প্রসংগঃ আস্তিকের ধর্মকথা-১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
ধর্মীয়, বৈষয়িক এবং সামাজিকতার প্রেক্ষিতে সম্পূর্ন ব্যাক্তিগত উপলব্ধি, কারো সাথে মিল বা অমিলে কিছু আসে যায় না।
ধর্ম কি? সাধারনভাবে আমরা জানি, এলাকাভেদে পৃথিবীর বিভিন্ন জনগোষ্ঠী এক বা একাধিক লৌকিক শক্তিকে অলৌকিক ক্ষমতা দান করে কল্পিত শক্তিকে/ব্যাক্তিকে উপাস্যভেবে নিয়ে অথবা বৈষয়িক নিয়ম-কানুনকে নির্দিষ্ট বেড়াজালে বেধে যে পূজনীয়/পালনীয় সামাজিক প্রথা চালু করে সেটাই ধর্ম। তবে ব্যাক্তি বা বস্তুভেদে এর বিভিন্নতা চোখে পড়ার মতো।
পৃথিবীতে ধর্মের উৎপত্তি এবং বিস্তার প্রাচীনকাল থেকেই। বিভিন্ন কল্পিত অলৌকিক ঘটনা, গোষ্ঠীর শীর্ষব্যাক্তির ক্ষমতা, যুদ্ধ বিজয়ী দল, সামাজিক নিপীড়িত জনগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা ধর্মবিস্তারে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সহায়তা করে।
অন্যান্য ধর্মের সাথে সাথে পৃথিবীর বড় একটি জনগোষ্ঠী ইসলাম ধর্ম পালন করে। এই ধর্ম আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নাই এবং মুহাম্মদকে তাঁর প্রেরীত রাসূল ধরে নিয়ে বিভিন্ন জাগতিক এবং পরজাগতিক ব্যাখ্যা, বিশ্লেষন এবং নিয়ম-কানুনের মধ্য দিয়ে পূর্নতা পেয়েছে। এইসব আমরা জানতে পারি কোরান, হাদীস, শরীয়া ইত্যাদির মাধমে।
মুসলমান’রা কোরান কে আল্লাহ’র প্রেরীত জীবনবিধান মেনে নিয়ে ইসলাম ধর্ম পালন করে থাকে। দাবী অনুযায়ী যা সম্পূর্নই মানুষের কল্যানে এবং উন্নতির জন্য ব্যাবহার করা হয়। তবে কোরানে অনেক বিষয় আছে, যেগুলো নিয়ে মুসলমান এবং অমুসলমানদের মধ্যে তর্ক-বিতর্কের শেষ আজ অব্দি নেই।
মুসলমানরা ইসলামের উৎপত্তির আগের সময়কে জাহলেয়াতের যুগ বলে থাকে। পৃথিবীর অন্য দুটি প্রধান ধর্ম ইহুদী এবং খ্রীষ্টান’রা কিন্তু এ ব্যাপারে কিছু বলেনা। কারন ঐ সময়ে তারা তাদের ধর্ম প্রচার এবং পালন করতো। কোরানের দাবীকৃত নবীদের(মূসা, ঈসা) ধর্মপালনকারীদের যুগ ইসলামধর্মে কিভাবে অন্ধকার যুগ হয় এটা চিন্তার বিষয়।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, কাবায় ঐ সময়ে ৩৬০ টি মূর্তি ছিল। দিনে কয়েকবার কাবার দিকে মুখ করে উপাসনা হতো। বছরে একবার কাবাকে ঘিরে খুব বড় করে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন হতো। কল্পিত অপশক্তিকে পাথর ছোড়া হতো। মাথা কামানো হতো। পশুবলী হতো। বাদ্যসহকারে ধর্মীয় গান-বাজনা বা কীর্তন হতো। এ থেকে বোঝা যায় কাবাকে ঘিরে আরবের ঐ অঞ্চলে ইহুদী বা খ্রীষ্টান ধর্মের বড় কোন প্রভাব পরেনি। বা পরলেও এলাকাভিত্তিক দেব-দেবী এবং ধর্মের আড়ালে তা চাপা পরে গিয়েছিল।
কাবার ঐ সব দেব-দেবীর মূর্তিদের মধ্যে হুবাল’ কে সবচেয়ে ক্ষমতাধর এবং বড় মনে করা হতো। শৈশবে ইসলামের রাসূল মুহাম্মদ, দাদা মুত্তালিবের সাথে হুবালের কাছে যেত। তবে আল্লাহ নামেও তাদের একজন উপাস্য ছিল (মুসলমানদের উপাস্য আল্লাহ নয়)। তাকে তারা সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা এবং মেঘনিয়ন্ত্রক বলে মনে করতো। ইসলামের রাসূল মুহাম্মদের বাবা আব্দুল্লাহও (অর্থঃ আল্লাহ’র চাকর) কিন্তু মুসলমানদের উপাস্য আল্লাহ’র চাকর নয়, ছিল মূর্তিপূজারীদের আল্লাহ’র চাকর। ঐ সময়েও এখনকার মতো নামের শেষে আল্লাহ জুড়ে দেওয়ার চল ছিল।
সৃষ্টিকর্তা হিসেবে আল্লাহ শব্দটি শুধু ইসলাম ধর্মে নয়, ইসলামের আগের যুগের মূর্তি পূজ়ারী, আরবীভাষী ইহূদী, খ্রীষ্টান এবং ইব্রাহীমের অনূসারীরাও ব্যাবহার করতো। তবে ধর্ম, ভাষা, আঞ্চলিকতা এবং উচ্চারনভেদে আল্লাহ নামের সামান্য পার্থক্য দেখা যায়। যেমনঃ আল-ইলাহ, আল-লাহ, এলাহা, আলাহা, আলোহো, ইত্যাদি। শাব্দিকভাবে আল্লাহ এসেছে আল-ইলাহ শব্দ থেকে। ইলাহ বা ইলাহা শব্দ এসেছে আল-লাত থেকে।
