বিশ্বের অবস্থা
৩০১২ সালের পৃথিবী আজকের যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেখানে পৌঁছাতে বিশ্বের মানুষকে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে কোটি কোটি ট্রিলিয়ন ‘ন্যানো টাইম’, সইতে হয়েছে নানাবিধ ঘাত-প্রতিঘাত আর পরাজিত করতে হয়েছে প্রতিকূলতার বিষময় শক্তিকে। এ প্রতিকূলতা ছিল মানুষ আর তারই বানানো নানাবিধ সাংঘর্ষিক রীতিনীতি, যা মানুষকেই শোষণ করতো পদে পদে প্রতিনিয়ত, ক্ষণে ক্ষণে। এখন যদিও সময়ের একক হচ্ছে ‘ন্যানো টাইম’ কিন্তু ২০১২-পূর্ববর্তী পৃথিবীর মানুষ সময়ের ব্যাপারে এতোই অদক্ষ ও ‘সময়-খাদক’ ছিল যে, তারা সময় গণনার একক হিসেবে সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা, দিন, সপ্তাহ, মাস ও বছর ব্যবহার করতো। সময়ের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম একক ‘সেকেন্ড’ এর মান ছিল বর্তমান প্রায় ১০-ট্রিলিয়ন ‘ন্যানো টাইম’, মানে আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে বর্তমান ১০-ট্রিলিয়ন ‘ন্যানো টাইম’-এর নিচে তারা গণনাই করতে জানতো না, যে কারণে তাদের প্রত্যেকটি কাজ ছিল খুবই ধীর গতির। যেমন ঐ সময়ে স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে যে ক্লাসগুলো হতো তাতে প্রত্যেকটি ক্লাসের ‘ঘণ্টা’ হিসেব করা হতো ৬০ মিনিট ধরে, আর ৬০ মিনিট মানে ছিল ৩৬০০ সেকেন্ড, আর তৎকালীন ৩৬০০ সেকেন্ড মানে বর্তমান সময়ের হিসাবে ৩৬০০০-ট্রিলিয়ন ন্যানো টাইম। আর ঐ সময়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানবো প্রাচীন মানুষের শিক্ষা পর্বে।
এ পর্বে আমরা দেখবো ২০১২ পূর্ববর্তী পৃথিবীর মানুষ, জন্ম, মৃত্যু, প্রকৃতি, তার ধর্ম, খাদ্য উৎপাদন, সমাজ, রাষ্ট্র, রীতি-নীতি, আইন, শাস্তি, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, সামাজিক ব্যবস্থা, ভোগ্যপণ্য, কুসংস্কার, পরিবহন ইত্যাদি বহুবিধ প্রাচীন ‘শাস্ত্রকথা’, যা আলোচনা করা হবে পর্যায়ক্রমে ধারাবাহিক অধ্যায়গুলোতে।
একুশ শতকের পৃথিবীতে মানুষ বাস করতো প্রায় সাড়ে ছ’শো কোটি, যার মধ্যে ঐ সময়ের হিসেবে ১ দিন বয়সী মানুষ থেকে ১০০ বছরের মানুষও ছিল। ১০০ বছর বয়সের উপরে জীবন্ত মানুষ খুব একটা দেখা যেত না সর্বত্র, কারণ ৬০-৭০ বছর হলেই ঐ সময়ের মানুষ ‘বুড়িয়ে’ যেত এবং আস্তে আস্তে তারা কর্মশক্তি, চলনশক্তি, যৌবনশক্তি, রূপরস ইত্যাদি হারিয়ে ফেলতো, যদিও এখন বিশ্বের সর্বত্রই বিচরণ করছে পাঁচ-ছ’শ বছরের পুরনো থেকে ২০ বছরের ক্লোন করা একই কর্মশক্তির চির তারুণ্যময় মানুষ। ঐ সময়ের অকর্মণ্য ঐ বুড়োরা সমাজের চোখে বোঝা হলেও, তাদের ‘ধ্বংস’ বা ‘বিনাস’ করা হতো না এই কারণে যে, এমনিতেই তারা কয়েক বছরের মধ্যে নির্ঘাৎ মারা