somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে কথা

২৭ শে আগস্ট, ২০১১ দুপুর ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


যখন কারো কোনো দায়িত্ব যা পালন করতে সে বাধ্য অথচ করে না অতিরিক্ত কোনো লাভ ছাড়া তখন ঐ লাভকে আমরা ঘুষ বলে থাকি। যেমন কোনো কর্মকর্তার কাজ যদি হয় সীমান্তের ওপার থেকে কোনো বৈধ জিনিস এপারে আসার অনুমতি দান আর তা যদি করতে সে গড়িমসি করে কিন্তু টেবিলের নিচ দিয়ে অথবা গোপনে কয়েকটি নোট দিয়ে দিলে সহজেই অনুমোদন পাওয়া যায় তবে অবৈধ এ সহজ প্রক্রিয়াটিই ঘুষ। আমাদের শিক্ষকদের কাজ হলো শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপযুক্ত শিক্ষাদান আর চিকিত্সকদের রোগীদেরকে উন্নত সেবা প্রদান। অথচ শিক্ষক সে কাজটি ক্লাসে না করিয়ে যদি বাসা-বাড়ি বা কোচিং-এ করান অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে আর চিকিত্সক পার্সোনাল চেম্বারে তবে তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে ঘুষ ছাড়া আর কী বা বলা যেতে পারে?

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ যথাযথ প্রশ্নই করেছিলেন যে, একজন শিক্ষার্থী ক্লাসে যে পড়াটি বুঝতে পারে না অথচ প্রাইভেট/কোচিং-এ গেলে ঐ শিক্ষকের কাছ থেকেই দিব্যি বুঝে আসছে তার মানে কী? মানে খুবই সোজা—ওনাদের কর্তব্য পালন করাতে গেলে অতিরিক্ত কিছু ছাড়তে হবে। ক্লাসে যা দেয়া তাঁর নৈতিক দায়িত্ব ছিল তা দিতে তিনি গড়িমসি করছেন। এমনভাবে করছেন যে শিক্ষার্থী যাতে না বোঝে। তাঁর কাছে প্রাইভেট/কোচিং-এ আসতে বাধ্য হয়। আসছেও তাই নতুবা ফেল করলে নিজেসহ পিতা-মাতা সমাজে মুখ দেখাবে কেমন করে! এই যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রী আর অসহায় পিতা-মাতাদের জিম্মি করে প্রাইভেট/কোচিং-এর নামে প্রকাশ্যে ঘুষ বাণিজ্য করে যাচ্ছে তার কি কোনোই প্রতিকার নেই? নিজেদের নৈতিক দায়িত্বটুকু যে শিক্ষকরা পালন করছেন না তাঁদের কাছ থেকে বড় ধরনের অনৈতিক আচরণ পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। যাঁরা সন্তানতুল্য ছাত্রছাত্রীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করেন, ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে প্রাইভেট পড়তে চাপ প্রয়োগ করেন তাঁরা শিক্ষক নামের কলঙ্ক।

শিক্ষকদের বেতন কম, সংসারে সচ্ছলতা আনার জন্য প্রাইভেট পড়ান/কোচিং করান। এ ধারণা নিতান্তই ভুল, নয়তো একজন শিক্ষকের কয়টা প্রাইভেট পড়ানো লাগে? প্রথম শ্রেণির একজন কর্মকর্তা আর একজন সরকারি কলেজের শিক্ষক একই স্কেলে বেতন পান। ঢাকাসহ বড় বড় শহরের নামি-দামি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা অনেক বেশি বেতনও পান আবার প্রাইভেট/কোচিংও বেশি করান। ক্লাসে ফাঁকি দিয়ে নিজেরা প্রতিষ্ঠান খুলে নিয়ে ব্যাচে ব্যাচে ছাত্রছাত্রী পড়িয়ে হাজার হাজার টাকা কামাচ্ছেন। যারা প্রাইভেট পড়ার সামর্থ্য রাখে না তাদের কথা একবারও ভাবেন না! এ সমস্ত শিক্ষকের বেতন বাড়িয়ে দেয়া হোক তারপরও এই কোচিং করানো তাঁরা ছাড়বেন না। কারণ এটি শুধু পেশা নয় নেশা হয়ে গেছে, টাকার নেশা। শিক্ষকদের এ পেশা থেকে বিরত করতে পারলে অনেক শিক্ষিত বেকারের কপালে অন্তত কিছু টিউশনি জুটতো। তবে আশঙ্কামুক্ত যে হওয়া যেতো না সেটি নিশ্চিত। কারণ শিক্ষকরা তখন হয়তো ছাত্রছাত্রীদেরকে প্রেসক্রাইব করে দেবে অমুকের তমুক কোচিং সেন্টারে যেতে হবে নয়তো পাস হবে না, যেমন ডাক্তার সাহেবেরা করে থাকেন ডায়াগনোসিস করাতে পার্সেন্টেজ পাওয়ার আশায়।

আমাদের দেশের ডাক্তাররা বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার যা করেন—রোগীর অসুবিধা শোনার আগেই প্রেসক্রিপশন লেখা শেষ! চোখ বন্ধ করাও লাগে না বলে দিতে পারেন কোন্ ডায়াগনোসিস সেন্টারে গেলে কম খরচে, দ্রুত সময়ে সঠিক রিপোর্ট পাওয়া যাবে। তারপরও মানুষ অনেক টাকা খরচ করে বিদেশে যায় চিকিত্সার জন্য। কারণ মানুষের আর বুঝতে বাকি নেই প্রেসক্রিপশনে কেন দালালের নাম লেখা থাকে, ডায়াগনোসিস সেন্টারের ঠিকানা থাকে। যদি ডাক্তার সাহেবদের দেয়া ডায়াগনোসিস সেন্টারে যথাযথই কাজ হতো, অপরিচিত রোগীদের ডায়াগনোসিস সেন্টার চেনার দুর্ভোগ লাঘব হতো তবে বিভিন্ন ডাক্তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দেন কেন? কেন হাতের কাছে রেখে দূরে পাঠান? আবার ডায়াগনোসিস সেন্টারে মাননীয় সে ডাক্তারের নাম বললে নাকি কিছু কমেও করা যায়। মানুষ বিপদে পড়েই ডাক্তারের কাছে যায়। মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে এ ধরনের ডাকাতি করা কখনোই কাম্য নয়।

শিক্ষা এবং চিকিত্সা মানুষের মৌলিক অধিকার। এ অধিকার দেয়া যাঁদের নৈতিক দায়িত্ব তাঁদের কর্মকাণ্ড যদি এমন অনৈতিক হয় তবে মানুষ যাবে কোথায়? যে শিক্ষক নিজে অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত তাঁর শিক্ষাদান কী হতে পারে? শিক্ষকদের দায়িত্ব কি শুধু পাস করানোর ব্যবস্থা করা নাকি মানুষের ভেতরের মানবীয় সত্তাকেও জাগ্রত করানো? এসমস্ত শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে যে ডাক্তার হচ্ছে, ব্যবসায়ী হচ্ছে, প্রশাসনে যাচ্ছে সে যে গুরুর মতোই হবে সেটিই স্বাভাবিক। তবে সবাই যে একই পথের পথিক এমন নয়। মানবতাবাদী, মানবদরদি শিক্ষক-চিকিত্সক এ সমাজে আছে বলেই সমাজ এখনো টিকে আছে।
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×