ইসলাম পূর্ব যূগের আরবদের আল্লাহ (সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা এবং মেঘনিয়ন্ত্রক) একা ছিল না। তার ছেলে এবং তিন মেয়ে ছিল। জ্বীন’কেও আল্লাহ’র সমান মনে করা হতো। আল্লাহ’র মেয়েদের নাম যথাক্রমে আল-উয্যা, লাত এবং মানাত। ছেলের ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। লাত ছিল আরবদের তিন প্রধান দেবীদের একজন। তাকে হুবাল’এর মা মনে করা হতো। মানাত ছিল ভাগ্যের দেবী। তাকে হুবাল’এর স্ত্রী মনে করা হতো। আল-উয্যা ছিল তিন প্রধান দেবীর শেষজন। মক্কার নিকটে আত-তাঈফে ছিল তার আলাদা মন্দির(কাবা)। ঐ সময়ে মক্কার কাবা ছিল মূলত হুবাল, আল-উয্যা, লাত এবং মানাত এর মন্দির।
কাবা কথার অর্থ বর্গাকার বা চৌকোনা। ভবনের আকারের ভিত্তিতে উপাসনালয়/মন্দিরের নাম হয়েছে কাবা(যেমনঃ মসজিদের গম্বুজ ষাটটি, তাই নাম ষাট গম্বুজ মসজিদ)। ঐ সময়ে আরবে তিনটি কাবা বা দেব-দেবীর উপাসনার স্থান ছিল। মক্কার কাবা কালো পাথরের, আরবের দক্ষিনাঞ্চলের ঘাইমান শহরের কাবা লাল পাথরের এবং তাবালা শহরের কাছে অবস্থিত ছিল সাদা পাথরের কাবা।
মহা ক্ষমতাধর হুবাল’কে চন্দ্রদেবতা বলে মনে করা হতো। তার প্রতীক ছিল সরু আকৃতির নতুন চাঁদ। তার মূর্তি ছিল মূল্যবান লাল পাথরের তৈরী। তবে ডান হাত ভাঙ্গা। তাই ক্ষমতাধর কোরাঈশ’রা তাদের ভক্তি দেখাতে স্বর্নের ডান হাত তৈরী করে দেয়। ইসলাম ধর্ম প্রবর্তনের আগ পর্যন্ত হুবাল এবং তার তিন মেয়েরা অনেক ক্ষমতার সাথে মক্কার কাবায় কোরাঈশ এবং অন্যান্য আরব গোত্রের দ্বারা উপাস্য হতে থাকে।
চলবে…
১৭টি মন্তব্য ১২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ওরা আমাদের ঐতিহ্যের পোশাককে নোংরা পোশাক হিসেবে পরিচিত করতে চায়। ওরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে গ্রাস করতে চায়।
"লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নি'মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।"
এক মৌলভী পোস্ট দিয়েছেন
"শাড়িকে একটি নোংরা পোশাক বানিয়ে দিয়েন না।
শরীর... ...বাকিটুকু পড়ুন
সমূদ্র-সৈকতে - ১৬
ছবি তোলার স্থান : মেরিনড্রাইভ, কক্সবাজার, বাংলাদেশ।
ছবি তোলার তারিখ : পহেলা অক্টোবর ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ।
বেড়াবার সবচেয়ে আকর্ষণীয় যায়গাগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সমূদ্র সৈকত। কখনো কখনো আমারও সুযোগ হয় বেড়াতে যাবার।... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাঁআআআচ্চুউউউ! :) :D ;)
হাঁচতে নাকি জানে না কেউ,
কে বলেছে বোন
এই দেখোনা কত্ত হাঁচির
ওজন শত টন।
কিম হাঁচে বাড়া ভাতে,
বাইডেন হাঁচে তার সাথে সাথে,
লালচে চীনের জোরসে হাঁচি,
কাঁদে সবুজ ঘাস।
মাদার রুশের হাঁচি দেখে
হয় যে বনবাস!!
বনবিবি... ...বাকিটুকু পড়ুন
সেইন্ট মার্টিন ও কোক ইস্যু
বিগত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে চর্চিত বিষয়, কোকের বয়কট ও গত দুই দিন ধরে সেইন্ট মার্টিন মায়ানমার দখল করে নেয়ার খবর।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশ্রিভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, মায়ানমার সেইন্ট মার্টিন দখল... ...বাকিটুকু পড়ুন
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে গান গাইলাম (সাময়িক)
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে আমি আদর করে 'আই' ডাকি। আইকে দিয়ে অনেক কাজই করাতে হয়। এবারে, আমাদের ৫ ভাইদের নিয়ে একটি গান বুনেছি। আমরা ৫ ভাই অনেক দিন একসাথে হই না। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন