সাম্প্রতিক সময়ে আমরা পত্রিকায় চোখ রাখলেই প্রায় প্রতিদিন ই বেশ কয়েকটি হত্যাকান্ডের খবর পাই। সেগুলো থাকে পত্রিকার বিভিন্ন জায়গা জুড়ে। বেশিরভাগই থাকে পত্রিকার ভিতরের পাতায় অথবা প্রথম বা শেষ পাতায় হলেও ছোট হেডলাইনে। কিন্তু কিছু কিছু হত্যাকান্ডের খবর হয় পত্রিকা গুলোর প্রধান শিরোনাম যেমন রাজন হত্যাকান্ড না নীলাদ্রি হত্যা কান্ড। কিন্ত কেন এইরকম? কারন একটা পত্রিকার প্রধান লক্ষ্য থাকে তার পাঠক জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি। তাই পত্রিকার এই অসমতা গুলো মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু যখন দেখি আইনের ক্ষেত্রেও এরকম অসমতা পাই তখন খুব অবাক লাগে। কিন্তু এইরকমটা কেন? তার আগে বলি সাম্প্রতিক সময়ে যে হত্যাকান্ডগুলো ঘটেছে তাদের প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত সাধারন হত্যাকান্ড। যেমন পথচারী হত্যা, পারিবারিক জের ধরে হত্যা, ব্যাবসায়ী হত্যা ইত্যাদি। এসব হত্যাকান্ডের বিচার গুলো খুবই মন্থর ভাবে হয়, অর্ধেক সময়ে এই হত্যাকারীদের ধরা যায়না।আর ধরা গেলেও এদের বিচারে কি হইছে এই নিয়ে জনমনে জানার কোন ইচ্ছা হয়না। তাই মিডিয়াও এগুলো ফলাও করে প্রচার করেনা। তাই এগুলো সাধারন হত্যা। অপর দিকে যে হত্যাকান্ড গুলো জনগনের ইচ্ছার কেন্দ্রবিন্দু থাকে, প্রতিমূহুর্তে জনগন হত্যাকারীদের সম্পর্কে জানতে চায়। দেশের আপামর জনসাধারণ হত্যাকান্ড নিয়ে মন্তব্য করে সেগুলো হচ্ছে বিশেষ হত্যাকান্ড। মিডিয়াও এগুলোকে শিরোনাম করে প্রচার করে। সাম্প্রতিক বিবেচনায় এই হত্যাকান্ড দুই প্রকার, প্রথমত শিশু বা কিশোর হত্যা, দ্বিতীয়ত ব্লগার হত্যা, যাদেরকে কেউ কেউ বলে নাস্তিক হত্যা। যদিও এই ব্যাপারে আমার অমত আছে।
আমরা স্বাধীনদেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেক ভুক্তভোগীই আইনের সমান সহায়তা পাওয়ার কথা। যদিও আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বক্তব্য তারা সবাইকে সমান ভাবেই সহায়তা করার চেস্টা করছে এবং সেই অনুসারে কাজ ও করছে কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে অদৃশ্য কোন কারনে এই বিশেষ হত্যাকান্ডের ভুক্তভোগীরা সমান ফলাফল পাচ্ছেনা।
যেখানে রাজীব হায়দার এর হত্যাকারী থেকে শুরু করে নীলাদ্রি এর হত্যাকারীরা পর্যন্ত সব হত্যাকারীরা দায় স্বীকার করা সত্ত্বেও তাদের ধরা যায়নি এমন কি তদন্তেও তেমন কোন অগ্রগতি দেখা যায়নি সেখানে রাজন,রাকিব সহ কিশোর হত্যাকারীরা ঠিকই ধরা পড়েছে। এমনকি রাজনের এক হত্যাকারী তো বিদেশেই ধরা পড়েছে যদিও সেদেশের কিংবা আন্তর্জাতিক কোন আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তাদের ধরে দিবে বা ধরার ব্যাপারে সহায়তা করবে বলে কোন ঘোষনা দেয়নি। অপরদিকে অভিজিৎ ও নীলাদ্রি এর হত্যাকারীদের ধরার ব্যাপারেতো এফবিআই ঘোষনা দিছে তারা সহায়তা করবে। তাইলে স্বভাবিকতই প্রশ্ন জাগে তবুও কেন ব্লগার হত্যাকারীদের ধরা যায়না? নাকি তাদের ধরা হয়না? তাদের ধরতে না পারার পিছনে বর্তমান রাজনীতিবিদ ও সাধারন জনগন দুইটি কারন ই বেশি বলে।
