somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিসর্গের কথা

২৮ শে মে, ২০১৫ সকাল ৮:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার কেন জানি মনে হয়, প্রত্যেকটা মানুষ একেকটা সবুজ গাছ হয়ে জন্মায়, সারাজীবন ধরে চলতে থাকে সেই গাছটার মরুকরণ।

আমার ভেতর মরুকরণ শুরু হয়েছিল মেডিকেল লাইফে পা দেওয়ার পর থেকে, কিংবা তারও কিছুকাল আগে।
সময়ের নিষ্ঠুর স্রোত এনে দাড় করিয়েছে অদ্ভুত এক আয়নার সামনে।

কি গভীর আনন্দমাখা ছিল শৈশব আর কৈশোরের দিনগুলো !
আগে বাবার আংগুল ধরে হারিয়ে যেতাম দূর দূরান্তের পথে, পাহাড়ে, বনে জঙ্গলে।
কাঠঘর সৈকতে দাঁড়িয়ে নিশ্বাস নিতাম, লোনাজল ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে শুনতাম সাগরের গর্জন

শীতের রাতে কীর্তিপুর - চকগৌরী-শালুকান গ্রামে লেপমুড়ি দিয়ে ভাপাপিঠা খাওয়া
কাকাডাকা ভোরে কুয়াশা জড়ানো মেঠোপথে খেজুরের রস হাতে হারিয়ে যাওয়া,
পরে মানুষ পাঠিয়ে আমাকে খুজে আনা হত।
টিনের চালে বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ ঘুমাতে দিত না কোনরাতে।

সেই ছোট যমুনার পাশে ভরদূপুরে বসে বসে নৌকা দেখতাম,
মনে হত টুপ করে একটা নৌকায় উঠে যাই, খুজেই পাবে না কেউ কোনদিন।
ভরদূপুরে ধু ধু মাঠে হা করে তাকিয়ে থেকে কি সব চিন্তা করতাম।
ছাদে শুয়ে শুয়ে আকাশগঙ্গা দেখে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থেকেছি কত ঘন্টার পর ঘন্টা তার ইয়ত্তা নেই।

ছোট চাচার সাথে মাছ ধরার জাল বানাতাম।
সেই জালে একবার কিভাবে যেন অনেকগুলা লাল খলিসা মাছ ধরা পড়ল।
আমার সে কি খুশী!!!!
আম্মুর হরলিক্সের কাঁচের বোতলে রেখে সারারাত তাকিয়ে থাকি, তাদের সাঁতার কাটা দেখে নিজেরও তাদের সাথে সাঁতার কাটার ইচ্ছা হত।
পরে সাবান দিয়ে গোসল করাতে যেয়ে সব মাছ মারা গেল

নানীমার হাত ধরে ফুল চিনতাম, পাখি চিনতাম।
এক সময় ডাক শুনেই বলে দিতে পারতাম পাখিটার নাম।
বাসার ছাদে ছোটখাটো বনবাগান বানিয়ে ফেলেছিলাম।
পরিত্যক্ত হ্যারিকেনের ভেতর জোনাকী ধরে ধরে বানিয়েছিলাম নিজের ছায়াপথ।

সেই দিনগুলো কোথায় হারিয়ে গেছে !

আইটেম, কার্ড, ডিসেকশন, প্রফ, সাপ্লিমেন্টারীর ভীরে একটু একটু করেই কেমন জানি না
বাণিজ্যিক হয়ে উঠেছি তিন বছর ধরেই।

বাস্তবতার সাথে অসম যুদ্ধে বদলে যাওয়ার অসহায় চেষ্টায় জয় পরাজয় দুটাই আমার নিজের।

কেন জানি, সেই আগের মানুষ টাকে পুরোপুরি প্রতিস্থাপন করতে পারিনি এখনো।

এখনো হলের ছাদে শুয়ে শুয়ে উড়ন্ত মেঘ দেখি,
বৃষ্টি নামলে ঘরে ঢুকে পড়ি জ্বর বাঁধানোর ভয়ে।
লাং কলাপ্স হওয়ার চিন্তায়।

রাতে কালো পিচের মহাসড়কের ওপর খালি পায়ে হেটে বেড়ানো
আর পদ্মার ধুধু বালুচরে জোছনা দেখার ইচ্ছাগুলো কেড়ে নিয়েছে ছিনতাইকারীদের দল কিংবা পুলিশী প্রহরা।

আগে আরব্য রজনীতে ডুবে থাকতাম, মেঝেতে বইয়ের স্তুপের ভীরে অজানা কোন জগতে হারিয়ে যেতাম।
ঠাকুরমার ঝুলি, ভূতের গল্প, রুশ দেশের রূপকথা ছিল পরম বন্ধু ।
এখন সময় কাটে " লা মিজারেবল " কিংবা "জয় গোস্বামী"র কবিতার বইয়ে মুখ গুঁজে।

গান শোনার ক্ষেত্রেও কতটা বদলে গেছি!
আগে গান ই শুনতাম না, বিরক্ত লাগত।
এখন Poets of the Fall, Beatles,Lady Gaga আর রবীন্দ্রসংগীত ছাড়া দিনই কাটে না।
সেই সাথে আগের যুগের বাংলা ব্যান্ডগুলা, শিরোনামহীন, অর্থহীন, মহীনের ঘোড়াগুলি।

আগে ভাল লাগত না ঢাকার অসহ্য যানজট, দানবীয় ট্রাকের তীক্ষ্ণ হর্ন, মানুষের স্রোত। ইটপাথরের মরু।
আর এখন জনমানবহীন সিল্ক শহরে দমবন্ধ লাগে।
ঢাকা শহরের মানুষের ভীরে শ্বাস নেই বুকভরে।
কোলাহলই তো প্রানের চিহ্ন, গ্রীন সিগন্যাল।



জানালার ওপাশের গ্রেটার রোডের গাড়িগুলোর টায়ারে জমে থাকা আর্তনাদ সহ্য করতে শিখে গেছি সেই কবেই।
এখন শুধু দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসা অসুস্থ মানুষের আর্তনাদ সয়ে নেবার অন্তহীন অপেক্ষা।

কয়েক বছর , ব্যস, এরপরেই আমি পুরোপুরি অন্য আমিতে পরিনত হব।
নামের আগে যোগ হবে একটা ছোট্ট নাম, উপাধি... ডক্টর!

সাথে আরো কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত উপাধি পেয়ে যাব আমজনতার কাছ থেকে - কসাই, রক্তচোষা, ডাকাত আরো কত কি,
বাকি সব অগ্রজ দের মতই

এই একটা "ডক্টর " পদবীর জন্য একজন স্বপ্ন দেখা মানুষকে কতগুলো স্বপ্ন নিজ হাতে খুন করতে হয়,
তার নিজের অস্তিত্ব কে গলাটিপে হত্যা করতে হয়
সেই ইতিহাস আমজনতা কোনদিন জানবে না
কোনদিন না
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×