE দোকানে তুমি আমাকে চিনেও না চিনার ভান করেছিলে কারণ তোমার সাথে তোমার আরেক বন্ধু ছিল। তুমি T-shirt কিনছিলে। তুমি আমাকে চিনতে অস্বিকার করছিলে তোমার বন্ধুর সামনে। তুমি সেই মেয়েটিকে তখন ভালোবাসতে, সেই মেয়েটাকে চিনতে চাচ্ছিলে না।"
ও বলে, "আমি প্রেম করেছি অনেক কিন্তু ভালোবেসেছি একজনকে আর তাকেই জীবনসঙ্গী করেছি তবে দু:খের বিষয় সে এখন আমার সাথে নেই।"

আমি আশ্চর্য, ও কি বলছে কি! কত প্রেম করেছে। আমি এমন একটি লোকের উপর বিশ্বাস করে তার প্রতিক্ষায় সারা জীবন কাটালাম। আমি কখনো ভাবিনি এই লোকটি এমন করবে। তাহলে কি মিথ্যা ছিল তার সব কথা। আমি পাগল হলে পাগল তারপরেও আমি বলি আমি তাকে ভালোবাসি। তখনকার অভ্রকে ভালোবাসি, এ লোকটি সে নয়। তারপরেও আমার কষ্ট লাগছে ওর বৌ মারা গেছে। হে মাবুদ কেন ওর সাথে এমন হল তুমি ওই কষ্টটুকু আমাকে দিয়ে দিতে, আমাকে নিয়ে যেতে। আমি বলি,

"আমি দু:খিত, তোমার মনে নেই। তুমি আমাকে বলেছিলে তুমি আমাকে ছাড়া আর কেওকে ভালোবাসবেনা। তুমি আমাকে না পেলে আর কেওকে বিয়ে করবেনা। আমি যেমনই হই দেখতে তোমার আপত্তি নেই...."
ও বলে, wait wait mobile এ প্রমেটা শুরু হয়। কিন্তু তার নাম বৈ দিয়ে শুরু হয়না।"
"ইলোরা আমার নাম।"
"ও আচ্ছা তুমি সেই- আমি দু:খিত, তোমাকে অনেক দূ:খ দিয়েছি। তুমি CATS EYE এর কথা বল্লে কেন এর পরেও তো এক restaurant এ তোমার সাথে দেখা হয়।"- ও বলে।

তাহলে মনে আসল। থাক আর সহানুভূতি দেখাতে হবে না। যা হবার তা তো আগেই হয়ে গেছে। আমি বলি,
"তাহলে তুমি আমাকে চিনলে।"

সে আমাকে বলছে কতদিন পর দেখা হল, পৃথিবী কত ছোট। আবল তাবল কি বলছে আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না আমার মাথায় এখন একটাই প্রশ্ন ও আমার সাথে এমন করল কেন। একবার মনে হচ্ছে জিজ্ঞেস করি একবার মনে হচ্ছে না করি। আমি বলি,
"চৌদ্দ বছর পর দেখা হল।"
এরপরের প্রশ্নটা স্পষ্ট শুনলাম। প্রশ্নটা শুনে মনে মনে হাসছি, আমার ছেলেমেয়ে কয়েটা আমার বর কই, না...

"তোমাকে নিয়ে লেখা সব গান, কবিতা আমি এখনো গুছিয়ে রেখেছি। তোমার প্রতিটি কথা আমার মনে আছে।"
"কি পাগলামিটা তখন করেছি, আসলে তখন অনেক ছোট ছিলাম তো তাই বুঝতাম না, দেখ এখন তুমি একজনের ঘরের বউ আমার দুই ছেলে এক মেয়ে।"
"এটাকে যদি তুমি পাগলামি বল তাহলে আমি পাগলামি করেছি। কারণ আমি এখনো বিয়ে করিনি।"

অভ্র বিশ্রি ভাবে হাসছে। আমার শুনতে ভালো লাগছেনা। কিন্তু কিছুই করতে পারছিনা কারণ ওর উপর এখন আর আমার কোন অধিকার নেই। ও হাসতে হাসতে বলে ওর সাথে শেষ দেখাতে নাকি আমি ওকে বলেছিলাম আমি বিবাহিত। হা আমি বলেছিলাম তোমাকে কিছুটা দু:খ দেয়ার জন্য। আমি বলি,
"আমি মিথ্যে বলেছিলাম, আমি জানাতে চাচ্ছিলাম তোমাকে- আমি ভালো আছি তোমাকে ছাড়া। তোমাকে একটু কষ্ট দিতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু তুমি কষ্ট পেলেনা।"
হাসিটা থামিয়ে ও বলে- "কারণ তখন আমার পাশে অন্য কেও ছিল। তাই তোমাকে ভুলে গিয়েছিলাম।"