গিয়ে মূলত ‘বিনাস’ হয়েই যেত, যেন মৃত্যু বা বিনাস নামক চরম ও পরম সত্যের জন্য মানুষ অপেক্ষা করতো কিছুটা সময়। এ জন্যে বর্ণিত অকর্মণ্য মানুষদের অবহেলা আর তাচ্ছিল্যে কেউ কেউ তাদের বসতির এক কোণে ফেলে রাখলেও, কেউবা তাকে পাঠিয়ে দিত ‘বৃদ্ধ নিবাসে’ কিংবা ভবঘুরে সেন্টারে। আর মারা যাওয়া যদিও বর্তমান সময়ে অকল্পনীয় ও অবাস্তব ব্যাপার কিন্তু ঐ সময়ে একটি মানুষের দেহ সত্যি সত্যি প্রাণশক্তি হারিয়ে ‘জড়’ পদার্থে রূপ নিতো অনেকটা পাথরের মতো প্রতিক্ষণে আর প্রতিনিয়ত। যে কোনো সময় যে কোনো মানুষ কারণে-অকারণে মারা যেত যত্রতত্র, যা তার স্বজনরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতো অবলীলায়Ñ অসহায়ভাবে অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে। কেউ হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে, আবার কেউ পানিতে ডুবে কিংবা সেকেলে মধ্যযুগীয় টেকনোলজির বিপজ্জনক যান ‘গাড়ির চাপায়’ মরতো যেখানে সেখানে। দৈনিক গড়ে কয়েক হাজার মানুষ এভাবে মরতো পৃথিবীর সর্বত্র, যা মানুষের কাছে ছিল ‘অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা’ ঐ সময়ের দিন-রাত্রির মতো। যারা ১০০ বছরেও মারা যেত না, সমাজে তারা বিশেষ প্রাণী হিসেবে ‘মর্যাদা পেত’ এবং অনেকে তাদের দেখতে আসতো কিংবা মিডিয়ায় তাদের জীবিত থাকার সংবাদ প্রকাশিত হতো ছবিসহ, যদিও তারা ছিল সমাজ ও পরিবারের কাছে বোঝা স্বরূপ। ১০০ বছর বয়সেও মারা যায়নিÑ এমন মানুষেরা অনেকটা দৃষ্টিশক্তি, চলৎশক্তি, বাকশক্তি ইত্যাদি হারিয়ে বিকৃত মানুষরূপে অনেকটা জড় পদার্থের মতো পৃথিবীতে মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গুনতো শুয়ে-বসে, যা বর্তমান মানুষ কল্পনা করতেও কষ্ট পায়। আর মৃত্যুর পর তারা আরেক অনন্ত কঠোরতর জীবনের প্রতীক্ষায় সব সময় ম্রিয়মান থাকতো জীবন কালেও, যা তাদের শেখাতো ঐ সময়ে প্রচলিত হরেক রকম ধর্ম-কথায়। এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জানবো একুশ শতক-পূর্ববর্তী সময়ের প্রচলিত ও বর্তমানে বিলুপ্ত ধর্মের ইতিহাস অংশে।
জীবনের আনন্দময়তা আর চলমানতা হঠাৎ থেমে গিয়ে যে কোনো মানুষ নানাবিধ রোগ আর অজানা কারণে জড় পদার্থে পরিণত হতো প্রতিমূহূর্তে, এর নাম ছিল ‘মৃত্যু’। অজানা এই হিমশীতল মৃত্যু নিয়ে ঐ সময়ের মানুষের মধ্যে ছিল ভীতিকর আতংক আর ভয়। অনেকেই মৃত্যুর পর আরেক জগতে বিশ্বাস করতো। যে জগত ছিল ঐ সময়ের পৃথিবীর কষ্টকর আর প্রতিনিয়ত সংগ্রামের কষ্টকর জীবনের তুলনায় অনেক প্রশান্তিময়। ঐ সময়ের অসহায় মানুষ তার পৃথিবীর কষ্টকে লাঘবের মানসে, এক কল্পিত স্বপ্নের সুন্দর জগতের কথা চিন্তা করতো, যা সে পৃথিবীতে পায়নি কখনো কিন্তু স্বপ্ন আর কল্পনায় দেখেছিল