somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কান্না লুকানো চোখ

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথম যখন দেখেছিলাম, প্রচন্ড শীতের মাঝে ময়লায় কালো হয়ে যাওয়া একটা শার্ট পরে বসে ছিলো মাছ বাজারটার পাশে। আনমনেই কাঠি দিয়ে দাগ কাটছিলো মাটিতে। বয়স বড়জোর ৮/৯ বছর হবে। চোখের মাঝে ছিলো কান্নার আভাস, কিন্তু কাঁদছিলো না। কি যেন এক অভিমানের ছোঁয়া সারাটা মুখে। তারপরের বেশ ক'য়েকটা দিন ঠিক একই জায়গায় দেখেছিলাম। হঠাৎই একদিন দেখলাম ছেলেটা আর ওখানটাতে নেই। তারপরের ২/৩ টা দিন অজান্তেই চোখ চলে যেতো মাছ বাজারের পাশের জায়গাতে। না নেই।

সেদিনটার কথা আমার স্পষ্ট মনে আছে, শনিবার। আগেরদিনও অফিস বন্ধ ছিলো। সারাদিন শুয়ে বসে অলস সময় কাটিয়ে আর ভালো লাগছিলো না। মাথাটাও ধরেছিলো। অলস বিকেলে বাসা থেকে বের হলাম এককাপ চা'য়ের টানে। গন্তব্য সেই বাজার। চা খেয়ে চলে আসার পথে হঠাৎ মাছওয়ালার ডাক, "স্যার তাজা কৈ মাছ আছে, দেশী কৈ, নিয়া যান স্যার।" জানতাম কেনা হবে না, তবুও গেলাম মাছগুলো দেখতে। অল্প পানিতে দাপড়িয়ে বেড়াচ্ছে মাছগুলো। পাশে চোখ পরতেই দেখি আজো ছেলেটি ওখানে নেই। মাছওয়ালাকে জিজ্ঞাস করলাম এখানে যে ছেলেটি বসে থাকে সে কোথায়? মাছওয়ালা জানালো গত সপ্তাহ থেকে ছেলেটি আসছে না। তখনই জানলাম ছেলেটির নাম সাগু। বাড়ী কোথায় জানতে চাইলে বলতে পারলোনা। শুধু জানালো ক্যাম্পাসের পিছনের রাস্তা দিয়ে ২ কিলোমিটার গেলে একটা প্রাইমারী স্কুল আছে। স্কুলের আশেপাশের গ্রামেই হয়তো বাড়ী হবে। জানতে চাইলাম, ছেলেটি সারাদিন এখানে বসে কি করে? জানালো সারাদিনের মাছ বিক্রির পর যদি কিছু পচাঁ অবিক্রিত মাছ থেকে যায়, তা ফেলে দেয়ার সময় ছেলেটি নিয়ে যায়। বাজারের অন্য দোকানগুলো থেকেও এভাবে ফেলে দেয়া পচাঁ-গলা সবজি নিয়ে যায় দিনশেষে। কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে না আসার কারণটা জানা গেলো না।

পরেরদিনের সকালের ক্লাসের শেষে অফিস পিয়ন আজগরের আনা নাস্তা খেতে খেতে জিজ্ঞাসা করলাম ক্যাম্পাসের পেছনের প্রাইমারী স্কুলটা সে চেনে কিনা। আজগর জানালো প্রাইমারী স্কুলে যাওয়ার পথেই তার বাড়ী। হঠাৎ তার প্রশ্ন, কেনো স্যার? তাকে সাগুর কথা জানালাম। বললাম যদি পারে ছেলেটাকে খুজেঁ বের করে আগামীকাল সকালে আমার কাছে নিয়ে আসতে।

কাজের চাপে ভুলেই গিয়েছিলাম। সকাল থেকে পরীক্ষা চলছে মিড-টার্ম প্রাকটিক্যাল। দুই শিফটের পরীক্ষা শেষ হতে হতে শেষ বিকাল গড়ালো। অফিস বন্ধ করার আগে আজগরকে শেষ কাপ চায়ের জন্য নির্দেশ। পরীক্ষার খাতাপত্র সব গুছিয়ে নিচ্ছি, রাত থেকেই দেখা শুরু করতে হবে। আজগর হঠাৎ বললো স্যার, আপনি গতকাল সাগুর কথা জিজ্ঞাস করছিলেন, ছেলেটির খবর কিছু জানেন? চমকে বললাম নাতো? কি হয়েছে? তারপরের কথাগুলো একটা একটা করে শরীরের সকল লোমকূপের গ্রন্থিক্ষরণ বাড়িয়ে দিয়েছিলো। ঠান্ডা শীতল একটা অনুভূতি নেমে এসেছিলো ঘাড় থেকে মেরুদন্ড বেয়ে। আজগর জানালো, কালরাতে জ্বর নিয়ে ছেলেটি বাজারে এসেছিলো। কিছু তরকারী টুকানোর জন্য। রাতে বাড়ী ফেরার পথে হয়তো মাথা ঘুরেই পরে যায় রাস্তার পাশে। তারপর হয়তো বুলেটের মতো ছুটে চলা বাস বা ট্রাকগুলোর কোন একটা ছিন্ন ভিন্ন করে দিয়েছে সাগুর ছোট্ট শরীরটুকু। সে দিনটি ছিলো ১৪ই ফেব্রুয়ারী...। ভালোবাসা দিবস...

১৪ই ফেব্রুয়ারী আসলেই মনে পরে কান্না লুকানো সেই চোখ দু'টোর কথা। রাস্তার পাশে আজো খুঁজে ফেরা সাগুর অভিমানী মুখ। আট-নয় বছরের ছেলের চোখে পৃথিবীর প্রতি করুণার প্রতিফলন। আমাদের সকল প্রচেষ্টাও পারবে না আর সাগুর অভিমান ভাঙাতে, পারবে না ছলছল দু'টো চোখের কান্না মুছে দিতে।

আজ এই ভালোবাসার দিনে আমাদের একটুখানি ভালোবাসার ছোঁয়াই হয়তো পারে এরকম আর সব সাগুদের মুখের অভিমানটুকু মুছে, দু'টো চোখে আনন্দের পরশ বুলাতে। চাইলেই আমরা দিতে পারি সাগুদের জন্য ভালাবাসার হাত বাড়িয়ে দিতে। আমরা কি তা করবো?

============================

প্রাককথনঃ লেখাটি ব্লগার স্বপ্নজয় ভাই, বাবুনি সুপ্তি ও kisuna আপু-র "ভালোবাসি - ভালোবাসা দিবসের লেখা সন্কলন"-এ প্রকাশিত। সংকলন বিষয়ক স্বপ্নজয় ভাইয়ের পোষ্টটি এখানে । আর সংকলনটির সরাসরি লিংক এখানে । সন্কলনটির জন্য স্বপ্নজয় ভাই, বাবুনি সুপ্তি ও kisuna আপুকে অশেষ ধন্যবাদ।

============================


সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১০ সকাল ১০:০৯
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×