বিবেকানন্দ: আমি অবসর খুঁজে পাচ্ছি না। জীবন আমার জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে।
রামকৃষ্ণ: কাজ তোমাকে ব্যস্ত করবে কিন্তু সৃজনশীলতা তোমাকে অবসর দেবে।
বিবেকানন্দ: জীবন এখন কেন এতো জটিল?
রামকৃষ্ণ : জীবনের বিশ্লেষণ বন্ধ করো। এটা জীবনকে আরো জটিল করে তোলে।
বিবেকানন্দ : কেন আমরা অসুখী?
রামকৃষ্ণ : উদ্বেগ তোমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তাই তোমরা অসুখী।
বিবেকানন্দ : কেন ভালোমানুষ সবসময় কষ্ট পায়?
রামকৃষ্ণ : ঘর্ষণ ছাড়া হীরা মসৃ্ন করা যায় না। আগুনে না পুড়লে স্বর্ণ বিশুদ্ধ হয় না। ভালোমানুষ পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায়, এটা তাদের ভোগান্তি নয়। এই অভিজ্ঞতা দিয়ে তাদের জীবন আরও সুন্দর হয়, তিক্ত নয়।
বিবেকানন্দ : আপনি কি বলতে চাচ্ছেন যে এইরকম অভিজ্ঞতা উপকারী?
রামকৃষ্ণ : হ্যাঁ। সবসময় অভিজ্ঞতা হলো কঠিন শিক্ষকের মতোন। যে শিক্ষক তোমাকে আগে পরীক্ষার সম্মুখীন করে এবং পরে শিক্ষা দেয়।
বিবেকানন্দ : অনেক সমস্যার কারণে আমরা জানি না আমরা কোথায় যাচ্ছি…
রামকৃষ্ণ : যদি তুমি বাইরে তাকাও তাহলে বুঝবে না কোথায় যাচ্ছো। যদি ভেতরটা দেখো, তুমি বুঝতে পারবে তুমি কোথায় যাচ্ছো। চোখ আমাদের দৃষ্টি দেয়, আর হৃদয় দেয় অন্তর্দৃষ্টি।
বিবেকানন্দ : ব্যর্থদের চলার পথ কী বেশি কষ্টদায়ক?
রামকৃষ্ণ : সফলতা অন্যদের দ্বারা নির্ধারিত একটি পরিমাপ আর সন্তুষ্টি নিজের দ্বারা নির্ধারিত।
বিবেকানন্দ : কঠিন সময়ে, কীভাবে আপনি অনুপ্রাণিত থাকেন?
রামকৃষ্ণ : সর্বদা তুমি কতদূর যেতে পেরেছো তা দেখো, কতদূর যেতে পারোনি তা হিসাব করতে যেয়ো না। তোমাকে কারা ভালোবাসে সবসময় তা দেখো, কে ভালোবাসে না তা হিসাব করতে যে্যো না।
বিবেকানন্দ: মানুষের কোন দিকটা আপনার অবাক লাগে?
রামকৃষ্ণ : মানুষ যখন করে তারা অভিযোগ করে ‘এত কষ্ট কেন আমাকে দেওয়া হলো’। কিন্তু তারা যখন সফল হয় তখন তারা কখনো বলে না ‘এই সফলতা কেন আমাকে দেওয়া হলো’।
বিবেকানন্দ : কীভাবে আমি জীবন থেকে সেরাটা পেতে পারি?
রামকৃষ্ণ : তোমার অতীতকে অনুশোচনা ছাড়াই মেনে নাও। আস্থার সাথে বর্তমানটা যাপন করো। আর ভয় ছাড়াই ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হও।
বিবেকানন্দ : একটি শেষ প্রশ্ন। কখনো কখনো আমি মনে করি, আমার প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয় না।
রামকৃষ্ণ : সব প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়। বিশ্বাস রাখো, ভয় ত্যাগ করো। জীবন কোনো সমস্যা নয় যে, সমস্যার সমাধান করতে হবে। বিশ্বাস করো; যদি তুমি জানো কিভাবে বাঁচতে হয় তবে জীবন বিস্ময়কর সুন্দর। পৃথিবী কত সুন্দর এটা যে কেউও তোমাকে বোঝাতে পারবে। কিন্তু এর মধ্যে খুব কম মানুষই তোমাকে বোঝাতে পারবে যে, তুমি পৃথিবীতে কত সুন্দর।
জীবনের হতাশা নিয়ে স্বামী বিবেকানন্দ গেলেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব’এর কাছে। তাঁদের কথোপকথন অনুসরণ করে উপরের অনুলিপি।
দু’লাইন গান দিয়ে শেষ করি…
কফিকাপে একা ঠোঁট ছোঁয়ানো দিন, চুপি চুপি কেঁদে রোদ পোহানো দিন,
ভালো হয় যদি সঙ্গে আনো দিন যেকোনো রাতে… জানি দেখা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:১৭