ঐ জগতকে। তার এ স্বপ্ন আর কল্পনাকে বাস্তব রূপ দেয়ার জন্যে ঐসব অসহায় মানুষের সামনে চলে এসেছিল অনেক রূপে আর বর্ণনায় নানাবিধ ধর্ম আর তার হরেকরকম কিস্সা-কাহিনী। প্রত্যেকটি ধর্মই কমবেশি মৃত্যু-পরবর্তী এক চমৎকার সীমাহীন ‘ভোগবাদী’ আনন্দময় ও বিপরীত দিকে ভয়ঙ্কর শাস্তিপূর্ণ অনন্ত জীবনের কথা বলতো ধর্মপুস্তকগুলোতে, আর শোনাতো এ জীবনে যা তারা পায়নি তা পাওয়ার লোভনীয় কিস্সা। যেহেতু মানুষগুলোকে অসহায়ভাবে মৃত্যুর কাছে হার মানতে হতো, তাই হাতে গোনা ২-৪ জন বাদে প্রত্যেকেই ঐ অনন্ত জীবনে বিশ্বাস করে পবিত্র ও শান্তিময় মৃত্যু কামনা করতো। এ জন্যে মৃত্যুর সময় ও মৃত্যু-পরবর্তী নানাবিধ পবিত্র মন্ত্র পাঠ করা হতো মৃত্যুর পরম শান্তি কামনায় বিভিন্ন পদ্ধতিতে, যা আমরা আলোচনা করবো পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে পর্যায়ক্রমে।
প্রশ্ন আসবে এতো মৃত্যুর শূন্যতা তাহলে পূরণ হতো কিভাবে? ঐ সময়ের মানুষ কি ফ্যাক্টরিতে নতুন মানুষ উৎপাদন করতো? হ্যাঁ, মৃত্যুর মতো জন্ম ছিল ঐ সময়ের একটি নিত্যনৈমিত্তিক সাধারণ ব্যাপার। প্রাত্যহিক হাজারো মৃত্যুর মতো লক্ষাধিক মানুষ জন্ম নিত প্রায় প্রতিদিনই। আজকের সময়ে যখন কোনো মানুষকে সৃষ্টির জন্য ‘ক্লোন কমিটির’ অনুমোদন সাপেক্ষে একজন ‘আইনস্টাইন’, ভ্যানগগ কিংবা ‘স্টিফেন হকিং’ এর ক্লোন বের করা হয়, তেমনটি কিন্তু ছিল না ঐ সময়ে। কোনো বৈধ ‘বিবাহিত দম্পতি’ মানব সন্তান জন্ম দিতে চাইলে, তাদের নিতে হতো বিশেষ প্রস্তুতি। এ ক্ষেত্রে ‘বিবাহিত দম্পতি’ বলতে রাষ্ট্র ও সমাজ কর্তৃক ‘প্রজনন’ বা ‘সন্তান উৎপাদনের বৈধ লাইসেন্স’ প্রদান বা অনুমোদনকে বোঝানো হতো। এইরূপ লাইসেন্সধারী দম্পতি-ই কেবল বৈধ মানব শিশু জন্ম দেয়ার অধিকার রাখতো, লাইসেন্সহীন পুরুষ-মহিলা মিলে কোনো সন্তান জন্ম দিলেও সমাজ ও রাষ্ট্রে তার ‘বৈধতা’ ছিল না, এমনকি সমাজে ঐ দম্পতি ও তাদের সন্তানকে নানারূপ নেতিবাচক আচরণ ও নিগৃহীত হতে হতো পদে পদে। তবে লাইসেন্সধারী কিংবা লাইসেন্সহীন উভয় শ্রেণীর মানব শিশু ও অন্যান্য ইতর প্রাণীর জন্ম প্রক্রিয়াও ছিল বেশ জটিল, কষ্টকর, সময়সাপেক্ষ এবং প্রায় একই রূপে। এ জন্য দম্পতির ফিমেল প্রজাতিটির পেটে বা জঠরে প্রায় ৯ মাস কাটাতে হতো ভ্রƒণ থেকে সম্পূর্ণ মানব শিশু রূপান্তর প্রক্রিয়ায়। তারপরও সেটি যে প্রক্রিয়ায় মায়ের পেটের বাইরে বিশ্বের আলো-বাতাসে আসতো, তা ছিল বেশ জটিল, ভয়ঙ্কর ও বিপজ্জনক। জন্ম দেয়া প্রক্রিয়ায় অনেক মা-ই মারা যেত পেটের সন্তানসহ কিংবা সন্তান পৃথিবীতে ঠেলে দিয়ে। জীবন-মৃত্যুর এরূপ মারাত্মক রিস্ক থাকার পরও ‘সন্তান’ কামনা করতো অনেক দম্পতি। এমনকি নানা কারণে সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম