এই পোস্টের পুরোটাই আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি ও কিছু রিডিংস থেকে লেখা। আবহাওয়াবিদ ও অভিজ্ঞরা অবশ্যই আমার চাইতে ভালো বলতে পারবেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘূর্ণিঝড় ছিলো দ্য গ্রেট ভোলা সাইক্লোন। স্কট কার্নি ও জেসন মিকলিয়ান এর বই "দ্য ভর্টেক্স : দি ট্রু স্টোরি অফ হিস্ট্রি'স ডেডলিয়েস্ট স্ট্রম এন্ড লিবারেশন অফ বাংলাদেশ" এ দুইজন খুব চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করেছে কিভাবে একটা ঝড় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্পার্ক হিসেবে কাজ করেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতি এই কোস্টলাইনে কয়েক ঘন্টায় কিভাবে ৫ লাখ মানুষ মারা যায়। শুধু তজুমদ্দিন উপজেলারই ৪৬% মানুষই মারা যায় এই ঝড়ে৷ এই ঝড়ের পরবর্তী কনসিকোয়েন্স হিসেবে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পায় ১৯৭১ সালে। শুধু এই অংশটুকু নিয়েই দ্য ভর্টেক্স এর মতো গবেষণাভিত্তিক বই লিখা হয়েছে।
এই সাইক্লোনের পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম দুর্ভিক্ষ হয় ১৯৭৪ সালে। সরকারি হিসাব ২৭ হাজার মানুষ মারা গেছে বললেও বেসরকারি হিসেবে এর সংখ্যা ৪.৫ লাখ (উইকিপিডিয়া)। পাকিস্তান সরকার আত্মসমর্পণ করার পূর্বে যেভাবে এদেশকে ধ্বংস করে গেছে তার প্রভাব পরতে থাকে। দু বছর গড়াতেই রংপুর অঞ্চলের মন্দা শুরু হয়। এই মন্দা আস্তে আস্তে সারা দেশ এ ছড়িয়ে পরে। এপ্রিল থেকে জুলাই মাসের অতিবৃষ্টি ব্রহ্মপুত্রর বন্যা ফসল নষ্ট করে। চালের দাম আকাশচুম্বি হতে থাকে।
সাইক্লোন, মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধ পরবর্তী দুর্ভিক্ষ।
এবার একটু মোখা নিয়ে আমার ব্যক্তিগত বিশ্লেশন। মহাবিপদসংকেত নিয়ে বাংলাদেশের কোস্টাল এরিয়াতে আঘাত হানবে মোখা। এখনো পর্যন্ত সুপার সাইক্লোন এর পূর্ববর্তী ধাপে এর অবস্থান (ভারতীয় আবহাওয়া সংস্থার রিপোর্ট)। যেকোন সময় সুপার সাইক্লোন এ রুপ নিতে পারে৷ এর ক্ষয়ক্ষতি ঠিক কতোটুক হবে তার একটা ধারনা দিতে পারে সম্প্রতি সময়ের সিডোর।
করোনা পরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিদারুণ। তার মাঝে রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধে বাংলাদেশের ফরেন রিজার্ভ ক্রমশই কমছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার বেশিরভাগটাই আসতো ইউরোপ থেকে। বিশেষ করে জার্মানী থেকে। গত বছরে এই যুদ্ধের নর্ড স্ট্রিম এল এন জি পাইপলাইন সাবোটেজ জার্মানির পাওয়ার কস্ট বাড়িয়ে দিয়েছে দ্বিগুন। ইতালিতেও পাওয়ার কস্ট বেড়েছে কয়েক গুন। এইসব খরচের কারনে ইউরোপের নাগরিকেরা কনজাম্পশন কমিয়ে দিয়েছে। দেশের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিও বড় যেই বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতো তা নেমে যাচ্ছে তলানীতে। এর মধ্যে কিছু গ্রুপ এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে তৈরি করছে বড় ধরনের স্ক্যাম!
এর পর আছে হিট ওয়েভ। গত ২ মাস যাবৎ দেশের তাপমাত্রা বেড়েই চলছে। বৈশাখ মাসের শেষে বৃষ্টির মাত্রা জানান দিচ্ছে বছরে খুব একটা বৃষ্টিপাতের দেখা মিলবেনা। বৃষ্টিপাত হলেও গত বছরের মতো অতিবৃষ্টিরও দেখা দিতে পারে৷ ভারত থেকে নেমে আসা ঢল আবারো বন্যায় রুপ নিতেই পারে৷ এই হিটওয়েভ ভেঙ্গে না যাওয়ার আগ পর্যন্ত পরিবেশের অবস্থায় কোন নির্দিষ্টতা থাকবে বলে মনে হয়না। অতিতাপ, অনাবৃষ্টি বা অতিবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হলে বৈদেশিক সাহায্য নেবার জন্যও বেশ ঝামেলা পোহাতে হবে৷ ইতোমধ্যেই আমাদের মাথাপিছু ঋণের পরিমান ৬৮ হাজার টাকা!
সব মিলিয়েই এই ঘূর্ণিঝড় মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়েই আসছে।
প্রাকৃতিক নির্বাচনের একটা ডাইলগ আছে। সার্ভাইভাল ফর দ্য ফিটেস্ট। আমরা এখনো প্রস্তুত না। পরবর্তী পৃথিবীটা আমাদের জন্য না৷