আমি অনেক কষ্ট পেলাম ওর এই কথাতে। প্রকাশ করতে পারছিনা। এই সব কথা শুনানোর আগে আমি মরে গেলাম না কেন? হোক না আমি পাগল, হোক না এটা একতরফা ভালোবাসা তাও আমি অভ্রকে ভালোবাসি। সামনে বসা এই লোকটি সে না তারপরও তার কাছে বারে বারে জিজ্ঞেস করতে হচ্ছে করছে কেন সে আমার সাথে এমন করল। আমি বলি,
"কি সুন্দর করে তুমি এই কথাগুলো বলছ। আমি আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি। ইচ্ছা ছিল যাকে ভালোবেসেছি তাকেই বিয়ে করব। কারণ সে আমাকে বলেছিল সে আমাকে ছাড়া আর কেওকে বিয়ে করবেনা। আমি ভেবেছিলাম সে সত্যি বলেছিল। আমি তাকে অনেক ভালোবাসতাম এখনও বাসি।"
"তাহলে তুমি ভুল করেছো তুমি যখন জানলে তোমাকে ছাড়া আমি ভালো আছি, তারপরেও তুমি এমন কেন করলে বুঝলামনা।"
"কারণ তাকে নিজের চেয়েও অনেক ভালোবাসি। আর বিয়ে না করেও তো আমি ভালো আছি। একটা প্রশ্নরে উত্তর দিবে তুমি আমার সাথে এমন করলে কেন?"

আর সহিতে পারছি না এবার প্রশ্নটা করেই ফেল্লাম, আমার জানতেই হবে।
ও বলে, "সত্যি বলতে ওই সময় আমি দেখতে তেমন ভালো ছিলাম না, তাই আমি এত সুন্দর খোজার চেষ্টা করিনি।আমি সাধারণ একটা মেয়ে খুজছিলাম জীবনসঙ্গি হিসেবে। আমি তোমার সাথে মোবাইলে কথা বলে propose করেছিলাম এটাই আমার ভুল ছিল। আমি তোমাকে সাধারণ ভেবেছিলাম। কিন্তু তোমাকে দেখার পর আমার সব কল্পনায় কালির ছিটা পড়লো। তুমি কত মোটা, আমার চেয়েও দেখতে কালো ছিলা আমি তো দেখতে শ্যামলা ছিলাম আজও দেখ তোমার চেয়ে আমি দেখতে সুন্দর আমি তাই ওইরকমটি করতে বাধ্য হয়েছিলাম।"

আমি চুপ করে সব শুনে গেলাম। আমি এখন অনুভব করছি এতক্ষন আমার চোখে জল ছিল না কিন্তু তা এখন উপস্থিত। সে কখন উঠে চলে গেল টের পেলাম না। খুব ভালো বলেছো আমি দেখতে সুন্দর না তাই আমাকে আর ভালোবাসলেনা। আজ পৃথিবীর সবাইকে বলতে হচ্ছে করছে সবই ভুল। ভালোবাসা বলে এই পৃথিবীতে কিছু নেই। আসলে আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল। আমি দেখতে সুন্দর না তাই আমি দেশ ছেড়ে পালিয়ে এসেছি বিয়ে না করার ভয়ে, কার জন্যে, শুধু তোমার জন্যে অভ্র- তোমার একটা কথা বিশ্বাস করে আমি ভিনদেশে পাড়ি দিলাম। বাবা তো আমার বিয়ে দিয়েই দিচ্ছিল। পাত্র নিজে আমাকে পছন্দ করেছিল। তার সাথে কথাও হয়েছিল। আমি তাকে বলেছিলাম আমাকে ক্ষমা করুন। মিলন আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই। তোমার মত মানুষ এই পৃথিবীতে আছে বলে এখনোও ভালোবাসা আছে। আমি কখনোও ভাবিনি অভ্র এমন করবে। যা করেছে ভালো করেছে। আমাকে পেলেও তার কি লাভ ছিল। আমি আর কিছুদিনের মেহমান এই পৃথিবীতে। অভ্র জানেনা যে আমি হৃদরোগে ভুগছি। আমি বুঝিনা এতকিছু হওয়ার পরও কেন আমার বলতে ইচ্ছে করছে অভ্র আমি তোমাকে ভালোবাসি। ভালোবেসে যেতে চাই। হঠাত জানি আমার কি হল। আমার চারিপাশে অনেক মানুষ। আমি চারিদিকে অন্ধকার দেখছি। আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে...



সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১০:৪৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×