অনেক দম্পতি কেবল সন্তান লাভের আশায় নানাবিধ চিকিৎসক ও ওঝা-বৈদ্যের, অলৌকিক সাধকের দারস্থ হতো ঝার-ফুঁক নিতে। কেউ কেউ ঐ সময়ের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারী চিকিৎসায় সন্তান লাভে সক্ষম হলেও, অনেকেই প্রতারিত হতো পীর, ফকির, ওঝা নামীয় ভ-দের দ্বারা। এই অপচিকিৎসার বিজ্ঞাপনও ঐ সময়ের মিডিয়ায় নিয়মিত প্রকাশিত হতো অবলীলায়। কিন্তু তারপরও এই পেশা চলতো বংশানুক্রমে বিশ্বের প্রায় সকল অঞ্চলে। বৈধ লাইসেন্স পাওয়ার পরও সন্তান ইচ্ছাকৃতভাবে জন্ম না নিলে কিংবা দিতে অক্ষম হলে সমাজে তাকে ‘বন্ধ্যা’, ‘অপয়া’ ইত্যাদি নানাবিধ ঋণাত্মক অভিধায় ভূষিত করা হতো। কোনো কোনো পুরুষ আবার দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিয়েটি করতো সমাজ কর্তৃক প্রদত্ত পুনঃ বৈধ লাইসেন্স নিয়ে, যাতে সে অন্তত একটি সন্তানের পিতা হতে পারে। ঐ সময়ের বিশ্বের এই বিয়ে নামক লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়াটি ভিন্নতর প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা হতো। বর্তমান পত্রিকা আর্কাইভে রক্ষিত ২০১১ সালের ফেব্র“য়ারি মাসের ২১ তারিখের ‘আমাদের সময়’ নামক পত্রিকার একটি সংবাদ শিরোনাম ছিলÑ ‘৩৯ স্ত্রী ও ৯৪ সন্তান’। খবরের মোদ্দা কথা, ঐ সময়ের ভারত অঞ্চলের মিজোরামের ‘জিওনা ছানা’ নামক জনৈক ব্যক্তি ৩৯টি স্ত্রী, ৯৪ সন্তান এবং ৩৩ নাতি-নাতনি নিয়ে বর্তমান পৃথিবীতে বসবাস করছেন। তিনি নিজেকে সবচেয়ে ভাগ্যবান এ জন্য মনে করতেন যে, তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবারের কর্তাব্যক্তি। বর্ণিত ব্যক্তির চারতলা এবং ১০০ রুমবিশিষ্ট বাড়িতে তিনি পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে বসবাস করতেন, যেটি বর্তমান সময়ে বেশ আশ্চর্যজনক, হাস্যকর, অগ্রহণযোগ্য ও অবিশ্বাস্য ঘটনা মনে হবে আধুনিক মানুষের কাছে।সেই সময়ে মানুষ রিক্সা নামক একটি যান নিয়ে ঘুরে বেড়াত যা কিনা আমাদের মত একজন মানুষ চালনা করত তার নিজ পা দিয়ে,যা আজকের সমাজে ভাবলেই গা শিউরে উঠে । জ্যাম নামক একটি কথা তখন মানুষের প্রথম এবং প্রধান অযুহাত ছিল । যারা কথা শুনতেছিল তারা প্রশ্ন করল অযুহাত কি ? তখন বুঝিয়ে দেওয়া হল ২০১২ মালে মানুষের হাত ছিল তিনটি , শুনে সবাই থ হয়ে গেল ! এই রকম দুইটি হাতের পরেও তাদের আরেকটি হাত থাকত অযুহাত(যা থাকে বুকে)যা দিয়ে বসের ঝাড়ী থেকে পরিত্রান পাওয়া যেত । তখন কি বসরা খারাপ ছিল ? নাকি যারা কাজ করত তারা ফাকিবাজ ছিল ? আমরা এগিয়ে যাই ইতিহাস থেকে জেনে নেব...................
কিছুটা কপি করা কিছুটা আমার নিজস্ব চিন্তা মনে চাইল তাই লিখলাম ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৪:৪৮