প্রথমত দুইহত্যাকারীদের ব্যাপারে সাধারন জনগনের ভিন্ন মনোভাবপোষণ। আমরা জানি যে শিশু বা কিশোর হত্যাকারীদের অনেককেই সাধারন জনগন পুলিশের হাতে সোর্পদ করেছে।সাধারন জনগন থেকে শুরু করে সবাই এইসব হত্যাকান্ডকে নৃশংসতা বলেছে সবাই একযোগে প্রতিবাদ করছে। হত্যাকারীদের তারাই ধরেছে।কিন্তু ব্লগার হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে জনগন একছিল না।জনগন তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে। প্রথমদল হচ্ছে তাদের সহযোগী সহ তাদের সমর্থক।তাদের বক্তব্য এই হত্যা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। তারা প্রতিবাদ করতেছে রাস্তায় নেমে, অনলাইনে। দ্বিতীয় দলের বক্তব্য হচ্ছে যেসব ব্লগাররা মারা গেছে তারা অপরাধী ছিল তবে এরকম ভাবে তাদের খুন করা উচিত হয়নি। এরা হত্যাকান্ড এর প্রতিবাদ জানায়না আবার হত্যাকারীকে ও সমর্থন দেয় না। এদের মাঝেও কেউ চায় খুনি ধরা পড়ুক, বিচার হোক। আর তৃতীয় দল হচ্ছে হত্যাকারীর পক্ষে, এই দলেও কিন্তু দেশের প্রায় ৩৫% এর উপরে আছে। তারা মনে করে হত্যাকারীরা যা করছে ভাল করেছে। তারা সাওয়াবের অধিকারী হবে। যাক তারা কেন এটা মনে করে তা আমি জানিনা। আমি এটাই বুঝাতে চেয়েছি যে ব্লগার হত্যাকারীদের বিপক্ষে আমজনতা এক ছিলনা। যা হত্যাকারীদের ধরতে না পারার অন্যতম কারন।
দ্বিতীয়ত, অনেকেই মনে করে সরকার হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত। অনেকেই তো সরকারকে দ্রুত হত্যাকারীদের ধরে সরকার যে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত নয় তা প্রমান করতে বলেছে।কিন্তু সরকার কি সত্যি হত্যাকান্ড এর সাথে জড়িত? জড়িত হলে কেন? যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে তারা সবাই যুদ্ধাপরাধী এর বিচার এর সমর্থনে লিখেছে। সুতরাং এটা বুঝা যায় যে, তারা কখনোই জামায়াত বা জামায়াত সমর্থিত কোন দলকে ভোট দিতনা। তাইলে সরকার কেন শুধু শুধু নিজের ভোট গুলো নস্ট করে? অনেকে এর উত্তর দিয়েছে সরকার যারা হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে তাদের ভোটের জন্য এরকম করেছে। তাইলে সরকার না মেরে তাদের বিচারের আওতায় আনলে সবাই দেখত।সরকার এই পথে গেছে কেন?
তবে যাই হোক আমরা আশাবাদী সরকার অতিদ্রুত এই হত্যাকারীদের ধরে সরকার প্রমান করবে তারা জড়িত নয়। এবং সরকারের কাছে আমাদের এটাই চাওয়া যে, প্রত্যেকধরনের প্রত্যেকটা হত্যাকারীকে ধরে এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিক। এছাড়া ভবিষ্যৎে যেন আর কোন ধরনের হত্যাকান্ড না ঘটে সেটা সাধারন হোক আর বিশেষ হোক প্রত্যেকটা নাগরিককে সেই নিরাপত্তা দেওয়া। একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে এই নিরাপত্তাই আমাদের প্রাপ্য।
এন জে শাওন
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ(১ম বর্ষ)
লক্ষীপুর সরকারি কলেজ।
ইমেইল :[email protected]