somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিক্ষকের(যার স্কুলের চেয়ে বাসায় পড়াতে বেশি ভাল লাগে) চেয়ে ঢের ভাল ট্রাফিক পুলিশ (যে ১০ টাকার জন্য ট্রাকের পিছে ছুটে)

১৬ ই অক্টোবর, ২০০৮ দুপুর ১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষের জীবন, আচার-আচরন নিয়ন্ত্রক বস্তু অথবা কাঠামোর সন্ধান মানুষ করে আসছে সৃষ্টির প্রথম থেকেই। তারই ফলস্বরুপ মানুষের প্রথম পরিচয় হয় জ্যোতির্বিদ্যার সাথে। চিন্তা জগতের সীমানা যত বিস্তৃত হয়েছে ধারাবাহিকভাবে মানুষ জন্ম দিয়ে গেছে জ্ঞানের তত বেশি শাখা-প্রশাখার। অবশেষে একদিন মানুষের মনে হলো, আসলে এসব কিছুই না- মানুষকে নিয়ন্ত্রন করে মানুষের "মন"। জন্ম হল "মনোবিদ্যা"-র। কিন্তু "মনোবিদ্যা" আমাদের ব্যাখ্যা করতে পারে নি- কেন একজন মানুষ ভাত খায়, তো অন্যজন বার্গার; কেন একজন চামচ দিয়ে খায়, তো অন্যজন কাঠি। এসবের একমাত্র উত্তর আমরে পেয়েছি আমাদের "সংস্কৃতি"-র কাছে। একমাত্র সংস্কৃতি নিয়ন্ত্রন করে মানুষের চিন্তা-ভাবনা, আচার-আচরন, কাজ-কর্ম , উঠা-বসা-সব। আর, সংস্কৃতি হচ্ছে তাই, যা মানুষ প্রতিদিন একে অপরের কাছ থেকে শেখে এবং একে অপরের সাথে ভাগ করে নেয়।

আমাদের শিক্ষার দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন মাধ্যম হচ্ছে "শিক্ষা প্রতিষ্ঠান"- স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি। আজকে দূর্নীতি আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছেয়ে গেছে, ধর্ম হয়ে গেছে আমাদের ব্যবসা- এর পিছনে দায়ী একমাত্র কারন আমি বলব, সত্যিকারের শিক্ষা আমরা কোনদিনও পাই নি। শিক্ষা আমাদের চোখ খুলে দেওয়ার বদলে আমাদের করেছে দ্বিতীয় শ্রেনীর প্রানী- যারা শুধু সেভাবেই করতে পারে, যে ভাবে তাদের শেখানো হয় (কুকুর)। যে জন্য আমরা দেখি - আমরা হয়ে গেছি জ্ঞানের জন্য, প্রযুক্তির জন্য বিদেশী শক্তির উপর নির্ভরশীল। তারা আমাদের যা বলে, আমরা তাই করি। তারা আমাদের বলে, উন্নয়নের জন্য সন্চয় দরকার, তোমাদের সন্চয় নেই, আমাদের কাছ থেকে ঋণ নাও। আমরা ঋণ নিই। আফ্রিকার মত ভাগ্য বরন করতে আমাদের আর বেশি দেরি নেই যখন ঋণের পরিমানের চেয়েও বেশি হবে আমাদের সুদের পরিমান। কিংবা বিদেশীরা বলবে, সবুজ বিপ্লবই (Green Revolution) হচ্ছে কৃষির একমাত্র সমাধান। আমরা বলব, আলবৎ। আর ধ্বংস হয়ে যাবে আমাদের মাটির উর্বরতা, বেড়ে যাবে ফসলের উৎপাদন খরচ এবং সেই সাথে দাম হবে লাগামহীন। যখন কোন অমর্ত সেন এসে বলবে যে, বড় ভুল হয়ে গেছে- এটা উন্নয়নের মূলনীতি নয়-আমরা বুঝতে পারি; কিন্তু ততদিনে আকন্ঠ বিষপান করে আমরা নীল হয়ে গেছি।

জাতিকে গড়ে তোলার কারিগর- শিক্ষক। আমরা কিভাবে বেড়ে উঠি? আমরা স্কুলে কি শিখেছি? বা আমাদের বাচ্চারা কি শিখছে? আমরা ছোট থেকে দেখে এসেছি- পড়াশোনা, সে যত কঠিনই হোক না কেন, তারও বিকল্প আছে। আমরা সহজেই সব কিছু পেতে চাই- সে যদি দূর্নীতিও হয়- রাজি। আমাদের স্কুলের পড়াশোনাকে দূর্বোধ্য বানিয়ে রাখা হয়েছে। এই অজানাকে হাসিল করার একমাত্র সহজ এবং Short cut হচ্ছে "প্রাইভেট টিউশনি"। ক'জন ছাত্র বা অভিবাবক আছে যারা বিশ্বাস করে "প্রাইভেট" পড়া ছাড়া ভাল রেজাল্ট করা যায়?? আমি আমার ক্লাসে দেখি - এক বিষয়ে মাস্টার্স শেষ করে আবার মাস্টার্স করছে, কিন্তু সরলরেখার সমীকরণ তার কাছে মোটেও সরল নয়, দূর্বোধ্য।

এর দায় কে নেবে?

কলেজে পড়ার সময় আমাকে খুবই সাহসী এক পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল- কোন প্রাইভেট টিউটরের কাছে আমি যাই নি। আমাকে সত্যিকারের শিক্ষার স্বাদ পাইয়ে দেয়ার জন্য আমি অবশ্যই চিরকৃতজ্ঞ একজন আলোকিত মানুষের কাছে- জওহর লাল স্যার। সবাই প্রাইভেট পড়ে দেখে আমিও একবার স্যারের কাছে পড়তে যাই। স্যারের প্রথম দিনের কথা, যা আজও আমার কানে লেগে আছে, " ক্লাসে যা পড়িয়েছি বাসায় সেগুলো হবে না"। কি আজব কথা! শিক্ষক কি এমনও হতে পারেন? আমি ৭ দিন গিয়েছিলাম। তারপর আমার আর কলেজ জীবনে প্রাইভেট পড়া হয় নি। "জওহর লাল স্যার"-রা কি আমাদের সব স্কুল-কলেজগুলোতে আছেন?

আমি বিশ্বাস করি, যাকে গাড়িতে ঝুলে স্কুলে যেতে হয়; কিংবা বাজারে গেলে যার মাথাটি সবার আগে নিচু হয়, সে কখনও জাতিকে মাথা উঁচু করে বাঁচার শিক্ষা দিতে পারে না। আমি জানি, এদেশে শিক্ষাখাতে ব্যয় বেশি করার ঝুকি নেওয়া হয় না, পাছে উন্নত দেশগুলো (রক মিউজিকের তালে তালে Head Band দিতে দিতে যাদের মাথা অসার হয়ে গেছে) অল্প পয়সায় শিক্ষক না পায় কিংবা আমাদের মেধাবী সন্তানেরা চোখ বন্ধ করে তাদের গোলামী করতে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।


কিন্তু তারপরও দায় থেকে যাবে শিক্ষকদেরই। আমাদের স্কুলগামী ছেলেমেয়েদের দেশপ্রেমের শিক্ষা দেওয়া, নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া তাদেরই দায়িত্ব।

যে সব শিক্ষকের ক্লাসে পড়াতে ভাল লাগে না, ছাত্রদের বাসায় ডেকে নিয়ে যায়, আর যে সব শিক্ষক স্কুলে থাকতে আমাকে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেছে, তাদের আমি কখনই ক্ষমা করব না।

সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৪:২৩
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×